সঞ্চালক: আজকের পত্রিকা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত।
আমাদের আলোচনার বিষয়: করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত। করোনাকালে কেমন ছিল ব্যাংকিং খাত এবং কী কী চ্যালেঞ্জ আছে সামনে—এসব বিষয়ে শুনব। করোনাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থাপনা করছে ব্যাংকিং খাত। এসব নিয়েই আলোচনা।
আলোচক
ড. মো. গোলাম রহমান
আমরা দেখছি যে, প্রায় ২০ মাসে সারা দেশের সবকিছুতেই একটা স্থবিরতা ছিল। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে আপনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। আজকে আমরা এ বিষয়গুলোই জানতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে, সামনে আমরা বিভিন্ন খাত ধরে ধরে এ রকম আলোচনায় যাব। শুরুতেই আপনাদের ডেকেছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ড. শাহ মো. আহসান হাবিব
অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হলে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আদর্শ মানের থেকে কম পুঁজি সংরক্ষণ করে। এর আগে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পুরো সক্ষমতা এখনো ব্যাংকগুলো রাখে না। তারপরও দেশের সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো সরকারকে যেভাবে অর্থ সরবরাহ করেছে, তা একটা বিরাট ব্যাপার। সামনে যখন মরিটোরিয়াম বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা বাতিল করা হবে, অনাদায়কৃত ও খেলাপি ঋণ নিয়ে সামগ্রিক একটা স্বচ্ছ হিসাব করা হবে, তখন পুরো বিষয়টা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
করোনাকালে অনেক কিছুই বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। কৃষকেরা এক দিনের জন্যও খাদ্য উৎপাদন থেকে সরে যাননি। এখন যদি ব্যাংকিং খাতের দিকেই তাকাই তাহলে দেখব, এ খাতের সংকটটা শুরু হয়েছে। যখন মরিটোরিয়াম শেষ হয়ে যাবে, তখনই কিন্তু আসল চিত্রটা দেখা যাবে। শুরুতে অনেকে মনে করেছিলেন প্রণোদনার টাকা মনে হয় আর ফেরত দিতে হবে না। ওই সময় আমি বলেছি, এটা চ্যারিটি নয়, ফেরত দিতে হবে। বড়দের অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও সব জায়গা থেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমরা দেখেছি, অনেকে বেশি নিয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজন ছিল না। আবার যাঁদের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের দিতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে। অথচ তাঁদের দিতে পারিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
ড. নাজনীন আহমেদ
ব্যাংক নিয়ে করোনার আগেও আলোচনা ছিল। এ খাতের যেসব সমস্যা নিয়ে আগে কথা হয়েছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এক দিনে এগুলো শেষ হবেও না। মূল কথা হলো, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি কি না? করোনা এসে সমস্যাগুলো আরও প্রকট করেছে। সমাধানের চ্যালেঞ্জটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংক তো অর্থনীতির লাইফলাইন। ব্যাংক ভালো না চললে, এর প্রভাব অন্য খাতেও পড়তে বাধ্য।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা করে একটা ঋণ থাকা দরকার ছিল। আর যেসব শর্তে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাতে আমি দেখছি যে, যাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি, তাঁদের প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। যাঁদের কম ক্ষতি হয়েছে তাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিও কম। আমি মনে করি, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের কোনো সিড মানিও দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহজ শর্তে।
অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী
করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এটা ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ ঋণের ঝুঁকিও রয়েছে। মরিটোরিয়াম সুবিধা তুলে দিলে অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না, এমন ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিল হলে তা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হয়। তা না হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পুঁজি এবং তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি ব্যাংকে পুঁজিস্বল্পতা দেখা দিলে তা নিয়ে আমি মোটেই শঙ্কিত নই। কারণ, এসব ব্যাংক সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। এই সুরক্ষা না থাকলে একদিন অনেক সরকারি ব্যাংক ভেঙে পড়ত। আমার ভয় হয় যে, কোনো অবস্থায় যদি একটা বা দুইটা ব্যাংক ভেঙে পড়ে, তাহলে মূলত পুরো আর্থিক খাতে ধস নেমে আসতে পারে। ঠিক এ জায়গাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটা বড় ঋণ, তহবিল এবং তারল্য মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনার ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
রবিউল হোসেন
যেকোনো কাজে পরিকল্পনা দরকার। এ কথা ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং করি না, এ জন্য ভুল ফলাফল তো আসবেই। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে পরিকল্পনা করা হয় এবং তা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়, যার আলোকে ভালো ব্যাংকিং করা যায় না।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে সেই আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কিন্তু এসব না করে নতুন প্রবণতা হলো বড় বড় ঋণ দেওয়া। আমরা দেখি যে, যত্রতত্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঋণ দেওয়ার পরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। আর তা করতে না পারার ফলে অধিকাংশ ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে সমস্যাটা হলো যে বড় একজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে বিশাল ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্যাংকারদের উচিত ছোট ছোট ঋণ দেওয়া, যাতে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কর্মসংস্থান হয়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
করোনা মহামারির সময়ে ব্যাংকিং খাত যে ভূমিকা রেখেছে, তা এর আগে কেউ চিন্তাও করেনি। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ব্যাংক কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণ করেছে। করোনার ঝুঁকিতেও সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। আমরা এ সময়টা পার করে আসতে পারায় এখন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে।
ব্যাংক ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের একটা বড় অংশ যাঁদের দরকার, তা তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্পকে অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প থেকে আলাদা করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী এবং সুদের হার সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আমানতের জন্য সুদ, ব্যবস্থাপনা খরচ, মুনাফা থেকে করপোরেট ট্যাক্স ও ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংকিং করতে হয়। ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বসেও যেতে পারে। বিশেষ করে মরিটোরিয়াম সুবিধা যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টেকহোল্ডার এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এর একটা সমাধান বের করতে হবে।
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকের ওপর ভর করা অর্থনীতি নিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকনির্ভর অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে ‘ব্যাংক, বন্ড এবং তারল্য বাজার’নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো ডিজিটাল হয়নি। যতটুকু ডিজিটাল হয়েছে তা করোনাকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এখনই সরকারকে পুঁজিবাজারে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে হবে। আর তা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়তে পারে।
ঋণখেলাপি তথা ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকারদের দোষ না দিয়ে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে। শহর এবং গ্রামভিত্তিক আমানতের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষের আমানত যেন শহরের রাঘববোয়ালরা আত্মসাৎ করতে না পারে।
এম এ মান্নান
আসলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমি বলার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি কখনো ব্যাংকে কাজ করিনি, জীবনে কখনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিইনি। সুতরাং ব্যাংক বিষয়ে আমি বলার চেয়ে জানতেই বেশি আগ্রহী। এখানে অনেকে ব্যাংকের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি হয়তো দু-একটি বিষয় নিয়ে একটু বলব। করোনায় কী কী সচল ছিল বলতে গিয়ে একজন কৃষি খাতের কথা বলেছেন। আসলে করোনার সময়েও কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষক পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, বাস্তবতা হলো আমাদের কৃষিতে একটা বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। আমি দেখে খুব আশ্চর্য হই যে, সাধারণ কৃষকেরা উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি খুব আনন্দের সঙ্গে, ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব বা লাভটা সার্বিক অর্থনীতি পাচ্ছে।
প্রণোদনাসহ নানান পদক্ষেপের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়তো তেমনটা হয়নি। কিন্তু রীতি বলছে যে, এখানে যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টাকাটা ঠিকমতো শোধ করবেন না। তাঁরা সুযোগ নেবেন। এ ব্যাপারে বেশ দক্ষ তাঁরা। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে সবার আগে সাবধান হতে হবে। একটা বিষয় এখানে আমার বলতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহস আছে। মাঝে মাঝে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে আমি বিস্মিত হই। ভাবি, এটা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং আমার মনে হয়, ভাগ্য, সাহস এবং দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা অকৃতকার্য হইনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনার সংকট কাটিয়ে খুব ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।
সঞ্চালক: আজকের পত্রিকা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত।
আমাদের আলোচনার বিষয়: করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত। করোনাকালে কেমন ছিল ব্যাংকিং খাত এবং কী কী চ্যালেঞ্জ আছে সামনে—এসব বিষয়ে শুনব। করোনাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থাপনা করছে ব্যাংকিং খাত। এসব নিয়েই আলোচনা।
আলোচক
ড. মো. গোলাম রহমান
আমরা দেখছি যে, প্রায় ২০ মাসে সারা দেশের সবকিছুতেই একটা স্থবিরতা ছিল। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে আপনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। আজকে আমরা এ বিষয়গুলোই জানতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে, সামনে আমরা বিভিন্ন খাত ধরে ধরে এ রকম আলোচনায় যাব। শুরুতেই আপনাদের ডেকেছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ড. শাহ মো. আহসান হাবিব
অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হলে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আদর্শ মানের থেকে কম পুঁজি সংরক্ষণ করে। এর আগে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পুরো সক্ষমতা এখনো ব্যাংকগুলো রাখে না। তারপরও দেশের সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো সরকারকে যেভাবে অর্থ সরবরাহ করেছে, তা একটা বিরাট ব্যাপার। সামনে যখন মরিটোরিয়াম বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা বাতিল করা হবে, অনাদায়কৃত ও খেলাপি ঋণ নিয়ে সামগ্রিক একটা স্বচ্ছ হিসাব করা হবে, তখন পুরো বিষয়টা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
করোনাকালে অনেক কিছুই বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। কৃষকেরা এক দিনের জন্যও খাদ্য উৎপাদন থেকে সরে যাননি। এখন যদি ব্যাংকিং খাতের দিকেই তাকাই তাহলে দেখব, এ খাতের সংকটটা শুরু হয়েছে। যখন মরিটোরিয়াম শেষ হয়ে যাবে, তখনই কিন্তু আসল চিত্রটা দেখা যাবে। শুরুতে অনেকে মনে করেছিলেন প্রণোদনার টাকা মনে হয় আর ফেরত দিতে হবে না। ওই সময় আমি বলেছি, এটা চ্যারিটি নয়, ফেরত দিতে হবে। বড়দের অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও সব জায়গা থেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমরা দেখেছি, অনেকে বেশি নিয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজন ছিল না। আবার যাঁদের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের দিতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে। অথচ তাঁদের দিতে পারিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
ড. নাজনীন আহমেদ
ব্যাংক নিয়ে করোনার আগেও আলোচনা ছিল। এ খাতের যেসব সমস্যা নিয়ে আগে কথা হয়েছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এক দিনে এগুলো শেষ হবেও না। মূল কথা হলো, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি কি না? করোনা এসে সমস্যাগুলো আরও প্রকট করেছে। সমাধানের চ্যালেঞ্জটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংক তো অর্থনীতির লাইফলাইন। ব্যাংক ভালো না চললে, এর প্রভাব অন্য খাতেও পড়তে বাধ্য।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা করে একটা ঋণ থাকা দরকার ছিল। আর যেসব শর্তে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাতে আমি দেখছি যে, যাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি, তাঁদের প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। যাঁদের কম ক্ষতি হয়েছে তাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিও কম। আমি মনে করি, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের কোনো সিড মানিও দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহজ শর্তে।
অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী
করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এটা ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ ঋণের ঝুঁকিও রয়েছে। মরিটোরিয়াম সুবিধা তুলে দিলে অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না, এমন ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিল হলে তা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হয়। তা না হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পুঁজি এবং তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি ব্যাংকে পুঁজিস্বল্পতা দেখা দিলে তা নিয়ে আমি মোটেই শঙ্কিত নই। কারণ, এসব ব্যাংক সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। এই সুরক্ষা না থাকলে একদিন অনেক সরকারি ব্যাংক ভেঙে পড়ত। আমার ভয় হয় যে, কোনো অবস্থায় যদি একটা বা দুইটা ব্যাংক ভেঙে পড়ে, তাহলে মূলত পুরো আর্থিক খাতে ধস নেমে আসতে পারে। ঠিক এ জায়গাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটা বড় ঋণ, তহবিল এবং তারল্য মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনার ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
রবিউল হোসেন
যেকোনো কাজে পরিকল্পনা দরকার। এ কথা ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং করি না, এ জন্য ভুল ফলাফল তো আসবেই। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে পরিকল্পনা করা হয় এবং তা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়, যার আলোকে ভালো ব্যাংকিং করা যায় না।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে সেই আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কিন্তু এসব না করে নতুন প্রবণতা হলো বড় বড় ঋণ দেওয়া। আমরা দেখি যে, যত্রতত্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঋণ দেওয়ার পরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। আর তা করতে না পারার ফলে অধিকাংশ ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে সমস্যাটা হলো যে বড় একজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে বিশাল ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্যাংকারদের উচিত ছোট ছোট ঋণ দেওয়া, যাতে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কর্মসংস্থান হয়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
করোনা মহামারির সময়ে ব্যাংকিং খাত যে ভূমিকা রেখেছে, তা এর আগে কেউ চিন্তাও করেনি। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ব্যাংক কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণ করেছে। করোনার ঝুঁকিতেও সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। আমরা এ সময়টা পার করে আসতে পারায় এখন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে।
ব্যাংক ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের একটা বড় অংশ যাঁদের দরকার, তা তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্পকে অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প থেকে আলাদা করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী এবং সুদের হার সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আমানতের জন্য সুদ, ব্যবস্থাপনা খরচ, মুনাফা থেকে করপোরেট ট্যাক্স ও ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংকিং করতে হয়। ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বসেও যেতে পারে। বিশেষ করে মরিটোরিয়াম সুবিধা যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টেকহোল্ডার এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এর একটা সমাধান বের করতে হবে।
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকের ওপর ভর করা অর্থনীতি নিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকনির্ভর অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে ‘ব্যাংক, বন্ড এবং তারল্য বাজার’নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো ডিজিটাল হয়নি। যতটুকু ডিজিটাল হয়েছে তা করোনাকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এখনই সরকারকে পুঁজিবাজারে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে হবে। আর তা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়তে পারে।
ঋণখেলাপি তথা ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকারদের দোষ না দিয়ে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে। শহর এবং গ্রামভিত্তিক আমানতের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষের আমানত যেন শহরের রাঘববোয়ালরা আত্মসাৎ করতে না পারে।
এম এ মান্নান
আসলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমি বলার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি কখনো ব্যাংকে কাজ করিনি, জীবনে কখনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিইনি। সুতরাং ব্যাংক বিষয়ে আমি বলার চেয়ে জানতেই বেশি আগ্রহী। এখানে অনেকে ব্যাংকের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি হয়তো দু-একটি বিষয় নিয়ে একটু বলব। করোনায় কী কী সচল ছিল বলতে গিয়ে একজন কৃষি খাতের কথা বলেছেন। আসলে করোনার সময়েও কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষক পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, বাস্তবতা হলো আমাদের কৃষিতে একটা বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। আমি দেখে খুব আশ্চর্য হই যে, সাধারণ কৃষকেরা উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি খুব আনন্দের সঙ্গে, ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব বা লাভটা সার্বিক অর্থনীতি পাচ্ছে।
প্রণোদনাসহ নানান পদক্ষেপের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়তো তেমনটা হয়নি। কিন্তু রীতি বলছে যে, এখানে যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টাকাটা ঠিকমতো শোধ করবেন না। তাঁরা সুযোগ নেবেন। এ ব্যাপারে বেশ দক্ষ তাঁরা। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে সবার আগে সাবধান হতে হবে। একটা বিষয় এখানে আমার বলতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহস আছে। মাঝে মাঝে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে আমি বিস্মিত হই। ভাবি, এটা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং আমার মনে হয়, ভাগ্য, সাহস এবং দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা অকৃতকার্য হইনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনার সংকট কাটিয়ে খুব ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।
সঞ্চালক: আজকের পত্রিকা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত।
আমাদের আলোচনার বিষয়: করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত। করোনাকালে কেমন ছিল ব্যাংকিং খাত এবং কী কী চ্যালেঞ্জ আছে সামনে—এসব বিষয়ে শুনব। করোনাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থাপনা করছে ব্যাংকিং খাত। এসব নিয়েই আলোচনা।
আলোচক
ড. মো. গোলাম রহমান
আমরা দেখছি যে, প্রায় ২০ মাসে সারা দেশের সবকিছুতেই একটা স্থবিরতা ছিল। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে আপনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। আজকে আমরা এ বিষয়গুলোই জানতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে, সামনে আমরা বিভিন্ন খাত ধরে ধরে এ রকম আলোচনায় যাব। শুরুতেই আপনাদের ডেকেছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ড. শাহ মো. আহসান হাবিব
অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হলে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আদর্শ মানের থেকে কম পুঁজি সংরক্ষণ করে। এর আগে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পুরো সক্ষমতা এখনো ব্যাংকগুলো রাখে না। তারপরও দেশের সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো সরকারকে যেভাবে অর্থ সরবরাহ করেছে, তা একটা বিরাট ব্যাপার। সামনে যখন মরিটোরিয়াম বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা বাতিল করা হবে, অনাদায়কৃত ও খেলাপি ঋণ নিয়ে সামগ্রিক একটা স্বচ্ছ হিসাব করা হবে, তখন পুরো বিষয়টা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
করোনাকালে অনেক কিছুই বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। কৃষকেরা এক দিনের জন্যও খাদ্য উৎপাদন থেকে সরে যাননি। এখন যদি ব্যাংকিং খাতের দিকেই তাকাই তাহলে দেখব, এ খাতের সংকটটা শুরু হয়েছে। যখন মরিটোরিয়াম শেষ হয়ে যাবে, তখনই কিন্তু আসল চিত্রটা দেখা যাবে। শুরুতে অনেকে মনে করেছিলেন প্রণোদনার টাকা মনে হয় আর ফেরত দিতে হবে না। ওই সময় আমি বলেছি, এটা চ্যারিটি নয়, ফেরত দিতে হবে। বড়দের অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও সব জায়গা থেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমরা দেখেছি, অনেকে বেশি নিয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজন ছিল না। আবার যাঁদের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের দিতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে। অথচ তাঁদের দিতে পারিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
ড. নাজনীন আহমেদ
ব্যাংক নিয়ে করোনার আগেও আলোচনা ছিল। এ খাতের যেসব সমস্যা নিয়ে আগে কথা হয়েছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এক দিনে এগুলো শেষ হবেও না। মূল কথা হলো, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি কি না? করোনা এসে সমস্যাগুলো আরও প্রকট করেছে। সমাধানের চ্যালেঞ্জটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংক তো অর্থনীতির লাইফলাইন। ব্যাংক ভালো না চললে, এর প্রভাব অন্য খাতেও পড়তে বাধ্য।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা করে একটা ঋণ থাকা দরকার ছিল। আর যেসব শর্তে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাতে আমি দেখছি যে, যাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি, তাঁদের প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। যাঁদের কম ক্ষতি হয়েছে তাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিও কম। আমি মনে করি, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের কোনো সিড মানিও দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহজ শর্তে।
অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী
করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এটা ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ ঋণের ঝুঁকিও রয়েছে। মরিটোরিয়াম সুবিধা তুলে দিলে অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না, এমন ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিল হলে তা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হয়। তা না হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পুঁজি এবং তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি ব্যাংকে পুঁজিস্বল্পতা দেখা দিলে তা নিয়ে আমি মোটেই শঙ্কিত নই। কারণ, এসব ব্যাংক সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। এই সুরক্ষা না থাকলে একদিন অনেক সরকারি ব্যাংক ভেঙে পড়ত। আমার ভয় হয় যে, কোনো অবস্থায় যদি একটা বা দুইটা ব্যাংক ভেঙে পড়ে, তাহলে মূলত পুরো আর্থিক খাতে ধস নেমে আসতে পারে। ঠিক এ জায়গাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটা বড় ঋণ, তহবিল এবং তারল্য মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনার ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
রবিউল হোসেন
যেকোনো কাজে পরিকল্পনা দরকার। এ কথা ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং করি না, এ জন্য ভুল ফলাফল তো আসবেই। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে পরিকল্পনা করা হয় এবং তা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়, যার আলোকে ভালো ব্যাংকিং করা যায় না।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে সেই আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কিন্তু এসব না করে নতুন প্রবণতা হলো বড় বড় ঋণ দেওয়া। আমরা দেখি যে, যত্রতত্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঋণ দেওয়ার পরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। আর তা করতে না পারার ফলে অধিকাংশ ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে সমস্যাটা হলো যে বড় একজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে বিশাল ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্যাংকারদের উচিত ছোট ছোট ঋণ দেওয়া, যাতে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কর্মসংস্থান হয়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
করোনা মহামারির সময়ে ব্যাংকিং খাত যে ভূমিকা রেখেছে, তা এর আগে কেউ চিন্তাও করেনি। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ব্যাংক কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণ করেছে। করোনার ঝুঁকিতেও সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। আমরা এ সময়টা পার করে আসতে পারায় এখন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে।
ব্যাংক ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের একটা বড় অংশ যাঁদের দরকার, তা তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্পকে অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প থেকে আলাদা করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী এবং সুদের হার সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আমানতের জন্য সুদ, ব্যবস্থাপনা খরচ, মুনাফা থেকে করপোরেট ট্যাক্স ও ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংকিং করতে হয়। ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বসেও যেতে পারে। বিশেষ করে মরিটোরিয়াম সুবিধা যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টেকহোল্ডার এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এর একটা সমাধান বের করতে হবে।
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকের ওপর ভর করা অর্থনীতি নিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকনির্ভর অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে ‘ব্যাংক, বন্ড এবং তারল্য বাজার’নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো ডিজিটাল হয়নি। যতটুকু ডিজিটাল হয়েছে তা করোনাকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এখনই সরকারকে পুঁজিবাজারে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে হবে। আর তা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়তে পারে।
ঋণখেলাপি তথা ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকারদের দোষ না দিয়ে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে। শহর এবং গ্রামভিত্তিক আমানতের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষের আমানত যেন শহরের রাঘববোয়ালরা আত্মসাৎ করতে না পারে।
এম এ মান্নান
আসলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমি বলার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি কখনো ব্যাংকে কাজ করিনি, জীবনে কখনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিইনি। সুতরাং ব্যাংক বিষয়ে আমি বলার চেয়ে জানতেই বেশি আগ্রহী। এখানে অনেকে ব্যাংকের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি হয়তো দু-একটি বিষয় নিয়ে একটু বলব। করোনায় কী কী সচল ছিল বলতে গিয়ে একজন কৃষি খাতের কথা বলেছেন। আসলে করোনার সময়েও কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষক পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, বাস্তবতা হলো আমাদের কৃষিতে একটা বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। আমি দেখে খুব আশ্চর্য হই যে, সাধারণ কৃষকেরা উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি খুব আনন্দের সঙ্গে, ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব বা লাভটা সার্বিক অর্থনীতি পাচ্ছে।
প্রণোদনাসহ নানান পদক্ষেপের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়তো তেমনটা হয়নি। কিন্তু রীতি বলছে যে, এখানে যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টাকাটা ঠিকমতো শোধ করবেন না। তাঁরা সুযোগ নেবেন। এ ব্যাপারে বেশ দক্ষ তাঁরা। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে সবার আগে সাবধান হতে হবে। একটা বিষয় এখানে আমার বলতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহস আছে। মাঝে মাঝে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে আমি বিস্মিত হই। ভাবি, এটা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং আমার মনে হয়, ভাগ্য, সাহস এবং দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা অকৃতকার্য হইনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনার সংকট কাটিয়ে খুব ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।
সঞ্চালক: আজকের পত্রিকা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত।
আমাদের আলোচনার বিষয়: করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত। করোনাকালে কেমন ছিল ব্যাংকিং খাত এবং কী কী চ্যালেঞ্জ আছে সামনে—এসব বিষয়ে শুনব। করোনাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থাপনা করছে ব্যাংকিং খাত। এসব নিয়েই আলোচনা।
আলোচক
ড. মো. গোলাম রহমান
আমরা দেখছি যে, প্রায় ২০ মাসে সারা দেশের সবকিছুতেই একটা স্থবিরতা ছিল। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে আপনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। আজকে আমরা এ বিষয়গুলোই জানতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে, সামনে আমরা বিভিন্ন খাত ধরে ধরে এ রকম আলোচনায় যাব। শুরুতেই আপনাদের ডেকেছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ড. শাহ মো. আহসান হাবিব
অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হলে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আদর্শ মানের থেকে কম পুঁজি সংরক্ষণ করে। এর আগে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পুরো সক্ষমতা এখনো ব্যাংকগুলো রাখে না। তারপরও দেশের সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো সরকারকে যেভাবে অর্থ সরবরাহ করেছে, তা একটা বিরাট ব্যাপার। সামনে যখন মরিটোরিয়াম বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা বাতিল করা হবে, অনাদায়কৃত ও খেলাপি ঋণ নিয়ে সামগ্রিক একটা স্বচ্ছ হিসাব করা হবে, তখন পুরো বিষয়টা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
করোনাকালে অনেক কিছুই বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। কৃষকেরা এক দিনের জন্যও খাদ্য উৎপাদন থেকে সরে যাননি। এখন যদি ব্যাংকিং খাতের দিকেই তাকাই তাহলে দেখব, এ খাতের সংকটটা শুরু হয়েছে। যখন মরিটোরিয়াম শেষ হয়ে যাবে, তখনই কিন্তু আসল চিত্রটা দেখা যাবে। শুরুতে অনেকে মনে করেছিলেন প্রণোদনার টাকা মনে হয় আর ফেরত দিতে হবে না। ওই সময় আমি বলেছি, এটা চ্যারিটি নয়, ফেরত দিতে হবে। বড়দের অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও সব জায়গা থেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমরা দেখেছি, অনেকে বেশি নিয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজন ছিল না। আবার যাঁদের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের দিতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে। অথচ তাঁদের দিতে পারিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
ড. নাজনীন আহমেদ
ব্যাংক নিয়ে করোনার আগেও আলোচনা ছিল। এ খাতের যেসব সমস্যা নিয়ে আগে কথা হয়েছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এক দিনে এগুলো শেষ হবেও না। মূল কথা হলো, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি কি না? করোনা এসে সমস্যাগুলো আরও প্রকট করেছে। সমাধানের চ্যালেঞ্জটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংক তো অর্থনীতির লাইফলাইন। ব্যাংক ভালো না চললে, এর প্রভাব অন্য খাতেও পড়তে বাধ্য।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা করে একটা ঋণ থাকা দরকার ছিল। আর যেসব শর্তে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাতে আমি দেখছি যে, যাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি, তাঁদের প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। যাঁদের কম ক্ষতি হয়েছে তাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিও কম। আমি মনে করি, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের কোনো সিড মানিও দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহজ শর্তে।
অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী
করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এটা ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ ঋণের ঝুঁকিও রয়েছে। মরিটোরিয়াম সুবিধা তুলে দিলে অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না, এমন ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিল হলে তা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হয়। তা না হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পুঁজি এবং তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি ব্যাংকে পুঁজিস্বল্পতা দেখা দিলে তা নিয়ে আমি মোটেই শঙ্কিত নই। কারণ, এসব ব্যাংক সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। এই সুরক্ষা না থাকলে একদিন অনেক সরকারি ব্যাংক ভেঙে পড়ত। আমার ভয় হয় যে, কোনো অবস্থায় যদি একটা বা দুইটা ব্যাংক ভেঙে পড়ে, তাহলে মূলত পুরো আর্থিক খাতে ধস নেমে আসতে পারে। ঠিক এ জায়গাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটা বড় ঋণ, তহবিল এবং তারল্য মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনার ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
রবিউল হোসেন
যেকোনো কাজে পরিকল্পনা দরকার। এ কথা ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং করি না, এ জন্য ভুল ফলাফল তো আসবেই। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে পরিকল্পনা করা হয় এবং তা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়, যার আলোকে ভালো ব্যাংকিং করা যায় না।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে সেই আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কিন্তু এসব না করে নতুন প্রবণতা হলো বড় বড় ঋণ দেওয়া। আমরা দেখি যে, যত্রতত্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঋণ দেওয়ার পরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। আর তা করতে না পারার ফলে অধিকাংশ ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে সমস্যাটা হলো যে বড় একজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে বিশাল ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্যাংকারদের উচিত ছোট ছোট ঋণ দেওয়া, যাতে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কর্মসংস্থান হয়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
করোনা মহামারির সময়ে ব্যাংকিং খাত যে ভূমিকা রেখেছে, তা এর আগে কেউ চিন্তাও করেনি। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ব্যাংক কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণ করেছে। করোনার ঝুঁকিতেও সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। আমরা এ সময়টা পার করে আসতে পারায় এখন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে।
ব্যাংক ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের একটা বড় অংশ যাঁদের দরকার, তা তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্পকে অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প থেকে আলাদা করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী এবং সুদের হার সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আমানতের জন্য সুদ, ব্যবস্থাপনা খরচ, মুনাফা থেকে করপোরেট ট্যাক্স ও ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংকিং করতে হয়। ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বসেও যেতে পারে। বিশেষ করে মরিটোরিয়াম সুবিধা যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টেকহোল্ডার এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এর একটা সমাধান বের করতে হবে।
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকের ওপর ভর করা অর্থনীতি নিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকনির্ভর অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে ‘ব্যাংক, বন্ড এবং তারল্য বাজার’নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো ডিজিটাল হয়নি। যতটুকু ডিজিটাল হয়েছে তা করোনাকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এখনই সরকারকে পুঁজিবাজারে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে হবে। আর তা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়তে পারে।
ঋণখেলাপি তথা ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকারদের দোষ না দিয়ে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে। শহর এবং গ্রামভিত্তিক আমানতের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষের আমানত যেন শহরের রাঘববোয়ালরা আত্মসাৎ করতে না পারে।
এম এ মান্নান
আসলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমি বলার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি কখনো ব্যাংকে কাজ করিনি, জীবনে কখনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিইনি। সুতরাং ব্যাংক বিষয়ে আমি বলার চেয়ে জানতেই বেশি আগ্রহী। এখানে অনেকে ব্যাংকের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি হয়তো দু-একটি বিষয় নিয়ে একটু বলব। করোনায় কী কী সচল ছিল বলতে গিয়ে একজন কৃষি খাতের কথা বলেছেন। আসলে করোনার সময়েও কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষক পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, বাস্তবতা হলো আমাদের কৃষিতে একটা বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। আমি দেখে খুব আশ্চর্য হই যে, সাধারণ কৃষকেরা উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি খুব আনন্দের সঙ্গে, ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব বা লাভটা সার্বিক অর্থনীতি পাচ্ছে।
প্রণোদনাসহ নানান পদক্ষেপের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়তো তেমনটা হয়নি। কিন্তু রীতি বলছে যে, এখানে যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টাকাটা ঠিকমতো শোধ করবেন না। তাঁরা সুযোগ নেবেন। এ ব্যাপারে বেশ দক্ষ তাঁরা। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে সবার আগে সাবধান হতে হবে। একটা বিষয় এখানে আমার বলতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহস আছে। মাঝে মাঝে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে আমি বিস্মিত হই। ভাবি, এটা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং আমার মনে হয়, ভাগ্য, সাহস এবং দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা অকৃতকার্য হইনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনার সংকট কাটিয়ে খুব ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
আজকের পত্রিকার আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত’ শীর্ষক গোল টেবিলবৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ অক্টোবর। এটি সঞ্চালনা করেন সহকারী সম্পাদক ফারুক মেহেদী।
৩০ অক্টোবর ২০২১‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
আজকের পত্রিকার আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত’ শীর্ষক গোল টেবিলবৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ অক্টোবর। এটি সঞ্চালনা করেন সহকারী সম্পাদক ফারুক মেহেদী।
৩০ অক্টোবর ২০২১গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
আজকের পত্রিকার আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত’ শীর্ষক গোল টেবিলবৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ অক্টোবর। এটি সঞ্চালনা করেন সহকারী সম্পাদক ফারুক মেহেদী।
৩০ অক্টোবর ২০২১গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আজকের পত্রিকার আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত’ শীর্ষক গোল টেবিলবৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ অক্টোবর। এটি সঞ্চালনা করেন সহকারী সম্পাদক ফারুক মেহেদী।
৩০ অক্টোবর ২০২১গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫