Ajker Patrika

বাগদা চিংড়ির দামে ধস, হতাশ চাষিরা

বাবুল আক্তার, পাইকগাছা (খুলনা) 
Thumbnail image

খুলনার পাইকগাছায় বাগদা চিংড়ি কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়িচাষি ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকলেও গত এক মাসে চিংড়ির দাম দফায় দফায় কমে যাওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পোনাসংকট, পোনার দাম বেশি, ভাইরাসজনিত মড়ক, জমির ইজারা মূল্য বেশি, দিনমজুরের ব্যাপক দাম—সব মিলিয়ে নানা কারণে চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। বিষয়টি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন চিংড়িচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পাইকগাছায় ১৭ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়েছে। ছোট-বড় ঘেরের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এই অঞ্চলের চিংড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। চিংড়ি-অধ্যুষিত এই অঞ্চলে আশির দশক থেকে এর চাষ শুরু হয়। পাইকগাছা জেলার বৃহৎ একটি অংশজুড়ে চাষ হয় বাগদা চিংড়ি। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের মটবাটি গ্রামের চিংড়িচাষি মোবারেক সরদার বলেন, ‘আমার পাঁচ-ছয়টি চিংড়িঘের রয়েছে। এ বছর চিংড়ি ভালো হয়নি। বিক্রির উপযোগী হওয়ার আগেই অজ্ঞাত কারণে চিংড়ি মরে যাচ্ছে। এরপরে দাম কমায় আরও বিপদে পড়েছি।’

একই এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জানান, বছরের প্রথম দিকে বাজার কিছুটা ভালো ছিল। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে হাজার টাকার বাগদা ৬০০ টাকা, ৭০০ টাকার বাগদা সাড়ে ৪০০ টাকা। ফড়িয়া বা ব্যাপারীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতি গুনছে। এরই মধ্যে দাম কমে যাওয়ায় চরম হতাশায় রয়েছি। সোলাদানার ঘের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, আগে ৫০ পিসে কেজির বাগদা যেখানে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেখানে এখন পাচ্ছি ৪৫০ টাকা। এ রকমভাবে প্রতি গ্রেটের বাগদা কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে গেছে।

চিংড়ি ব্যবসায়ী দীপংকর মণ্ডল জানান, ‘আমি মৎস্য কাটা থেকে বাগদা চিংড়ি কিনে দেশের খুলনা ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। কোম্পানিতে চিংড়ির ভালো দাম পাচ্ছি না। এ জন্য চট্টগ্রামে খোলাবাজারে বিক্রির জন্য পাঠাচ্ছি। খোলাবাজারে এক মাসের ব্যবধানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে।

পাইকগাছা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয় রিপন বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারেন না। যখন বাজারে চিংড়ি বেশি থাকে। তখন কোম্পানির মালিকেরা দাম কমিয়ে দেন।

পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, এভাবে চিংড়ির দরপতন হলে শুধু স্থানীয় নয়, রাষ্ট্রও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন চিংড়ি চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

পাইকগাছা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা টিপু সুলতান জানান, বাগদা চিংড়ি রপ্তানি প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় চিংড়ির দাম কিছুটা কমেছে। তবে রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে দাম বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত