Ajker Patrika

পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর

সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া
পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরআলগী গ্রাম। ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে এর অবস্থান। স্বাস্থ্যসেবায় কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই এখানে। তাই চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের পাকুন্দিয়া সদর উপজেলা কিংবা ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যেতে হয়। যাতায়াতে ছোট নৌকাই একমাত্র ভরসা। তবে সব সময় নৌকা না পাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় এখানকার মানুষকে। সে কারণে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে পথেই ঘটে মৃত্যুর ঘটনা।

গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা শেফালী আক্তারের প্রসববেদনা শুরু হলে স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। সেই সঙ্গে মারা যায় গর্ভের সন্তানও। এ ছাড়া মদিনা আক্তার নামের অপর এক নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর গর্ভের সন্তান মারা যায়। একই ঘটনা ঘটে সাবিকুন নাহার নামের এক নারীরও। এ ধরনের আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।

দুর্গম ওই গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি গ্রামটিতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের। এতে অন্তত গ্রামের মানুষেরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পাবে।

জানা গেছে, উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে চরআলগী গ্রামটি অবস্থিত। ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে জেগে ওঠা চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার চরে ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে গ্রামটি গড়ে ও ওই গ্রামে ৩০০ থেকে ৪০০টি পরিবারের অন্তত ২ হাজার ৫০০ লোক বসবাস করে। দুর্গম হওয়ায় অন্য এলাকার তুলনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে গ্রামটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামটিতে নৌকা ছাড়া যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এ গ্রামে প্রচুর পরিমাণে সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদিত হয়। গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসাসহ কয়েক শ ঘরবাড়ি রয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এখানকার প্রধান সমস্যা যোগাযোগব্যবস্থা। আগে নদে পানি কম থাকায় হেঁটে নদ পার হওয়া যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নদে পানি থাকায় নৌকা ছাড়া চলাচলের সুযোগ নেই। গ্রামের পশ্চিম পাশে গফরগাঁও উপজেলা আর পূর্ব পাশে পাকুন্দিয়া। গ্রামটিতে হাজারো মানুষের বসবাস। স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক দুর্ভোগ।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ফরিদ মিয়া (৫৫) বলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে এখানে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে এবং যাতায়াতের অসুবিধার কারণে সময়মতো চিকিৎসা করাতে না পারায় অনেকে মারা গেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে এখানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক করা হলে মানুষেরা অন্তত সাধারণ চিকিৎসা সেবার সুযোগ পেত।

মাসুদ মিয়া নামের এক যুবক বলেন, ‘বাচ্চা অসুস্থ। তাঁকে নিয়ে দত্তের বাজারে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। আসা-যাওয়ায় চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে। এখানে একটি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র থাকলে এ দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’

চরফরাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মান্নান বলেন, গ্রামের দুর্ভোগের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক করা হলে ওই দুর্গম চরাঞ্চলের বহু মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নূর-এ আলম খান বলেন, গ্রামটিতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে। 
পাকুন্দিয়ার ইউএনও রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন ওই এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত