Ajker Patrika

ভয়ংকর ১২ কিলোমিটার

রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ১৪
ভয়ংকর ১২ কিলোমিটার

শিল্পাঞ্চলখ্যাত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যস্ততম এ মহাসড়কে চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ মহাসড়কে বাড়তে শুরু করে ছিনতাইয়ের আতঙ্ক।

শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের আশপাশে রয়েছে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন হাজারো শ্রমিক। মহাসড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ শেষ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের মহাসড়ক দিয়ে ফিরতে হয় নিজ নিজ গন্তব্যে। অনেক ব্যবসায়ীকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফিরতে হয় গভীর রাতে। কোনো কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা বেঁধে দেওয়া সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করেন। পরে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে পড়তে হয় ছিনতাইসহ বিভিন্ন সমস্যায়।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি চক্র মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়। বেতনের সময় এলে এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বেশি থাকলে কম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

বহেরারচালা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসে কারখানা থেকে বের হয়ে উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় বাসার উদ্দেশে মহাসড়কের পাশে অপেক্ষা করে একটু পর তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে  রঙ্গিলা বাজার পৌঁছালে হঠাৎ গাড়িটি বিকল বলে জানান চালক। এর একটু পর চার যুবক এসে আমার সঙ্গে থাকা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।’ এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বেশি রাত হলে প্রায় সময় এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান তিনি।

গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. নাজমুল ইসলাম। তাঁর দেশের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তিনি বলেন, ‘একটি লোকাল বাসে বাড়ি ফেরার সময় এমসি বাজার এলাকা থেকে আরও চারজন যাত্রী ওঠে। পরে এমসি বাজার পৌঁছার আগেই আমার পাশে বসা এক লোক আমাকে অজ্ঞান করে সবকিছু ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাস ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা মাস্টারবাড়ি পৌঁছালে আমার জ্ঞান ফিরে এলে আরেকটি বাসে বাসায় আসি।’ এ ঘটনার সঙ্গে গাড়ির চালক ও সহযোগী জড়িত বলে তিনি মনে করেন।

পৌর শহরের চন্নাপাড়া এলাকায় অবস্থিত ইয়াসমিন স্পিনিং মিলের কর্মী শারমিন আক্তার বলেন, ‘অতিরিক্ত সময় কাজ করে বাড়ি ফেরার পথে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিছুদিন আগে সিএনজি অটোরিকশায় নয়নপুর বাসায় ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই লোক এসে আমার পথরোধ করে টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।’

তাকওয়া পরিবহনের চালক মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘মহাসড়কে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে কোনো ভালো চালক জড়িত থাকার কথা না। তবে সব চালক ও সহযোগী সমান নয়। কেউ যদি এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাদের খুঁজে বের করা উচিত।’

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি অপরাধী চক্র মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ বিষয়ে মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হবে। তার পাশাপাশি চালক ও সহযোগীকে সতর্ক করা হবে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে কোনো চালক ও সহযোগী জড়িত থাকলে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত