Ajker Patrika

ভিটে নেই বলে চাকরি হচ্ছে না আসপিয়ার

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ১৭
ভিটে নেই বলে চাকরি হচ্ছে না আসপিয়ার

চাকরির সব ঠিকঠাক উতরে এসে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আসপিয়া ইসলাম (১৯), একটা চাকরি পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশের সেই চাকরি আটকে গেল পুলিশি যাচাইয়ে (ভেরিফিকেশন)। আসপিয়াদের যে ভিটেমাটিই নেই, নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা। পুলিশ তাঁকে চাকরি দেয় কীভাবে?

আশাহত হলেও আশা ছাড়েননি তিনি। দেখা করেছেন পুলিশের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে। তবে তিনিও দিতে পারেননি কোনো আশ্বাস। তবে কি আসপিয়া চাকরিটি পাবেন না? তাঁর এই স্বপ্নভাঙার গল্প ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

আসপিয়া জানান, সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন তিনি। বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করে জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন। পরে দুই দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও উতরে যান। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশি যাচাই (ভেরিফিকেশন) হয়। এতে আটকে যান আসপিয়া। গত বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আব্বাস উদ্দিন। প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তাঁর পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। আসপিয়া জানতে পারেন স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় পুলিশে তাঁর চাকরি হচ্ছে না।

আসপিয়া বলেন, ‘৭টি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের তো কোনো জমি নেই। একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করছি। কিন্তু আমার ভোটার আইডি, জন্মনিবন্ধন হিজলার বড়জালিয়া ইউনিয়নে।’

জানা গেছে, আসপিয়া ইসলামের বাবা শফিকুল ইসলামের পৈতৃক নিবাস ভোলার চরফ্যাশনে। প্রায় তিন দশক আগে তিনি কাজের সন্ধানে বরিশালের হিজলা উপজেলায় আসেন।

হিজলায় একটি বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এখানে জন্ম হয় আসপিয়া ইসলামসহ তিন মেয়ে এবং এক ছেলের। ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলাম মারা গেছেন।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিজলা থানার এসআই আব্বাস উদ্দিন বলেন, আসপিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা হিজলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাঁদের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। তিনি যে তথ্য পেয়েছেন প্রতিবেদন সেটাই জানিয়েছেন।

এই অবস্থায় বুধবার বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে চাকরির জন্য আকুতি জানান আসপিয়া। কিন্তু তিনি এই তরুণীকে কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি আক্তারুজ্জামান। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘আসপিয়া বরিশালের স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। মেয়েটির প্রতি কষ্টবোধ থেকেই যায়। যারা তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায় যদি মেয়েটি চাকরি পায় তাতে খুশি হব। এজন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিণত হবে।’

এদিকে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, আসপিয়ার বিষয়টি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।

আসপিয়ার প্রশ্ন, ‘নিজেদের জমি নেই। শুধু এজন্য চাকরি হবে না। এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত