Ajker Patrika

পালাবদলে চাঁদাবাজি ও দখলের মচ্ছব

বিশেষ প্রতিনিধি ও  নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৪৭
পালাবদলে চাঁদাবাজি  ও দখলের মচ্ছব

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের উপদেষ্টারাও। কিন্তু এসবে গা করছে না একটি গোষ্ঠী।

সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে তারা। কেউ চাইছে ঠিকাদারি, কেউ দাবি করছে চাঁদা, আবার কেউ ব্যস্ত চেয়ার দখল নিয়ে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দখলের মচ্ছব লেগেছে সর্বত্র। 

গত রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখায় গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করেছে ঢাকা মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। মোহাম্মদপুরের বছিলায় খাসজমি দখল করে বিএনপির দলীয় ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী। শুধু এই দুটি নয়, গত কয়েক দিনে দখলের এমন বেশ কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন আজকের পত্রিকার সাতজন প্রতিবেদক।

গত সোমবার বেলা আড়াইটা। রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২০-২৫ জনের একটি দল নিয়ে প্রবেশ করেন কুদ্দুস মোল্লা ও দীপু সরকার নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কক্ষে যান। কমপক্ষে ২০ জন প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে পরবর্তী দরপত্রগুলো তাঁদের দিতে হবে, এমন বার্তা দিয়ে যান তাঁরা। এরপর মঙ্গল ও বুধবার এ দুই ব্যক্তির নামে একাধিক যুবক গিয়ে ধমকের সুরে প্রকৌশলীদের কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাকরিজীবনে সব সময়ই রাজনৈতিক লোকজন কাজ নেওয়ার জন্য আসে। তাদের কিছু কাজ দিতেও হয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যা করা হচ্ছে, তা কেউ করেনি। মনে হচ্ছে, বুঝিয়ে কিছু বলতে গেলেও মেরে ফেলবে।’

রাজউকে প্রভাব বিস্তারের মহড়া
দু-তিন দিন ধরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অফিসের চিত্রও অনেকটা এমন। গত সোমবার রাজউক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের কক্ষে গিয়ে নিজেদের নানা পরিচয় দিচ্ছেন একদল লোক। এলাকার রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাবের ফিরিস্তি দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন থেকে নিয়মিত আসবেন। যাওয়ার আগে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে বলছেন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের। পরিস্থিতি বেসামাল দেখে রাজউকের কোনো কোনো কর্মকর্তা বা প্রকৌশলীকে নিজ দপ্তরে না বসে অন্য সহকর্মীর কক্ষে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে সেদিন। একপর্যায়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার সব দপ্তর পরিদর্শনে বের হন। এতেও পরিবেশ খুব একটা শান্ত হয়নি। 

রুমে রুমে গিয়ে চোটপাট করা এসব ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় রেজাউল করিম বাবু, শ্রমিকনেতা পরিচয় দেওয়া বেলাল হোসেন রিপন, আমিনুল হুদা, জাকির হোসেন এবং ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে প্রভাব বিস্তারের এই মহড়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি এমন যে চেয়ার বসার জন্য একটি গ্রুপকে ইতিমধ্যে টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করত। এরপর আরও টাকার জন্য দরজায় এসে লাথি মেরেছে।’ 

ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে নানা অনিয়মে চাকরি হারানো আমীর খসরু নামের একজন রাজউক চেয়ারম্যানকে চাপ দিয়ে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহালের চিঠি করিয়ে নিয়েছেন। আর রাজউকের শ্রমিক সংগঠনের পরিচয়ে অথরাইজড অফিসার, ইমারত পরিদর্শক, উচ্চমান সহকারী পদে বদলি করিয়ে নিচ্ছে একটি গ্রুপ। তারা ২০ জনের মতো বদলির তদবির করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে। 

গণপূর্তে টেন্ডারবাজি
গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন ডিভিশনে দলবল নিয়ে ঠিকাদারি কাজের জন্য চাপ দিচ্ছে একটি মহল। তারা পূর্তের ঢাকা ডিভিশন ১, ৩, ৪ এবং শেরেবাংলা নগর ও আজিমপুর ডিভিশনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ফারুক হোসেন ও সুইট নামের দুই ব্যক্তি ঠিকাদারি কাজের জন্য প্রকৌশলীদের চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসতে সংস্থার প্রধানের দপ্তরে গিয়ে মনিরুজ্জামান এবং বদরুল আলম নামের দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

জাগৃকে চাঁদাবাজি
ক্ষমতার পালাবদলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) উন্নয়নকাজগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়েছে একটি মহল। সংস্থাটির অধীনে সবচেয়ে বড় ধরনের উন্নয়নকাজ চলছে মোহাম্মদপুর এলাকায় দোলনচাঁপা এবং কনকচাঁপা ফ্ল্যাট প্রকল্পে। তিন-চার দিন ধরে সেখানে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজ বন্ধ করে দিয়ে আলোচনা করতে চাপ দিচ্ছেন মাহবুবুল ইসলাম স্বপন নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর পক্ষে থেকে সেখানে সার্বক্ষণিক বেশ কিছু যুবক অবস্থান করছেন। ভিডিও ফুটেজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বপন টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। টাকা না পেয়ে তাঁর লোকজন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের মারধর করছে।

ঢাকা ওয়াসায় হট্টগোল
কর্মচারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ওয়াসা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ ফাঁকা। ৫ আগস্টের পর দুই দিন তাকসিমের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা অফিস না করলেও তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। ওয়াসা ভবনের দোতলা, তিনতলায় অনেক কর্মকর্তার নেমপ্লেট তুলে ফেলা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক লীগ অফিস দখল নিতে হট্টগোল করতে দেখা গেছে একদল লোককে।

ইইডি ও ইউজিসিতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ 
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরেও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দপ্তরের প্রধানদের জিম্মি করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিকে বদলি করতে বাধ্য করা হয়েছে। দপ্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বিশেষ একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘সুযোগ বুঝে’ যোগ দিয়েছেন। 

গত মঙ্গলবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে পদত্যাগে বাধ্য করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ। অভিযোগ উঠেছে, ইইডিতে গত কয়েক দিনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মদদ দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী পদে যেতে ইচ্ছুক ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা। আর প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। এই দুই কর্মকর্তা নিজেদের সাবেক চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম, সমীর কুমার রজক দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকতও এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইইডি সূত্র জানান, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জে চাকরি করেছেন। সেখানে তার শ্বশুর বাড়িও। এরপর তিনি সাবেক চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন-এর সুপারিশে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন পান। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি। 

সূত্র আরও বলছে, দীপু মনির শাসনামলে মূলত ইইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রধান কার্যালয়ের ডেস্ক-১ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। চাঁদপুরে বাড়ি হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দীপু মনির বাসভবন মেরামতে খরচেরও অভিযোগও রয়েছে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীরকে অবরুদ্ধ করে সচিব পদে রদবদল, ২১ কর্মকর্তাকে পদচ্যুতি-বদলি ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক খোকন খানের শাস্তি মওকুফের দাবি জানান এক ছাত্রদল নেতা এবং ইউজিসির গুটিকয়েক কর্মকর্তা। তাঁদের দাবির মুখে সচিব পদ থেকে ড. ফেরদৌস জামানকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে পেছনে থাকা মো. ফখরুল ইসলামকে। তবে এই ফখরুল ইসলাম গত মাসেও শেখ হাসিনার স্তুতি গেয়ে গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন। একই সঙ্গে দাবির মুখে অফিস সহায়ক খোকনের শাস্তিও মওকুফ করা হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওদুদ আহমেদ এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় দখল
৬ আগস্ট কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামের প্রতিষ্ঠানটি কিছু ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সহকারী রেজিস্ট্রার কুতুব উদ্দীন আজকের পত্রিকার কাছে অভিযোগ করে বলেন, দেশের চলমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে মো. মুজিবুর রহমান ৬ আগস্ট সকালে একদল বহিরাগত লোক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাট চালিয়েছেন। একপর্যায়ে মুজিব বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সরিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নাম (মুজিবুর রহমান) জুড়িয়ে দিয়েছেন। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আগে দখল হয়েছিল। এখন উদ্ধার করলাম।’ 

প্রশাসনে চেয়ার দখলের দৌড়
৫ আগস্টের পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও দেখা দিয়েছে চেয়ার দখলের মচ্ছব। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে একটি গ্রুপ বিভিন্ন চেয়ারে বসার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫, ১৭, ২০ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের একটি অংশ মূলত এসব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁদের চাপে জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে তাঁদের পোস্টিং বাগিয়ে নেন। আবার একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পাওয়ার তারা পদোন্নতিও করিয়ে নেয়। তাদের ভয়ে অফিস করতে পারেননি এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ) অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে গত পরশু সেখানে একজন নতুন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দখল হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রও
পাবনার সুজানগরে নির্মাণাধীন ৬০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশের পাশাপাশি চীনা নাগরিকেরাও কাজ করছেন। কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চররামকান্তপুরে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর এই কেন্দ্র একাধিকবার দখলের চেষ্টা করেছেন স্থানীয় মো. ফারুক ওরফে তাবিজ ফারুক, আরশাদ আলী ওরফে আরশাদ মেম্বার ও লুৎফর ডাক্তার। গত মঙ্গলবার প্রায় ২০০ লোক নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রটি দখলেন চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় চীনা নাগরিকেরা এলাকা ত্যাগ করেন।

সিটি করপোরেশনে ভয়ভীতি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও (ডিএসসিসি) চলছে একই অবস্থা। সেখানে যাঁরা বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা এখন শ্রমিকনেতা সেজে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরিফুল ইসলাম নামের একজন এ দলে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মেয়র ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আশিকুর রহমানকে বল প্রয়োগ করে গত মঙ্গলবার পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরও নগর ভবনে অফিস করতে পারছেন না। এ প্রকৌশলীর দরজায় নানা ধরনের লিফলেট লাগানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ‘কাওলার তারানটেক এলাকায় আমার জমিতে একটি খেলার মাঠ করেছিলাম। সেটিতে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলত। দুই দিন আগে সেটিও আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল ভূঁইয়া দাঁড়িয়ে থেকে মাঠের বাউন্ডারির দেয়াল ভেঙে দখল করে নিয়ে গেছেন।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চেয়ার দখলের হিড়িক
চেয়ার দখলের হিড়িক পড়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে। যে যেভাবে পারছেন, বদলি অর্ডার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথের আগেই অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তার বদলির ঘটনা ঘটেছে। ডিজি নিজের চেয়ার ঠিক রাখার জন্য তড়িঘড়ি করে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন। এই বদলি প্রক্রিয়ার হোতা মো. আফসার আলী নামের এক ঠিকাদার। তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী ভান্ডার কর্মকর্তা (স্টোর অফিসার) ছিলেন। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তিনি চাকরি হারান। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের ট্রাক প্রতীকে আফসার আলী সাতক্ষীরা সদর-২ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, আফসার আলী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হককে চাপ দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দিয়ে এই বদলি করিয়েছেন। 

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিশেষ প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান তুহিন ও উবায়দুল্লাহ বাদল এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাহুল শর্মা, মোস্তফা ইউসুফ ও  নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল মাসুম]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত