Ajker Patrika

পাবনা-৪ আসন: দ্বৈরথে ডিলুর উত্তরসূরিরা

শাহীন রহমান, পাবনা 
পাবনা-৪ আসন: দ্বৈরথে ডিলুর উত্তরসূরিরা

১৯৯৬ সাল থেকে টানা পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসন ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর হাত ধরে এই আসনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল দলটি। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না উত্তরসূরিরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিলু পরিবারের চার সদস্য মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের ঘিরে বিভক্ত স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ডিলুর মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাস। এর পর থেকে নুরুজ্জামান ও প্রয়াত ভূমিমন্ত্রীর পরিবার ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। স্বস্তিতে নেই বিএনপিও। গত ২৭ বছর এই আসনে জিততে না পারা দলটির প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণও বলা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা গ্রুপিং। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদারকে ঘিরে এখানে রাজনীতি চলে।

আসনটিতে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বিএনপিতে যোগ দেন। পরে সিরাজুল ইসলাম সরদারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সিরাজুল ইসলাম মনোনয়ন পেলে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হন হাবিবুর। সেবার হাবিব-সিরাজের দ্বন্দ্বে নির্বাচনী মাঠে গোল দেন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু।

তবে যাঁর হাত ধরে আসনটিতে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ, সেই প্রয়াত নেতার পরিবার থেকে এবার চারজন মনোনয়ন ফরম তুলবেন। তাঁরা হলেন ডিলুর দুই ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ; সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ; মেয়ে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন পিয়া এবং জামাতা সাবেক পৌর মেয়র ও ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু। তাঁরা ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও কয়েকজন নেতা আছেন। 

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ডিলুর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনেও এই চারজন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তখন থেকেই নেতা-কর্মীরা আলাদা হয়ে এই চারজনের অনুসারী হয়েছেন।

এ বিষয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া বলেন, ‘এক পরিবার থেকে আমরা ভাইবোন মনোনয়ন চাইলে সমস্যা কী। এসব ধোয়া তুলে কোনো লাভ নাই। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। নৌকার জন্য কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষে আমরা কাজ করব।’ 
সাকিবুর রহমান শরীফ বলেন, ‘বাগানে শত ফুল ফুটবে। এর মধ্যে সেরাটা বেছে নেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা শুধু নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং বা বিভেদ নেই, শুধু প্রতিযোগিতা আছে।’

এ বিষয়ে বর্তমান এমপি নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। অনেকে মনোনয়ন চাইবে। এ নিয়ে মতানৈক্য, মতবিরোধ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং নেই।’

এদিকে বিএনপির গ্রুপিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার নেতা-কর্মীরা। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আবারও হাবিব ও সিরাজ প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সে ক্ষেত্রে সমঝোতা করে তাঁরা একজন না এলে আবারও বিরোধে জড়িয়ে পড়বে বিএনপি।

এ বিষয়ে জানতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল শুক্রবার দুপুরে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেননি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে তাঁর একাধিক অনুসারী নেতা নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, হাবিব মূলত আওয়ামী লীগ থেকে আসা বিএনপির হাইব্রিড নেতা। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে আসার পরই এই আসনে দলের ভরাডুবি হয়েছে। দলের ভেতর কোন্দল দেখা দিয়েছে।

সাবেক এই এমপি আরও বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে (অংশগ্রহণ সাপেক্ষে) বিএনপি যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে এই আসন আর হাতছাড়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত