Ajker Patrika

সাভারে ৬ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে অনীহা

অরূপ রায়, সাভার
Thumbnail image

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করায় নয় বছরেও সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত প্রায় ৬ কোটি টাকার জমি উদ্ধার করতে পারেনি ঢাকা জেলা প্রশাসন। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামিসহ আরও দুই ব্যক্তি ওই জমি দখল করে রেখেছেন।

জেলা প্রশাসন বলছে, রায়ের নথি না পাওয়ার কারণে আপিল করা সম্ভব হচ্ছে না। নথি পাওয়া গেলে আপিল মামলা করা হবে।

সাভার সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাভার মৌজার ৫৩৪ নম্বর খতিয়ানে ২১৭ নম্বর দাগে সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় ২৭ শতাংশ জমি রয়েছে, যার দাম প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭ শতাংশ নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় মাধবী রানি চৌধুরীকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ ঢাকা জজ কোর্টের রায়ের আলোকে দখলে রেখেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম মোহাম্মদ মনসুর আলী। তিনি ওই জমিতে তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। একই রায়ের আলোকে ধামরাইয়ের নাজিম উদ্দিন ও তাঁর ভাই রফিকুল ইসলাম ১০ শতাংশ জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে রেখেছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম মোহাম্মদ মনসুর ও অপর দুই দখলদারকে পাওয়া যায়নি। তাঁদের দখলে থাকা জমিতে স্থাপনা থাকলেও তাঁরা কেউ থাকেন না।

আবুল কালাম নামের একজন ভাড়াটে বলেন, ‘জমি ব্যক্তিমালিকানা নাকি সরকারি, তা আমার জানা নেই। আমার কাছ থেকে এক লোক এসে মাঝেমধ্যে ভাড়া নিয়ে যায়।’

সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনসুর আলীসহ অন্যরা ভুয়া দলিলে অর্পিত সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে ঢাকার সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলা করার পর সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধিতা না করায় রায় তাঁদের অনুকূলে যায়।

বিষয়টি জানার পর ২০১৫ সালে তখনকার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. যুবায়ের আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) চিঠি দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত নয় বছরেও আপিল বা জমি উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দীর্ঘদিনেও কেন আপিল করা হয়নি—তা জানতে চেয়ে ২০২২ সালের ২৬ জুলাই আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হয়েছিল। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের মে মাসে তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য না দিয়ে ভিপি কৌশলীর মতামত সরবরাহ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যান।

ভিপি কৌশলী শামীম উদ্দিন তাঁর মতামতে বলেন, ‘আপিলের জন্য ঢাকার সহকারী জজ আদালতের রায়ের নথি খোঁজাখুঁজির কাজ চলছে। নথি পাওয়া গেলে রায় উত্তোলন করে আপিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিপি কৌশলী শামীম উদ্দিন নথি খোঁজাখুঁজির কথা বললেও তিনি নথি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেননি। পাশাপাশি সহকারী জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করারও কোনো উদ্যোগ নেননি তিনি।

এ অবস্থায় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আপিলের বিষয়ে জানতে আবার আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুসরাত নওশীন ৪ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে মনসুর আলীর দখলে থাকা জমি নিয়ে আপিলের বিষয়ে কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই বলে জানান।

পরে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য ও অভিযোগ শাখার সহকারী কমিশনার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুসরাত নওশীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে নথি খোঁজাখুঁজির বিষয়ে আপনাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না।’

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদের নজরে আনা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখি কিছু করা যায় কি না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত