Ajker Patrika

ঘিওরে সম্প্রীতির মেলায় সব ধর্মের মানুষের ঢল

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
ঘিওরে সম্প্রীতির মেলায় সব ধর্মের মানুষের ঢল

মানিকগঞ্জের ঘিওরে শুরু হয়েছে সম্প্রীতির মেলা। দেড় শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় হাজারো মানুষের আগমন ঘটে। পরিণত হয় মিলনমেলায়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয় মেলা। চলবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত। উপজেলার ডিএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা বিজয়া দশমীর মেলা হিসেবেও পরিচিত।

আয়োজকেরা জানান, উপজেলা সদরের সব মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের আগে পুরোনো ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে স্কুলের মাঠে জড়ো করা হয়। পুরো মাঠ ভরে যায় প্রতিমায়। শেষবারের মতো দুর্গা প্রতিমা দর্শন করতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভিড় করেন। বিসর্জনের আগে হিন্দু নারীদের উলুধ্বনি আর কান্নায় চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। প্রতিমা বিসর্জনের পর মুহূর্তেই আনন্দ আর গানবাজনার মূর্ছনায় মেতে ওঠেন হাজারো মানুষ। মেলায় অন্য ধর্মের মানুষেরও ঢল নামে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এই উজ্জ্বল নজিরের ঐতিহ্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

দেখা যায়, মেলায় মিষ্টির দোকানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর প্রায় অর্ধশত দোকান বসেছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মেলায় আসা চন্দ্রিমা সরকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি বিজয়া দশমীর দিন এই মেলায় আসি। এখানে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে অনেক আনন্দ হয়। বিসর্জনের আগে শেষবারের মতো অনেক দুর্গা প্রতিমা দর্শন করি।’

ঘিওর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার শীল গোবিন্দ বলেন, ‘বিজয়া দশমীর সম্প্রীতির মেলায় সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সরগরম থাকে পুরো এলাকা। এ ঐতিহ্য দেড় শ বছরের বেশি।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, বিজয়া দশমীর দিন সব ধর্মের মানুষ মেলার আনন্দ উপভোগ করতে সমবেত হন এই স্কুলের মাঠে। এখানে বসে হরেক রকম দোকানপাট। বিজয়া দশমীর রাতে একযোগে উপজেলা সদরের সব মণ্ডপের প্রতিমা ধলেশ্বরীর পানিতে বিসর্জন দেওয়া হয়। তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।’

ঘিওর উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিজয় দশমীর দিন এখানে সম্প্রীতির মেলা বসে। আনন্দে মেতে ওঠে সব ধর্মের মানুষ।’

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে এই মেলার উচ্ছ্বাস স্বাক্ষর রেখেছে অনন্য এক সম্প্রীতির। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে এক প্রাণে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দেখভাল করছে পুরো অনুষ্ঠানটি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন মিলনমেলা সত্যিই বিরল। ধর্মের বিভেদ, বিভাজন কোনো দিনই এই মেলার সর্বজনীনতায় দেয়াল তুলতে পারেনি।’

মেলায় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও হামিদুর রহমান, ঘিওর থানার ওসি মো. আমিনুর রহমান, উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শচীন্দ্র নাথ মিত্র, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার শীল গোবিন্দ, ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল, ঘিওর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ সরকার দীপু, এসআই মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত