Ajker Patrika

যন্ত্র বস্তাবন্দী, বঞ্চিত রোগী

রাসেল আহমেদ, তেরখাদা
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ১১
যন্ত্র বস্তাবন্দী, বঞ্চিত রোগী

তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি সবই আছে। কিন্তু এগুলো বদ্ধঘরে বস্তায় মোড়ানো। দশ বছর ধরে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও কখনো অস্ত্রোপাচার হয়নি।

পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স সবই থাকলেও টেকনোলজিস্ট ও অফিস কর্মচারীদের বেশির ভাগ পদই খালি। ফলে জ্বর আর মাথাব্যথার ওষুধ ছাড়া উপজেলাবাসী স্বাস্থ্যসেবার জন্য শহরমুখী হচ্ছেন প্রতিদিনই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে এ উপজেলায় সরকারের উন্নয়ন বস্তাবন্দী করে রাখা হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। ১৯৭৪ সালে মাত্র ২৫টি শয্যা নিয়ে যাত্রা করা তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখনো ৩১ শয্যায় সীমাবদ্ধ। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

সবকিছু আছে আবার কিছুই নেই এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানকার এক্স-রে মেশিনটি ১০ বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকদের আমলে কেউ কোনো দিন এক্স-রে মেশিনের চেহারাও দেখেননি। শুধু শুনেছেন, ওই ঘরের মধ্যে একটি এক্স-রে মেশিন আছে, যা তালা দেওয়া।

আল্ট্রাসনো মেশিন আছে। তার প্রিন্টার নষ্ট ও অপারেটর নেই। তাই কখনো আল্ট্রাসনো হয় না। একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব আছে কিন্তু মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করার মতো টেকনোলজিস্ট না থাকায় কোনো দিন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। দশ বছর আগে কোটি টাকা খরচ করে একটি আধুনিক অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু কোনো দিন তা ব্যবহার হয়নি। সার্জন থাকলে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক থাকেন না। আবার অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক থাকলে সার্জন থাকেন না।

সিজারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ সেবাও বন্ধ রয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সিজার কার্যক্রমে অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দীর্ঘকাল পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হলেও এখন বলা হচ্ছে সার্জন নেই। ফলে গর্ভবতী নারীদের মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকে বাধ্য হয়ে ভর্তি করা হচ্ছে। এতে করে সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারের গর্ভবতী নারীরা চরম বিপাকে পড়ছেন। একাধিক রোগী বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরাই বাইরের ক্লিনিকে অপারেশন করছেন, কিন্তু এখানে (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) অপারেশনে যত অজুহাত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপারেশনযোগ্য রোগী আসলে কৌশলে দালালের মাধ্যমে ক্লিনিকে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটছে প্রসূতি নারীর মৃত্যুও। স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, গর্ভবতী নারীর অপারেশনের জন্য তেরখাদা হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও প্রায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে সিজার কার্যক্রম বন্ধ আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল বাশার বলেন, এক্স-রে মেশিন আছে শুনেছি কোনো দিন চোখে দেখিনি। অন্যান্য সেবাও জনবলের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। জনবল সংকট পূরণ না হলে এসব সেবা চালু করা সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা নিতে আসা ইখড়ি এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকেরা এক্স-রে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার কথা বলেন। কিন্তু হাসপাতালে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট দেখাতে হয়। এতে সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হয়। চিকিৎসা নিতে আসা অপর রোগী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি সচল থাকলে অল্প খরচেই সেবা পেতাম। বাইরে থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগে। অনেকের দাবি অনেক সময় এই পরীক্ষা করার জন্য জেলা শহর খুলনাতে যেতে হয়। এতে করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি তেরখাদাতে দেড় বছর হলো যোগদান করেছি। এর প্রায় ৮-১০ বছর আগে থেকেই এক্স-রে মেশিনটির এ অবস্থা। এক্স-রে টেকনিশিয়ান না থাকায় কাজে আসছে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কয়েকবার রিপোর্ট দিয়েছি। এখন অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মাদ বলেন, উপজেলাগুলোতে আধুনিক এসব সেবা চালু করতে প্রয়োজন জনবল। এ পদগুলো শূন্য রয়েছে। এ কারণে রোগীদের আধুনিক সেবা দিতে পারছি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত