Ajker Patrika

দালাল ও চোরের উৎপাত

ফরিদপুর সংবাদদাতা
Thumbnail image

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি দিন দিন বেড়ে চলছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। রোগী ও তাদের স্বজন কেউই রেহাই পাচ্ছে না এর থেকে। রোগীদের টিকিট কাউন্টারসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দুই মাসে শতাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কিন্তু হাসপাতাল প্রশাসন রয়েছে নীরব ভূমিকায়।

জানা গেছে, আগে এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার ছিল, পরে এই অঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ৭ তলা একটি ভবনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসহ আরও ২৫০ শয্যা বাড়িয়ে মোট ৫০০ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। উন্নত চিকিৎসার আশায় বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। বর্তমানে পুরোনো ও নতুন দুটি ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বিভিন্ন অজুহাতে সারা রাত বহিরাগতরা টহল দেয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। কেউ অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার আবার কেউ ওষুধের দোকানের প্রতিনিধি পরিচয় দিলেও সার্বক্ষণিক দল বেঁধে ওয়ার্ডের ভেতর মহড়া দেয়। এতে হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা হুমকিতে পড়েছে। এরাই সুযোগ বুঝে বহিরাগতদের সহযোগিতায় চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

কয়েক দিন আগে রাতে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে কামরুল নামের এক রোগীর স্বজনের কাছ থেকে মোবাইল চুরি হয়। তার কয়েক দিন আগে হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা শিউলী বেগম নামের আরও একজনের মোবাইল চুরি হয়।

ভুক্তভোগী কামরুলের স্বজনেরা বলেন, সারা রাতই প্রায় সজাগ ছিলেন। শেষ রাতে আধা ঘণ্টা ঘুমাতে গেলে আর মোবাইল পাননি। এ রকম আরও কয়েকজনের মোবাইল ও টাকা-চুরি হয়েছে বলে দাবি তাদের।

হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী আব্দুল করিম অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের টার্গেট করে হাসপাতালে চোরদের উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন সময়ে সেবা নিতে এসে শুধু এই হাসপাতাল থেকেই অর্ধশতাধিক নারীর স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল খোয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় হাতেনাতে চোর ধরা পড়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়সারা মনোভাবের কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ জন্য চুরির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন অসুস্থ স্বামীকে সেবা করতে আসা এক নারী। ছিনতাইকারীরা লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় তখন। এ ঘটনা আলোচিত হলেও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

মেডিকেল কলেজ এলাকার রিকশাচালক গফুর শেখ বলেন, বিভিন্ন সময়ে চোর ও ছিনতাইকারীদের হাতেনাতে ধরে থানা-পুলিশে দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানাতে কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা না করায় সহজেই বেরিয়ে আসেন তাঁরা। আবার এসব কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া হাসপাতাল প্রশাসনকে মৌখিকভাবে ভুক্তভোগীরা জানালেও প্রতিনিয়ত এড়িয়ে যায়।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মনির হোসেন বলেন, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত নেওয়া যায় না।হাসপাতালের গেটে আসা মাত্রই বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতে শুরু করে তারা। এরপর প্রলোভনে পরে অনেককেই চিকিৎসা না করেই নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে ভুক্তভোগী কোনো রোগী কিংবা তাদের স্বজনেরা আমাদের লিখিত কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়াটা একটু সমস্যা হচ্ছে।’

এনামুল হক আরও বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের এ ব্যাপারে বারবার সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।আমি এ হাসপাতালে নতুন যোগ দিয়েছি। দ্রুতই এসব বিষয়ে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত