
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
জানতে চাইলে বলেন, চার সদস্যের পরিবার তাঁর। বাড়িতে নলকূপ থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে পানি উঠছে না। তাই প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের এই নলকূপে পানি নিতে এসেছেন তিনি।
কলসে পানি ভরা শেষে নুর নাহার জানালেন, হাতলে ৮০ থেকে ৯০ বার চাপ দিয়ে ১২ লিটারের কলসটি ভরতে পেরেছেন তিনি। শুধু যশোরের চাঁচড়ার নুর নাহারের পরিবার নয়; পানির জন্য এমন হাহাকার বিভিন্ন জেলায়।
বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ। ভূগর্ভস্থ পানিও নেমে গেছে অনেক নিচে। ফলে অগভীর-গভীর অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেচের জন্যও বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক।
পানির স্তর এখন কোথায়?
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে গত বছর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে কোথাও কোথাও পানির স্তর মাটির ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে নেমে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার একটি স্থানে পানির স্তর ১৫৩ ফুট গভীরে নেমে গেছে। রাজশাহী, নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন আর অগভীর নলকূপে পানি ওঠে না।
এ বছর ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ার কেন্দ্রীয় হিসাব পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন জেলার গৃহস্থ, কৃষক ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কয়েক ফুট নেমেছে। আগের বছরের চেয়ে কষ্টও বেড়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছর জয়পুরহাটে ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ ফুট। চলতি বছর সেই পানির স্তর পৌঁছেছে ৪৩ থেকে ৪৪ ফুটে। গত বছরের তুলনায় এ স্তরের দূরত্ব বেড়েছে ৭ ফুট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, প্রতিবছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে ছয় ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এর চেয়ে দ্বিগুণ নামছে পানির স্তর।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বছর দশেক আগেও দামুড়হুদায় ৪০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১০০-১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
যশোরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ বলেন, গত বছর যশোরে পানির স্তর নেমেছে ৩৭ ফুট। এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ৩৪ ফুট পানির স্তর নেমেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নাটোরের বড়াইগ্রামের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, বড়াইগ্রামে ২০২১ সালে পানির স্তর ছিল ৯ দশমিক ৬০ মিটার, ২০২২ সালে ১০ মিটার, ২০২৩ সালে ১১ দশমিক ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ১৪ দশমিক ৪০ মিটার নেচে নেমে গেছে।
ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহের অধিকাংশ এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।
কৃষকের দুর্ভোগ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, রাতে জমিতে সেচ দিলে দুপুরের পর তা শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে হতে ধানখেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া একবার সেচ দেওয়ার পর এক সপ্তাহের আগে আবার সেচ দেওয়ার জন্য বরেন্দ্রর গভীর নলকূপে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। ফলে এখন জমির বোরো ধান রক্ষাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ধানের জমিতে সেচের জন্য পানি পাওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। পুকুরগুলোতেও পানি নেই। বিএমডিএর গভীর নলকূপগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। আগে যেখানে এক ঘণ্টায় জমি ভিজে যেত; এখন দুই ঘণ্টা পানি দিয়েও জমিতে পানি রাখা যাচ্ছে না।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এভাবে আরও এক-দুই সপ্তাহ চললে উত্তরাঞ্চলজুড়ে বোরো ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বোরো ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বড়টিয়ার গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, ‘এ বছর মাঠে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পানির অভাবে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এভাবে আর সপ্তাহখানেক গেলে জমিতে ধানের থেকে চিটার ভাগ বেশি হবে।’
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘিওরে এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর।আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। খরা ও দাবদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
খাবার পানিসহ গৃহস্থালি কাজে সংকট
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, বাড়িতে গোসল-খাওয়া থেকে শুরু করে গরুকে পানি পান করানো—সবই হয়ে থাকে নলকূপের পানিতে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পানি পাচ্ছেন না নলকূপে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের দশমীপাড়ার মানিক আলী বলেন, ‘আগে ১৫-২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক ভরে যেত। প্রায় দুই মাসের মতো লক্ষ করছি, দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালু থাকলেও ট্যাংক ভরছে না।’
ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ স্থাপনের কাজ করা শ্রমিক মো. রাকিব ও অহিদুজ্জামান জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট মাটির নিচে পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচেও পানি মিলছে না।
কারণ কী
গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন, যশোরের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের চারপাশের পুকুর ও জলাশয় ভরাট করছি। জলাধার বলতে আর কিছু বাকি নেই। এখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়েছে। যে যার মতো গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির সংস্থান করছে। এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। আর জলাধার না থাকায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে সাইকেলটি পূর্ণ হতে পারছে না; যার প্রভাবে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, ‘মানুষ নিজেরাই আজকের এ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পুকুর ভরাট করেছে, গাছগুলো কেটে ফেলেছে। সংযুক্তি আরব আমিরাত, সৌদি আরবে বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটেছে, বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে মাটির উপরিভাগ কেটে বড় যাহাজে করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সবুজায়ন করার চেষ্টা করছে। আর আমরা গাছ লাগাচ্ছি, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করছি না।’
বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তীব্র খরা এবং বৃষ্টিপাত না হওয়া বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকটের মূল কারণ। খরায় পুকুর, খাল, বিল, নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এতে পানির সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএর গভীর নলকূপের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক গভীর নলকূপ খনন করা হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি নিয়ে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে কাজ করছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিসো। রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হিসাবে সেচকাজে জেলায় ৯০ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৯৭ শতাংশ সেচ পানিই ভূগর্ভস্থ।’
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
বিএমডিএর পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাবে, আবার বর্ষা মৌসুমে উঠলে খুব একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে যেসব এলাকায় স্তর ওঠে না, আমরা সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’
রাজশাহীর পবা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহিনুল হক বলেন, ‘প্রতিবছরই খরার সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা যায়। এবার সংকট একটু বেশি দেখা দিয়েছে। আশা করছি, বৃষ্টি নামলেই আবার পানির স্তর আগের জায়গায় ফিরে আসবে এবং পানির সংকট কমবে।’
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, উপজেলায় সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজার ও ব্যক্তিমালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। অগভীর নলকূপে পানি না ওঠায় গভীর নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। কেউ কেউ ১০-১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামিয়ে পানি ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ‘নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার কারণে পানির লেয়ার যে রিচার্জ হতো, সেটা হয় না।’
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, সরকারিভাবে জেলায় মোট ১৯ হাজার ২২৮টি টিউবওয়েল বসানো আছে। জেলায় কী পরিমাণ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, সেটার কোনো তথ্য নেই।
সুপারিশ
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপরিভাগের জলাধার সংরক্ষণ জরুরি। সে জন্য ভরাট করা দিঘিগুলো পুনঃখনন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএমডিএ জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাকের মতে, পানির অপচয় রোধ করতে হবে। সরকারি সেচ নীতিমালার বিধান মেনে গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। নদী-পুকুর ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি ও ভূগর্ভ নিয়ে গবেষণা করা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, ‘সবাই সাবমারসিবলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদী কিংবা খালের পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হবে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, সরকারের নিয়ম আছে, এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ করা যাবে না। কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানছে না। পানিপ্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে; যে কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ ও বড়াইগ্রাম (নাটোর), ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি]

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
জানতে চাইলে বলেন, চার সদস্যের পরিবার তাঁর। বাড়িতে নলকূপ থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে পানি উঠছে না। তাই প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের এই নলকূপে পানি নিতে এসেছেন তিনি।
কলসে পানি ভরা শেষে নুর নাহার জানালেন, হাতলে ৮০ থেকে ৯০ বার চাপ দিয়ে ১২ লিটারের কলসটি ভরতে পেরেছেন তিনি। শুধু যশোরের চাঁচড়ার নুর নাহারের পরিবার নয়; পানির জন্য এমন হাহাকার বিভিন্ন জেলায়।
বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ। ভূগর্ভস্থ পানিও নেমে গেছে অনেক নিচে। ফলে অগভীর-গভীর অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেচের জন্যও বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক।
পানির স্তর এখন কোথায়?
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে গত বছর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে কোথাও কোথাও পানির স্তর মাটির ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে নেমে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার একটি স্থানে পানির স্তর ১৫৩ ফুট গভীরে নেমে গেছে। রাজশাহী, নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন আর অগভীর নলকূপে পানি ওঠে না।
এ বছর ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ার কেন্দ্রীয় হিসাব পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন জেলার গৃহস্থ, কৃষক ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কয়েক ফুট নেমেছে। আগের বছরের চেয়ে কষ্টও বেড়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছর জয়পুরহাটে ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ ফুট। চলতি বছর সেই পানির স্তর পৌঁছেছে ৪৩ থেকে ৪৪ ফুটে। গত বছরের তুলনায় এ স্তরের দূরত্ব বেড়েছে ৭ ফুট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, প্রতিবছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে ছয় ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এর চেয়ে দ্বিগুণ নামছে পানির স্তর।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বছর দশেক আগেও দামুড়হুদায় ৪০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১০০-১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
যশোরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ বলেন, গত বছর যশোরে পানির স্তর নেমেছে ৩৭ ফুট। এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ৩৪ ফুট পানির স্তর নেমেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নাটোরের বড়াইগ্রামের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, বড়াইগ্রামে ২০২১ সালে পানির স্তর ছিল ৯ দশমিক ৬০ মিটার, ২০২২ সালে ১০ মিটার, ২০২৩ সালে ১১ দশমিক ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ১৪ দশমিক ৪০ মিটার নেচে নেমে গেছে।
ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহের অধিকাংশ এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।
কৃষকের দুর্ভোগ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, রাতে জমিতে সেচ দিলে দুপুরের পর তা শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে হতে ধানখেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া একবার সেচ দেওয়ার পর এক সপ্তাহের আগে আবার সেচ দেওয়ার জন্য বরেন্দ্রর গভীর নলকূপে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। ফলে এখন জমির বোরো ধান রক্ষাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ধানের জমিতে সেচের জন্য পানি পাওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। পুকুরগুলোতেও পানি নেই। বিএমডিএর গভীর নলকূপগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। আগে যেখানে এক ঘণ্টায় জমি ভিজে যেত; এখন দুই ঘণ্টা পানি দিয়েও জমিতে পানি রাখা যাচ্ছে না।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এভাবে আরও এক-দুই সপ্তাহ চললে উত্তরাঞ্চলজুড়ে বোরো ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বোরো ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বড়টিয়ার গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, ‘এ বছর মাঠে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পানির অভাবে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এভাবে আর সপ্তাহখানেক গেলে জমিতে ধানের থেকে চিটার ভাগ বেশি হবে।’
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘিওরে এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর।আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। খরা ও দাবদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
খাবার পানিসহ গৃহস্থালি কাজে সংকট
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, বাড়িতে গোসল-খাওয়া থেকে শুরু করে গরুকে পানি পান করানো—সবই হয়ে থাকে নলকূপের পানিতে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পানি পাচ্ছেন না নলকূপে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের দশমীপাড়ার মানিক আলী বলেন, ‘আগে ১৫-২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক ভরে যেত। প্রায় দুই মাসের মতো লক্ষ করছি, দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালু থাকলেও ট্যাংক ভরছে না।’
ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ স্থাপনের কাজ করা শ্রমিক মো. রাকিব ও অহিদুজ্জামান জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট মাটির নিচে পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচেও পানি মিলছে না।
কারণ কী
গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন, যশোরের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের চারপাশের পুকুর ও জলাশয় ভরাট করছি। জলাধার বলতে আর কিছু বাকি নেই। এখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়েছে। যে যার মতো গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির সংস্থান করছে। এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। আর জলাধার না থাকায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে সাইকেলটি পূর্ণ হতে পারছে না; যার প্রভাবে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, ‘মানুষ নিজেরাই আজকের এ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পুকুর ভরাট করেছে, গাছগুলো কেটে ফেলেছে। সংযুক্তি আরব আমিরাত, সৌদি আরবে বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটেছে, বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে মাটির উপরিভাগ কেটে বড় যাহাজে করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সবুজায়ন করার চেষ্টা করছে। আর আমরা গাছ লাগাচ্ছি, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করছি না।’
বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তীব্র খরা এবং বৃষ্টিপাত না হওয়া বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকটের মূল কারণ। খরায় পুকুর, খাল, বিল, নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এতে পানির সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএর গভীর নলকূপের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক গভীর নলকূপ খনন করা হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি নিয়ে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে কাজ করছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিসো। রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হিসাবে সেচকাজে জেলায় ৯০ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৯৭ শতাংশ সেচ পানিই ভূগর্ভস্থ।’
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
বিএমডিএর পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাবে, আবার বর্ষা মৌসুমে উঠলে খুব একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে যেসব এলাকায় স্তর ওঠে না, আমরা সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’
রাজশাহীর পবা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহিনুল হক বলেন, ‘প্রতিবছরই খরার সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা যায়। এবার সংকট একটু বেশি দেখা দিয়েছে। আশা করছি, বৃষ্টি নামলেই আবার পানির স্তর আগের জায়গায় ফিরে আসবে এবং পানির সংকট কমবে।’
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, উপজেলায় সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজার ও ব্যক্তিমালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। অগভীর নলকূপে পানি না ওঠায় গভীর নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। কেউ কেউ ১০-১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামিয়ে পানি ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ‘নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার কারণে পানির লেয়ার যে রিচার্জ হতো, সেটা হয় না।’
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, সরকারিভাবে জেলায় মোট ১৯ হাজার ২২৮টি টিউবওয়েল বসানো আছে। জেলায় কী পরিমাণ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, সেটার কোনো তথ্য নেই।
সুপারিশ
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপরিভাগের জলাধার সংরক্ষণ জরুরি। সে জন্য ভরাট করা দিঘিগুলো পুনঃখনন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএমডিএ জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাকের মতে, পানির অপচয় রোধ করতে হবে। সরকারি সেচ নীতিমালার বিধান মেনে গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। নদী-পুকুর ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি ও ভূগর্ভ নিয়ে গবেষণা করা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, ‘সবাই সাবমারসিবলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদী কিংবা খালের পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হবে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, সরকারের নিয়ম আছে, এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ করা যাবে না। কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানছে না। পানিপ্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে; যে কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ ও বড়াইগ্রাম (নাটোর), ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি]

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
জানতে চাইলে বলেন, চার সদস্যের পরিবার তাঁর। বাড়িতে নলকূপ থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে পানি উঠছে না। তাই প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের এই নলকূপে পানি নিতে এসেছেন তিনি।
কলসে পানি ভরা শেষে নুর নাহার জানালেন, হাতলে ৮০ থেকে ৯০ বার চাপ দিয়ে ১২ লিটারের কলসটি ভরতে পেরেছেন তিনি। শুধু যশোরের চাঁচড়ার নুর নাহারের পরিবার নয়; পানির জন্য এমন হাহাকার বিভিন্ন জেলায়।
বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ। ভূগর্ভস্থ পানিও নেমে গেছে অনেক নিচে। ফলে অগভীর-গভীর অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেচের জন্যও বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক।
পানির স্তর এখন কোথায়?
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে গত বছর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে কোথাও কোথাও পানির স্তর মাটির ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে নেমে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার একটি স্থানে পানির স্তর ১৫৩ ফুট গভীরে নেমে গেছে। রাজশাহী, নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন আর অগভীর নলকূপে পানি ওঠে না।
এ বছর ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ার কেন্দ্রীয় হিসাব পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন জেলার গৃহস্থ, কৃষক ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কয়েক ফুট নেমেছে। আগের বছরের চেয়ে কষ্টও বেড়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছর জয়পুরহাটে ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ ফুট। চলতি বছর সেই পানির স্তর পৌঁছেছে ৪৩ থেকে ৪৪ ফুটে। গত বছরের তুলনায় এ স্তরের দূরত্ব বেড়েছে ৭ ফুট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, প্রতিবছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে ছয় ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এর চেয়ে দ্বিগুণ নামছে পানির স্তর।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বছর দশেক আগেও দামুড়হুদায় ৪০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১০০-১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
যশোরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ বলেন, গত বছর যশোরে পানির স্তর নেমেছে ৩৭ ফুট। এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ৩৪ ফুট পানির স্তর নেমেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নাটোরের বড়াইগ্রামের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, বড়াইগ্রামে ২০২১ সালে পানির স্তর ছিল ৯ দশমিক ৬০ মিটার, ২০২২ সালে ১০ মিটার, ২০২৩ সালে ১১ দশমিক ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ১৪ দশমিক ৪০ মিটার নেচে নেমে গেছে।
ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহের অধিকাংশ এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।
কৃষকের দুর্ভোগ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, রাতে জমিতে সেচ দিলে দুপুরের পর তা শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে হতে ধানখেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া একবার সেচ দেওয়ার পর এক সপ্তাহের আগে আবার সেচ দেওয়ার জন্য বরেন্দ্রর গভীর নলকূপে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। ফলে এখন জমির বোরো ধান রক্ষাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ধানের জমিতে সেচের জন্য পানি পাওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। পুকুরগুলোতেও পানি নেই। বিএমডিএর গভীর নলকূপগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। আগে যেখানে এক ঘণ্টায় জমি ভিজে যেত; এখন দুই ঘণ্টা পানি দিয়েও জমিতে পানি রাখা যাচ্ছে না।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এভাবে আরও এক-দুই সপ্তাহ চললে উত্তরাঞ্চলজুড়ে বোরো ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বোরো ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বড়টিয়ার গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, ‘এ বছর মাঠে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পানির অভাবে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এভাবে আর সপ্তাহখানেক গেলে জমিতে ধানের থেকে চিটার ভাগ বেশি হবে।’
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘিওরে এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর।আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। খরা ও দাবদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
খাবার পানিসহ গৃহস্থালি কাজে সংকট
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, বাড়িতে গোসল-খাওয়া থেকে শুরু করে গরুকে পানি পান করানো—সবই হয়ে থাকে নলকূপের পানিতে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পানি পাচ্ছেন না নলকূপে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের দশমীপাড়ার মানিক আলী বলেন, ‘আগে ১৫-২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক ভরে যেত। প্রায় দুই মাসের মতো লক্ষ করছি, দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালু থাকলেও ট্যাংক ভরছে না।’
ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ স্থাপনের কাজ করা শ্রমিক মো. রাকিব ও অহিদুজ্জামান জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট মাটির নিচে পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচেও পানি মিলছে না।
কারণ কী
গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন, যশোরের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের চারপাশের পুকুর ও জলাশয় ভরাট করছি। জলাধার বলতে আর কিছু বাকি নেই। এখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়েছে। যে যার মতো গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির সংস্থান করছে। এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। আর জলাধার না থাকায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে সাইকেলটি পূর্ণ হতে পারছে না; যার প্রভাবে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, ‘মানুষ নিজেরাই আজকের এ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পুকুর ভরাট করেছে, গাছগুলো কেটে ফেলেছে। সংযুক্তি আরব আমিরাত, সৌদি আরবে বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটেছে, বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে মাটির উপরিভাগ কেটে বড় যাহাজে করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সবুজায়ন করার চেষ্টা করছে। আর আমরা গাছ লাগাচ্ছি, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করছি না।’
বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তীব্র খরা এবং বৃষ্টিপাত না হওয়া বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকটের মূল কারণ। খরায় পুকুর, খাল, বিল, নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এতে পানির সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএর গভীর নলকূপের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক গভীর নলকূপ খনন করা হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি নিয়ে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে কাজ করছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিসো। রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হিসাবে সেচকাজে জেলায় ৯০ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৯৭ শতাংশ সেচ পানিই ভূগর্ভস্থ।’
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
বিএমডিএর পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাবে, আবার বর্ষা মৌসুমে উঠলে খুব একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে যেসব এলাকায় স্তর ওঠে না, আমরা সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’
রাজশাহীর পবা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহিনুল হক বলেন, ‘প্রতিবছরই খরার সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা যায়। এবার সংকট একটু বেশি দেখা দিয়েছে। আশা করছি, বৃষ্টি নামলেই আবার পানির স্তর আগের জায়গায় ফিরে আসবে এবং পানির সংকট কমবে।’
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, উপজেলায় সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজার ও ব্যক্তিমালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। অগভীর নলকূপে পানি না ওঠায় গভীর নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। কেউ কেউ ১০-১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামিয়ে পানি ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ‘নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার কারণে পানির লেয়ার যে রিচার্জ হতো, সেটা হয় না।’
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, সরকারিভাবে জেলায় মোট ১৯ হাজার ২২৮টি টিউবওয়েল বসানো আছে। জেলায় কী পরিমাণ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, সেটার কোনো তথ্য নেই।
সুপারিশ
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপরিভাগের জলাধার সংরক্ষণ জরুরি। সে জন্য ভরাট করা দিঘিগুলো পুনঃখনন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএমডিএ জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাকের মতে, পানির অপচয় রোধ করতে হবে। সরকারি সেচ নীতিমালার বিধান মেনে গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। নদী-পুকুর ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি ও ভূগর্ভ নিয়ে গবেষণা করা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, ‘সবাই সাবমারসিবলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদী কিংবা খালের পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হবে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, সরকারের নিয়ম আছে, এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ করা যাবে না। কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানছে না। পানিপ্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে; যে কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ ও বড়াইগ্রাম (নাটোর), ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি]

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
জানতে চাইলে বলেন, চার সদস্যের পরিবার তাঁর। বাড়িতে নলকূপ থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে পানি উঠছে না। তাই প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের এই নলকূপে পানি নিতে এসেছেন তিনি।
কলসে পানি ভরা শেষে নুর নাহার জানালেন, হাতলে ৮০ থেকে ৯০ বার চাপ দিয়ে ১২ লিটারের কলসটি ভরতে পেরেছেন তিনি। শুধু যশোরের চাঁচড়ার নুর নাহারের পরিবার নয়; পানির জন্য এমন হাহাকার বিভিন্ন জেলায়।
বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ। ভূগর্ভস্থ পানিও নেমে গেছে অনেক নিচে। ফলে অগভীর-গভীর অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেচের জন্যও বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক।
পানির স্তর এখন কোথায়?
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে গত বছর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে কোথাও কোথাও পানির স্তর মাটির ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে নেমে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার একটি স্থানে পানির স্তর ১৫৩ ফুট গভীরে নেমে গেছে। রাজশাহী, নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন আর অগভীর নলকূপে পানি ওঠে না।
এ বছর ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ার কেন্দ্রীয় হিসাব পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন জেলার গৃহস্থ, কৃষক ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কয়েক ফুট নেমেছে। আগের বছরের চেয়ে কষ্টও বেড়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছর জয়পুরহাটে ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ ফুট। চলতি বছর সেই পানির স্তর পৌঁছেছে ৪৩ থেকে ৪৪ ফুটে। গত বছরের তুলনায় এ স্তরের দূরত্ব বেড়েছে ৭ ফুট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, প্রতিবছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে ছয় ইঞ্চি করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এর চেয়ে দ্বিগুণ নামছে পানির স্তর।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বছর দশেক আগেও দামুড়হুদায় ৪০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১০০-১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
যশোরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ বলেন, গত বছর যশোরে পানির স্তর নেমেছে ৩৭ ফুট। এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ৩৪ ফুট পানির স্তর নেমেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নাটোরের বড়াইগ্রামের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, বড়াইগ্রামে ২০২১ সালে পানির স্তর ছিল ৯ দশমিক ৬০ মিটার, ২০২২ সালে ১০ মিটার, ২০২৩ সালে ১১ দশমিক ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ১৪ দশমিক ৪০ মিটার নেচে নেমে গেছে।
ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহের অধিকাংশ এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।
কৃষকের দুর্ভোগ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, রাতে জমিতে সেচ দিলে দুপুরের পর তা শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে হতে ধানখেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া একবার সেচ দেওয়ার পর এক সপ্তাহের আগে আবার সেচ দেওয়ার জন্য বরেন্দ্রর গভীর নলকূপে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। ফলে এখন জমির বোরো ধান রক্ষাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ধানের জমিতে সেচের জন্য পানি পাওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। পুকুরগুলোতেও পানি নেই। বিএমডিএর গভীর নলকূপগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। আগে যেখানে এক ঘণ্টায় জমি ভিজে যেত; এখন দুই ঘণ্টা পানি দিয়েও জমিতে পানি রাখা যাচ্ছে না।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এভাবে আরও এক-দুই সপ্তাহ চললে উত্তরাঞ্চলজুড়ে বোরো ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বোরো ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বড়টিয়ার গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, ‘এ বছর মাঠে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পানির অভাবে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এভাবে আর সপ্তাহখানেক গেলে জমিতে ধানের থেকে চিটার ভাগ বেশি হবে।’
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘিওরে এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর।আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। খরা ও দাবদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
খাবার পানিসহ গৃহস্থালি কাজে সংকট
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, বাড়িতে গোসল-খাওয়া থেকে শুরু করে গরুকে পানি পান করানো—সবই হয়ে থাকে নলকূপের পানিতে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পানি পাচ্ছেন না নলকূপে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের দশমীপাড়ার মানিক আলী বলেন, ‘আগে ১৫-২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক ভরে যেত। প্রায় দুই মাসের মতো লক্ষ করছি, দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালু থাকলেও ট্যাংক ভরছে না।’
ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ স্থাপনের কাজ করা শ্রমিক মো. রাকিব ও অহিদুজ্জামান জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট মাটির নিচে পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচেও পানি মিলছে না।
কারণ কী
গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন, যশোরের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের চারপাশের পুকুর ও জলাশয় ভরাট করছি। জলাধার বলতে আর কিছু বাকি নেই। এখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়েছে। যে যার মতো গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির সংস্থান করছে। এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। আর জলাধার না থাকায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে সাইকেলটি পূর্ণ হতে পারছে না; যার প্রভাবে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, ‘মানুষ নিজেরাই আজকের এ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পুকুর ভরাট করেছে, গাছগুলো কেটে ফেলেছে। সংযুক্তি আরব আমিরাত, সৌদি আরবে বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটেছে, বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে মাটির উপরিভাগ কেটে বড় যাহাজে করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সবুজায়ন করার চেষ্টা করছে। আর আমরা গাছ লাগাচ্ছি, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করছি না।’
বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তীব্র খরা এবং বৃষ্টিপাত না হওয়া বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকটের মূল কারণ। খরায় পুকুর, খাল, বিল, নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এতে পানির সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএর গভীর নলকূপের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক গভীর নলকূপ খনন করা হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি নিয়ে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে কাজ করছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিসো। রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হিসাবে সেচকাজে জেলায় ৯০ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৯৭ শতাংশ সেচ পানিই ভূগর্ভস্থ।’
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
বিএমডিএর পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাবে, আবার বর্ষা মৌসুমে উঠলে খুব একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে যেসব এলাকায় স্তর ওঠে না, আমরা সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’
রাজশাহীর পবা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহিনুল হক বলেন, ‘প্রতিবছরই খরার সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা যায়। এবার সংকট একটু বেশি দেখা দিয়েছে। আশা করছি, বৃষ্টি নামলেই আবার পানির স্তর আগের জায়গায় ফিরে আসবে এবং পানির সংকট কমবে।’
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, উপজেলায় সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজার ও ব্যক্তিমালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। অগভীর নলকূপে পানি না ওঠায় গভীর নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। কেউ কেউ ১০-১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামিয়ে পানি ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ‘নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার কারণে পানির লেয়ার যে রিচার্জ হতো, সেটা হয় না।’
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, সরকারিভাবে জেলায় মোট ১৯ হাজার ২২৮টি টিউবওয়েল বসানো আছে। জেলায় কী পরিমাণ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, সেটার কোনো তথ্য নেই।
সুপারিশ
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপরিভাগের জলাধার সংরক্ষণ জরুরি। সে জন্য ভরাট করা দিঘিগুলো পুনঃখনন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএমডিএ জয়পুরহাটের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাকের মতে, পানির অপচয় রোধ করতে হবে। সরকারি সেচ নীতিমালার বিধান মেনে গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। নদী-পুকুর ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি ও ভূগর্ভ নিয়ে গবেষণা করা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, ‘সবাই সাবমারসিবলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদী কিংবা খালের পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হবে।’
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, সরকারের নিয়ম আছে, এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ করা যাবে না। কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানছে না। পানিপ্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে; যে কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ ও বড়াইগ্রাম (নাটোর), ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি]

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
২৭ এপ্রিল ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫