বিজন সাহা
কিছুদিন আগে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে দুটো প্যারাগ্রাফ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগে অনেক লেখালেখি হয়েছে। নকল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি নতুন নয়। এর আগেও শুনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষকের অন্যের গবেষণা কপি করার কথা। শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড, সেহেতু নকল করে শিক্ষা লাভ করলে জাতি হিসেবে আমরা মেরুদণ্ডহীন হয়ে যেতে পারি। তাই নকলের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ একটা পেপার বেরিয়েছিল; যেখানে বলা হয়েছিল, হাজার হাজার গবেষক প্রতি পাঁচ দিনে একটা করে পেপার প্রকাশ করেন। যাদের পাবলিকেশনের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এ রকম কিছু বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী একাধিক পেপার কোনো রকম পরিবর্তন না করে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, হাইপারপ্রফিলিক এসব লেখকের ১৯ শতাংশ আমেরিকায় কর্মরত, এর পরে আসে জার্মানি ও জাপানের নাম। অন্য বিষয়ের কথা বলতে পারব না, তবে ইদানীং ফিজিকসে গবেষকদের যেকোনো রেসপেকটেড জার্নালে লেখা জমা দেওয়ার সময় লিখিত দিতে হয় যে এই গবেষণা প্ল্যাগিয়ারিজম বা চুরি নয়। এমনকি কোনো লেখক যদি তাঁর পূর্ববর্তী কোনো লেখার ৩০ শতাংশের বেশি রিপিট করেন, তাহলে সেটাকেও নকল বা চুরি বলে ধরা হয়। ফিজিকস সাহিত্য নয় এবং এখানে ভাষার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সঠিকভাবে গবেষণার ফলাফল অন্যদের সামনে তুলে ধরা। প্রতি মাসে বিভিন্ন স্পেসিফিক বিষয়ে শত শত পেপার লেখা হচ্ছে। অনেকেই একই বিষয়ের ওপর গবেষণা করছেন। তা ছাড়া, শুধু নিজের কাজই নয়, অন্যদের কাজের আলোচনা করাও যেকোনো ভালো পেপারের বৈশিষ্ট্য। তাই কিছু কিছু ওভারল্যাপ অনিবার্য। তবে গবেষণার মৌলিকতা নির্ভর করে লেখকের একান্ত নিজের প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর। নতুনত্ব সেখানে অপরিহার্য। তাই মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে নকলের ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
মৌলিক গবেষণা আর টেক্সট বুক এক নয়। মৌলিক গবেষণা হলো পুরোনো তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন। সেটা হতে পারে পুরোনো তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করা অথবা তার সংযোজন বা সংশোধন করা। টেক্সট বুকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হয়, যাতে একদিকে যেমন সেটা শিক্ষার্থীদের বোধগম্য হয়, অন্যদিকে আবার তত্ত্বের মূল বাণী বিকৃত না হয়। গবেষণাপত্র আর টেক্সট বুকের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য এক—প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করা। কিন্তু তাদের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য ভিন্ন। তাই নকলের বিষয়টা দুই ক্ষেত্রে দুই রকম। নিজে কসমোলজির ওপর একটা বই লিখতে গিয়ে দেখেছি স্বল্প কথায় সঠিকভাবে কোনো কিছু, বিশেষ করে পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশ করা কত কঠিন; যখন বাংলা ভাষায় টারমিনোলজি নিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল কীভাবে নকলের বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন, তা নিয়ে। রেসপেক্টেবল জার্নাল থেকে নেওয়া প্যারাগ্রাফ দুটোয় তত্ত্বগত দিক থেকে কোনো ভুল না থাকাই স্বাভাবিক আর একজন পদার্থবিদ হিসেবে অধ্যাপক ইকবাল সেটাই দেখেছেন। নকল ধরার জন্য তিনি সেখানে নিয়োজিত হননি। যাঁরা টেক্সট বুক নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তুলছেন, তাঁদের উচিত বইয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য কতটুকু সঠিক ও সহজবোধ্য ভাষায় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে, সেটা দেখা। কারণ এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া। নকল একজনের ভুল কিন্তু নকল হতে পারে সেই ভয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা টেক্সট বুক লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভুল শেখাতে ও বোঝাতে পারে। অন্ধভাবে কারও বিরোধিতা করলে সেটা শেষ পর্যন্ত নিজের পায়ে কুড়ালের আঘাত হানতে পারে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
কিছুদিন আগে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে দুটো প্যারাগ্রাফ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগে অনেক লেখালেখি হয়েছে। নকল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি নতুন নয়। এর আগেও শুনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষকের অন্যের গবেষণা কপি করার কথা। শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড, সেহেতু নকল করে শিক্ষা লাভ করলে জাতি হিসেবে আমরা মেরুদণ্ডহীন হয়ে যেতে পারি। তাই নকলের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ একটা পেপার বেরিয়েছিল; যেখানে বলা হয়েছিল, হাজার হাজার গবেষক প্রতি পাঁচ দিনে একটা করে পেপার প্রকাশ করেন। যাদের পাবলিকেশনের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এ রকম কিছু বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী একাধিক পেপার কোনো রকম পরিবর্তন না করে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, হাইপারপ্রফিলিক এসব লেখকের ১৯ শতাংশ আমেরিকায় কর্মরত, এর পরে আসে জার্মানি ও জাপানের নাম। অন্য বিষয়ের কথা বলতে পারব না, তবে ইদানীং ফিজিকসে গবেষকদের যেকোনো রেসপেকটেড জার্নালে লেখা জমা দেওয়ার সময় লিখিত দিতে হয় যে এই গবেষণা প্ল্যাগিয়ারিজম বা চুরি নয়। এমনকি কোনো লেখক যদি তাঁর পূর্ববর্তী কোনো লেখার ৩০ শতাংশের বেশি রিপিট করেন, তাহলে সেটাকেও নকল বা চুরি বলে ধরা হয়। ফিজিকস সাহিত্য নয় এবং এখানে ভাষার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সঠিকভাবে গবেষণার ফলাফল অন্যদের সামনে তুলে ধরা। প্রতি মাসে বিভিন্ন স্পেসিফিক বিষয়ে শত শত পেপার লেখা হচ্ছে। অনেকেই একই বিষয়ের ওপর গবেষণা করছেন। তা ছাড়া, শুধু নিজের কাজই নয়, অন্যদের কাজের আলোচনা করাও যেকোনো ভালো পেপারের বৈশিষ্ট্য। তাই কিছু কিছু ওভারল্যাপ অনিবার্য। তবে গবেষণার মৌলিকতা নির্ভর করে লেখকের একান্ত নিজের প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর। নতুনত্ব সেখানে অপরিহার্য। তাই মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে নকলের ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
মৌলিক গবেষণা আর টেক্সট বুক এক নয়। মৌলিক গবেষণা হলো পুরোনো তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন। সেটা হতে পারে পুরোনো তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করা অথবা তার সংযোজন বা সংশোধন করা। টেক্সট বুকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হয়, যাতে একদিকে যেমন সেটা শিক্ষার্থীদের বোধগম্য হয়, অন্যদিকে আবার তত্ত্বের মূল বাণী বিকৃত না হয়। গবেষণাপত্র আর টেক্সট বুকের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য এক—প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করা। কিন্তু তাদের স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য ভিন্ন। তাই নকলের বিষয়টা দুই ক্ষেত্রে দুই রকম। নিজে কসমোলজির ওপর একটা বই লিখতে গিয়ে দেখেছি স্বল্প কথায় সঠিকভাবে কোনো কিছু, বিশেষ করে পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশ করা কত কঠিন; যখন বাংলা ভাষায় টারমিনোলজি নিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল কীভাবে নকলের বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন, তা নিয়ে। রেসপেক্টেবল জার্নাল থেকে নেওয়া প্যারাগ্রাফ দুটোয় তত্ত্বগত দিক থেকে কোনো ভুল না থাকাই স্বাভাবিক আর একজন পদার্থবিদ হিসেবে অধ্যাপক ইকবাল সেটাই দেখেছেন। নকল ধরার জন্য তিনি সেখানে নিয়োজিত হননি। যাঁরা টেক্সট বুক নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তুলছেন, তাঁদের উচিত বইয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য কতটুকু সঠিক ও সহজবোধ্য ভাষায় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে, সেটা দেখা। কারণ এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া। নকল একজনের ভুল কিন্তু নকল হতে পারে সেই ভয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা টেক্সট বুক লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভুল শেখাতে ও বোঝাতে পারে। অন্ধভাবে কারও বিরোধিতা করলে সেটা শেষ পর্যন্ত নিজের পায়ে কুড়ালের আঘাত হানতে পারে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪