ফারুক মেহেদী, ঢাকা
দেশে এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর উৎসব চলছে। বড় আমদানিকারক থেকে মহল্লার খুচরা দোকানি পর্যন্ত—সর্বস্তরের বিক্রেতারা নানা অজুহাতে তাঁদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। চাল, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ এ রকম অসংখ্য শতভাগ দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানোতেও বিশ্ববাজারের যুক্তি দেখানো হচ্ছে। আর বাড়ানোর ক্ষেত্রেও নেই কোনো রাখঢাক। কোনো কোনো পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী, সম্প্রতি কমছে ডলারের দামও।
কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্যমন্ত্রী সব জেনেবুঝেও যেন নির্বিকার, অসহায়। যিনি সরাসরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন, সমস্যার সমাধান করবেন, সেই বাণিজ্য-মন্ত্রী উল্টো প্রশ্ন রাখছেন, কেন এত দাম বাড়ছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে। পণ্যের দাম এত বাড়ার যৌক্তিকতা নেই জেনেও খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী ডলার সাশ্রয়ের সময়ে উল্টো ভরসা করছেন আমদানি আর শুল্ক কমানোর সহজ উপায়ের ওপরে। এই ভরসায় নরম সুরে হুমকি দিয়েই দায় সারছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সব শেষ হিসাবে, দেশের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হলেও বাস্তবে পণ্যের দামের পারদ তারও ওপরে। মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারার মধ্যেই আকস্মিক জ্বালানি তেলের দাম একবারে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ায় আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়েছে। এরপর বলা যায়, রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ী-বিক্রেতারা।
দুই দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে প্রতি কেজি চালের দাম সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। অথচ কোন কারণে চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা বাড়বে—প্রশ্ন তাঁর। তিনি এও বলেছেন, ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকে, তাহলে এ সুযোগ ব্যবসায়ীরা কীভাবে নেন? আর সরকারের হিসাব যদি ঠিক থাকে, তাহলে বর্তমানে দেশে চালের সরবরাহেও কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। সরবরাহ স্বাভাবিক, পরিবহন খরচে কেজিতে মাত্র ৫০ পয়সা দাম বাড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে মন্ত্রীর দাবি মতো ৪-৫ টাকা থেকে অনেক বেশি বেড়েছে, যা বাজারে গেলে ক্রেতারা টের পাচ্ছেন। এর পেছনে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। সেই কারসাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হচ্ছে।
এর ফলে ব্যবসায়ীরাও আশকারা পাওয়ার পাশাপাশি শুল্ক ছাড়ের সুবিধাও নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন। বিগত সময়ে এ রকম শুল্ক ছাড় দেওয়ার সুফল বাস্তবে ভোক্তারা পায়নি।
চালের পর ডিমেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের কমবেশি পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। কেবল মুরগির ডিম উৎপাদিত হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটির মতো। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬৪ লাখ পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৭৩৬ কোটি পিস। এক বছরের ব্যবধানে ৩২১ কোটি পিস ডিম বেশি উৎপাদিত হয়েছে। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে ১২১টিতে উন্নীত হয়েছে, আগে যা ছিল ১০৪টি। তার মানে দেশে প্রতিজনের জন্য যে পরিমাণ ডিম উৎপাদন হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারিত হওয়ার সহজ সূত্র থাকলেও, এখন বাস্তবে তা কাজ করছে না। এখানেও অজুহাত দেওয়া হচ্ছে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার।
উৎপাদকদের এ অজুহাত সত্য হলেও, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, খামার পর্যায়ে একটি ডিমের বর্তমান উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৮ টাকা। অথচ বর্তমানে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে প্রতিটি ডিমে মধ্যস্বত্বভোগীরা অন্তত ৪-৫ টাকা অতি মুনাফা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন ডিমের মূল্যবৃদ্ধিও অযৌক্তিক। এ জন্য ডিম আমদানি করে তিনি এর দাম সহনীয় করার হুমকি দিয়েছেন। আসলে আমদানির প্রশ্ন তখনই আসে, যখন দেশে সরবরাহ ঘাটতি থাকে। তথ্য বলছে, দেশে ডিমের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে কেন ডিম আমদানি করতে হবে? আর সরকার যেখানে ডলার সাশ্রয়ের জন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে তিনি কোনো যৌক্তিক পর্যালোচনা ছাড়া, সরকারের নীতির বাইরে গিয়ে কীভাবে আমদানির কথা বলেন–এ প্রশ্নও উঠেছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অবশ্য পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাজারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন। তিনি ডিমসহ কোনো পণ্যেরই ঘাটতি নেই জানিয়ে বলেন, সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এরই মধ্যে ডিমের বাজারে অভিযানের ফলে দাম ডজনে ৩০ টাকার মতো কমেছে এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ডজন ১২০ টাকায় নেমে আসবে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম বাড়বে কেন? আর উপায় হিসেবে কেনই-বা আমদানি করে সমস্যার সমাধানের কথা বলা হচ্ছে? এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা বলার মাধ্যমে আসলে বাজারে একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে এসেছে। বিশ্বখ্যাত নিত্যপণ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস বলছে, পাম তেলের দাম কমতে কমতে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ নিচে নেমে এসেছে। ডলারের দামও এক সপ্তাহ ধরে কমছে। সয়াবিনের দাম গত বছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। আর বাস্তবে দেশের বাজারে এখনো এর দাম প্রায় দ্বিগুণ। অথচ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এর আগে দাম সহনীয় রাখতে শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ভোক্তারা এর সুফল পায়নি। ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী একবার ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। ব্যবসায়ীদের আবদারে দাম বাড়ানোর ফাঁদে পা দিয়ে তিনি আবারও একই ভুল করছেন কি না, এখন তা নিয়েও প্রশ্ন।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। সয়াবিনের দাম বিশ্ববাজারে এক বছরের ব্যবধানে সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়লেও টিসিবির হিসাবে দেশের বাজারে বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। একই সময়ে বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম সাড়ে ৪ শতাংশ কমলেও, টিসিবির দুই দিন আগের হিসাব বলছে, দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর এখন দাম আরও বাড়ানোর আলোচনা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রীও দাম বাড়াতে সায় দিয়েছেন।
ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নজরদারি নেই। বরং মন্ত্রণালয় বাজার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বলেন, গ্রামে একটি কথা আছে, চোরকে বলে চুরি কর, গৃহস্থকে বলে সজাগ থাক—বাজারের অবস্থা এখন এমনই। ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে বাজারটিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বে যখন সবকিছুর দাম কমছে, এখানে বাড়ছে। আর জ্বালানির দাম না বাড়িয়েও সরকার ভর্তুকি দিয়ে চলতে পারত। মানুষের জীবন একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের ভেতরেরই একটি অসাধু মহলের বুদ্ধিতে জ্বালানির দাম বাড়ানোর মাধ্যমে উন্নয়নকাজের ভালো ইমেজকে ধূলিসাৎ করে সরকারকে বিতর্কিত করা হয়েছে। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটালে সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হবে।
দেশে এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর উৎসব চলছে। বড় আমদানিকারক থেকে মহল্লার খুচরা দোকানি পর্যন্ত—সর্বস্তরের বিক্রেতারা নানা অজুহাতে তাঁদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। চাল, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ এ রকম অসংখ্য শতভাগ দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানোতেও বিশ্ববাজারের যুক্তি দেখানো হচ্ছে। আর বাড়ানোর ক্ষেত্রেও নেই কোনো রাখঢাক। কোনো কোনো পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী, সম্প্রতি কমছে ডলারের দামও।
কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্যমন্ত্রী সব জেনেবুঝেও যেন নির্বিকার, অসহায়। যিনি সরাসরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন, সমস্যার সমাধান করবেন, সেই বাণিজ্য-মন্ত্রী উল্টো প্রশ্ন রাখছেন, কেন এত দাম বাড়ছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে। পণ্যের দাম এত বাড়ার যৌক্তিকতা নেই জেনেও খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী ডলার সাশ্রয়ের সময়ে উল্টো ভরসা করছেন আমদানি আর শুল্ক কমানোর সহজ উপায়ের ওপরে। এই ভরসায় নরম সুরে হুমকি দিয়েই দায় সারছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সব শেষ হিসাবে, দেশের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হলেও বাস্তবে পণ্যের দামের পারদ তারও ওপরে। মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারার মধ্যেই আকস্মিক জ্বালানি তেলের দাম একবারে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ায় আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়েছে। এরপর বলা যায়, রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ী-বিক্রেতারা।
দুই দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে প্রতি কেজি চালের দাম সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। অথচ কোন কারণে চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা বাড়বে—প্রশ্ন তাঁর। তিনি এও বলেছেন, ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকে, তাহলে এ সুযোগ ব্যবসায়ীরা কীভাবে নেন? আর সরকারের হিসাব যদি ঠিক থাকে, তাহলে বর্তমানে দেশে চালের সরবরাহেও কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। সরবরাহ স্বাভাবিক, পরিবহন খরচে কেজিতে মাত্র ৫০ পয়সা দাম বাড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে মন্ত্রীর দাবি মতো ৪-৫ টাকা থেকে অনেক বেশি বেড়েছে, যা বাজারে গেলে ক্রেতারা টের পাচ্ছেন। এর পেছনে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। সেই কারসাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হচ্ছে।
এর ফলে ব্যবসায়ীরাও আশকারা পাওয়ার পাশাপাশি শুল্ক ছাড়ের সুবিধাও নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন। বিগত সময়ে এ রকম শুল্ক ছাড় দেওয়ার সুফল বাস্তবে ভোক্তারা পায়নি।
চালের পর ডিমেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের কমবেশি পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। কেবল মুরগির ডিম উৎপাদিত হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটির মতো। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬৪ লাখ পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৭৩৬ কোটি পিস। এক বছরের ব্যবধানে ৩২১ কোটি পিস ডিম বেশি উৎপাদিত হয়েছে। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে ১২১টিতে উন্নীত হয়েছে, আগে যা ছিল ১০৪টি। তার মানে দেশে প্রতিজনের জন্য যে পরিমাণ ডিম উৎপাদন হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারিত হওয়ার সহজ সূত্র থাকলেও, এখন বাস্তবে তা কাজ করছে না। এখানেও অজুহাত দেওয়া হচ্ছে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার।
উৎপাদকদের এ অজুহাত সত্য হলেও, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, খামার পর্যায়ে একটি ডিমের বর্তমান উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৮ টাকা। অথচ বর্তমানে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে প্রতিটি ডিমে মধ্যস্বত্বভোগীরা অন্তত ৪-৫ টাকা অতি মুনাফা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন ডিমের মূল্যবৃদ্ধিও অযৌক্তিক। এ জন্য ডিম আমদানি করে তিনি এর দাম সহনীয় করার হুমকি দিয়েছেন। আসলে আমদানির প্রশ্ন তখনই আসে, যখন দেশে সরবরাহ ঘাটতি থাকে। তথ্য বলছে, দেশে ডিমের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে কেন ডিম আমদানি করতে হবে? আর সরকার যেখানে ডলার সাশ্রয়ের জন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে তিনি কোনো যৌক্তিক পর্যালোচনা ছাড়া, সরকারের নীতির বাইরে গিয়ে কীভাবে আমদানির কথা বলেন–এ প্রশ্নও উঠেছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অবশ্য পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাজারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন। তিনি ডিমসহ কোনো পণ্যেরই ঘাটতি নেই জানিয়ে বলেন, সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এরই মধ্যে ডিমের বাজারে অভিযানের ফলে দাম ডজনে ৩০ টাকার মতো কমেছে এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ডজন ১২০ টাকায় নেমে আসবে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম বাড়বে কেন? আর উপায় হিসেবে কেনই-বা আমদানি করে সমস্যার সমাধানের কথা বলা হচ্ছে? এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা বলার মাধ্যমে আসলে বাজারে একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে এসেছে। বিশ্বখ্যাত নিত্যপণ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস বলছে, পাম তেলের দাম কমতে কমতে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ নিচে নেমে এসেছে। ডলারের দামও এক সপ্তাহ ধরে কমছে। সয়াবিনের দাম গত বছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। আর বাস্তবে দেশের বাজারে এখনো এর দাম প্রায় দ্বিগুণ। অথচ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এর আগে দাম সহনীয় রাখতে শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ভোক্তারা এর সুফল পায়নি। ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী একবার ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। ব্যবসায়ীদের আবদারে দাম বাড়ানোর ফাঁদে পা দিয়ে তিনি আবারও একই ভুল করছেন কি না, এখন তা নিয়েও প্রশ্ন।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। সয়াবিনের দাম বিশ্ববাজারে এক বছরের ব্যবধানে সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়লেও টিসিবির হিসাবে দেশের বাজারে বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। একই সময়ে বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম সাড়ে ৪ শতাংশ কমলেও, টিসিবির দুই দিন আগের হিসাব বলছে, দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর এখন দাম আরও বাড়ানোর আলোচনা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রীও দাম বাড়াতে সায় দিয়েছেন।
ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নজরদারি নেই। বরং মন্ত্রণালয় বাজার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বলেন, গ্রামে একটি কথা আছে, চোরকে বলে চুরি কর, গৃহস্থকে বলে সজাগ থাক—বাজারের অবস্থা এখন এমনই। ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে বাজারটিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বে যখন সবকিছুর দাম কমছে, এখানে বাড়ছে। আর জ্বালানির দাম না বাড়িয়েও সরকার ভর্তুকি দিয়ে চলতে পারত। মানুষের জীবন একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের ভেতরেরই একটি অসাধু মহলের বুদ্ধিতে জ্বালানির দাম বাড়ানোর মাধ্যমে উন্নয়নকাজের ভালো ইমেজকে ধূলিসাৎ করে সরকারকে বিতর্কিত করা হয়েছে। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটালে সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪