Ajker Patrika

৬ মাসই অর্ধেক শহর পানিবন্দী

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ১৮
৬ মাসই অর্ধেক শহর পানিবন্দী

জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার অর্ধেক এলাকায়। প্রায় কোমরপানিতে নেমে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের। ঘরবাড়ি পানির মধ্যে থাকায় রান্নাসহ গৃহস্থালিকাজে বেগ পেতে হচ্ছে নারীদের। সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ছয় মাস এভাবে পার হলেও প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার তিন লক্ষাধিক লোকের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বাস জলাবদ্ধ এলাকায়। শহরের ইটাগাছা, কামালনগর, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, রইচপুর, বদ্দীপুর কলোনি ও বাকাল এলাকার অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ। বছরের প্রায় ছয় মাস পানির নিচে থাকে এসব এলাকা। পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা। স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এমনকি এক বাসা থেকে অন্য বাসায় যেতে ভেলার সাহায্য নিতে হচ্ছে তাঁদের। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চললেও জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

কলেজ রোড এলাকার আসমা খাতুন বলেন, ‘আমরা এই পৌরসভার মধ্যে খুব কষ্টে আছি। এখানে রান্নার সমস্যা, খাওয়ার সমস্যা, বাথরুমের সমস্যা। সবখানে সমস্যা। গ্যাসে একবার কোনো রকমে রান্না করছি। পানিতে ডুবে আছি। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই আমাদের।’

কাটিয়া মাঠপাড়া এলাকার লতিফুর রহমান বলেন, ‘পানি বেতনা নদীতে যায় না। প্রতিবার বাঁধ ভেঙে পাম্প লাগিয়ে সেচ দেওয়া হয়। এবার পানি বেশি। কারও কোনো অনুদান আমরা পাই না। অনেকেই ছবি তুলে নিয়ে যায়, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। কাউন্সিলরদের বললে তাঁরা বলেন দেখব, কিন্তু দেখেন না।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবো ও জেলা প্রশাসকের কাছে ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জেলা নাগরিক কমিটি।

এ বিষয়ে জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব আলী নুর খান বাবুল বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। শহরের জলাবদ্ধতার দুটি কারণ। একটি হলো অপরিকল্পিত চিংড়িঘের, অপরটি নদীগুলো ভরাট। এত দুর্ভোগ, কোনো জনপ্রতিনিধির মাথাব্যথা নেই। ভোট এলে প্রতিশ্রুতি। ভোট শেষে কারও মনে থাকে না।’

শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে প্রাণসায়র খাল। এই খালকে বেতনা ও মরিচ্চাপে সংযোগ করে দিতে পারলে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন অনেকেই।

এ বিষয়ে জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, প্রাণসায়র খাল দক্ষিণে মরিচ্চাপে মিশিয়ে দিলে এবং পূর্বে ও উত্তরে বেতনার সঙ্গে মিশিয়ে দিলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিকে সচেতন হতে হবে এবং নালা ব্যবস্থাপনায় সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

মাছের ঘেরে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এটা ঠিক। তবে নিচু এলাকায় মাছ চাষে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছে। সবার উচিত পৌরবাসীর স্বার্থে ঘের বেঁধে মাছ চাষ না করা।

পৌরসভার মেয়র তাশকিন আহমেদ চিশতি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান সমস্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সবার সঙ্গে পানি সরানোর বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছি। অচিরেই একটা ইতিবাচক ফল পাব বলে আশা করছি।’

সাতক্ষীরা-২ আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৪৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই টাকাটা কাজে লাগালে পৌরসভা বা শহরের নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে খনন কাজটা হতে হবে যথাযথ।

নদী ভরাটই শহরে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। বেতনা ও মরিচ্চাপ খনন করা হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে মনে করেন পনি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, শহরের পানি সরবে কীভাবে? নিচু জমি উঁচু করে ঘরবাড়ি করলে পানি সরার জায়গা থাকে না। শহরের পানি যায় বেতনা-মরিচ্চাপ দিয়ে। আর উত্তর দিকের পানি সরে যেত সোনাই নদী দিয়ে। সোনাই নদী ভরাট হয়ে গেছে। সেখানকার পানি সাধারণ এলাকা থেকে উঁচুতে থাকে। শহরের দিকের পানি সরে বেতনা-মরিচ্চাপে। সেটাও ভরাট হয়ে আছে। ফলে পানি না সরে বিভিন্ন দিকে প্লাবন ডেকে আনে। বেতনা-কপোতাক্ষ-মরিচ্চাপের সংযোগ খালের অধিকাংশ দখল হয়ে গেছে। উচ্ছেদ করতেও সময় লাগবে। সব মিলিয়ে সমন্বিত একটা উদ্যোগ দরকার। তবে বেতনা ও মরিচ্চাপ খনন করা গেলে জলাবদ্ধতা সমস্যার ৭০ শতাংশ সমাধান সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...