Ajker Patrika

দুর্বৃত্ত দমনে শেখ হাসিনাকে কঠোর হতে হবে

দুর্বৃত্ত দমনে শেখ হাসিনাকে কঠোর হতে হবে

আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের ৫১ বছর পার করলাম। আপনার কি মনে হয়, ঠিক পথেই চলছে বাংলাদেশ?  
মোনায়েম সরকার: আমি প্রথমেই এই বিজয়ের মাসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা রাখা 
জাতীয় চার নেতার প্রতি। আপনার প্রশ্নের উত্তরে যদি এককথায় বলি, বাংলাদেশ ঠিক পথে চলছে না, তাহলে প্রকৃতপক্ষে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে একটি অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। যারা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যারা মুক্তিপাগল নিরীহ বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যায় সহযোগিতা করেছিল, তারা খুশি হয় এটা বলে যে আমরা পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম। আসলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম বাঙালির জীবনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের জন্মের চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে! স্বাধীনতা-পরবর্তী নানা চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা-ও বিস্ময়কর এবং এটা অস্বীকার করার চেয়ে নিমকহারামি আর হতে পারে না। 

আজকের পত্রিকা: পাকিস্তানে গণতন্ত্র ছিল না, ছিল সাম্প্রদায়িকতা। বাংলাদেশেও তো তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তাহলে অগ্রগতি কী হলো? 
মোনায়েম সরকার: হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু পিছু হটা আছে। তবে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে নির্মোহভাবে। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি প্রধানত তিনটি ধারায় বিভক্ত ছিল। ১. গণতান্ত্রিক ধারা, ২. বাম প্রগতিশীল ধারা এবং ৩. ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ধারা। গণতান্ত্রিক ও বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা একসময় কাছাকাছি অবস্থানে থেকে প্রধান ধারায় পরিণত হয়েছিল। এ ধারাই মূলত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর রাজনৈতিক ধারায় অনেকটা নিভৃতে বড় পরিবর্তন ঘটে যায়। আওয়ামী লীগ থেকে একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে জাসদ নামের দল গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় অঘটনের সূচনা করেছিল। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়ক হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তারা আত্মগোপনে যায় এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতির চালচিত্র পুরো পাল্টে যায়। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যে প্রগতিমুখীন ধারার সূচনা করেছিলেন, তা পাল্টে আবার পাকিস্তানি ধারা চালু করা হয়। এরপর সামরিক স্বৈরাচারী শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনকালে রাজনৈতিক শক্তির নতুন বিন্যাস ঘটে। বাম প্রগতিশীল নেতাদের কারও কারও ক্ষমতার লোভ কিংবা ভুল রাজনৈতিক তত্ত্ব চর্চার কারণে রাজনীতির এই ধারা জনবিচ্ছিন্ন ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি। দেশি-বিদেশি এজেন্টদের আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতায় এরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা অর্জন করে।

আজকের পত্রিকা: গণতান্ত্রিক ধারার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ কি রাজনীতিতে সঠিক অবস্থান রাখতে পেরেছে?  
মোনায়েম সরকার: পঁচাত্তর-পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিছু ওলটপালট ঘটায়নি, তা তো নয়। রাষ্ট্রক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য আওয়ামী লীগও কখনো কখনো আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। রাজনীতিতে নীতির প্রশ্নে অনমনীয় থেকে কৌশলে নমনীয় হতে হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এ নীতিতেই অবিচল থেকেছেন। রাজনীতিতে দর-কষাকষির সুযোগ কখনো হাতছাড়া করতে নেই। ১৯৭১ সালের ১ মার্চের পর অগ্নিগর্ভ উত্তাল অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনায় বসার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান থেকে তিনি কিন্তু বিরত হননি। নমনীয়তা রাজনীতির জন্য কোনো সময়ই খারাপ কৌশল নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতিক অতীতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নীতির প্রশ্নে আপস করে আর কৌশলে আপসহীন থেকে জনপ্রিয় হওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হওয়ায় আওয়ামী লীগও এতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে আওয়ামী লীগের সমান্তরাল কোনো শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দল দেশে গড়ে না ওঠায় কিছু ত্রুটি-দুর্বলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগই এখনো গণতান্ত্রিক ধারার প্রধান দল হিসেবে আছে।

আজকের পত্রিকা: ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ কি গণতান্ত্রিক আচরণ করছে? 
মোনায়েম সরকার: কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে এখন গণতান্ত্রিক দল বলতে না চাইলেও ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস, দৃঢ়তা, সততা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে আওয়ামী লীগ এখনো বাঙালির শেষ আশ্রয় বা ঠিকানা হয়ে আছে।  

আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র নিয়ে একধরনের আবেগ আছে। এই আবেগের প্রতি কী আওয়ামী লীগ সম্মান দেখাতে পারছে?  
মোনায়েম সরকার: দেখুন, আবেগ আর রাজনৈতিক বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে এখন সবাই গণতন্ত্র নিয়ে হইচই করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে গণতন্ত্রবিরোধী বলতেও দ্বিধা করছে না বিএনপি। অথচ বিএনপি কি গণতান্ত্রিক দল? এ দলটি তো ক্ষমতায় ছিল। তখন দেশে কেমন গণতন্ত্র ছিল? বিএনপির দলীয় কার্যক্রম কি গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হয়? আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার আগে এ প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া উচিত নয় কি? আমাদের দেশের সর্বত্রই স্ববিরোধী আচরণ লক্ষ করা যায়। কথা ও কাজের অসংগতি সাধারণ ব্যাপার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা ও অসংগতি অস্থিরতা তৈরি করে সন্দেহ নেই। কিন্তু হত্যা, খুন, গুম, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি–কোনটায় বিএনপির রেকর্ড উজ্জ্বল?  

আজকের পত্রিকা: বিএনপির খারাপটা কেন আওয়ামী লীগ অনুসরণ করবে?
মোনায়েম সরকার: না, সেটা করা মোটেও উচিত নয়। এটাও মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক দল কিন্তু আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সে দলে কিছু দুর্বৃত্ত, সুযোগসন্ধানী জোটে, এটা সত্য। এসব দুর্বৃত্ত দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে দল ও দলীয় সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ রকম কিছু দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেও শেখ হাসিনার সরকার সমালোচিত হচ্ছে, জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে–এটাও অস্বীকার করার মতো নয়। এখনই যদি এসব দুর্বৃত্তকে দমন করা না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

আজকের পত্রিকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?  
মোনায়েম সরকার: আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি চাই তিনি আরও অন্তত এক মেয়াদে দেশের নেতৃত্ব দিন। সাহস করে সত্য কথা বলার রেওয়াজ আমাদের দেশ থেকে উঠে যেতে বসেছে। তবে আমি যা সঠিক বলে মনে করি, তা দ্বিধাহীন চিত্তেই প্রকাশ করি। বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার কথা বলছে। কিন্তু বিএনপি তো কোনো বিপ্লবী দল নয়। জনভিত্তিসম্পন্ন ও সুসংগঠিত দল নয়। চরিত্রগত কারণেই গণ-অভ্যুত্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি। তবে মানুষের মনে যে কিছু ক্ষোভ-অসন্তোষ জমা হয়েছে বা হচ্ছে, তা দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সুযোগও তাঁর আছে। শাসনতান্ত্রিকভাবেও সে ক্ষমতা তাঁর রয়েছে বলে জানি।বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। মানুষ কষ্টে আছে। এ ছাড়া ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগও ব্যাপক। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দ্রুত ও দৃশ্যমান উদ্যোগ আশা করে মানুষ। অর্থ পাচারকারী, অসৎ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তত কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? প্রতীকী হলেও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মানুষ একজন মানবিক অথচ ন্যায়ের প্রশ্নে কঠোর শাসক শেখ হাসিনাকে দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। আগামী জাতীয় সম্মেলনে যদি সৎ ও অবিতর্কিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গতিশীল নেতৃত্ব উপহার না দেওয়া হয়, তাহলে দলও উজ্জীবিত হবে না।মন্ত্রিসভায় একটি রদবদলও বহুল প্রত্যাশিত। যাঁরা ব্যর্থ, অকর্মণ্য ও বিতর্কিত, তাঁদের বাদ দেওয়া দরকার। মন্ত্রী পদ তো কারও জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। যদি এ কাজগুলো করা হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবেই প্রশংসিত হবেন।  

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।  
মোনায়েম সরকার: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে আজকের পত্রিকার পাঠক-শুভানুধ্যায়ীদেরও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষতি করতে বিদেশ থেকে সাইবার হামলা, কিছু আইএসপিকে শনাক্ত করেছে সরকার

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

গাংনীতে কাঠমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষতি করতে বিদেশ থেকে সাইবার হামলা, কিছু আইএসপিকে শনাক্ত করেছে সরকার

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

গাংনীতে কাঠমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষতি করতে বিদেশ থেকে সাইবার হামলা, কিছু আইএসপিকে শনাক্ত করেছে সরকার

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

গাংনীতে কাঠমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষতি করতে বিদেশ থেকে সাইবার হামলা, কিছু আইএসপিকে শনাক্ত করেছে সরকার

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

গাংনীতে কাঠমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষতি করতে বিদেশ থেকে সাইবার হামলা, কিছু আইএসপিকে শনাক্ত করেছে সরকার

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

গাংনীতে কাঠমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত