Ajker Patrika

ডায়াবেটিস মাপায় নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপের ব্যবহার, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
ডায়াবেটিস মাপায় নকল  ও মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপের ব্যবহার,  হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

ডায়াবেটিস তথা রক্তে শর্করার পরিমাণ মাপার যন্ত্র গ্লুকোমিটারে ব্যবহৃত স্ট্রিপ মেয়াদ বাড়িয়ে বিক্রি করে ফার্মা সলিউশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নকল স্ট্রিপও আছে বাজারে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে তা ধরা পড়লেও নীরব রয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপ উদ্ধারের পর বিভিন্ন মহল থেকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে নালিশও জানানো হয়েছে।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব স্ট্রিপ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি কাকরাইলের লাজ ফার্মা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপ পাওয়া যায়। ইনভয়েস পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি ফার্মা সলিউশনের সরবরাহ করা। সব সত্যতা সামনে আসার পর ফার্মা সলিউশনের কর্মকর্তারা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপ ব্যবহারে ভুল রিডিং বা ফল আসবে এবং এতে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা আছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার বলেন, এসব স্ট্রিপের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটি ভুল রিডিং দেবে। রিডিং দেখে ওষুধ দেওয়া হলে রোগীর সমস্যা হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা হয়তো বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। তবে গ্রামের সাধারণ চিকিৎসকদের পক্ষে এটি নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বেশি ডোজে রোগীর সমস্যা তৈরি হবে। আবার কম ডোজেও সমস্যা হবে। 

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গ্লুকোমিটারে ব্যবহৃত আকুচেক ব্র্যান্ডের স্ট্রিপ জার্মানির রোচ কোম্পানির তৈরি। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফার্মা সলিউশনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাদের কাছে যেসব স্ট্রিপ থেকে যায়, সেগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে বাজারে ছাড়া হয়। ফার্মা সলিউশন নয়াপল্টনের প্রিন্ট ওয়ান নামের প্রতিষ্ঠান থেকে মোড়ক ছাপিয়ে নেয়। সেখানে অভিযান চালিয়েও স্ট্রিপের মেয়াদ বাড়িয়ে ছাপানোর সত্যতা মেলে।

এসব পণ্যের মানসহ সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তাদের অনুমোদন ছাড়া এসব স্ট্রিপ আমদানি ও বিক্রির সুযোগ নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হেলথ কনজ্যুমার রাইটস ফোরাম। সংগঠনের সদস্যসচিব ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নীরব থাকাটা খুবই উদ্বেগের। তাদের প্রকৃত সত্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।  

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের স্ট্রিপের বিষয়টি তাঁর নজরে আসার পর দেশের ১৪০টি ডিপোতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন স্ট্রিপ জব্দও করেছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ভোক্তা অধিদপ্তর দোকানিদের হয়রানি না করে মূল জায়গায় আঘাত হেনেছে। এ জন্য তাদের অভিযানকে সাধুবাদ জানাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত