Ajker Patrika

অধরা ৩ খুনিতে আটকে তদন্তের অগ্রগতি

কক্সবাজার ও উখিয়া প্রতিনিধি
অধরা ৩ খুনিতে আটকে তদন্তের অগ্রগতি

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ছয় মাসেও কিনারা হয়নি। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দিতে তদন্ত কর্মকর্তা আরও সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করছেন। তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ও মুহিবুল্লাহকে গুলি করা তিন খুনিকে ধরতে পারলেই মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার লাম্বাশিয়া শিবিরে নিজ কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় ও স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশ-বিদেশে সরব ছিলেন মুহিবুল্লাহ। রোহিঙ্গাদের কাছে ‘মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত মুহিবুল্লাহ বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। এতে প্রত্যাবাসনবিরোধী ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এ জন্য তাঁকে হত্যা করা হয় বলে শুরু থেকেই অভিযোগ উঠেছে। 
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও আরসাপ্রধান আতা উল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর নির্দেশে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনায় জড়িত গ্রেপ্তার চার আসামিও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আরসার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।

এই চার আসামি হলেন আজিজুল হক, হামিদ হোসেন, নাজিম উদ্দিন ও মো. ইলিয়াস। তাঁরা আরসার সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেন এবং মুহিবুল্লাহ হত্যায় অংশ নেন বলে পুলিশকে জানান। তাঁরা গত বছরের ২৩ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। 
পুলিশ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অবশ্য হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে ২৫ জনের মতো অংশ নিয়েছেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় ৬ মার্চ ফতোয়া দেওয়া মাওয়ালা জাকারিয়াকে সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে ১৬ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শিবির থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ মো. শাহ আলীকে গ্রেপ্তার করে। তবে শাহ আলীর এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুলিশ এখনো নিশ্চিত করেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এবং মুহিবুল্লাহকে গুলি করা রহিম, ছমি উদ্দিন ও জাহিদ হোসেন লালুকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঘটনায় জড়িত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চার আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সবদিক বিবেচনায় মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে কেউ নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ পাহারা দিয়েছেন, কেউ সরাসরি অংশ নিয়েছেন। হত্যাকারীরা বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মূলত এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

হত্যায় সরাসরি জড়িত তিন খুনি ঘটনার পর ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের ধারণা, তাঁরা মিয়ানমারের গহিন জঙ্গলে অবস্থান করছেন। সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পেও যাওয়া-আসা করেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর মুহিবুল্লাহর পরিবারকে লাম্বাশিয়া ক্যাম্প থেকে সরিয়ে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। হত্যায় জড়িত 
মূল আসামিরা ধরা না পড়ায় পরিবারও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে 
জানা গেছে।

মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাছিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, খুনিদের কয়েকজন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। সন্তানদের নিয়ে তিনি আতঙ্কে আছেন।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক নাঈমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারে এপিবিএন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত তিন খুনিকে 
ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মুহিবুল্লাহর পরিবার ভালো আছে এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত