Ajker Patrika

বেতন বন্ধে অর্থকষ্টে করোনাযোদ্ধারা

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৩৪
বেতন বন্ধে অর্থকষ্টে করোনাযোদ্ধারা

ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষাগারে (আরটি-পিসিআর ল্যাব) সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মিরাজ হোসেন। এই ল্যাবে লোক কম থাকায় অসুস্থ শরীর নিয়েও কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু গত সাত মাসে কোনো বেতন পাননি তিনি। মিরাজের মতো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত ৮৫৭ জন ল্যাব সহযোগীই ছয় থেকে নয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় তাঁদের বেতন নিয়ে এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেলে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হিমশিম খেতে থাকে হাসপাতালগুলো। জট লেগে যায় করোনার নমুনা পরীক্ষায়ও। তখন তড়িঘড়ি করে দেশের ৪৭টি হাসপাতাল ও সরকারি দপ্তরের করোনার নমুনা পরীক্ষাগারে ল্যাব সহযোগী হিসেবে ৮৫৭ জনকে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চিকিৎসক-নার্সের পাশাপাশি শুরু থেকে মহামারি মোকাবিলায় অনন্য অবদান রেখে আসছেন এই করোনাযোদ্ধারা। অথচ বরাদ্দের জটিলতায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা এই মানুষদের বেতন আটকে আছে মাসের পর মাস।

মুগদা হাসপাতালের ল্যাব সহযোগী মিরাজ হোসেন জানান, দুই বছর ধরে তিনি চুক্তিতে করোনার ল্যাবে কাজ করছেন। সাত মাস থেকে তাঁর বেতন বন্ধ। এমনিতেই করোনার নমুনা পরীক্ষাগারে কাজ করায় তাঁকে নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। তার ওপর দীর্ঘদিন বেতন না হওয়ায় আর্থিক দৈন্য তাঁর জীবনকে দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলছে।

মিরাজের মতোই দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না কুমিল্লা মেডিকেলের আরটি-পিসিআর ল্যাবে সহযোগী হিসেবে কর্মরত সুমাইয়া শিমু। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘নয় মাস আমরা বেতন পাচ্ছি না। বেতন না পেলেও নির্ধারিত সময়ের বাইরে আমাদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে। বেতন না পাওয়ায় সন্তানাদি নিয়ে বেশ কষ্ট হচ্ছে।’ ২০২০ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর কুমিল্লা মেডিকেলের ল্যাব সহকারীরা মোট ১০ মাসের বেতন পেয়েছেন, এখনো সবার নয় মাসের বেতন বাকি।

দীর্ঘ সময় বেতন না পাওয়ায় ঠিকমতো বাসাভাড়া দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব সহকারী কাম ওয়ার্ডবয় আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, শুধু যে বাড়িভাড়া বাকি তা নয়, মুদিদোকানের বকেয়া শোধ করতে না পারায় মাঝেমধ্যেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

সাত মাস বেতন বকেয়া থাকলেও ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালের ল্যাব সহযোগীর কাজ করে যাচ্ছেন বাদল রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাত মাসের বেতন আটকা। এভাবে টিকতে না পেরে অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আমাদের বেতন সমস্যার সুরাহার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব সহকারী পলাশ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাত দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথা ও শরীর ব্যথা—এসব নিয়েই কাজ করছি। পরীক্ষা করালেই আমার পজিটিভ আসবে, ভয়ে পরীক্ষা করাচ্ছি না। করোনা পজিটিভ হলেও তো ছুটি পাব না। কারণ, ল্যাবে লোক নেই। সাত মাস থেকে বেতন বন্ধ থাকলেও এক দিনের জন্য কাজ বন্ধ রাখিনি। খুব খারাপ অবস্থায় আছি।’

চুক্তিতে নিয়োজিত এসব ল্যাব সহযোগী বেতন ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে এক দিন কর্মবিরতি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের বেতন তো হওয়ার কথা, কেন হয়নি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় চুক্তিতে নিয়োজিত ল্যাব সহযোগীদের বেতন হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব শাখার সহকারী পরিচালক আইনুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, তিন মাস আগে বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট পাঠানো হলেও এখনো অনুমোদন হয়নি। ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ কিছু হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক ল্যাব সহযোগীদের বেতন ছয় থেকে সাত মাস ধরে বন্ধ আছে বলে স্বীকার করে আইনুল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে।

কেন টাকা পেতে দেরি হচ্ছে—এ প্রশ্নে আইনুল ইসলাম বলেন, ‘তারা চুক্তিভিত্তিক কর্মী হওয়ায় একটা নির্দিষ্ট সময় পর তাদের কাজের মেয়াদ বাড়াতে হয়। এটা করতে গিয়ে বেশ কিছু অনুমোদন ও দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। ফলে তাদের বেতনের জন্য বরাদ্দ পেতে সময় লাগে। এই দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে আমরা একবারে ছয় মাসের বরাদ্দ চেয়েছিলাম; কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তিন মাসের বেশি বরাদ্দ একসঙ্গে দেয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের খবর, ‘গুজব’ বললেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

জুলাই ঘোষণাপত্র: গণ-অভ্যুত্থানের দলিলে যা যা রয়েছে

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের শুল্ক অনেক বাড়িয়ে দেব: ট্রাম্পের হুমকি

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন ভিসা পেতে লাগতে পারে ১১ লাখ টাকার জামানত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত