Ajker Patrika

১৪ ব্যাংকে নামেই পর্যবেক্ষক

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
১৪ ব্যাংকে নামেই পর্যবেক্ষক

দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খলায় ঘুরপাক খাচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংক। সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের বহুমাত্রিক ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা যেন কার্যত অসহায়। আর ঋণ অনুমোদন ও পুনঃ তফসিল, খেলাপি আদায় ও অবলোপন এবং নিয়োগ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁদের ভূমিকা সামান্যই। কাগজে-কলমের দায়িত্ব হিসেবে রুটিন কাজেই তাঁরা ব্যস্ত থাকেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদ গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত তিনটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যাংকটির সমন্বয়ক মো. নুরুল আমীনের আপত্তি সত্ত্বেও বিপুল অর্থের ঋণ ছাড় করে, যা ওই সমন্বয়কের দাখিল করা অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীকালে ব্যাংকটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নুরুল আমীন।

ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংকের নামে-বেনামে ঋণ দেওয়া নিয়ে আলোচনা আছে। আর ব্যাংকের তারল্য কমায় কিছু ব্যাংকের আমানতকারী অর্থ তুলে নেয়। পাশাপাশি শর্ত শিথিল করার পরেও খেলাপি ও অবলোপন বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি কিছু ব্যাংকের চলতি হিসাব নেতিবাচক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর আন্তব্যাংক লেনদেন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ৪৭৫তম পর্ষদ সভায় একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নামে সীমার অতিরিক্ত ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ঋণপত্র খোলার প্রস্তাব ওঠে। ঋণ নবায়ন হলে গ্রাহক ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ পায়। আর পর্ষদের আলোচ্যসূচি দেখে এক দিন আগে অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে নিযুক্ত সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ই-মেইলের মাধ্যমে ঋণ ছাড়ে আপত্তি জানান। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাইফুল ইসলামের আপত্তির বিষয়টি ব্যাংকটির কার্যবিবরণীতে উল্লেখ না করেই ঋণ ছাড় করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক হিসাবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) নুরুন নাহার, অগ্রণী ব্যাংকে ইডি মো. জাকির হোসেন চৌধূরী, জনতা ব্যাংকে ইডি পরিমল চন্দ্র চক্রবর্তী, রূপালী ব্যাংকে মো. মর্তুজ আলী, ন্যাশনাল ব্যাংকে সমন্বয়ক হিসাবে রয়েছেন ইডি সাইফুল ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকে ইডি মো. শফিকুল ইসলাম, এবি ব্যাংকে মো আনোয়ার হোসেন, ওয়ান ব্যাংকে মো. নুরুল আমীন, বেসিক ব্যাংকে মো. মেজবাউল হক  ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ইডি মো. আজিজুল হক। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছেন পরিচালক মো. আবুল কালাম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মোতাসিম বিল্লাহ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে মো. রজব আলী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পরিচালক হোসনে আর শিখা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, পর্যবেক্ষকেরা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থিত থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে তা অবহিত করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ঋণ অনুমোদন, পুনঃ তফসিল ও খেলাপি আদায় এবং নিয়োগ কিংবা সুশাসন রক্ষা প্রভৃতি কাজে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে যেকোনো ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে। তবে এটা কোনো সমাধান নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্যবেক্ষক বা সমন্বয়ক মতামত দেওয়ার পরই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, এমন নিয়মের আইনগত ভিত্তি দরকার। তা করতে না পারলে কাগজে-কলমে দায়িত্ব পালন ছাড়া কিছু করার নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত