নৌকা পেতে মরিয়া তাঁরা

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। এই ৭টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বর প্রার্থীরা ইতিমধ্যে ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছেন। তাদের প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার গ্রামীণ জনপদ। বিভিন্ন হাট-বাজার, রাস্তা ও বাড়ি সংলগ্ন চায়ের স্টলে জমে উঠেছে নির্বাচনী আলোচনা।

প্রার্থীরা দোয়া চেয়ে টানাচ্ছেন ব্যানার ও পোস্টার, করছেন মিছিল-মিটিং ও মহড়া। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বেশ জোরেশোরে। এবার বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় এলাকায় এই দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে উপজেলার ৭ ইউপিতে প্রায় ২ ডজন প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জোর লবিং ও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার নিজের জনপ্রিয়তা জানান দিতে এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া করছেন।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৭ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাঁদের অধিকাংশরাই নৌকা প্রতীক পেতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় ফরম কিনে জমাও দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে যাঁরা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দল থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা সদর কুতুবা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে পর পর তিন বার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ মিয়া এবারও নৌকার মাঝি হতে চান। তিনি ইতিমধ্যে দলীয় ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন কাজী।

দেউলা ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল এবারও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন চান জেলা পরিষদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাদা তালুকদার।

কাচিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন। এ ছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান নিরব মিয়াও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ইউনিয়নে নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা তুহিন হাওলাদার।

হাসান নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা চাইছেন তিন নেতা। এরা হলেন-আবেদ চৌধুরী, শিহান চৌধুরী ও মানিক হাওলাদার।

টবগী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। এ ছাড়া এই দল থেকে মনোনয়ন চাইছেন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন হাওলাদার ও যুবলীগ নেতা বেলায়েত হোসেন।

পক্ষিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাগর হাওলাদার এবারও নৌকার মাঝি হতে চান। এই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আরও যাঁরা নৌকার মাঝি হতে চান, তারা হলেন-আবুল কালাম মিয়া, শহিদুল্লাহ মিয়া, সোহেল মাস্টার ও যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার।

বড় মানিকা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিমউদদীন হায়দার এবারও নৌকার মনোনয়ন চান। এই ইউনিয়ন পরিষদে আলামিন মেম্বার নামে আওয়ামী লীগের আরেক নেতাও দলীয় মনোনয়ন চান।

এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম গত মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গত ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৭ ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ডেলিগেট (প্রতিনিধি) ভোটের মাধ্যমে প্রার্থীদের নামের তালিকা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। এরপর কেন্দ্রীয় বোর্ড যাচাই-বাছাই করে যাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করবে। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাঁরা এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ জানান, এই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামী ২৫ নভেম্বর। যাচাই-বাছাই করা হবে ২৯ নভেম্বর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৬ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ২৩ ডিসেম্বর। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।