Ajker Patrika

পানি কমায় বংশাইয়ের তীব্র ভাঙন

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
পানি কমায় বংশাইয়ের তীব্র ভাঙন

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই নদের পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভাঙনকবলিত এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকার বাওয়ার কুমারাজনী গ্রামে ভাঙনে বেশ কিছু বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পথে।

বসতভিটা হারিয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষায় ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে এ ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর বংশাই নদে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। আবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় ভাঙন। চলতি বছর ভাঙনে পৌরসভার বাওয়ার কুমারাজনী এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর এবং শতাধিক একক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন পানি কমার সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। কয়েক দিনের ভাঙনে বেশ কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের হাত থেকে ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য অনেকে ঘরের বেড়া ও চালা খুলে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে মন্ত্রী, সচিব, এমপি, মেয়র অনেকেই এসেছেন। বারবার তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ (৬০) বলেন, কয়েক দিনে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাশের চারটি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি বাড়ির ঘরের চালা খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নজরুল ইসলামের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, গত শুক্রবার থেকে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। সেদিন রান্না শুরু করে শেষ না হতেই ঘরটি ভেঙে পড়ে নদে।

একই এলাকার ইন্তাজ আলী (৭০) বলেন, তাঁর বাড়ি ছিল চৌদ্দ ডিসেমল। এখন চৌদ্দ হাতও নেই। এই বয়সে পরিবার নিয়ে তিনি যাবেন কোথায়। তাঁর মতো ওই এলাকার নাজিমুল, খালেক, সুলতান, সোনাব আলী, বিল্লাল, আশরাফ, আহিলা, রহমান, মোকছেদ, মুনছেরের বাড়িও নদীগর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর রওশনারা বেগম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শত শত বসতভিটা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পৌর মেয়র সালমা আক্তার বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকায় অনেক আগে গিয়েছিলাম। বর্তমানের ভাঙনের খবর আমার জানা নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাত হোসেন বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকায় উপসহকারী প্রকৌশলীকে পাঠানো হবে। তাঁর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত