আবু তাহের খান

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থেকে গেছে, যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ভূমিকা ও অবদানের বিষয়টি অন্যতম। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহর দেওয়া ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’সংক্রান্ত বক্তব্যের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের যে সূচনা, এর পর থেকে গত ৭৪ বছরে এই ভূখণ্ডে যা যা ঘটেছে এর মধ্যে বাঙালি তার সবচেয়ে কঠিন সময়টি পার করেছে ১৯৭১-এর নয় মাস। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ ও এর মূল্যায়নের যেকোনো আলোচনায় ওই নয় মাসকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে ওই নয় মাসকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা ও মূল্যায়ন করতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণপূর্বক ২৬ মার্চ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী নয় মাসে বাঙালি জাতি যে শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত বিরল এবং তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে নানা তথ্যভিত্তিক আলোচনাও যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই সাহসিকতাপূর্ণ কাজগুলো একটি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রকাঠামোর আওতায় দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করাটা মোটেও সহজ ছিল না। অথচ সেই অ-সহজ কাজটিই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায় প্রবাদসম নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মীরা, বিশেষত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। অন্যদের সঙ্গে নিয়ে এই চার নেতা সেদিন যে প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, সেই সরকার তার সাংগঠনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং সর্বোপরি একটি পূর্ণাঙ্গ ধাঁচের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আপামর জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিল। আর সেই আস্থা অর্জিত হওয়ার কারণেই সর্বস্ব ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সেদিন মুহূর্তের জন্যও কোনোরূপ হতাশায় ভোগেনি বা কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্বের সংকটে পড়েনি; বরং প্রতিমুহূর্তে তাদের সাহস ও প্রত্যয় দৃঢ় থেকে ক্রমান্বয়ে দৃঢ়তর হয়েছে এবং সে কারণেই বলা যেতে পারে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র নয় মাসের মধ্যেই যে দেশ তার বিজয় অর্জন করতে পেরেছিল, সেটি কোনো অলৌকিক ঘটনা ছিল না; বরং এর পেছনে ছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকারের মেধাবী, দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিশ্রমী তৎপরতা।
যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষকে তার আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কাজে যুক্ত করে তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় অংশকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল পরিকল্পনা সেল। শিক্ষকদের যুক্ত করা হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সঙ্গে এবং তাঁদের কাউকে কাউকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। আমলাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চিকিৎসক ও অনুরূপ পেশাজীবীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল আহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শরণার্থীদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা। শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে পরিচালনা করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। মোটকথা, অন্য দেশের ভূমিতে অবস্থান করে পরিচালিত হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিই ওই প্রবাসী সরকারের ছিল।
প্রবাসী সরকারের আরেকটি বড় শক্তির জায়গা ছিল এর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের সাহস, অঙ্গীকার ও দৃঢ়চিত্ততা এবং সর্বোপরি তাঁদের ব্যক্তিগত ত্যাগ ও নিবেদিতপ্রাণ মানসিকতা।
ইতিহাসের তথ্য জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কলকাতায় অবস্থানকালে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক দিনের জন্যও একই শহরে অবস্থানকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। নিজ হাতে ধোয়া গেঞ্জি-পাঞ্জাবি অফিসকক্ষের পেছনের খালি জায়গায় শুকাতে দিয়ে অপেক্ষা করেছেন পরবর্তী পরিধানের জন্য। শরণার্থীরা আশ্রয়শিবিরে যে খাবার খেতেন, তিনিও খেতেন সেই একই খাবার। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সরকার-সদস্যরা কি এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করেন বা তাঁদের চর্চায় কি এসবের উপস্থিতি রয়েছে?
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং কোটি শরণার্থীর জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়, যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ পরিচালনার লক্ষ্যে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী ও ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সর্বোপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসংবলিত একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত ধাঁচের সরকার পরিচালনার কাজটি সেদিনের প্রবাসী সরকার কীভাবে এত নিপুণ দক্ষতায় করতে সক্ষম হয়েছিল, তা ইতিহাসের এক পরম বিস্ময়। কিন্তু সেদিন সেটি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, তা নিয়ে কোনো গবেষণামূলক কাজ বা এর ফলাফল কি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ বছরে পাওয়া গেল? অথচ সে ধরনের গবেষণার ফলাফল বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বহুলাংশে সহায়ক হতে পারত। প্রবাসী সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড এবং এর রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা ও অবদান নিয়ে সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে? এ বিষয়ে এক বা একাধিক অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবা যেতে পারে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য প্রহসনের বিচারসহ নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকার। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করা ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জ সেদিন তারা নানা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই সময়ের আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে দেশের অভ্যন্তরের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী সরকার বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে এতটাই সংগঠিত করতে পেরেছিল যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের হত্যা-নির্যাতন শেষের দিকে অনেকখানিই কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। এ বিষয়গুলো নিয়েও স্বাধীন দেশে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা, আলোচনা ও অধ্যয়ন হওয়া উচিত বলে মনে করি। সেই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনব্যবস্থার আর কোন কোন অনুষঙ্গ আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে, তা-ও অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা প্রয়োজন; যাতে সেসব অনুসরণ করে আমরা উপকৃত হতে পারি।
সব মিলিয়ে প্রস্তাব এই যে বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের ভূমিকা ও অবদানের নানা দিক নিয়ে আরও ব্যাপকভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ও গবেষণা হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের এ মহামূল্যবান অধ্যায়টির কোনো অংশ অবহেলা ও উপেক্ষায় হারিয়ে না যায়। আর সেটি শুরু করার জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ ক্ষণটি একটি চমৎকার উপলক্ষ হতে পারে বলে মনে করি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা, শিল্প মন্ত্রণালয়

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থেকে গেছে, যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ভূমিকা ও অবদানের বিষয়টি অন্যতম। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহর দেওয়া ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’সংক্রান্ত বক্তব্যের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের যে সূচনা, এর পর থেকে গত ৭৪ বছরে এই ভূখণ্ডে যা যা ঘটেছে এর মধ্যে বাঙালি তার সবচেয়ে কঠিন সময়টি পার করেছে ১৯৭১-এর নয় মাস। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ ও এর মূল্যায়নের যেকোনো আলোচনায় ওই নয় মাসকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে ওই নয় মাসকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা ও মূল্যায়ন করতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণপূর্বক ২৬ মার্চ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী নয় মাসে বাঙালি জাতি যে শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত বিরল এবং তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে নানা তথ্যভিত্তিক আলোচনাও যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই সাহসিকতাপূর্ণ কাজগুলো একটি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রকাঠামোর আওতায় দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করাটা মোটেও সহজ ছিল না। অথচ সেই অ-সহজ কাজটিই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায় প্রবাদসম নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মীরা, বিশেষত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। অন্যদের সঙ্গে নিয়ে এই চার নেতা সেদিন যে প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, সেই সরকার তার সাংগঠনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং সর্বোপরি একটি পূর্ণাঙ্গ ধাঁচের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আপামর জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিল। আর সেই আস্থা অর্জিত হওয়ার কারণেই সর্বস্ব ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সেদিন মুহূর্তের জন্যও কোনোরূপ হতাশায় ভোগেনি বা কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্বের সংকটে পড়েনি; বরং প্রতিমুহূর্তে তাদের সাহস ও প্রত্যয় দৃঢ় থেকে ক্রমান্বয়ে দৃঢ়তর হয়েছে এবং সে কারণেই বলা যেতে পারে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র নয় মাসের মধ্যেই যে দেশ তার বিজয় অর্জন করতে পেরেছিল, সেটি কোনো অলৌকিক ঘটনা ছিল না; বরং এর পেছনে ছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকারের মেধাবী, দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিশ্রমী তৎপরতা।
যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষকে তার আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কাজে যুক্ত করে তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় অংশকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল পরিকল্পনা সেল। শিক্ষকদের যুক্ত করা হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সঙ্গে এবং তাঁদের কাউকে কাউকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। আমলাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চিকিৎসক ও অনুরূপ পেশাজীবীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল আহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শরণার্থীদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা। শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে পরিচালনা করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। মোটকথা, অন্য দেশের ভূমিতে অবস্থান করে পরিচালিত হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিই ওই প্রবাসী সরকারের ছিল।
প্রবাসী সরকারের আরেকটি বড় শক্তির জায়গা ছিল এর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের সাহস, অঙ্গীকার ও দৃঢ়চিত্ততা এবং সর্বোপরি তাঁদের ব্যক্তিগত ত্যাগ ও নিবেদিতপ্রাণ মানসিকতা।
ইতিহাসের তথ্য জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কলকাতায় অবস্থানকালে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক দিনের জন্যও একই শহরে অবস্থানকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। নিজ হাতে ধোয়া গেঞ্জি-পাঞ্জাবি অফিসকক্ষের পেছনের খালি জায়গায় শুকাতে দিয়ে অপেক্ষা করেছেন পরবর্তী পরিধানের জন্য। শরণার্থীরা আশ্রয়শিবিরে যে খাবার খেতেন, তিনিও খেতেন সেই একই খাবার। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সরকার-সদস্যরা কি এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করেন বা তাঁদের চর্চায় কি এসবের উপস্থিতি রয়েছে?
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং কোটি শরণার্থীর জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়, যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ পরিচালনার লক্ষ্যে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী ও ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সর্বোপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসংবলিত একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত ধাঁচের সরকার পরিচালনার কাজটি সেদিনের প্রবাসী সরকার কীভাবে এত নিপুণ দক্ষতায় করতে সক্ষম হয়েছিল, তা ইতিহাসের এক পরম বিস্ময়। কিন্তু সেদিন সেটি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, তা নিয়ে কোনো গবেষণামূলক কাজ বা এর ফলাফল কি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ বছরে পাওয়া গেল? অথচ সে ধরনের গবেষণার ফলাফল বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বহুলাংশে সহায়ক হতে পারত। প্রবাসী সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড এবং এর রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা ও অবদান নিয়ে সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে? এ বিষয়ে এক বা একাধিক অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবা যেতে পারে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য প্রহসনের বিচারসহ নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকার। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করা ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জ সেদিন তারা নানা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই সময়ের আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে দেশের অভ্যন্তরের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী সরকার বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে এতটাই সংগঠিত করতে পেরেছিল যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের হত্যা-নির্যাতন শেষের দিকে অনেকখানিই কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। এ বিষয়গুলো নিয়েও স্বাধীন দেশে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা, আলোচনা ও অধ্যয়ন হওয়া উচিত বলে মনে করি। সেই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনব্যবস্থার আর কোন কোন অনুষঙ্গ আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে, তা-ও অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা প্রয়োজন; যাতে সেসব অনুসরণ করে আমরা উপকৃত হতে পারি।
সব মিলিয়ে প্রস্তাব এই যে বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের ভূমিকা ও অবদানের নানা দিক নিয়ে আরও ব্যাপকভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ও গবেষণা হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের এ মহামূল্যবান অধ্যায়টির কোনো অংশ অবহেলা ও উপেক্ষায় হারিয়ে না যায়। আর সেটি শুরু করার জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ ক্ষণটি একটি চমৎকার উপলক্ষ হতে পারে বলে মনে করি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা, শিল্প মন্ত্রণালয়
আবু তাহের খান

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থেকে গেছে, যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ভূমিকা ও অবদানের বিষয়টি অন্যতম। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহর দেওয়া ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’সংক্রান্ত বক্তব্যের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের যে সূচনা, এর পর থেকে গত ৭৪ বছরে এই ভূখণ্ডে যা যা ঘটেছে এর মধ্যে বাঙালি তার সবচেয়ে কঠিন সময়টি পার করেছে ১৯৭১-এর নয় মাস। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ ও এর মূল্যায়নের যেকোনো আলোচনায় ওই নয় মাসকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে ওই নয় মাসকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা ও মূল্যায়ন করতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণপূর্বক ২৬ মার্চ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী নয় মাসে বাঙালি জাতি যে শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত বিরল এবং তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে নানা তথ্যভিত্তিক আলোচনাও যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই সাহসিকতাপূর্ণ কাজগুলো একটি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রকাঠামোর আওতায় দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করাটা মোটেও সহজ ছিল না। অথচ সেই অ-সহজ কাজটিই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায় প্রবাদসম নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মীরা, বিশেষত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। অন্যদের সঙ্গে নিয়ে এই চার নেতা সেদিন যে প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, সেই সরকার তার সাংগঠনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং সর্বোপরি একটি পূর্ণাঙ্গ ধাঁচের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আপামর জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিল। আর সেই আস্থা অর্জিত হওয়ার কারণেই সর্বস্ব ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সেদিন মুহূর্তের জন্যও কোনোরূপ হতাশায় ভোগেনি বা কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্বের সংকটে পড়েনি; বরং প্রতিমুহূর্তে তাদের সাহস ও প্রত্যয় দৃঢ় থেকে ক্রমান্বয়ে দৃঢ়তর হয়েছে এবং সে কারণেই বলা যেতে পারে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র নয় মাসের মধ্যেই যে দেশ তার বিজয় অর্জন করতে পেরেছিল, সেটি কোনো অলৌকিক ঘটনা ছিল না; বরং এর পেছনে ছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকারের মেধাবী, দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিশ্রমী তৎপরতা।
যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষকে তার আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কাজে যুক্ত করে তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় অংশকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল পরিকল্পনা সেল। শিক্ষকদের যুক্ত করা হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সঙ্গে এবং তাঁদের কাউকে কাউকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। আমলাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চিকিৎসক ও অনুরূপ পেশাজীবীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল আহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শরণার্থীদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা। শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে পরিচালনা করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। মোটকথা, অন্য দেশের ভূমিতে অবস্থান করে পরিচালিত হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিই ওই প্রবাসী সরকারের ছিল।
প্রবাসী সরকারের আরেকটি বড় শক্তির জায়গা ছিল এর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের সাহস, অঙ্গীকার ও দৃঢ়চিত্ততা এবং সর্বোপরি তাঁদের ব্যক্তিগত ত্যাগ ও নিবেদিতপ্রাণ মানসিকতা।
ইতিহাসের তথ্য জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কলকাতায় অবস্থানকালে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক দিনের জন্যও একই শহরে অবস্থানকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। নিজ হাতে ধোয়া গেঞ্জি-পাঞ্জাবি অফিসকক্ষের পেছনের খালি জায়গায় শুকাতে দিয়ে অপেক্ষা করেছেন পরবর্তী পরিধানের জন্য। শরণার্থীরা আশ্রয়শিবিরে যে খাবার খেতেন, তিনিও খেতেন সেই একই খাবার। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সরকার-সদস্যরা কি এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করেন বা তাঁদের চর্চায় কি এসবের উপস্থিতি রয়েছে?
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং কোটি শরণার্থীর জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়, যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ পরিচালনার লক্ষ্যে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী ও ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সর্বোপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসংবলিত একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত ধাঁচের সরকার পরিচালনার কাজটি সেদিনের প্রবাসী সরকার কীভাবে এত নিপুণ দক্ষতায় করতে সক্ষম হয়েছিল, তা ইতিহাসের এক পরম বিস্ময়। কিন্তু সেদিন সেটি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, তা নিয়ে কোনো গবেষণামূলক কাজ বা এর ফলাফল কি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ বছরে পাওয়া গেল? অথচ সে ধরনের গবেষণার ফলাফল বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বহুলাংশে সহায়ক হতে পারত। প্রবাসী সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড এবং এর রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা ও অবদান নিয়ে সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে? এ বিষয়ে এক বা একাধিক অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবা যেতে পারে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য প্রহসনের বিচারসহ নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকার। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করা ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জ সেদিন তারা নানা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই সময়ের আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে দেশের অভ্যন্তরের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী সরকার বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে এতটাই সংগঠিত করতে পেরেছিল যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের হত্যা-নির্যাতন শেষের দিকে অনেকখানিই কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। এ বিষয়গুলো নিয়েও স্বাধীন দেশে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা, আলোচনা ও অধ্যয়ন হওয়া উচিত বলে মনে করি। সেই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনব্যবস্থার আর কোন কোন অনুষঙ্গ আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে, তা-ও অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা প্রয়োজন; যাতে সেসব অনুসরণ করে আমরা উপকৃত হতে পারি।
সব মিলিয়ে প্রস্তাব এই যে বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের ভূমিকা ও অবদানের নানা দিক নিয়ে আরও ব্যাপকভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ও গবেষণা হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের এ মহামূল্যবান অধ্যায়টির কোনো অংশ অবহেলা ও উপেক্ষায় হারিয়ে না যায়। আর সেটি শুরু করার জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ ক্ষণটি একটি চমৎকার উপলক্ষ হতে পারে বলে মনে করি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা, শিল্প মন্ত্রণালয়

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থেকে গেছে, যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ভূমিকা ও অবদানের বিষয়টি অন্যতম। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহর দেওয়া ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’সংক্রান্ত বক্তব্যের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের যে সূচনা, এর পর থেকে গত ৭৪ বছরে এই ভূখণ্ডে যা যা ঘটেছে এর মধ্যে বাঙালি তার সবচেয়ে কঠিন সময়টি পার করেছে ১৯৭১-এর নয় মাস। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ ও এর মূল্যায়নের যেকোনো আলোচনায় ওই নয় মাসকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে ওই নয় মাসকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা ও মূল্যায়ন করতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণপূর্বক ২৬ মার্চ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী নয় মাসে বাঙালি জাতি যে শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত বিরল এবং তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে নানা তথ্যভিত্তিক আলোচনাও যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই সাহসিকতাপূর্ণ কাজগুলো একটি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রকাঠামোর আওতায় দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করাটা মোটেও সহজ ছিল না। অথচ সেই অ-সহজ কাজটিই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায় প্রবাদসম নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মীরা, বিশেষত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। অন্যদের সঙ্গে নিয়ে এই চার নেতা সেদিন যে প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, সেই সরকার তার সাংগঠনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং সর্বোপরি একটি পূর্ণাঙ্গ ধাঁচের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আপামর জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিল। আর সেই আস্থা অর্জিত হওয়ার কারণেই সর্বস্ব ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সেদিন মুহূর্তের জন্যও কোনোরূপ হতাশায় ভোগেনি বা কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্বের সংকটে পড়েনি; বরং প্রতিমুহূর্তে তাদের সাহস ও প্রত্যয় দৃঢ় থেকে ক্রমান্বয়ে দৃঢ়তর হয়েছে এবং সে কারণেই বলা যেতে পারে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র নয় মাসের মধ্যেই যে দেশ তার বিজয় অর্জন করতে পেরেছিল, সেটি কোনো অলৌকিক ঘটনা ছিল না; বরং এর পেছনে ছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকারের মেধাবী, দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিশ্রমী তৎপরতা।
যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষকে তার আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কাজে যুক্ত করে তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় অংশকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল পরিকল্পনা সেল। শিক্ষকদের যুক্ত করা হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সঙ্গে এবং তাঁদের কাউকে কাউকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। আমলাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চিকিৎসক ও অনুরূপ পেশাজীবীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল আহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শরণার্থীদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা। শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে পরিচালনা করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। মোটকথা, অন্য দেশের ভূমিতে অবস্থান করে পরিচালিত হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিই ওই প্রবাসী সরকারের ছিল।
প্রবাসী সরকারের আরেকটি বড় শক্তির জায়গা ছিল এর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের সাহস, অঙ্গীকার ও দৃঢ়চিত্ততা এবং সর্বোপরি তাঁদের ব্যক্তিগত ত্যাগ ও নিবেদিতপ্রাণ মানসিকতা।
ইতিহাসের তথ্য জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কলকাতায় অবস্থানকালে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক দিনের জন্যও একই শহরে অবস্থানকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। নিজ হাতে ধোয়া গেঞ্জি-পাঞ্জাবি অফিসকক্ষের পেছনের খালি জায়গায় শুকাতে দিয়ে অপেক্ষা করেছেন পরবর্তী পরিধানের জন্য। শরণার্থীরা আশ্রয়শিবিরে যে খাবার খেতেন, তিনিও খেতেন সেই একই খাবার। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সরকার-সদস্যরা কি এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করেন বা তাঁদের চর্চায় কি এসবের উপস্থিতি রয়েছে?
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং কোটি শরণার্থীর জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়, যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ পরিচালনার লক্ষ্যে সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী ও ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সর্বোপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসংবলিত একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত ধাঁচের সরকার পরিচালনার কাজটি সেদিনের প্রবাসী সরকার কীভাবে এত নিপুণ দক্ষতায় করতে সক্ষম হয়েছিল, তা ইতিহাসের এক পরম বিস্ময়। কিন্তু সেদিন সেটি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, তা নিয়ে কোনো গবেষণামূলক কাজ বা এর ফলাফল কি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ বছরে পাওয়া গেল? অথচ সে ধরনের গবেষণার ফলাফল বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বহুলাংশে সহায়ক হতে পারত। প্রবাসী সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড এবং এর রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা ও অবদান নিয়ে সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে? এ বিষয়ে এক বা একাধিক অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবা যেতে পারে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য প্রহসনের বিচারসহ নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকার। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করা ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জ সেদিন তারা নানা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই সময়ের আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে দেশের অভ্যন্তরের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী সরকার বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে এতটাই সংগঠিত করতে পেরেছিল যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের হত্যা-নির্যাতন শেষের দিকে অনেকখানিই কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। এ বিষয়গুলো নিয়েও স্বাধীন দেশে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা, আলোচনা ও অধ্যয়ন হওয়া উচিত বলে মনে করি। সেই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনব্যবস্থার আর কোন কোন অনুষঙ্গ আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে, তা-ও অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা প্রয়োজন; যাতে সেসব অনুসরণ করে আমরা উপকৃত হতে পারি।
সব মিলিয়ে প্রস্তাব এই যে বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের ভূমিকা ও অবদানের নানা দিক নিয়ে আরও ব্যাপকভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ও গবেষণা হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের এ মহামূল্যবান অধ্যায়টির কোনো অংশ অবহেলা ও উপেক্ষায় হারিয়ে না যায়। আর সেটি শুরু করার জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ ক্ষণটি একটি চমৎকার উপলক্ষ হতে পারে বলে মনে করি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা, শিল্প মন্ত্রণালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থ
০৫ মার্চ ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থ
০৫ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থ
০৫ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আয়োজন অব্যাহত আছে, যা ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও কিছু কিছু বিষয় আবার অনালোচিত বা স্বল্পালোচিতও থ
০৫ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫