জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা ও রিমন রহমান, রাজশাহী

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে। রাজশাহী বিসিকের নামসর্বস্ব নাবিল গ্রুপই হল-মার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপকেও পেছনে ফেলে, এবার শরিয়াভিত্তিক তিন ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ঘর নড়বড়ে হলেও এটিই হাজার কোটি টাকা খসিয়ে নেওয়া নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। প্রধান কার্যালয় যা-ই হোক, রাজধানীতে থাকা করপোরেট অফিস অবশ্যই জৌলুশপূর্ণ হবে বলে মনে হতে পারে। না, সরেজমিনে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা নিলেও রাজধানীর বনানী আবাসিক এলাকায় গ্রুপটির মাত্র কয়েক শ বর্গফুটের একটি নামমাত্র অফিসের অস্তিত্ব মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানের এমডি মাঝেমধ্যে সেখানে গেলেও কিছুক্ষণ গল্প করে, পিয়ন-দারোয়ানদের কয়েক হাজার টাকা করে বকশিশ দিয়ে হাওয়া হয়ে যান। তবে আমের মৌসুমে এ করপোরেট অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন কিছু অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তাঁরা ক্যারেটভর্তি রাজশাহীর আম নিয়ে খুশিমনে ফিরে যান। এর বাইরে অফিসটিতে তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ পর্ষদবিহীন এমন একটি গ্রুপই নিজস্ব ১৭টি কোম্পানির কাগুজে গল্প ফেঁদে চূড়ান্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বোকা বানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে। জানা যায়, ভুঁইফোড় এই গ্রুপকে সামনে রেখে আড়ালে মধু খাচ্ছেন প্রভাবশালী দুই ‘গডফাদার’। ব্যাংকিং নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে সামনে আসা অখ্যাত নাবিল গ্রুপের ঋণ অনিয়মের তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং গ্রুপের রাজশাহী ও ঢাকায় করপোরেট অফিস ঘুরে।
একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে পুরো ব্যাংকব্যবস্থা যখন খাদের কিনারে, তখনই ভুঁইফোড় নাবিল গ্রুপকে নিয়ম ভেঙে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পর্ষদ পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে পুরো ব্যাংকব্যবস্থার জন্য তা ক্ষতিকর হবে। বিশেষ করে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য তা নিজের রশিতে নিজেরই ফাঁসি হওয়ার শামিল।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম ভেঙে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এসআইবিএল। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং এসআইবিএল দিয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ব্যাংক তিনটি বিগত ৬ মাসে জামানত ছাড়াই শর্ত শিথিল করে ঋণ দিয়েছে গ্রুপটিকে।
গত ২১ মার্চ রাজশাহী ও গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ৯৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় ইসলামী ব্যাংক। আর চলতি বছরের ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একই গ্রুপের শিমুল এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদন দেয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এ ছাড়া গত ৩০ মে নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণের পরিমাণ বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এত টাকা নিয়ে নাবিল গ্রুপ কী করল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই পরিদর্শন করা হয় গ্রুপটির রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়। রাজশাহী বিসিকে পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের একটি অস্থায়ী কার্যালয়। ইটের দেয়ালঘেরা টিনের ঘর। নগরীর সপুরা আহমদনগরে এটিই নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। জানা যায়, রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠান বলতে নাবিলের আছে একটি গরুর খামার, একটি মুরগির খামার এবং একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই পার্কের ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ, অটোরাইস মিল, ডাল মিল, ফ্লাওয়ার মিল এবং গরু, মাছ-মুরগির খাবারের মিল। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ভেড়াপাড়া গ্রামে। নাবিল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মটি পবার মাহেন্দ্রা এলাকায়। মুরগির খামার গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায়। এটির নাম নাবা ফার্ম লিমিটেড।
গত রোববার সকালে ডিম বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে লেয়ার মুরগির কিছু লাল ডিম দেখা যায়। বাকি জায়গা ফাঁকা। কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর আগে কাঁকনহাটে জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়। আছে গরুর খামারও। খামারের ভেটেরিনারি চিকিৎসক সারোয়ার জাহান জানান, ফার্মে প্রায় ৬০০ গরু আছে। এ ছাড়া আছে ২৬টি ছাগল ও ৮টি গাড়ল। দুই বছর আগে ২২ বিঘা জমি কিনে ফার্মটি করা হয়েছে। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় এসবের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের বাড়ি পবায়। তাঁর বাবার নাম হাজি জান বক্স। তেকাটাপাড়ার পাশের গ্রাম ভেড়াপাড়া। এই গ্রামেই একটা রাইস মিল ছিল হাজি জান বক্সের। সেটিই এখন নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। হাজি জান বক্স এখন নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান।রোববার সকালে ভেড়াপাড়া গ্রামে গেলে রাস্তার পাশেই নাবিল গ্রুপের একটি রাইস মিল এবং এর সঙ্গে একটি গুদাম দেখা যায়। সেখানে মালিকপক্ষ কিংবা শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা না থাকায় কর্মচারীরা ভেতরে ঘুরে দেখার অনুমতি দেননি। তবে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে মাছ, মুরগি ও গরুর ফিডের একটি কারখানাও আছে। একটি রাইস মিলে সেদ্ধ ও আতপ চাল প্রস্তুত করা হয়। আছে ফ্লাওয়ার ও ডাল মিল। ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ। সেখানে দেড় লাখ বস্তা আলু মজুত করা যায়।
স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, হাজি জান বক্স জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম এলাকায় স্বপন নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি শিবির করতেন। এখনো তিনি এলাকায় জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর এখন ওঠাবসা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। এখন বিপুল টাকার মালিক হলেও দুই দশক আগেও তেমন কিছুই ছিল না। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শিবিরের প্রতিষ্ঠান কনটেস্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিবিরের পক্ষ থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনোনীত করা হতো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কনটেস্ট কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমিনুল ইসলাম ভেড়াপাড়া গ্রামে গিয়ে বাবার রাইস মিলের ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এরপর ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বিভিন্ন পণ্য আমদানির সঙ্গেও যুক্ত। গত মে মাসে সাগরে জাহাজডুবি হলে নাবিল গ্রুপের ফ্লাওয়ার মিলের প্রায় ৭ কোটি টাকার ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন গম নষ্ট হয়ে যায়।
নাবিল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. বাবলু জানান, কাঁকনহাটে প্রায় ৩৫ বিঘা জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জমি ৬০-৭০ বিঘা হতে পারে। ক্যাটল ফার্মের জায়গা ২২ বিঘা। ডিম বিক্রয়কেন্দ্রের জায়গা কতটুকু তা তিনি জানেন না। তবে প্রধান কার্যালয়ের জায়গাটি তাঁদের নয়। সেটি বিসিকের কাছ থেকে নেওয়া। আমিনুল ইসলাম রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান এখন চেম্বারের পরিচালক।
রাজশাহীর পর রাজধানীতে নাবিল গ্রুপের করপোরেট অফিসের খোঁজে গিয়ে বনানীতে একটি আবাসিক ভবনে নামমাত্র অফিস স্পেসের অস্তিত্ব মেলে। গত রোববার গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের নাম ব্লিক্সিং জুঁই, যার হোল্ডিং নম্বর ১৩ এবং রোড নম্বর ১৭, ব্লক ডি। ভবনের চার তলার (লেভেল-৩) সামনেই অফিস কক্ষ। সেখানে সাত-আটজন কর্মকর্তার কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে সেখানে অফিস করেন। তবে খুব একটা যাওয়া-আসা করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় ভবনের বাইরে কোথাও নাবিল গ্রুপের ‘নেমপ্লেট’ বা লোগো বা কোনো নিশানা ছিল না। শুধু তাদের অফিস স্পেসের সামনের দেয়ালে ইংরেজিতে নাবিল গ্রুপ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
ভবনে প্রধান নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে জানতে হওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের এখানে তেমন কিছু নেই। একটা ছোট অফিস রয়েছে। সেখানে সাত থেকে আটজন লোক বসতে পারেন। এখানে মাসে সাধারণত দুই থেকে তিনবার এমডি স্যার আসেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। যাওয়ার সময় আমাদের বকশিশ হিসেবে সাধারণত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেন। তিনি এলে তখন কিছু অচেনা লোকের আগাগোনা দেখা যায়। তবে তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যাংকের লোক বলে শুনেছি। আমের মৌসুমে এখানে ট্রাকে ট্রাকে আম আসে। পরে তা ক্যারেট ধরে বণ্টন করা হয়।’
মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এখানে অফিস দেখে তাঁদের সম্পর্কে কিছুই বোঝার সুযোগ নেই। তাঁদের অর্থের বড় উৎস হলো ব্যাংকের ঋণ। তাঁরা নাকি শত শত কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ নেন। ব্যাংক নিজেই ঋণের সব বন্দোবস্ত করে দেয়।’ গুলশানে নাবিল গ্রুপের এমডির ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, ১৭টি কোম্পানির গ্রুপ হলেও এর কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই।
ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক একক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে তার সংশোধিত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ২০ শতাংশ। আর এই ব্যাংক ৩টির পরিশোধিত মোট মূলধন ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রুপগুলোকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারার কথা। কিন্তু এসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে করেছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ। এটি রীতিমতো ব্যাংকিং নিয়মের বরখেলাপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখা থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অথচ হালনাগাদ সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে ওই কোম্পানি মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে যে ৯৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ দেওয়া হয়েছে, এর বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত ২৩০ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা। আর ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত বা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তার কিছুই মানা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রতিষ্ঠানটিকে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রতিষ্ঠানটির এত বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতাও নেই। আর তা যাচাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ ছাড় করেছে। ওই প্রতিবেদনে নাবিল গ্রুপের ঋণকে ব্যাংকটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। আবার একই গ্রুপের নামে এত পরিমাণ ঋণ বিতরণ, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ‘একক গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের সীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) লঙ্ঘন। বিষয়গুলোর অনিয়মের গভীরতা জানতে এখন আরও বিশদ অনুসন্ধান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইড সুপারভিশন বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে রাজশাহীতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে নাবিল গ্রুপ। একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে কয়েকবার কল করা হয় এবং খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রুপটিকে ঋণ দিতে কোনো নীতিমালাই মানা হয়নি। তা ছাড়া গ্রুপটির নেই ঋণ শোধ করার সক্ষমতাও। এত বিশাল ঋণের পেছনে দুজন প্রভাবশালী ‘গডফাদারের’ কথা জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাঁরাই নেপথ্যে বিপুল অঙ্কের ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কি না সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইল নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিনুল ইসলাম ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলছে। আমরা নিয়ম মেনেই ঋণ পেয়েছি। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের কাগজপত্রের কোনো ঘাটতি নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত করছে। এর বেশি তথ্য পেতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে। রাজশাহী বিসিকের নামসর্বস্ব নাবিল গ্রুপই হল-মার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপকেও পেছনে ফেলে, এবার শরিয়াভিত্তিক তিন ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ঘর নড়বড়ে হলেও এটিই হাজার কোটি টাকা খসিয়ে নেওয়া নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। প্রধান কার্যালয় যা-ই হোক, রাজধানীতে থাকা করপোরেট অফিস অবশ্যই জৌলুশপূর্ণ হবে বলে মনে হতে পারে। না, সরেজমিনে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা নিলেও রাজধানীর বনানী আবাসিক এলাকায় গ্রুপটির মাত্র কয়েক শ বর্গফুটের একটি নামমাত্র অফিসের অস্তিত্ব মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানের এমডি মাঝেমধ্যে সেখানে গেলেও কিছুক্ষণ গল্প করে, পিয়ন-দারোয়ানদের কয়েক হাজার টাকা করে বকশিশ দিয়ে হাওয়া হয়ে যান। তবে আমের মৌসুমে এ করপোরেট অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন কিছু অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তাঁরা ক্যারেটভর্তি রাজশাহীর আম নিয়ে খুশিমনে ফিরে যান। এর বাইরে অফিসটিতে তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ পর্ষদবিহীন এমন একটি গ্রুপই নিজস্ব ১৭টি কোম্পানির কাগুজে গল্প ফেঁদে চূড়ান্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বোকা বানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে। জানা যায়, ভুঁইফোড় এই গ্রুপকে সামনে রেখে আড়ালে মধু খাচ্ছেন প্রভাবশালী দুই ‘গডফাদার’। ব্যাংকিং নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে সামনে আসা অখ্যাত নাবিল গ্রুপের ঋণ অনিয়মের তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং গ্রুপের রাজশাহী ও ঢাকায় করপোরেট অফিস ঘুরে।
একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে পুরো ব্যাংকব্যবস্থা যখন খাদের কিনারে, তখনই ভুঁইফোড় নাবিল গ্রুপকে নিয়ম ভেঙে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পর্ষদ পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে পুরো ব্যাংকব্যবস্থার জন্য তা ক্ষতিকর হবে। বিশেষ করে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য তা নিজের রশিতে নিজেরই ফাঁসি হওয়ার শামিল।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম ভেঙে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এসআইবিএল। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং এসআইবিএল দিয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ব্যাংক তিনটি বিগত ৬ মাসে জামানত ছাড়াই শর্ত শিথিল করে ঋণ দিয়েছে গ্রুপটিকে।
গত ২১ মার্চ রাজশাহী ও গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ৯৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় ইসলামী ব্যাংক। আর চলতি বছরের ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একই গ্রুপের শিমুল এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদন দেয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এ ছাড়া গত ৩০ মে নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণের পরিমাণ বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এত টাকা নিয়ে নাবিল গ্রুপ কী করল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই পরিদর্শন করা হয় গ্রুপটির রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়। রাজশাহী বিসিকে পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের একটি অস্থায়ী কার্যালয়। ইটের দেয়ালঘেরা টিনের ঘর। নগরীর সপুরা আহমদনগরে এটিই নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। জানা যায়, রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠান বলতে নাবিলের আছে একটি গরুর খামার, একটি মুরগির খামার এবং একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই পার্কের ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ, অটোরাইস মিল, ডাল মিল, ফ্লাওয়ার মিল এবং গরু, মাছ-মুরগির খাবারের মিল। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ভেড়াপাড়া গ্রামে। নাবিল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মটি পবার মাহেন্দ্রা এলাকায়। মুরগির খামার গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায়। এটির নাম নাবা ফার্ম লিমিটেড।
গত রোববার সকালে ডিম বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে লেয়ার মুরগির কিছু লাল ডিম দেখা যায়। বাকি জায়গা ফাঁকা। কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর আগে কাঁকনহাটে জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়। আছে গরুর খামারও। খামারের ভেটেরিনারি চিকিৎসক সারোয়ার জাহান জানান, ফার্মে প্রায় ৬০০ গরু আছে। এ ছাড়া আছে ২৬টি ছাগল ও ৮টি গাড়ল। দুই বছর আগে ২২ বিঘা জমি কিনে ফার্মটি করা হয়েছে। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় এসবের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের বাড়ি পবায়। তাঁর বাবার নাম হাজি জান বক্স। তেকাটাপাড়ার পাশের গ্রাম ভেড়াপাড়া। এই গ্রামেই একটা রাইস মিল ছিল হাজি জান বক্সের। সেটিই এখন নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। হাজি জান বক্স এখন নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান।রোববার সকালে ভেড়াপাড়া গ্রামে গেলে রাস্তার পাশেই নাবিল গ্রুপের একটি রাইস মিল এবং এর সঙ্গে একটি গুদাম দেখা যায়। সেখানে মালিকপক্ষ কিংবা শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা না থাকায় কর্মচারীরা ভেতরে ঘুরে দেখার অনুমতি দেননি। তবে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে মাছ, মুরগি ও গরুর ফিডের একটি কারখানাও আছে। একটি রাইস মিলে সেদ্ধ ও আতপ চাল প্রস্তুত করা হয়। আছে ফ্লাওয়ার ও ডাল মিল। ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ। সেখানে দেড় লাখ বস্তা আলু মজুত করা যায়।
স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, হাজি জান বক্স জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম এলাকায় স্বপন নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি শিবির করতেন। এখনো তিনি এলাকায় জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর এখন ওঠাবসা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। এখন বিপুল টাকার মালিক হলেও দুই দশক আগেও তেমন কিছুই ছিল না। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শিবিরের প্রতিষ্ঠান কনটেস্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিবিরের পক্ষ থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনোনীত করা হতো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কনটেস্ট কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমিনুল ইসলাম ভেড়াপাড়া গ্রামে গিয়ে বাবার রাইস মিলের ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এরপর ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বিভিন্ন পণ্য আমদানির সঙ্গেও যুক্ত। গত মে মাসে সাগরে জাহাজডুবি হলে নাবিল গ্রুপের ফ্লাওয়ার মিলের প্রায় ৭ কোটি টাকার ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন গম নষ্ট হয়ে যায়।
নাবিল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. বাবলু জানান, কাঁকনহাটে প্রায় ৩৫ বিঘা জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জমি ৬০-৭০ বিঘা হতে পারে। ক্যাটল ফার্মের জায়গা ২২ বিঘা। ডিম বিক্রয়কেন্দ্রের জায়গা কতটুকু তা তিনি জানেন না। তবে প্রধান কার্যালয়ের জায়গাটি তাঁদের নয়। সেটি বিসিকের কাছ থেকে নেওয়া। আমিনুল ইসলাম রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান এখন চেম্বারের পরিচালক।
রাজশাহীর পর রাজধানীতে নাবিল গ্রুপের করপোরেট অফিসের খোঁজে গিয়ে বনানীতে একটি আবাসিক ভবনে নামমাত্র অফিস স্পেসের অস্তিত্ব মেলে। গত রোববার গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের নাম ব্লিক্সিং জুঁই, যার হোল্ডিং নম্বর ১৩ এবং রোড নম্বর ১৭, ব্লক ডি। ভবনের চার তলার (লেভেল-৩) সামনেই অফিস কক্ষ। সেখানে সাত-আটজন কর্মকর্তার কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে সেখানে অফিস করেন। তবে খুব একটা যাওয়া-আসা করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় ভবনের বাইরে কোথাও নাবিল গ্রুপের ‘নেমপ্লেট’ বা লোগো বা কোনো নিশানা ছিল না। শুধু তাদের অফিস স্পেসের সামনের দেয়ালে ইংরেজিতে নাবিল গ্রুপ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
ভবনে প্রধান নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে জানতে হওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের এখানে তেমন কিছু নেই। একটা ছোট অফিস রয়েছে। সেখানে সাত থেকে আটজন লোক বসতে পারেন। এখানে মাসে সাধারণত দুই থেকে তিনবার এমডি স্যার আসেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। যাওয়ার সময় আমাদের বকশিশ হিসেবে সাধারণত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেন। তিনি এলে তখন কিছু অচেনা লোকের আগাগোনা দেখা যায়। তবে তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যাংকের লোক বলে শুনেছি। আমের মৌসুমে এখানে ট্রাকে ট্রাকে আম আসে। পরে তা ক্যারেট ধরে বণ্টন করা হয়।’
মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এখানে অফিস দেখে তাঁদের সম্পর্কে কিছুই বোঝার সুযোগ নেই। তাঁদের অর্থের বড় উৎস হলো ব্যাংকের ঋণ। তাঁরা নাকি শত শত কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ নেন। ব্যাংক নিজেই ঋণের সব বন্দোবস্ত করে দেয়।’ গুলশানে নাবিল গ্রুপের এমডির ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, ১৭টি কোম্পানির গ্রুপ হলেও এর কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই।
ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক একক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে তার সংশোধিত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ২০ শতাংশ। আর এই ব্যাংক ৩টির পরিশোধিত মোট মূলধন ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রুপগুলোকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারার কথা। কিন্তু এসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে করেছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ। এটি রীতিমতো ব্যাংকিং নিয়মের বরখেলাপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখা থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অথচ হালনাগাদ সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে ওই কোম্পানি মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে যে ৯৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ দেওয়া হয়েছে, এর বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত ২৩০ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা। আর ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত বা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তার কিছুই মানা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রতিষ্ঠানটিকে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রতিষ্ঠানটির এত বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতাও নেই। আর তা যাচাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ ছাড় করেছে। ওই প্রতিবেদনে নাবিল গ্রুপের ঋণকে ব্যাংকটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। আবার একই গ্রুপের নামে এত পরিমাণ ঋণ বিতরণ, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ‘একক গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের সীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) লঙ্ঘন। বিষয়গুলোর অনিয়মের গভীরতা জানতে এখন আরও বিশদ অনুসন্ধান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইড সুপারভিশন বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে রাজশাহীতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে নাবিল গ্রুপ। একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে কয়েকবার কল করা হয় এবং খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রুপটিকে ঋণ দিতে কোনো নীতিমালাই মানা হয়নি। তা ছাড়া গ্রুপটির নেই ঋণ শোধ করার সক্ষমতাও। এত বিশাল ঋণের পেছনে দুজন প্রভাবশালী ‘গডফাদারের’ কথা জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাঁরাই নেপথ্যে বিপুল অঙ্কের ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কি না সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইল নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিনুল ইসলাম ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলছে। আমরা নিয়ম মেনেই ঋণ পেয়েছি। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের কাগজপত্রের কোনো ঘাটতি নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত করছে। এর বেশি তথ্য পেতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা ও রিমন রহমান, রাজশাহী

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে। রাজশাহী বিসিকের নামসর্বস্ব নাবিল গ্রুপই হল-মার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপকেও পেছনে ফেলে, এবার শরিয়াভিত্তিক তিন ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ঘর নড়বড়ে হলেও এটিই হাজার কোটি টাকা খসিয়ে নেওয়া নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। প্রধান কার্যালয় যা-ই হোক, রাজধানীতে থাকা করপোরেট অফিস অবশ্যই জৌলুশপূর্ণ হবে বলে মনে হতে পারে। না, সরেজমিনে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা নিলেও রাজধানীর বনানী আবাসিক এলাকায় গ্রুপটির মাত্র কয়েক শ বর্গফুটের একটি নামমাত্র অফিসের অস্তিত্ব মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানের এমডি মাঝেমধ্যে সেখানে গেলেও কিছুক্ষণ গল্প করে, পিয়ন-দারোয়ানদের কয়েক হাজার টাকা করে বকশিশ দিয়ে হাওয়া হয়ে যান। তবে আমের মৌসুমে এ করপোরেট অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন কিছু অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তাঁরা ক্যারেটভর্তি রাজশাহীর আম নিয়ে খুশিমনে ফিরে যান। এর বাইরে অফিসটিতে তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ পর্ষদবিহীন এমন একটি গ্রুপই নিজস্ব ১৭টি কোম্পানির কাগুজে গল্প ফেঁদে চূড়ান্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বোকা বানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে। জানা যায়, ভুঁইফোড় এই গ্রুপকে সামনে রেখে আড়ালে মধু খাচ্ছেন প্রভাবশালী দুই ‘গডফাদার’। ব্যাংকিং নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে সামনে আসা অখ্যাত নাবিল গ্রুপের ঋণ অনিয়মের তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং গ্রুপের রাজশাহী ও ঢাকায় করপোরেট অফিস ঘুরে।
একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে পুরো ব্যাংকব্যবস্থা যখন খাদের কিনারে, তখনই ভুঁইফোড় নাবিল গ্রুপকে নিয়ম ভেঙে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পর্ষদ পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে পুরো ব্যাংকব্যবস্থার জন্য তা ক্ষতিকর হবে। বিশেষ করে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য তা নিজের রশিতে নিজেরই ফাঁসি হওয়ার শামিল।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম ভেঙে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এসআইবিএল। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং এসআইবিএল দিয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ব্যাংক তিনটি বিগত ৬ মাসে জামানত ছাড়াই শর্ত শিথিল করে ঋণ দিয়েছে গ্রুপটিকে।
গত ২১ মার্চ রাজশাহী ও গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ৯৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় ইসলামী ব্যাংক। আর চলতি বছরের ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একই গ্রুপের শিমুল এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদন দেয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এ ছাড়া গত ৩০ মে নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণের পরিমাণ বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এত টাকা নিয়ে নাবিল গ্রুপ কী করল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই পরিদর্শন করা হয় গ্রুপটির রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়। রাজশাহী বিসিকে পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের একটি অস্থায়ী কার্যালয়। ইটের দেয়ালঘেরা টিনের ঘর। নগরীর সপুরা আহমদনগরে এটিই নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। জানা যায়, রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠান বলতে নাবিলের আছে একটি গরুর খামার, একটি মুরগির খামার এবং একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই পার্কের ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ, অটোরাইস মিল, ডাল মিল, ফ্লাওয়ার মিল এবং গরু, মাছ-মুরগির খাবারের মিল। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ভেড়াপাড়া গ্রামে। নাবিল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মটি পবার মাহেন্দ্রা এলাকায়। মুরগির খামার গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায়। এটির নাম নাবা ফার্ম লিমিটেড।
গত রোববার সকালে ডিম বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে লেয়ার মুরগির কিছু লাল ডিম দেখা যায়। বাকি জায়গা ফাঁকা। কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর আগে কাঁকনহাটে জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়। আছে গরুর খামারও। খামারের ভেটেরিনারি চিকিৎসক সারোয়ার জাহান জানান, ফার্মে প্রায় ৬০০ গরু আছে। এ ছাড়া আছে ২৬টি ছাগল ও ৮টি গাড়ল। দুই বছর আগে ২২ বিঘা জমি কিনে ফার্মটি করা হয়েছে। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় এসবের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের বাড়ি পবায়। তাঁর বাবার নাম হাজি জান বক্স। তেকাটাপাড়ার পাশের গ্রাম ভেড়াপাড়া। এই গ্রামেই একটা রাইস মিল ছিল হাজি জান বক্সের। সেটিই এখন নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। হাজি জান বক্স এখন নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান।রোববার সকালে ভেড়াপাড়া গ্রামে গেলে রাস্তার পাশেই নাবিল গ্রুপের একটি রাইস মিল এবং এর সঙ্গে একটি গুদাম দেখা যায়। সেখানে মালিকপক্ষ কিংবা শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা না থাকায় কর্মচারীরা ভেতরে ঘুরে দেখার অনুমতি দেননি। তবে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে মাছ, মুরগি ও গরুর ফিডের একটি কারখানাও আছে। একটি রাইস মিলে সেদ্ধ ও আতপ চাল প্রস্তুত করা হয়। আছে ফ্লাওয়ার ও ডাল মিল। ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ। সেখানে দেড় লাখ বস্তা আলু মজুত করা যায়।
স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, হাজি জান বক্স জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম এলাকায় স্বপন নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি শিবির করতেন। এখনো তিনি এলাকায় জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর এখন ওঠাবসা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। এখন বিপুল টাকার মালিক হলেও দুই দশক আগেও তেমন কিছুই ছিল না। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শিবিরের প্রতিষ্ঠান কনটেস্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিবিরের পক্ষ থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনোনীত করা হতো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কনটেস্ট কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমিনুল ইসলাম ভেড়াপাড়া গ্রামে গিয়ে বাবার রাইস মিলের ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এরপর ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বিভিন্ন পণ্য আমদানির সঙ্গেও যুক্ত। গত মে মাসে সাগরে জাহাজডুবি হলে নাবিল গ্রুপের ফ্লাওয়ার মিলের প্রায় ৭ কোটি টাকার ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন গম নষ্ট হয়ে যায়।
নাবিল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. বাবলু জানান, কাঁকনহাটে প্রায় ৩৫ বিঘা জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জমি ৬০-৭০ বিঘা হতে পারে। ক্যাটল ফার্মের জায়গা ২২ বিঘা। ডিম বিক্রয়কেন্দ্রের জায়গা কতটুকু তা তিনি জানেন না। তবে প্রধান কার্যালয়ের জায়গাটি তাঁদের নয়। সেটি বিসিকের কাছ থেকে নেওয়া। আমিনুল ইসলাম রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান এখন চেম্বারের পরিচালক।
রাজশাহীর পর রাজধানীতে নাবিল গ্রুপের করপোরেট অফিসের খোঁজে গিয়ে বনানীতে একটি আবাসিক ভবনে নামমাত্র অফিস স্পেসের অস্তিত্ব মেলে। গত রোববার গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের নাম ব্লিক্সিং জুঁই, যার হোল্ডিং নম্বর ১৩ এবং রোড নম্বর ১৭, ব্লক ডি। ভবনের চার তলার (লেভেল-৩) সামনেই অফিস কক্ষ। সেখানে সাত-আটজন কর্মকর্তার কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে সেখানে অফিস করেন। তবে খুব একটা যাওয়া-আসা করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় ভবনের বাইরে কোথাও নাবিল গ্রুপের ‘নেমপ্লেট’ বা লোগো বা কোনো নিশানা ছিল না। শুধু তাদের অফিস স্পেসের সামনের দেয়ালে ইংরেজিতে নাবিল গ্রুপ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
ভবনে প্রধান নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে জানতে হওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের এখানে তেমন কিছু নেই। একটা ছোট অফিস রয়েছে। সেখানে সাত থেকে আটজন লোক বসতে পারেন। এখানে মাসে সাধারণত দুই থেকে তিনবার এমডি স্যার আসেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। যাওয়ার সময় আমাদের বকশিশ হিসেবে সাধারণত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেন। তিনি এলে তখন কিছু অচেনা লোকের আগাগোনা দেখা যায়। তবে তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যাংকের লোক বলে শুনেছি। আমের মৌসুমে এখানে ট্রাকে ট্রাকে আম আসে। পরে তা ক্যারেট ধরে বণ্টন করা হয়।’
মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এখানে অফিস দেখে তাঁদের সম্পর্কে কিছুই বোঝার সুযোগ নেই। তাঁদের অর্থের বড় উৎস হলো ব্যাংকের ঋণ। তাঁরা নাকি শত শত কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ নেন। ব্যাংক নিজেই ঋণের সব বন্দোবস্ত করে দেয়।’ গুলশানে নাবিল গ্রুপের এমডির ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, ১৭টি কোম্পানির গ্রুপ হলেও এর কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই।
ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক একক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে তার সংশোধিত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ২০ শতাংশ। আর এই ব্যাংক ৩টির পরিশোধিত মোট মূলধন ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রুপগুলোকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারার কথা। কিন্তু এসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে করেছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ। এটি রীতিমতো ব্যাংকিং নিয়মের বরখেলাপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখা থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অথচ হালনাগাদ সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে ওই কোম্পানি মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে যে ৯৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ দেওয়া হয়েছে, এর বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত ২৩০ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা। আর ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত বা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তার কিছুই মানা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রতিষ্ঠানটিকে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রতিষ্ঠানটির এত বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতাও নেই। আর তা যাচাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ ছাড় করেছে। ওই প্রতিবেদনে নাবিল গ্রুপের ঋণকে ব্যাংকটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। আবার একই গ্রুপের নামে এত পরিমাণ ঋণ বিতরণ, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ‘একক গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের সীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) লঙ্ঘন। বিষয়গুলোর অনিয়মের গভীরতা জানতে এখন আরও বিশদ অনুসন্ধান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইড সুপারভিশন বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে রাজশাহীতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে নাবিল গ্রুপ। একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে কয়েকবার কল করা হয় এবং খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রুপটিকে ঋণ দিতে কোনো নীতিমালাই মানা হয়নি। তা ছাড়া গ্রুপটির নেই ঋণ শোধ করার সক্ষমতাও। এত বিশাল ঋণের পেছনে দুজন প্রভাবশালী ‘গডফাদারের’ কথা জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাঁরাই নেপথ্যে বিপুল অঙ্কের ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কি না সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইল নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিনুল ইসলাম ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলছে। আমরা নিয়ম মেনেই ঋণ পেয়েছি। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের কাগজপত্রের কোনো ঘাটতি নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত করছে। এর বেশি তথ্য পেতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে। রাজশাহী বিসিকের নামসর্বস্ব নাবিল গ্রুপই হল-মার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপকেও পেছনে ফেলে, এবার শরিয়াভিত্তিক তিন ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ঘর নড়বড়ে হলেও এটিই হাজার কোটি টাকা খসিয়ে নেওয়া নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। প্রধান কার্যালয় যা-ই হোক, রাজধানীতে থাকা করপোরেট অফিস অবশ্যই জৌলুশপূর্ণ হবে বলে মনে হতে পারে। না, সরেজমিনে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা নিলেও রাজধানীর বনানী আবাসিক এলাকায় গ্রুপটির মাত্র কয়েক শ বর্গফুটের একটি নামমাত্র অফিসের অস্তিত্ব মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানের এমডি মাঝেমধ্যে সেখানে গেলেও কিছুক্ষণ গল্প করে, পিয়ন-দারোয়ানদের কয়েক হাজার টাকা করে বকশিশ দিয়ে হাওয়া হয়ে যান। তবে আমের মৌসুমে এ করপোরেট অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন কিছু অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তাঁরা ক্যারেটভর্তি রাজশাহীর আম নিয়ে খুশিমনে ফিরে যান। এর বাইরে অফিসটিতে তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ পর্ষদবিহীন এমন একটি গ্রুপই নিজস্ব ১৭টি কোম্পানির কাগুজে গল্প ফেঁদে চূড়ান্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বোকা বানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে। জানা যায়, ভুঁইফোড় এই গ্রুপকে সামনে রেখে আড়ালে মধু খাচ্ছেন প্রভাবশালী দুই ‘গডফাদার’। ব্যাংকিং নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে সামনে আসা অখ্যাত নাবিল গ্রুপের ঋণ অনিয়মের তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং গ্রুপের রাজশাহী ও ঢাকায় করপোরেট অফিস ঘুরে।
একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে পুরো ব্যাংকব্যবস্থা যখন খাদের কিনারে, তখনই ভুঁইফোড় নাবিল গ্রুপকে নিয়ম ভেঙে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পর্ষদ পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে পুরো ব্যাংকব্যবস্থার জন্য তা ক্ষতিকর হবে। বিশেষ করে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য তা নিজের রশিতে নিজেরই ফাঁসি হওয়ার শামিল।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম ভেঙে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এসআইবিএল। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং এসআইবিএল দিয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ব্যাংক তিনটি বিগত ৬ মাসে জামানত ছাড়াই শর্ত শিথিল করে ঋণ দিয়েছে গ্রুপটিকে।
গত ২১ মার্চ রাজশাহী ও গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ৯৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় ইসলামী ব্যাংক। আর চলতি বছরের ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একই গ্রুপের শিমুল এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদন দেয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এ ছাড়া গত ৩০ মে নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণের পরিমাণ বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এত টাকা নিয়ে নাবিল গ্রুপ কী করল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই পরিদর্শন করা হয় গ্রুপটির রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়। রাজশাহী বিসিকে পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের একটি অস্থায়ী কার্যালয়। ইটের দেয়ালঘেরা টিনের ঘর। নগরীর সপুরা আহমদনগরে এটিই নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। জানা যায়, রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠান বলতে নাবিলের আছে একটি গরুর খামার, একটি মুরগির খামার এবং একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই পার্কের ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ, অটোরাইস মিল, ডাল মিল, ফ্লাওয়ার মিল এবং গরু, মাছ-মুরগির খাবারের মিল। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ভেড়াপাড়া গ্রামে। নাবিল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মটি পবার মাহেন্দ্রা এলাকায়। মুরগির খামার গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায়। এটির নাম নাবা ফার্ম লিমিটেড।
গত রোববার সকালে ডিম বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে লেয়ার মুরগির কিছু লাল ডিম দেখা যায়। বাকি জায়গা ফাঁকা। কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর আগে কাঁকনহাটে জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়। আছে গরুর খামারও। খামারের ভেটেরিনারি চিকিৎসক সারোয়ার জাহান জানান, ফার্মে প্রায় ৬০০ গরু আছে। এ ছাড়া আছে ২৬টি ছাগল ও ৮টি গাড়ল। দুই বছর আগে ২২ বিঘা জমি কিনে ফার্মটি করা হয়েছে। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় এসবের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের বাড়ি পবায়। তাঁর বাবার নাম হাজি জান বক্স। তেকাটাপাড়ার পাশের গ্রাম ভেড়াপাড়া। এই গ্রামেই একটা রাইস মিল ছিল হাজি জান বক্সের। সেটিই এখন নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। হাজি জান বক্স এখন নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান।রোববার সকালে ভেড়াপাড়া গ্রামে গেলে রাস্তার পাশেই নাবিল গ্রুপের একটি রাইস মিল এবং এর সঙ্গে একটি গুদাম দেখা যায়। সেখানে মালিকপক্ষ কিংবা শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা না থাকায় কর্মচারীরা ভেতরে ঘুরে দেখার অনুমতি দেননি। তবে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে মাছ, মুরগি ও গরুর ফিডের একটি কারখানাও আছে। একটি রাইস মিলে সেদ্ধ ও আতপ চাল প্রস্তুত করা হয়। আছে ফ্লাওয়ার ও ডাল মিল। ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ। সেখানে দেড় লাখ বস্তা আলু মজুত করা যায়।
স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, হাজি জান বক্স জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম এলাকায় স্বপন নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি শিবির করতেন। এখনো তিনি এলাকায় জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর এখন ওঠাবসা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। এখন বিপুল টাকার মালিক হলেও দুই দশক আগেও তেমন কিছুই ছিল না। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শিবিরের প্রতিষ্ঠান কনটেস্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিবিরের পক্ষ থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনোনীত করা হতো।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কনটেস্ট কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমিনুল ইসলাম ভেড়াপাড়া গ্রামে গিয়ে বাবার রাইস মিলের ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এরপর ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বিভিন্ন পণ্য আমদানির সঙ্গেও যুক্ত। গত মে মাসে সাগরে জাহাজডুবি হলে নাবিল গ্রুপের ফ্লাওয়ার মিলের প্রায় ৭ কোটি টাকার ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন গম নষ্ট হয়ে যায়।
নাবিল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. বাবলু জানান, কাঁকনহাটে প্রায় ৩৫ বিঘা জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জমি ৬০-৭০ বিঘা হতে পারে। ক্যাটল ফার্মের জায়গা ২২ বিঘা। ডিম বিক্রয়কেন্দ্রের জায়গা কতটুকু তা তিনি জানেন না। তবে প্রধান কার্যালয়ের জায়গাটি তাঁদের নয়। সেটি বিসিকের কাছ থেকে নেওয়া। আমিনুল ইসলাম রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান এখন চেম্বারের পরিচালক।
রাজশাহীর পর রাজধানীতে নাবিল গ্রুপের করপোরেট অফিসের খোঁজে গিয়ে বনানীতে একটি আবাসিক ভবনে নামমাত্র অফিস স্পেসের অস্তিত্ব মেলে। গত রোববার গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের নাম ব্লিক্সিং জুঁই, যার হোল্ডিং নম্বর ১৩ এবং রোড নম্বর ১৭, ব্লক ডি। ভবনের চার তলার (লেভেল-৩) সামনেই অফিস কক্ষ। সেখানে সাত-আটজন কর্মকর্তার কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে সেখানে অফিস করেন। তবে খুব একটা যাওয়া-আসা করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় ভবনের বাইরে কোথাও নাবিল গ্রুপের ‘নেমপ্লেট’ বা লোগো বা কোনো নিশানা ছিল না। শুধু তাদের অফিস স্পেসের সামনের দেয়ালে ইংরেজিতে নাবিল গ্রুপ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
ভবনে প্রধান নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে জানতে হওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের এখানে তেমন কিছু নেই। একটা ছোট অফিস রয়েছে। সেখানে সাত থেকে আটজন লোক বসতে পারেন। এখানে মাসে সাধারণত দুই থেকে তিনবার এমডি স্যার আসেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। যাওয়ার সময় আমাদের বকশিশ হিসেবে সাধারণত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেন। তিনি এলে তখন কিছু অচেনা লোকের আগাগোনা দেখা যায়। তবে তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যাংকের লোক বলে শুনেছি। আমের মৌসুমে এখানে ট্রাকে ট্রাকে আম আসে। পরে তা ক্যারেট ধরে বণ্টন করা হয়।’
মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এখানে অফিস দেখে তাঁদের সম্পর্কে কিছুই বোঝার সুযোগ নেই। তাঁদের অর্থের বড় উৎস হলো ব্যাংকের ঋণ। তাঁরা নাকি শত শত কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ নেন। ব্যাংক নিজেই ঋণের সব বন্দোবস্ত করে দেয়।’ গুলশানে নাবিল গ্রুপের এমডির ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, ১৭টি কোম্পানির গ্রুপ হলেও এর কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই।
ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক একক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে তার সংশোধিত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ২০ শতাংশ। আর এই ব্যাংক ৩টির পরিশোধিত মোট মূলধন ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রুপগুলোকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারার কথা। কিন্তু এসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে করেছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ। এটি রীতিমতো ব্যাংকিং নিয়মের বরখেলাপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখা থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অথচ হালনাগাদ সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে ওই কোম্পানি মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে যে ৯৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ দেওয়া হয়েছে, এর বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত ২৩০ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা। আর ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত বা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তার কিছুই মানা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রতিষ্ঠানটিকে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রতিষ্ঠানটির এত বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতাও নেই। আর তা যাচাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ ছাড় করেছে। ওই প্রতিবেদনে নাবিল গ্রুপের ঋণকে ব্যাংকটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। আবার একই গ্রুপের নামে এত পরিমাণ ঋণ বিতরণ, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ‘একক গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের সীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) লঙ্ঘন। বিষয়গুলোর অনিয়মের গভীরতা জানতে এখন আরও বিশদ অনুসন্ধান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইড সুপারভিশন বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে রাজশাহীতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে নাবিল গ্রুপ। একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে কয়েকবার কল করা হয় এবং খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রুপটিকে ঋণ দিতে কোনো নীতিমালাই মানা হয়নি। তা ছাড়া গ্রুপটির নেই ঋণ শোধ করার সক্ষমতাও। এত বিশাল ঋণের পেছনে দুজন প্রভাবশালী ‘গডফাদারের’ কথা জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাঁরাই নেপথ্যে বিপুল অঙ্কের ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কি না সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইল নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিনুল ইসলাম ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলছে। আমরা নিয়ম মেনেই ঋণ পেয়েছি। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের কাগজপত্রের কোনো ঘাটতি নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত করছে। এর বেশি তথ্য পেতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে...
০৪ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে...
০৪ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে...
০৪ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে...
০৪ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫