Ajker Patrika

‘কত দিনে বান্ধের দেহা পামু’

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ১২: ৪৯
‘কত দিনে বান্ধের দেহা পামু’

‘বান্ধ (বাঁধ) ভাইঙা ঘরে পানি উঠছিল কদিন আগেই। তখন পুলাপান লইয়া প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় আছিলাম তিন দিন। আবার ঢলের পানি আইলে হয়তো ঘরটাই ভাসায়া নিব। আর কত চোখের পানি ফালাইলে এই বান্ধের দেহা পামু?’ কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরের উত্তর গড়কান্দা মহল্লার বাসিন্দা চাতালশ্রমিক আয়েশা বেগম।

পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ী পৌরশহরের উত্তর গড়কান্দা মহল্লায় ভোগাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধে ১১০ মিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সময় পেরিয়ে গেলেও ভাঙন অংশ সংস্কার না হওয়ায় ফের পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাঁধ সংস্কারের কাজ গত ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজটি আটকে রয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, পাইলিং ও জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে আগেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে ভাঙন অংশে বস্তা ফেলার কাজ শুরু হবে।

পাউবো, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত ১৯ জুন ভোগাই নদীতে ঢল নামে। স্রোতে শহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকায় নদীর ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এই ভাঙা অংশ দিয়ে ঢলের পানিতে চার মহল্লার প্রায় ৭০০ ঘর পানিবন্দী হয়। এ সময় অনেক পরিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়, অনেকে আবার আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

এ বাঁধ সংস্কারে পাউবোর পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১১০ মিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩৮ লাখ টাকা। এ কাজের দায়িত্ব পায় রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁধ সংস্কারে গত ৪ মে কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৭ জুন ফের পাহাড়ি ঢলে এই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে উত্তর গড়কান্দা, গড়কান্দা, গুনাপাড়া ও শিমুলতলা মহল্লায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে উত্তর গড়কান্দা এলাকায় ৫০০ মিটার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। বর্তমানে এসব মহল্লা থেকে ঢলের পানি নেমে যায়। কিন্তু বাঁধটি সংস্কার না হওয়ায় ফের ঢলের আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, বাঁধের ভাঙা অংশে নদীতে ১৮৩টি স্থানে ১৬০টি গাছের খুঁটি পুঁতে পাইলিং করা হয়েছে। ৪ হাজার ৩৫০টি জিও ব্যাগ ফেলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাগগুলো পড়ে থাকায় অনেক ব্যাগ নষ্টও হয়ে গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করছে না। ঈদের আগে কাজ করা হলেও ঈদের পর এখনো কাজ শুরু করা হয়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিফাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে নদীতে পাইলিং করতে গাছের গুঁড়ি পোঁতা হয়েছে। ৪ হাজার ৩৫০টি জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে ভাঙন অংশে বস্তা ফেলা হবে।’

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘১১০ মিটার বাঁধ সংস্কারকাজ ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজটি আটকে রয়েছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত