Ajker Patrika

কলম্বিয়ায় জলহস্তী এখন গলার কাঁটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ২৩: ৫১
Thumbnail image

প্রাকৃতিক বিস্ময়, বনাঞ্চল আর পরিযায়ী পাখির জন্য বিখ্যাত লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া। সে দেশেই এখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলহস্তীর আধিক্য। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে দেশটির প্রয়াত মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবারকে।

১৯৯৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কলম্বিয়ায় মাদকের স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিলেন পাবলো এসকোবার। ওই সময়ের অস্থিরতার মধ্যে সহস্রাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যেও এসকোবারের মনে বিচিত্র শখ চেপে বসে। ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডালাস শহরের একটি বন্য প্রাণী উদ্যান থেকে তিনি চারটি জলহস্তী নিজের দেশে নিয়ে যান। তবে তা বৈধ কোনো উপায়ে নেওয়া হয়নি। জলহস্তীগুলো পাচার করা হয়েছিল। এসব জলহস্তী রাখা হয় এসকোবারের নিজ শহর মেডেলিনের একটি চিড়িয়াখানায়। এসকোবারের ইচ্ছা ছিল মেডেলিন শহরের চিড়িয়াখানাটি বন্য প্রাণীতে সমৃদ্ধ হবে। এ জন্য জলহস্তীর পাশাপাশি তিনি গন্ডার, হাতি, জিরাফসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী আনেন।

১৯৯৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মেডেলিন শহরেই নিহত হন এসকোবার। তাঁর মৃত্যুর পর শহরটির চিড়িয়াখানা থেকে বন্য প্রাণীগুলো অন্য চিড়িয়াখানা ও উদ্যানে নেওয়া হয়। কিন্তু জলহস্তীগুলো রয়ে যায়। পরে এগুলো চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় মুক্ত প্রকৃতিতে। ম্যাগডালেনা নদীর তীরে গেলেও এগুলোর দেখা পাওয়া যায় এখন।

মুক্ত প্রকৃতিতে ফেরার পর উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে জলহস্তীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক অ্যামান্ডা সাবালুস্কির ভাষ্য, জলহস্তী আক্রমণাত্মক একটি প্রাণী। আফ্রিকায় প্রতিবছর জলহস্তীর আক্রমণে অন্তত ৫০০ মানুষের প্রাণ যায়। যদিও কলম্বিয়ায় এখনো কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে।

কলম্বিয়ার পন্টিফিশিয়াল জাভেরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক জার্মান জেমিনেজের সঙ্গে অধ্যাপক অ্যামান্ডা সাবালুস্কি বন্য প্রাণী নিয়ে একটি গবেষণায় যৌথভাবে কাজ করেছেন। তাঁর মতে, কলম্বিয়ায় জনঘনত্ব কম। এ কারণে হয়তো জলহস্তীর আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনা কম। তবে প্রাণীটি প্রায়ই ফসলের মাঠে হানা দেয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকেরা।

এ ছাড়া কলম্বিয়ায় পরিবেশগত একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে এই জলহস্তীগুলো। এরা তৃণভোজী। একেকটি জলহস্তী দিনে অন্তত ৫০ কেজি করে ঘাস-লতাপাতা খায়। এ কারণে এরা মলত্যাগও বেশি করে। এসব মল পানিতে মিশে অধিক পরিমাণে শৈবাল তৈরি করে। এসব শৈবাল পানিতে অক্সিজেন প্রবেশে বাধা দেয়। ফলে মাছ মারা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কলম্বিয়ায় ২০৩৫ সাল নাগাদ জলহস্তীর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

কলম্বিয়া সরকার ২০২২ সালে জলহস্তীকে বিপজ্জনক প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করে একটি নতুন আইন পাস করে। তবে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এই আইনের বিরোধিতা করছে। এই পরিস্থিতিতে অধ্যাপক সাবালুস্কি ও জেমিনেজ তাঁদের গবেষণায় একটি উপায় বাতলে দিয়েছেন। তা হলো, পুরুষ জলহস্তীর বন্ধ্যকরণ। তবে প্রকল্পটি বেশ ব্যয়বহুল হবে। কমপক্ষে সাড়ে ৮ লাখ ডলার খরচ হতে পারে। পরিস্থিতির নিরিখে ১৪ লাখ ডলারও লেগে যেতে পারে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে। তা ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়ও লাগবে কমপক্ষে ৪৫ বছর।

স্থানীয় গবেষকেরাও জলহস্তীর প্রজনন নিয়ন্ত্রণে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন। একটি পশু চিকিৎসকদের সহায়তায় ইউথেনেসিয়া (স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রক্রিয়া) নিশ্চিত করা। এতে সময় কম লাগবে। আরেকটি হলো, জলহস্তী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থানের কৌশল খোঁজা।

গবেষকেরা বলছেন, কলম্বিয়ায় জলহস্তীর সংখ্যাবৃদ্ধি থেমে নেই। কাজেই সরকার যত অপেক্ষা করবে, সমস্যা ততই জটিল হবে। এমনকি তা ম্যাগডালেনা নদীর অববাহিকা এবং সেখানে বসবাসকারীদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। 

ডয়চে ভেলে অবলম্বনে সাদিকুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত