Ajker Patrika

স্মৃতিতে পঁচাত্তরের ভয়াবহ ১৫ আগস্ট

স্মৃতিতে পঁচাত্তরের ভয়াবহ ১৫ আগস্ট

শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনই এবার টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, তাঁকে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে কবরে শুইয়ে দিয়ে যারা ভেবেছিল, সব শেষ, বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যাবেন বিস্মৃতির অন্তরালে, তারা ভুল বুঝেছিল। বঙ্গবন্ধু এখনো কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়জুড়ে আছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখন প্রতিদিন সারা দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ টুঙ্গিপাড়া যান, ফুল দেন সমাধিতে, কবরের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁকে, যাঁর বুকজুড়েই বাংলাদেশ।

তাঁকে ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অনেক হয়েছে, তাঁর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতিহাসের মহানায়ককে বাদ দিয়ে খলনায়ককে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি; বরং এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে শেখ মুজিবুর রহমান আর বাংলাদেশ অভিন্ন।

আগস্ট মাস এলেই আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পঁচাত্তরের সেই ভয়ংকর দিনটি। পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। প্রথমে তিনি জগন্নাথ হলে গণকবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তারপর টিএসসিতে গিয়ে ভাষণ দেবেন। আশা করা হচ্ছিল তিনি এমন কিছু বলবেন, যা জাতিকে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করে তুলবে।

বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিক দিয়ে, অর্থাৎ জগন্নাথ হলের দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে উত্তরবাড়ির সামনে নির্মিত স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে উত্তর গেট, অর্থাৎ শামসুন্নাহার হলের সামনে দিয়ে বেরিয়ে টিএসসিতে যাবেন। যেহেতু তিনি জগন্নাথ হলে প্রথম আসবেন, সেহেতু হলের ছাত্র হিসেবে আমাদের ওপর স্বেচ্ছাসেবকের বাড়তি দায়িত্ব ছিল। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বানানো হয়েছিল বিশেষ ক্যাপ (টুপি) ও স্কার্ফ। জগন্নাথ হলের উত্তরবাড়ির নিচতলায় একটি রুমে এসব টুপি ও স্কার্ফ রাখা ছিল, ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বিতরণের জন্য।

১৪ আগস্ট গভীর রাত পর্যন্ত আমরা ব্যস্ত ছিলাম। খুব অল্প সময় হয়তো ঘুমিয়েছিলাম। শেষ রাতে ঘুম চোখেই গোলাগুলির শব্দ শুনে মনে নানা আশঙ্কা তৈরি হলেও আমাদের এক ‘দাদা’ এই বলে আশ্বস্ত করেন যে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে কোনো হলের ছাত্ররা হয়তো বাজি ফুটিয়ে উল্লাস করছে।

খুব ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে প্রস্তুত হয়ে সকাল ৬টার মধ্যেই হলের উত্তরবাড়ির ক্যানটিনে নাশতা করতে যাই। নাশতা শেষে ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে পান-সিগারেটের ছোট দোকানের সামনে আসতেই দোকানমালিক জিতেনদা কাঁপতে কাঁপতে ছোট একটি রেডিও আমার সামনে এগিয়ে ধরে বলেন: ‘বাবু, রেডিওতে এসব কী বলছে!’
আমি স্পষ্ট শুনতে পাই রেডিওর ঘোষণা: ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’

আমারও হাত-পা কাঁপতে থাকে। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হয় না। পা অবশ হয়ে আসে। সামনে এগিয়ে কাউকে যে কিছু বলব, তা-ও পারি না। কয়েক মুহূর্ত এ রকম কিংকর্তব্যবিমূঢ় থাকার পর চোখ যায় হলের স্মৃতিসৌধের দিকে। দেখি নিরাপত্তাকর্মীরা কী এক যন্ত্র দিয়ে মাঠ পরীক্ষা করছেন। বঙ্গবন্ধু এই সৌধে ফুল দেবেন বলেই এ ব্যবস্থা।

ধীর পায়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে রেডিওর ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে, তাঁরা ধমক দিয়ে বলে ওঠেন: ‘কী গাঁজাখুরি কথা বলছেন? ওটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানি রেডিওর কাজ।’
আহা, ওই ধারণাটা যদি সত্যি হতো! এর মধ্যেই লক্ষ করি হলের ছাত্ররা একে একে রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। সবার চোখে-মুখেই আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। অথচ রেডিওতে ঘোষণা ক্রমাগত চলতে থাকায় বিহ্বলতাও কাটছে না।

বিভুরঞ্জন সরকার

ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ নিশ্চয়ই অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ফেটে পড়বে—সেটাই ছিল আমার প্রত্যাশা। জগন্নাথ হলে জাতীয় ছাত্রলীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা থাকেন। তাঁরা কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু বলতে পারলেন না। খবরাখবর জানার জন্য তাঁরা দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমরা ভীষণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। সত্যি কি বঙ্গবন্ধু আর বেঁচে নেই? কী হবে এখন তাহলে? সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে চেপে জগন্নাথ হলে আসেন জাতীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী দুই নেতা—ইসমত কাদির গামা এবং কাজী আকরাম হোসেন। তাঁরা জানান, ঘটনা সত্য। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসায় ঢুকে ঘাতকেরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ হত্যা করেছে।

এখন আমরা কী করব?তাঁরা বললেন: ‘আপনারা অপেক্ষা করুন। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছি।’ তাঁরা চলে গেলেন। হলের ছাত্ররা সবাই একেবারে বিমর্ষ হয়ে পড়ল। এতক্ষণ যে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব চলছিল, তা-ও দূর হলো। সত্যি সত্যি বঙ্গবন্ধু আর নেই!

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা যে উল্টোপথে যাত্রা শুরু করছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় ১৫ আগস্ট প্রভাতেই বাংলাদেশ বেতারের নাম পাকিস্তানের স্টাইলে রেডিও বাংলাদেশ বলার মধ্য দিয়ে। সবাই যখন কিছু একটা করার জন্য ছটফট করছে, কিন্তু হতবিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, তখন আমার হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখেই আসি না কী ঘটেছে বা ঘটছে! অসীম দাশগুপ্তকে (পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হয়েছিলেন) বলায় তিনিও আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলেন। আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশে। জগন্নাথ হল থেকে বেরিয়ে দেখতে পাই শামসুন্নাহার হল ও রোকেয়া হলের ভেতরে ছাত্রীরা ভয়ে-আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে। কেউ কেউ কান্নাকাটিও করছে। চিৎকার করে জানতে চাইছে, তারা কী করবে? কিন্তু কে তাদের করণীয় জানাবে? সবাই তো ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়-বিমূঢ়। বঙ্গবন্ধুকে কেউ মেরে ফেলতে পারে, সেটা যেমন ছিল ভাবনার বাইরে, তেমনি তাঁকে হত্যা করলে কী করণীয়, সেটাও তো কারও ভাবনার মধ্যে ছিল না।

শামসুন্নাহার হলের সামনে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে একটি সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল: ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারই হোক জয়’। তোরণ পার হওয়ার সময় লক্ষ করলাম, কেউ একজন কাঁচা হাতে এক কোনায় লিখে রেখেছে, ‘দেশকে যারা গোষ্ঠীচক্রের হাত থেকে রক্ষা করল তাদের সালাম’।

আমার বিস্ময়ের শেষ থাকে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কে এই নতুন স্লোগান লিখল? সে কি খুব দূরের কেউ? নাকি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত-স্তাবকদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল?
আমি আর অসীম দাশগুপ্ত রোকেয়া হলের দিকে মোড় নেওয়ার আগেই দেখতে পাই, শাহবাগের দিক থেকে একটি ট্যাংক টিএসসির দিকে এগিয়ে আসছে। ট্যাংক আসতে দেখে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। যে যেদিকে পারে ছুটতে থাকে। আমরা নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি অতিক্রমের সময় দেখি ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরাও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের কাছে তাঁদের কিছু করার আছে কি না, জানতে চাইছেন। কিন্তু নির্দেশনা দেওয়ার মতো কাউকেই যে পাওয়া যায়নি।

আমরা নিউমার্কেট হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডির দিকে এগোতে থাকি। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। দু-এক জায়গায় ছোট জটলা। কেউ উচ্চ স্বরে কথাও বলছে না। কলাবাগান মাঠের কাছে গিয়ে দেখি রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কালো পোশাক পরা সামরিক লোকজন। আমাদেরও আর সামনে যেতে দেওয়া হয়নি। রাস্তা ফাঁকা। আমার মনে হয়েছিল, অসংখ্য মানুষ হয়তো ততক্ষণে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে ছুটে গেছে। কিন্তু তেমন কিছু না দেখে যারপরনাই হতাশ ও ব্যথিত হলাম।

দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়ার জন্য দলে দলে মানুষকে মসজিদের দিকে যেতে দেখি। এর আগে ঢাকা শহরে এত নামাজি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। হঠাৎ আমার ভেতর একটি ভাবনা ঝিলিক দিয়ে ওঠে। ভালো হবে যদি নামাজ শেষে এই মানুষেরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাজপথে নামে। আমিও ওই মিছিলে শামিল হব। কিন্তু নামাজ শেষে কাউকে মিছিল করতে দেখি না। কারও মুখে স্লোগান নেই। সবাই চুপচাপ। যার যার গন্তব্যে সবাই হাঁটতে থাকে। এ কি অধিক শোকে পাথর, নাকি অন্য কিছু?

মানুষের এই প্রতিক্রিয়া আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বঙ্গবন্ধু এত বড় নেতা। এত তাঁর ভক্ত। অথচ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পর মানুষের এই নীরবতার কোনো ব্যাখ্যা তখন খুঁজে পাইনি।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। আমরা বসে থাকি কলাবাগানের এক গলির মধ্যে। হলে ফিরব কি না, ফিরলে কী হবে, এসব যখন ভাবছি, তখন সঙ্গী অসীমদা প্রস্তাব দেন কলাবাগানে তাঁর এক বোন-ভগ্নীপতির বাসায় যাওয়ার। কিছু না ভেবেই সন্ধ্যার দিকে ওই বাসায় গিয়ে উঠি আমরা দুজন। আমাদের দেখে বোন-ভগ্নীপতি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আমরাও অশ্রু সংবরণ করতে পারি না। এভাবে কতক্ষণ অশ্রুপাতের পর যেন কিছুটা হালকা বোধ করলাম। বঙ্গবন্ধুর জন্য আর কিছু না হোক কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলার সান্ত্বনা নিয়েই কেটে যায় ঘোর দুঃস্বপ্নের ১৫ আগস্ট দিনটি। আমাদের পেটে সারা দিন আর দানাপানি পড়েনি। যে বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম, সেই বাসায়ও সারা দিন চুলায় হাঁড়ি চড়েনি। ঘাতকদের বিরুদ্ধে সেদিন এটাই আমার কাছে একধরনের প্রতিবাদ বলে মনে হয়েছিল।

এত বছর পেরিয়ে এসে ভাবি, আজ বঙ্গবন্ধুর ভক্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বেড়েছে মুজিব কোট পরিহিত মানুষের সংখ্যা। কিন্তু আবার যদি কখনো কোনো খারাপ সময় আসে, যদি আওয়ামী লীগকে বসতে হয় বিরোধী দলের আসনে, তাহলে তখন এই মুজিব-ভক্তরা অবিচল থাকবেন তো?

কয়েকজন উর্দিপরা সামরিক ব্যক্তি হয়তো গুলি করে বঙ্গবন্ধুর বুক ঝাঁঝরা করেছিল, কিন্তু ওই প্রকাশ্য ঘাতকদের পেছনে যারা ছিল, তারা কিন্তু এখনো অধরা। সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, সম্প্রতি প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে শোনা একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে।

তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ারেরে পঁচাত্তরের পর কোনো এক সময় মহিউদ্দিন আহমেদকে এক সাক্ষাতে বলেছিলেন, ‘যিনি তোমাদের একটি রাষ্ট্র দিয়েছেন, তাঁকে তোমরাই হত্যা করেছ!’

এই ‘তোমরা’ মানে নিশ্চয়ই মহিউদ্দিন আহমেদ কিংবা তাঁর কিছু বন্ধুবান্ধব নন, ‘তোমরা’ মানে এখানে সমগ্র বাঙালি জাতি। সত্যি তো, বস্তুত নিরর্থক, জাতির মর্যাদাবিধ্বংসী, সর্বনেশে এই হত্যার পেছনে মোটা দাগে কি পুরো বাঙালি জাতিই দায়ী নয়?

লেকক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত