Ajker Patrika

পাহাড়ে সহিংসতায় ষড়যন্ত্র দেখছে সরকার

রাঙামাটি ও থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা
Thumbnail image

উপদেষ্টারা বললেন, দেশের বাইরে একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে এই সহিংস ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন উপদেষ্টারা।

মতবিনিময় সভায় পাহাড়ি-বাঙালি নেতারাও মনে করেন, একটি অংশ পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি চায় না; তারা এ সহিংসতা ঘটিয়েছে। তবে শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসনকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শুরু করেছে পাহাড়িরা। অবরোধের প্রথম দিন গতকাল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। তবে সড়ক অবরোধের কারণে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। শহরের ভেতর কিছু হালকা যান চলাচল করেছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে রাঙামাটি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বহাল রয়েছে ১৪৪ ধারা। মাঠে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। কোথাও কাউকে জড়ো হতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জুম্ম ছাত্র-জনতার ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে ইউপিডিএফ। ইউপিডিএফের জেলা সংগঠন অংগ্য মারমা জানান, অবরোধের প্রথম দিন শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে।

অবরোধের বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল বলেন, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা সদর ও উপজেলাগুলোয় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল রয়েছে।

রাঙামাটিতে উপদেষ্টাদের মতবিনিময়
গতকাল দুপুরে রাঙামাটিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সভা শেষে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বাইরে একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার রাঙামাটির সহিংস ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবারের সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, রাঙামাটির ঘটনায় যারা জড়িত, তা তদন্ত করতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত টিম গঠন করা হবে। পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনোভাবে অবনতি হতে দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে কেউ পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করলে তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে। এ সহিংস ঘটনায় যারা জড়িত, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন এই দুই উপদেষ্টা। এর আগে গতকাল দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে রাঙামাটিতে আসেন তিন উপদেষ্টা। অন্য উপদেষ্টা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। রাঙামাটি সেনা রিজিওনের সম্মেলনকক্ষে সভা করেন তাঁরা।

প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল আজিজ, পুলিশ মহাপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, এনএসআইয়ের ডিজি আবু মোহাম্মদ সারোয়ার ফরিদ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়, জেএসএস কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বিএনপির জেলা সভাপতি দীপন তালুকদার, পাংখোয়া সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রেম লিয়ানা পাংখোয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি হারুন রশীদ মাতব্বর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, মূলত গুজব ছড়িয়ে রাঙামাটির পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, সবাইকে ধংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। পাহাড়ে সম্প্রীতি বজায় রাখতে পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে কাজ করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, একটি অংশ পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি চায় না। তারা এ সহিংসতা ঘটিয়েছে। 

নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান উপদেষ্টাদের
খাগড়াছড়ির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে সুন্দর পরিবেশ আবারও ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেছেন, ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। তা যেন আগামীতে আর না হয়, সে জন্য সচেষ্ট থাকা এবং পারস্পরিক মেলামেশাটা আরও বেশি হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

সাংস্কৃতিক মেলামেশায় বেশি জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাসান আরিফ বলেন, অত্যন্ত তুচ্ছ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে বিশেষ করে খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে অতগুলো প্রাণ গেল; এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

হাসান আরিফ বলেন, বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও বেশি। সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। গুজব ছড়ানো হয়েছে।

গতকাল বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। 
রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এই মতবিনিময় সভায়ও পাহাড়ের বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে বক্তব্য দেন স্থানীয় নেতারা। 

থানচিতে বিক্ষোভ
বান্দরবানের থানচি উপজেলার আদিবাসী ছাত্রসমাজের ব্যানারে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থানচি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আদিবাসী ছাত্রসমাজের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আগে বাসস্টেশন মুক্তমঞ্চ থেকে ফেস্টুন, ব্যানার, লিফলেট নিয়ে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ করে তারা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে পাহাড়ি-বাঙালিরা সম্প্রীতির মেলবন্ধনে বসবাস করে আসছে। বাঙালি হত্যার অভিযোগে পাহাড়িদের দোকান-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান তাঁরা। পাহাড়িদের ওপর হামলা-অগ্নিসংযোগকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।

বক্তারা বলেন, ‘আমাদেরও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে; কিন্তু একটি মহল সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এই সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা না হয়, তাহলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ প্রয়োজনে ঢাকার উদ্দেশে লংমার্চ করার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

থানচি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাছির বলেন, পাহাড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মতো বান্দরবানে থানচিতে পুনরায় না ঘটুক, সে জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত