Ajker Patrika

প্রচারে উপেক্ষিত নারী ভোটার, অসন্তোষ

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ২৪
প্রচারে উপেক্ষিত নারী ভোটার, অসন্তোষ

‘বাহে, ভোটের আর বেশি দিন নাই। প্রার্থীরা মার্কা নিয়া হাটবাজারোত ভোট চাওছে। বাড়িত আসিও স্বামীক খোঁজোছে। কনতো, হামরা কি ভোটার নোয়াই? সউগ প্রার্থী আসি কয় তোমার অভিভাবক কায়। ওই জন্যে নিয়াত করছু এবার স্বামীর কথাত ভোট দেইম না। চিন্তা ভাবনা করি সৎ লোকোক ভোট দেইম।’

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারে উপেক্ষিত থেকে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন তারাগঞ্জের সয়ার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের শেফালী বেগম।

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে তারাগঞ্জের পাঁচ ইউনিয়নে ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে চারপাশে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পোস্টারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাস্তার মোড় আর পাড়া-মহল্লা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারের দরজায় কড়া নাড়ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের মন পেতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

তবে নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, সেই হিসাব ইতিমধ্যে কষে নিয়েছেন পাঁচ ইউনিয়নের নারী ভোটারদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, প্রতীক ও কারও কথায় নয়, দেখেশুনে, বুঝে, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জে ৫৫ হাজার ৮৫২ জন পুরুষ এবং ৫৫ হাজার ১৫৬ জন নারী ভোটার আছেন। পাঁচটি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩০, সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য পদে ৭১ ও সাধারণ সদস্য পদে ১৭৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থীদের সম্পর্কে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের কথা জানতে বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়েছে।

ইকরচালী ইউনিয়নের মেনানগর গ্রামে গিয়ে ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে মনোয়ারা বেগম নামে একজন বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বার বাড়িত আসি পুরুষ মানুষেরটে ভোট চাওছে। কিন্তু হামারও যে ভোট আছে সেটা ভুলি গেইছে। এবার স্বামী কথা শুনমো না। খোঁজ খবর নিয়া সৎ যোগ্য প্রার্থীক ভোটটা দিমো।’

একই ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের ভোটার লাভলী বেগম বলেন, ‘স্বামী হামার প্রতিদিন বাড়ি আসি গল্প করে বাজারোত নাকি ওমাক চা বিড়ি খাওয়ায় প্রার্থীরা। তোমরা কন, ভোট একটা মূল্যবান জিনিস, পাঁচ বছর পর একবার দিবার পাই, তাকে কি চা বিড়ি খেয়া দেওয়া যায়? যাক যোগ্য মনে হইবে নিজের ইচ্ছায় এবার ভোটটা তাকে দিইম।’

কারও কথায় নয়, এমনকি স্বামীর কথায়ও এবার ভোট দেবেন না কুর্শা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মুন্নি বেগম। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার মানুষের স্বাধীন অধিকার। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, সৎ যোগ্য ব্যক্তিকে দেব। স্বামী বা অন্য কারও কথায় কোনো প্রার্থীকে ভোট দেব না। আর কোনো প্রার্থী আমার কাছে ভোটও চায়নি।’

হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামে বাড়ির সমানে কথা হয় গৃহবধূর নবী বেগমের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদকে দেখে বলেন ওঠেন, ‘তোমরা কোন মার্কার লোক বাহে, স্বামী হামার বাড়িত নাই।’ সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘আর কন না, চেয়ারম্যান-মেম্বারিত যারা দাঁড়াইছে ওমরা হামাক ভোটার মনে করে না। খালি বাড়ি আসি স্বামীর ঘরোক খোঁজে। ওমরা মনে করে স্বামীর ঘরোক কইলে বউ ছাওয়ারও ভোট পাইবে। কিন্তু এ ধারণা ওমার ভুল। হামার এটে নারী ভোটার যতগুলা পুরুষ ভোটারও ততোগুলা। হামাক অবহেলা করলে হইবে না। হামরা ভোটের দিন ইচ্ছা মতো মার্কাত সিল মারমো।’

এবার নতুন ভোটার হয়েছেন আলমপুর পাইকপাড়া গ্রামের নুসরাত জাহান। তিনি জানান, যাঁকে তাঁকে ভোট দেবেন না। সৎ লোক দেখে ভোট দেবেন। যিনি নারীকে মূল্যায়ন করবেন, গরিব দুঃখীর কষ্ট বুঝবেন, নারী নির্যাতন বন্ধ করতে পারবেন, তাঁকে ভোট দিয়ে নেতা বানাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববাজারে সোনা বিক্রির হিড়িক, ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল তাঁর তত্ত্বাবধানেই, যোগ্যদেরকে ডিসি নিয়োগ— বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল

ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের

৫ বছরের জন্য কারাগারে গেলেন সারকোজি, হাত ধরে এগিয়ে দিলেন স্ত্রী

এলাকার খবর
Loading...