অরুণ কর্মকার
বর্তমান মেয়াদের শুরু থেকেই দেশে জ্বালানির ঘাটতি পূরণে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এর আগে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরও গ্যাসসংকট মোকাবিলায় দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ফলে তখন গ্যাস সরবরাহ দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছিল। তাতে ওই সময় দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন ও সরবরাহ দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছিল।
যদিও ২০১৩-১৪ সালে এই উত্তোলন বৃদ্ধির পরও চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি ছিল। কারণ তত দিনে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট অতিক্রম করে। তবে এই ঘাটতি তখন সংকটের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদাও ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। তা সত্ত্বেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। আর যথেষ্ট সুযোগ ও নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স তার সীমিত সক্ষমতা নিয়ে কিছু কিছু কূপ ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কদাচিৎ দুয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ১-২ মিলিয়ন থেকে ২০-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোয় গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রতিবছর উৎপাদন কমতে থাকে। ফলে ক্রমান্বয়ে গ্যাসের ঘাটতিও বাড়তে থাকে। এই ঘাটতি এখন নিশ্চিত সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাই সরকারও বেশ জোরেশোরেই গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজে হাত দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এর আগে সরকারের নীতিকৌশলের মূল প্রবণতা ছিল আমদানি। দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ আহরণের বিষয়টি একপ্রকার উপেক্ষা করে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক অতিঝুঁকিপূর্ণ পথ ধরেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি আমদানির অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের অস্থিতিশীলতা এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব যেকোনো সময় এলএনজি আমদানি ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত করতে পারে। এই সত্য এখন প্রমাণিত হয়েছে।
যদিও ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করার সময় থেকেই বিশেষজ্ঞ-গবেষকেরা এই ঝুঁকির কথা বারবার সরকারের দৃষ্টিগোচর করেছেন। কিন্তু সরকার তাতে মনোযোগ দেয়নি; বরং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের জন্য সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই সব সময় দায়ী করে নিজেদের নীতিকৌশলের ত্রুটির দিকটি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চেয়েছে। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, সরকারের ওই অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে। অবশ্য এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করার নীতি সরকার পরিত্যাগ করেনি। পরিত্যাগ করা সম্ভবও নয়।
কেননা আমাদের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা শুধু দেশের জ্বালানি সম্পদ দিয়ে পূরণ করা যাবে না। আমদানি করতে হবেই। তবে দেশের সম্পদ এবং আমদানির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অনুপাত বজায় রাখা জরুরি। না হলে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) লক্ষ্য পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
সরকার এবার দেশীয় জ্বালানি সম্পদ ও আমদানির মধ্যকার সেই অনুপাত ঠিক করার কাজ শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রচারই সরকারের মূল প্রবণতা হিসেবে লক্ষ করা যাচ্ছে। সে কারণেই আমাদের গ্যাসের দৈনিক ঘাটতি যখন দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে উঠেছে, তখন সরকার কোনো ক্ষেত্রের একটি কূপ থেকে ১০-২০ মিলিয়ন গ্যাস পাওয়াকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসার কাজে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য বড় কোনো নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পথেও এখন পর্যন্ত সরকার হাঁটছে না। পুরোনো ছোটখাটো গ্যাসক্ষেত্রে নতুন একটি কূপ খনন করে সাফল্য দেখাতেই তাদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।
তবে মূল প্রবণতা হলেও এটাই সব নয়। সরকার দেশের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য নতুন ক্ষেত্রগুলোতে ১০০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা করে কাজে হাত দিয়েছে। সরকারের বিশ্বাস, এই উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে আমদানি করা এলএনজি এবং দেশের নিজস্ব ক্ষেত্রের গ্যাসের মধ্যে অনুপাতের ভারসাম্য রক্ষা করবে। ফলে গ্যাসের দাম যেমন সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে, তেমনি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সরকারের এই পরিকল্পনাকে নিশ্চয়ই বাস্তবানুগ বলা যায়। তবে সময়মতো এবং ধারাবাহিকভাবে তার বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
তা ছাড়া ইতিমধ্যে দেশে গ্যাসের ঘাটতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখান থেকে স্বাভাবিক সরবরাহ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা মোটেই সহজসাধ্য নয়। বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সরবরাহ করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে ৬২০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। আর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে দেশের তিনটি উত্তোলন কোম্পানি এবং পিএসসির অধীনে দুটি বিদেশি কোম্পানির পরিচালিত দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম এখন স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু আমাদের যে দুটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট, যার মাধ্যমে এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তরিত করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়), তার একটি নিয়মিত বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় এলএনজি কম আনতে হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ওই রক্ষণাবেক্ষণ শেষ হবে। তখন হয়তো এলএনজি আমদানি দৈনিক আরও ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানো সম্ভব হবে। হয়তো সম্ভব হবে বলছি, কারণ বিষয়টির সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, যার সংকট এখন দেশে তীব্র।
গ্যাস ছাড়াও দেশের কয়লা উত্তোলনের বিষয়েও সরকার নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানিও এখন সরকারের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্যতার জন্য বিশেষ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার বড়পুকুরিয়া এবং খালাসপীর কয়লা খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সম্ভাব্যতা নিয়ে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে কয়লা উত্তোলন-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। প্রস্তাবনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনা, নির্দেশনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
দেশের নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের এসব সরকারি উদ্যোগ সফল হলে, জ্বালানিনিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যুক্ত হতে পারে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বর্তমান মেয়াদের শুরু থেকেই দেশে জ্বালানির ঘাটতি পূরণে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এর আগে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরও গ্যাসসংকট মোকাবিলায় দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ফলে তখন গ্যাস সরবরাহ দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছিল। তাতে ওই সময় দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন ও সরবরাহ দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছিল।
যদিও ২০১৩-১৪ সালে এই উত্তোলন বৃদ্ধির পরও চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি ছিল। কারণ তত দিনে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট অতিক্রম করে। তবে এই ঘাটতি তখন সংকটের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদাও ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। তা সত্ত্বেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। আর যথেষ্ট সুযোগ ও নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স তার সীমিত সক্ষমতা নিয়ে কিছু কিছু কূপ ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কদাচিৎ দুয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ১-২ মিলিয়ন থেকে ২০-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোয় গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রতিবছর উৎপাদন কমতে থাকে। ফলে ক্রমান্বয়ে গ্যাসের ঘাটতিও বাড়তে থাকে। এই ঘাটতি এখন নিশ্চিত সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাই সরকারও বেশ জোরেশোরেই গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজে হাত দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এর আগে সরকারের নীতিকৌশলের মূল প্রবণতা ছিল আমদানি। দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ আহরণের বিষয়টি একপ্রকার উপেক্ষা করে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক অতিঝুঁকিপূর্ণ পথ ধরেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি আমদানির অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের অস্থিতিশীলতা এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব যেকোনো সময় এলএনজি আমদানি ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত করতে পারে। এই সত্য এখন প্রমাণিত হয়েছে।
যদিও ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করার সময় থেকেই বিশেষজ্ঞ-গবেষকেরা এই ঝুঁকির কথা বারবার সরকারের দৃষ্টিগোচর করেছেন। কিন্তু সরকার তাতে মনোযোগ দেয়নি; বরং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের জন্য সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই সব সময় দায়ী করে নিজেদের নীতিকৌশলের ত্রুটির দিকটি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চেয়েছে। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, সরকারের ওই অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে। অবশ্য এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করার নীতি সরকার পরিত্যাগ করেনি। পরিত্যাগ করা সম্ভবও নয়।
কেননা আমাদের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা শুধু দেশের জ্বালানি সম্পদ দিয়ে পূরণ করা যাবে না। আমদানি করতে হবেই। তবে দেশের সম্পদ এবং আমদানির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অনুপাত বজায় রাখা জরুরি। না হলে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) লক্ষ্য পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
সরকার এবার দেশীয় জ্বালানি সম্পদ ও আমদানির মধ্যকার সেই অনুপাত ঠিক করার কাজ শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রচারই সরকারের মূল প্রবণতা হিসেবে লক্ষ করা যাচ্ছে। সে কারণেই আমাদের গ্যাসের দৈনিক ঘাটতি যখন দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে উঠেছে, তখন সরকার কোনো ক্ষেত্রের একটি কূপ থেকে ১০-২০ মিলিয়ন গ্যাস পাওয়াকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসার কাজে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য বড় কোনো নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পথেও এখন পর্যন্ত সরকার হাঁটছে না। পুরোনো ছোটখাটো গ্যাসক্ষেত্রে নতুন একটি কূপ খনন করে সাফল্য দেখাতেই তাদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।
তবে মূল প্রবণতা হলেও এটাই সব নয়। সরকার দেশের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য নতুন ক্ষেত্রগুলোতে ১০০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা করে কাজে হাত দিয়েছে। সরকারের বিশ্বাস, এই উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে আমদানি করা এলএনজি এবং দেশের নিজস্ব ক্ষেত্রের গ্যাসের মধ্যে অনুপাতের ভারসাম্য রক্ষা করবে। ফলে গ্যাসের দাম যেমন সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে, তেমনি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সরকারের এই পরিকল্পনাকে নিশ্চয়ই বাস্তবানুগ বলা যায়। তবে সময়মতো এবং ধারাবাহিকভাবে তার বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
তা ছাড়া ইতিমধ্যে দেশে গ্যাসের ঘাটতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখান থেকে স্বাভাবিক সরবরাহ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা মোটেই সহজসাধ্য নয়। বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সরবরাহ করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে ৬২০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। আর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে দেশের তিনটি উত্তোলন কোম্পানি এবং পিএসসির অধীনে দুটি বিদেশি কোম্পানির পরিচালিত দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম এখন স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু আমাদের যে দুটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট, যার মাধ্যমে এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তরিত করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়), তার একটি নিয়মিত বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় এলএনজি কম আনতে হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ওই রক্ষণাবেক্ষণ শেষ হবে। তখন হয়তো এলএনজি আমদানি দৈনিক আরও ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানো সম্ভব হবে। হয়তো সম্ভব হবে বলছি, কারণ বিষয়টির সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, যার সংকট এখন দেশে তীব্র।
গ্যাস ছাড়াও দেশের কয়লা উত্তোলনের বিষয়েও সরকার নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানিও এখন সরকারের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্যতার জন্য বিশেষ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার বড়পুকুরিয়া এবং খালাসপীর কয়লা খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সম্ভাব্যতা নিয়ে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে কয়লা উত্তোলন-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। প্রস্তাবনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনা, নির্দেশনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
দেশের নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের এসব সরকারি উদ্যোগ সফল হলে, জ্বালানিনিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যুক্ত হতে পারে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪