Ajker Patrika

সন্ত্রাসীর টার্গেট কৃষক

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
সন্ত্রাসীর টার্গেট কৃষক

কৃষক আনু মিয়া। বয়স ৬০ বছর। চট্টগ্রামের পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় তাঁর বাড়ি। এলাকার নাম দক্ষিণ শ্রীমাই। প্রতিদিনের মতো গত ৬ অক্টোবর সকালে নিজের কৃষিজমিতে যান তিনি। যেখানে চাষ করতে গেলে চাঁদা গুনতে হবে বলে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি পাচ্ছিলেন পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের তরফ থেকে। জমিতে পা রাখতেই আনু মিয়ার সঙ্গে চাঁদা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের। চাঁদা না পেয়ে মারমুখী সন্ত্রাসীরা তাঁকে পরপর দুটি গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গেই লুটিয়ে পড়েন আনু মিয়া।

আনু মিয়ার কোমর ও বাম পায়ের ঊরুতে গুলি দুটি লাগে। মুহূর্তেই পালিয়ে যান অস্ত্রধারীরা। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনু মিয়া মারা যান। এ ধরনের ঘটনা বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি চলছে এখানে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে পাহাড়সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে হত্যা, গুম, অপহরণ, বন্ধুকযুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে সরকারের উচ্চ মহলে।

এ জন্য এসবের লাগাম টানতে নির্দেশনা এসেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জ্যেষ্ঠ সচিব জননিরাপত্তা বিভাগ, সচিব পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।

সরকারের উচ্চ মহল থেকে পাঠানো লিখিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর অপহরণ, চাঁদাবাজির ঘটনা চট্টগ্রাম জেলার অন্তত সাতটি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে জনজীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওই নির্দেশনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চট্টগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগড়া, সাতকানিয়া, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি এলাকায় বিভিন্ন পেশার লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ মহল থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৩ জুন জননিরাপত্তা বিভাগ, সচিব পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে দুই দফায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চন্দনাইশের একটি অংশ দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে উপজাতি সন্ত্রাসীরা প্রায়ই বিভিন্নজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা জালাল উদ্দিনকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।’

পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া জালাল উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে অপহরণ করে গহিন পাহাড়ে নিয়ে যায়। আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই তাঁরা আমার আত্মীয়স্বজনের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চার দিন পর কোনো রকমে মুক্তি পাই।’

স্টারঘোনা-চিরিংঘাট-ধোপাছড়ি এলাকায় শুক্করের বাগানের কাছ থেকে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন (৫১) এবং নূর হোসেনকে (৫০) পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত