Ajker Patrika

পারাপারে বাড়তি টাকা আদায়

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ০৮: ৪০
পারাপারে বাড়তি টাকা আদায়

গাজীপুরের কালীগঞ্জের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষার জন্য প্রতিদিনই নৌকায় পার হতে হয় এ নদী। তবে নৌকায় নদী পারাপারের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ৫ টাকা করে। ১১ দিন আগে কালীগঞ্জের গুদারাঘাটে বাড়ানো হয় ভাড়া। এতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

তবে ঘাটের ইজারাদার বলেছেন, নদীতে কচুরিপানা বেড়ে গেছে। এতে মাঝিদের যাত্রী পারাপারে সময় ও খরচ বেড়েছে। তাই নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বাসিন্দাদের বিভক্ত করেছে শীতলক্ষ্যা নদী। তবে পলাশ উপজেলার বাসিন্দাদের প্রতিদিনই ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাসহ নানা কাজে নদী পার হয়ে আসতে হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জে। সম্প্রতি শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে আসা কচুরিপানার অজুহাতে গুদারাঘাটে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদ করলে ঘাটের ইজাদার ও মাঝিদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় নদী পার হচ্ছেন যাত্রীরা।

এ ছাড়া বর্তমান খেয়াঘাটে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোমে নৌকা না ভিড়িয়ে বর্তমানে ভাদার্ত্তী (পুরোনো এস আর অফিস) ঘাটে ভেড়ানো হচ্ছে।

অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে মো. জামির নামের এক যাত্রী বলেন, ‘নদী পার হওয়া এখন মুশকিল হয়ে পড়েছে। ঘাটের কাছে অতিরিক্ত কচুরিপানা এসে জমেছে। এতে সময় লাগছে বেশি। এই অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আগে নৌকাভাড়া দিতে হতো ৫ টাকা, বর্তমানে দিতে হচ্ছে ১০ টাকা।’

মো. জামির আরও জানান, যখন কোনো সমস্যা থাকে না, তখন তো ভাড়া কম রাখা হয় না। তা ছাড়া ঘাটের ইজারাদারদের নিজস্ব নৌকা থাকার কথা থাকলেও তাঁদের কোনো নৌকা নেই।

মো. শাহাবুদ্দিন নামের অপর যাত্রী বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু কালীগঞ্জ শহরকেন্দ্রিক। আমরা চাইলেও আসা বন্ধ করতে পারব না। প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছি কালীগঞ্জে। ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনা করে এখানকার স্কুল-কলেজে। প্রতিদিন সব মিলিয়ে ভাড়ার পেছনেই চলে যাচ্ছে প্রায় ৫০ টাকা। কচুরিপানার অজুহাতে ভাড়া বাড়ানো একধরনের দুর্নীতি। প্রশাসনের উচিত খেয়াঘাটের দিকে নজর দেওয়া।’

মো. শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘আগে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পার হতে ৪-৫ মিনিট সময় লাগত, এখন লাগছে দ্বিগুণ। ভাড়াও দিতে হচ্ছে বেশি। তবে নৌকার মাঝি ও ইজারাদারদের নৈরাজ্য স্থানীয় প্রশাসনের তদারক করার কথা। কিন্তু প্রশাসন এখানে একেবারে চুপ। ফলে নদী পারাপারে চলছে নৈরাজ্য।’

এ বিষয়ে গুদারাঘাটের নৌকার মাঝি কাওসার মিয়া বলেন, ‘কচুরিপানার জন্য পরিশ্রম করতে হয় বেশি। তা ছাড়া কচুরিপানা নেই এমন ঘাটে নৌকা ভেড়াতে হচ্ছে। তাই আগের চেয়ে তেলও খরচ হয় বেশি। আগে লাগত ২-৩ লিটার, এখন লাগে ৫-৬ লিটার। তাই ভাড়া বেশি না নিলে আমাদের চলবে কীভাবে?’

একই অভিযোগ খেয়াঘাটের নৌকার আরেক মাঝি গিয়াস উদ্দিন ইউনুসের।

কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের সাব-ইজারাদার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলাম সিজুর কাছ থেকে ইজারা কিনে নিয়েছিলাম। কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁকে বলতে পারেন।

তবে কচুরিপানার জন্য অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কিছু করার নেই। মাঝিদের সময় ও খরচ বেশি লাগছে। তাই ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।’

ইজারাদার হিসেবে তাঁর কোনো নিজস্ব নৌকা নেই বলে জানান তিনি।

কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের মূল ইজারাদার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম সিজু বলেন, ‘ঘাটের ইজারা পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা এলাকার মোশারফ নামের এক লোকের কাছে আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আর নতুন ইজারা তিনিই পেয়েছেন।’

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেন নিচ্ছে, কে নিচ্ছে, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর খেয়াঘাট এলাকা থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করা যায় কি না, সে বিষয়ে চেষ্টা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত