Ajker Patrika

টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে শ্রমজীবীরা

ফকিরহাট ও চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৫১
টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে শ্রমজীবীরা

বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তায় তিন দিন ধরে বাগেরহাটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। দমকা বাতাসের সঙ্গে কখনো হালকা থেকে মাঝারি, আবার কখনো ভারী বর্ষণে বিভিন্ন স্থান জলমগ্ন হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বেড় হচ্ছে না।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আরও দু-তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।

এদিকে গবাদিপশু ও সবজিখেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চিতলমারীর বেশির ভাগ কৃষক। বেশির ভাগ জায়গায় পানি থাকায় ঘর থেকে গরু-ছাগল বের করা সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় এসব পশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ক্ষতির মুখে আগাম চাষ করা টমেটো ও নানা ধরনের সবজির খেত।

এ ছাড়া মোংলার চাঁদপাই, চিলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের ছোট-বড় প্রায় ৪৯৫টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। সব ইউনিয়নে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার অনেক রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ির আঙিনা, খেত ও মাছের ঘের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী। তবে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। লোকজন বাইরে বের না হওয়ার কারণে যাত্রীর অভাবে ভ্যান-রিকশাচালকদের অলস বসে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার যাত্রীর আশায় বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

ফকিরহাট বাজার, কাটাখালী, মানসা, কাঁঠালতলা, বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড মোড়ে পান-সিগারেট ও চায়ের দোকানে ক্রেতাশূন্য থাকায় জ্বলছে না চুলা। কেটলি, ফ্লাক্স গুছিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় চা বিক্রেতাদের। কাজ বন্ধ থাকায় দিনমজুর ও নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলেনি কোথাও।

উপজেলা মোড় এলাকায় গতকাল দুপুরে যাত্রীর আশায় দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানচালক আ. রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে ভ্যান নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে বসে আছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬ টাকা আয় করেছি। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে না খেয়ে মরতে হবে।’

চিতলমারী বাজারের ভ্যানচালক আলমগীর শেখ, মিজানুর শেখ, অটোচালক মো. ওয়াহিদুল, নছিমনচালক আসাদ শেখ ও মুচি রতন রবি দাস বলেন, তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে তাঁরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। তাঁদের আয়ের ওপরই সংসার চলে। তাই রুজির ধান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে বের হয়েছেন।

চিতলমারীর সুরশাইল গ্রামের কৃষক গাউস গাজী ও অভি শেখ বলেন, গরু-ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এগুলো ঘর থেকে বের করতে পারছেন না। প্রাণীগুলোর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, ভারী বর্ষণে রোপা আমনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক জায়গায় ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও শীতের আগাম সবজি চাষও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে বৃষ্টি না কমার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, টানা বৃষ্টিতে এ পর্যন্ত টমেটোসহ প্রায় ১৫ একর সবজিখেত ও ৭ একর পাটখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

ফকিরহাট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সবুর আলী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আবেদন করলে এবং তা জেলা সমন্বয় সভায় অনুমোদিত হলো তাঁরা সহায়তা করবেন।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত