Ajker Patrika

উদ্ভিদ সংগনিরোধ: ৩০ কোটি টাকার নতুন যন্ত্রপাতি পড়ে ছিল ৫ বছর, মেরামতে ব্যয় হচ্ছে আড়াই কোটির বেশি

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ১১: ৩৬
উদ্ভিদ সংগনিরোধ: ৩০ কোটি টাকার নতুন যন্ত্রপাতি পড়ে ছিল ৫ বছর, মেরামতে ব্যয় হচ্ছে আড়াই কোটির বেশি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরির ৫৬ আইটেমের ৭১টি যন্ত্র মেরামতের জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। দরপত্রে মেরামতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ‘উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প’-এর আওতায় এসব যন্ত্র মেরামত করা হবে।

জানা গেছে, যন্ত্রগুলো পাঁচ-ছয় বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগের একটি প্রকল্পে কেনা অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি মেরামতের দরপত্র দেওয়া হয়েছে। কারণ, ওই যন্ত্রপাতি সচল কি না, সেটি তাঁদের জানা নেই।

জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশ ফাইটোস্যানিটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’-এর আওতায় ২০১৮-১৯ সালের দিকে কেনা হয়েছিল যন্ত্রগুলো। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের মান উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই যন্ত্রগুলো কেনা হলেও রপ্তানিকারকদের কৃষিপণ্যের মান যাচাইয়ে তা ব্যবহার করা হয়নি। ফলে অব্যবহৃত যন্ত্র মেরামতের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রপ্তানিকারক কোম্পানি গ্লোবাল ট্রেড লিঙ্ক কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, লন্ডনসহ কয়েকটি দেশে সবজি ও ফল রপ্তানি করছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও কাওসার আহমেদ রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্যামপুর প্যাকিং হাউসে সবজি ও ফলের মান যাচাইয়ে কোনো দিন যন্ত্রপাতির ব্যবহার দেখিনি। স্টোর রুমে যন্ত্রপাতি পড়ে থাকলেও রপ্তানিকারকদের এক পয়সার কাজে আসেনি। এখন কোন যন্ত্রপাতি মেরামতের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের নলেজে নেই।’

রাজধানীর শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে গত ২৬ মে গিয়ে দেখা যায়, রপ্তানির জন্য আনা সবজি ও মৌসুমি ফলের মান যাচাই করা হচ্ছিল কোনো যন্ত্র ছাড়াই। ল্যাবরেটরিতে ও স্টোর রুমে যন্ত্রপাতি পড়ে থাকলেও চোখে দেখেই কৃষিপণ্যের মান যাচাই করছিলেন কর্মীরা। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের অফিসকক্ষে কথা হয় তখনকার উপপরিচালক এম এম খালিদ সাইফুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে যন্ত্রগুলো কেনা হয়েছে। দু-একটা যন্ত্র পরীক্ষা করা হলেও অধিকাংশ যন্ত্র অব্যবহৃত ছিল। কারণ, প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তারা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছে। এখন যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি না, আমার জানা নেই।’

একই দিনে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. শামীম আহমেদ বলেন, ‘৫৬ আইটেমের ৭১টি যন্ত্রপাতি আগের প্রকল্প থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব যন্ত্র সচল নাকি অচল, তা জানা নেই। তবে অনেক যন্ত্রের সফটওয়্যারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তা ছাড়া প্রকল্পের শর্ত হচ্ছে, কোনো অচল যন্ত্রপাতি ল্যাবে স্থাপন করা যাবে না। তাই আমরা ডিপিপির নির্দেশনা অনুসারে মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছি।’

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ২০২১ সালে ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। ২ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ১৫৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে কেনা হচ্ছে ৫৭ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এবং সাড়ে ১০ কোটি টাকার রাসায়নিক দ্রব্য। প্রকল্পের মাধ্যমে প্যাকিং হাউসে ১০টি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব বানানোর কথা। এর উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২৫-৩০ শতাংশ বাড়ানো। তবে প্রকল্পের সুফল কবে মিলবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন শাখার তথ্যমতে, গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ।

প্রকল্পের ধীরগতির বিষয়ে সদ্য বিদায়ী ডিডি শামীম আহমেদ বলেন, ‘আগের পিডি দেড় বছর নষ্ট করেছেন। এটাকে কাভার দিতে আমাকে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে। তবে চলতি বছরের জুনের মধ্যেই ১০টি ল্যাব সচল করা হবে। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি ল্যাবের কাজ ঠিকাদার বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

জানা গেছে, গত ২৮ মে শামীম আহমেদকে প্রকল্প পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে উপপরিচালক এম এম খালিদ সাইফুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

খালিদ সাইফুল্লাহ গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘টেন্ডারের কার্যাদেশ এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুপাতে কাজ চলছে। টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান যন্ত্রগুলো মেরামত করে সচল করবে এবং আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত