Ajker Patrika

অভিযানেও সারের বেশি দাম

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪৬
অভিযানেও সারের বেশি দাম

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় চলতি বোরো আবাদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। এতে কৃষকেরা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সারের দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগে গত ১৫ দিনে প্রায় ১৯টি অনুমতিবিহীন সারের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়, সারের ডিলার ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে ভালো ফলন পেতে চারা রোপণের আগেই সারের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরিয়েট অফ পটাশ (এমওপি), ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কিনতে হয় কৃষকদের। এদিকে চারা লাগানোর আগে এবং শীষ বের হওয়ার পর জমিতে এমওপি সার দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

তাই এমওপি সারের চাহিদা বাড়তে থাকায়, এই সুযোগকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এমওপি সার প্রতি বস্তা সরকারের নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা থাকলেও তার বেশি দামে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন। প্রতি বস্তায় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে কৃষকেরা সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে উপজেলা কৃষি কার্যালয় দাবি করছে, ব্যবসায়ীরা যেনো সারের সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য প্রতিনিয়ত কৃষি অফিস থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রির অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৯টি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রতিবেদক ক্রেতা সেজে সার কিনতে গেলে, চারটি দোকান ঘুরেও কোনো এমওপি সার পাওয়া যায়নি। তবে বেশি দামে সার কিনতে রাজি হলে একটি দোকান সার দিতে পারবে বলে জানায়। এ সময় কয়েকজন কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমওপি সার খেতে দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে তারা বাধ্য হয়েই বেশি দামে সার কিনছেন। তবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, উপজেলায় ৬০০ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এমওপি সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সার শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই নারায়ণগঞ্জ থেকে সার কিনে এনে তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে বাড়তি দামে কেনা ও পরিবহন খরচের কারণে দামও বেড়েছে।

উপজেলার নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক এমদাদুল হক (৫০) বলেন, ‘এ বছর ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করতেছি। খেতের জন্য আমি প্রথম দিকেই সার কিনছি। তহন তো বেশি দামেই কিনছিলাম। সরকারি মূল্যে তো কিনবার পাই নাই। সার অনুযায়ী বস্তা প্রতি ১০০-২০০ টাকা বেশি দিয়া সার কিনছি।’

রুপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের কৃষক দুদু মিয়া (৫৫) বলেন, ‘গত রোববার সার কিনছি। আগে তো শুনছিলাম দাম বেশি না দিলে সার পাওয়া যাব না। বাজারে আইসা তো দোকানের লাল কাপড়ে লাগানো মূল্যেই সার কিনবার পাইছি। কোনো বাড়তি দাম দেওয়া লাগে নাই।’

আরেক কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘খহেত লাগানো শুরু করছি। এহন দামের চিন্তা কইরা তো লাভ নাই। আবাদ ভাল পাইবার চাইলে তো সময়মতো সার দেওয়া লাগব। গত শনিবার তাই বেশি দাম দিয়াই সার কিনলাম।’

নিলামপট্টি এলাকার মেসার্স জোবায়ের ট্রেডার্সের মালিক মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘এই মৌসুমের শুরুতে আমাদের বেশি দাম দিয়ে সার কিনে আনতে হয়েছে। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করেছি। তবে এখন আমরা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছি না। সাব ডিলারদের কাছেও সঠিক মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এমওপি সারের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।’

মেসার্স আল-আমিন ট্রেডার্সের মালিক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় এমওপি সারের ঘাটতি রয়েছে। কয়েক দিন ধরেই ক্রেতাদের ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে সার আনা হলে বস্তা প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হবে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ওয়াসিফ রহমান বলেন, ‘উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই। ডিলাররা তাদের সাব-ডিলারের কাছে সার বিক্রি করে দেওয়ায় এ সংকট হতে পারে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সারের বরাদ্দ হলে এই সংকটও কেটে যাবে। কিন্তু কোনো অজুহাতেই ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে সার বিক্রি করতে পারবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বগুড়ায় দুই মামলায় আ.লীগের ছয় নেতা-কর্মী ১০ দিনের রিমান্ডে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত