Ajker Patrika

হিমাগার সংকটে বছরের শেষে বাড়ছে আলুর দাম

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১১: ০৫
হিমাগার সংকটে বছরের শেষে বাড়ছে আলুর দাম

উত্তরাঞ্চলে চাহিদার কয়েক গুণ বেশি আলু উৎপাদিত হয়। খাবারের চাহিদা ও খেত থেকে বিক্রি শেষে উদ্বৃত্ত থাকে অনেক আলু। তবে তা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শুরুতে বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। যাঁরা সংরক্ষণ করেন, তাঁদের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে আলুর দামে। মৌসুমের শুরুতে যে আলু ১০ টাকা, বছরের শেষ দিকে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, একশ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের দাবি, সংরক্ষণ ব্যয় বাড়ায় দামের ওপর তার প্রভাব ফেলছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারে রংপুর কৃষি অঞ্চলে আলুর আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭ হেক্টর জমিতে। আলু উৎপাদিত হয়েছে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার টন। হেক্টরে গড় উৎপাদন ২৭ টনের বেশি। রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে এসব আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার আছে ৭০টি। যেখানে আলু সংরক্ষণ করা যায় মাত্র ৬ লাখ ৬০ হাজার টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রংপুরে এবার যে পরিমাণ আলুর আবাদ হয়েছে, তাতে সারা বছরের খাবারের চাহিদা, বীজ আর বিক্রি করা আলু বাদ দিয়ে ১৬ লাখ ১২ হাজার টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে।

রংপুরের তারাগঞ্জের বড় আলুচাষি জিয়া রহমান। এবার তিনি ১০ একর জমিতে কার্ডিনাল ও স্টারিক্স জাতের আলু চাষ করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে ৫ একর জমির আলু ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আর ৫ একর জমির আলু এনএন ও সিনহা হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন। জিয়া রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হিমাগারে রাখা আলু সর্বশেষ ২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। হিমাগার ভাড়া, বস্তা, উৎপাদন খরচসহ আমার ২৩ টাকা পড়েছে। অন্যবারের তুলনায় হিমাগার ভাড়া বেশি হওয়ায় এবার লাভ কম। তারপরও সব আলু হিমাগারে রাখতে পারলে ভালো লাভ হতো। কিন্তু হিমাগারে তো জায়গা নাই।’

বামনদীঘি গ্রামের আলুচাষি রিপন মিয়া বলেন, ‘আগে ৯০ কেজির বস্তা হিমাগারে রাখতে খরচ পড়ত ২৫০ টাকা। এখন ৫০ কেজির আলুর বস্তা হিমাগারে রাখতে ৩০০ টাকা। ৫০ টাকার খালি বস্তা এখন ৮০ টাকা, ক্যারিং খরচ, লেবার খরচ দ্বিগুণ। ওই জন্য জমিতেই আলু বিক্রি করি। এবারে ১০ টাকা যে আলু খেত থেকে তুলে বিক্রি করেছি, সেই আলু ৫০ টাকায় কিনে খাচ্ছি।’

প্রতিবছর মাঠপর্যায়ে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন তারাগঞ্জের মিলন মিয়া। তিনি বলেন, ‘মূলত আলুর সংরক্ষণ খরচ বাড়ায় এবার আলুর দাম বেড়েছে। তা ছাড়া, উৎপাদন খরচ বাড়ায় এবার মাঠেও চাষিদের কাছ থেকে আলু বেশি দামে কিনতে হয়েছে।’ 

রংপুর হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে হিমাগারগুলো থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার বস্তা আলু বের হতো। কিন্তু এবার ৭০ থেকে ৮০ হাজার বস্তা আলু বের হয়ে গেছে। যে হারে আলুর চাহিদা দেখা যাচ্ছে, তাতে অক্টোবরের পর আলুর আরও সংকট দেখা দিতে পারে। এতে আরও দাম বাড়বে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, রংপুরে উৎপাদনের তুলনায় হিমাগার অপ্রতুল। হিমাগারের সংখ্যা যত বেশি বাড়বে, আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ তত বাড়বে। পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাবে আলুর একটি বড় অংশ নষ্ট হয়, এ কারণে বছর শেষে আলুর দাম বেড়ে যায়।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, আলুর সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। গৃহপর্যায়ে আলু সংরক্ষণে অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রকল্পটির কাজ শেষে হলে আলু সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ানো যাবে, ফলে দামও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

চট্টগ্রামে হামলায় ‘নিরাপত্তাহীন’ পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত