রুশা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী
শরৎকাল মানেই একটা স্মৃতির আমেজ। একটা আলো, যেই আলোটাকে ফেলে এসেছি অনেক বছর পেছনে। পেছনে থেকে গেলেও সেই আলো প্রতিদিনের অন্ধকারের শরীরে ছায়া ফেলে...চলার পথটা আলোকিত হয়।
যখন ছোট ছিলাম, একদিন পাড়া ছাড়িয়ে বাবার সঙ্গে রেললাইনের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বড় ড্রেনের পাশে আমার থেকে লম্বা লম্বা কতগুলো গাছ চোখে পড়ল। গাছের মাথায় গ্রামের থুত্থুড়ে বুড়ির মাথার সাদা সাদা চুলগুলো বসানো! অবাক কিশোরীর চোখের সামনে সেই প্রথম কাশফুলের ফ্যান্টাসি! মনে হয়েছিল, গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা কোনো গাছ ওরা। কী সুন্দর দুলছিল! যেন এ-ওর গায়ে একটু দোলা দিচ্ছে আর অন্যজন বলছে, ‘আহা, এইটুকু মাত্র, দ্যাখ আমি আরও জোরে ধাক্কা দিলাম’...পালকের মতো গাছগুলোর গায়ে কী জোর! মাথার ওপরের সাদা সাদা ফুলগুলো চুলের বদলে হাওয়াই মিঠাই হয়ে যাচ্ছিল।
ইশ, যদি একটু ধরতে পারতাম! এরপর অনেকবার তাদের দেখা পেয়েছিলাম। শহরটা তখনো ভীষণ রকম পাল্টে যায়নি। ধীরে ধীরে এই কাশফুলের সঙ্গে পুজোর সুর এসে লাগল। আমাদের নাগরিক জীবনের যেই দু-একটা ফ্যান্টাসি, তার মধ্যে পুজো সবচেয়ে কাছের আর আপন আজও। পুরোটা পুজোর সময় তখন শিউলি ফুল, ধূপ, নারকেলের নাড়ু আর শঙ্খধ্বনিতে মাখানো ছিল—সবটাকে আগলে রেখেছিল সেই বুড়ির মাথার চুলের মতো ফুলগুলো।
একবার কলেজ থেকে কাশফুল এনে ঘরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। ওমা, এক দিন পর সকালে ঘুম ভেঙে দেখি সারা ঘর সাদা সাদা কাশের রেণু আর পাপড়ি দিয়ে মাখামাখি! সেই স্মৃতির গায়ে আমার পুরান ঢাকায় কাটানো শেষ দিনগুলোর ঘ্রাণ আজও মনের ভেতর ঘুমিয়ে আছে।
রামকৃষ্ণ মিশনের গেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে আমি প্রায়ই কাল্পনিক কাশফুল খুঁজে পেতাম। কেন যেন মনে হতো, একদিন যখন আমি রবীন্দ্রনাথের ‘মিনি’ ছিলাম, কল্পনার ‘কাবুলিওয়ালা’ (যার মুখ অনেকটা বাবার মতো) আমার জন্য আর কিছু না, একমুঠো কাশফুল নিয়ে এসেছিল।
আমার প্রিয় গোপীবাগের সেই চেনা রাস্তার পাশে আজও আমি অসময়ের কাশফুল দুলতে দেখি। ছিপছিপে ডালগুলোতে চড়ুই পাখির দল খুব নাচানাচি করে। আর গাছগুলো? ওরা মনে মনে সেই আগের দিনের ছেলেমেয়েগুলোকে ডাকে, যারা কিছু বোঝার আগেই অনেক দূরে দূরে ছড়িয়ে গিয়েছিল কাশফুলের নরম রেণুর মতো। স্বপ্নটা মনের মধ্যে ‘কিশোরীই’ থেকে গেল কিন্তু বয়সটা বেড়ে গেল। আর কাশফুল? সে আজও ঠিক সময়মতোই ফোটে।
আমরা যারা একসময় দলবেঁধে হেঁটে যেতাম, কেউ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত, কেউ লুকিয়ে কাউকে খুঁজত, কেউ খুব মন দিয়ে পড়তে পড়তে জানালা দিয়ে আকাশটা খুঁজতে চাইত—তাদের সবার মনে না থাকলেও কাশফুলের মনে ওদের সব্বার ছবি আঁকা আছে।
আজকাল শহরটা খুব ব্যস্ত। তার শরীরে অনেক দেয়াল। দেয়ালের পাশে কিছু গাছ, অনেক গ্রাফিতি, দলাদলি, চাওয়া-পাওয়ার না মেলানো হিসাব। এত এত বিভাজনের মাঝে কাশফুল কি তবে হারিয়ে গেছে? তা কি হতে পারে? শরতের এই ফুল যে ঋতুর মতো মানুষদেরও মেলাতে আসে! ফুলগুলো আমার কাছে তাই অতীতের সঙ্গে বর্তমানের একটা সেতুর মতো। সেই সেতুর পাশে বিভূতিভূষণ আর সত্যজিৎ রায় মিলেমিশে আমাদের ‘দুর্গা’ বানিয়ে রেখেছেন। আজও শরৎকাল এলে ছোট ভাই ‘অপু’র হাত ধরে রেলগাড়ি দেখতে ছুটে যায় বাইরে থেকে বুড়ি হয়ে যাওয়া কিশোরী মেয়েটা। দূরে পুজোর সুর, হাওয়ায় নারকেলের নাড়ু, পাঁচফোড়ন আর সেই পুজো পুজো ঘ্রাণটা!
মানুষ কতটা বোকা হলে এমন ফুলদের পোড়াতে যায়? শহরজুড়ে হাওয়াই মিঠাই আকাশ, সেই আকাশের নিচে উৎসব আর ইতিহাসের গায়ে আজকাল পোড়া দাগ। সেই দাগ ফুলের গায়েও বসাতে চাচ্ছে কেউ।
আকাশজুড়ে তুলোর মতো মেঘের দল ছটফট করে বেড়াচ্ছে। এত মেঘ, এত বৃষ্টি, তবু অদ্ভুত-বিদঘুটে হিংসের আগুনে কেমন করে বাতাস লাগছে? মেঘের শক্তিতেও তবে টান পড়ল কি? মনের ভেতরের সরষেদানা মনটা রবীন্দ্রনাথ আউড়ে যায়, ‘ভয় নেই ভাই, মানবকে মহান বলে যেন’। তাই তো জেনে এসেছি। আজও তাই জানি, বিশ্বাস করি।
আমাদের প্রতিটা মানুষের মনের মাঝে ‘কাশফুল’ চিরকালের আলো হয়ে বেঁচে থাকুক। শরৎকাল এলেই দলবেঁধে সবাই কাশফুলের কাছে ছুটে যাক...ঠিক যেমন করে ‘দুর্গা’ আর ‘অপু’ হাত ধরাধরি করে ছুটে গিয়েছিল।
শরৎকাল মানেই একটা স্মৃতির আমেজ। একটা আলো, যেই আলোটাকে ফেলে এসেছি অনেক বছর পেছনে। পেছনে থেকে গেলেও সেই আলো প্রতিদিনের অন্ধকারের শরীরে ছায়া ফেলে...চলার পথটা আলোকিত হয়।
যখন ছোট ছিলাম, একদিন পাড়া ছাড়িয়ে বাবার সঙ্গে রেললাইনের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বড় ড্রেনের পাশে আমার থেকে লম্বা লম্বা কতগুলো গাছ চোখে পড়ল। গাছের মাথায় গ্রামের থুত্থুড়ে বুড়ির মাথার সাদা সাদা চুলগুলো বসানো! অবাক কিশোরীর চোখের সামনে সেই প্রথম কাশফুলের ফ্যান্টাসি! মনে হয়েছিল, গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা কোনো গাছ ওরা। কী সুন্দর দুলছিল! যেন এ-ওর গায়ে একটু দোলা দিচ্ছে আর অন্যজন বলছে, ‘আহা, এইটুকু মাত্র, দ্যাখ আমি আরও জোরে ধাক্কা দিলাম’...পালকের মতো গাছগুলোর গায়ে কী জোর! মাথার ওপরের সাদা সাদা ফুলগুলো চুলের বদলে হাওয়াই মিঠাই হয়ে যাচ্ছিল।
ইশ, যদি একটু ধরতে পারতাম! এরপর অনেকবার তাদের দেখা পেয়েছিলাম। শহরটা তখনো ভীষণ রকম পাল্টে যায়নি। ধীরে ধীরে এই কাশফুলের সঙ্গে পুজোর সুর এসে লাগল। আমাদের নাগরিক জীবনের যেই দু-একটা ফ্যান্টাসি, তার মধ্যে পুজো সবচেয়ে কাছের আর আপন আজও। পুরোটা পুজোর সময় তখন শিউলি ফুল, ধূপ, নারকেলের নাড়ু আর শঙ্খধ্বনিতে মাখানো ছিল—সবটাকে আগলে রেখেছিল সেই বুড়ির মাথার চুলের মতো ফুলগুলো।
একবার কলেজ থেকে কাশফুল এনে ঘরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। ওমা, এক দিন পর সকালে ঘুম ভেঙে দেখি সারা ঘর সাদা সাদা কাশের রেণু আর পাপড়ি দিয়ে মাখামাখি! সেই স্মৃতির গায়ে আমার পুরান ঢাকায় কাটানো শেষ দিনগুলোর ঘ্রাণ আজও মনের ভেতর ঘুমিয়ে আছে।
রামকৃষ্ণ মিশনের গেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে আমি প্রায়ই কাল্পনিক কাশফুল খুঁজে পেতাম। কেন যেন মনে হতো, একদিন যখন আমি রবীন্দ্রনাথের ‘মিনি’ ছিলাম, কল্পনার ‘কাবুলিওয়ালা’ (যার মুখ অনেকটা বাবার মতো) আমার জন্য আর কিছু না, একমুঠো কাশফুল নিয়ে এসেছিল।
আমার প্রিয় গোপীবাগের সেই চেনা রাস্তার পাশে আজও আমি অসময়ের কাশফুল দুলতে দেখি। ছিপছিপে ডালগুলোতে চড়ুই পাখির দল খুব নাচানাচি করে। আর গাছগুলো? ওরা মনে মনে সেই আগের দিনের ছেলেমেয়েগুলোকে ডাকে, যারা কিছু বোঝার আগেই অনেক দূরে দূরে ছড়িয়ে গিয়েছিল কাশফুলের নরম রেণুর মতো। স্বপ্নটা মনের মধ্যে ‘কিশোরীই’ থেকে গেল কিন্তু বয়সটা বেড়ে গেল। আর কাশফুল? সে আজও ঠিক সময়মতোই ফোটে।
আমরা যারা একসময় দলবেঁধে হেঁটে যেতাম, কেউ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত, কেউ লুকিয়ে কাউকে খুঁজত, কেউ খুব মন দিয়ে পড়তে পড়তে জানালা দিয়ে আকাশটা খুঁজতে চাইত—তাদের সবার মনে না থাকলেও কাশফুলের মনে ওদের সব্বার ছবি আঁকা আছে।
আজকাল শহরটা খুব ব্যস্ত। তার শরীরে অনেক দেয়াল। দেয়ালের পাশে কিছু গাছ, অনেক গ্রাফিতি, দলাদলি, চাওয়া-পাওয়ার না মেলানো হিসাব। এত এত বিভাজনের মাঝে কাশফুল কি তবে হারিয়ে গেছে? তা কি হতে পারে? শরতের এই ফুল যে ঋতুর মতো মানুষদেরও মেলাতে আসে! ফুলগুলো আমার কাছে তাই অতীতের সঙ্গে বর্তমানের একটা সেতুর মতো। সেই সেতুর পাশে বিভূতিভূষণ আর সত্যজিৎ রায় মিলেমিশে আমাদের ‘দুর্গা’ বানিয়ে রেখেছেন। আজও শরৎকাল এলে ছোট ভাই ‘অপু’র হাত ধরে রেলগাড়ি দেখতে ছুটে যায় বাইরে থেকে বুড়ি হয়ে যাওয়া কিশোরী মেয়েটা। দূরে পুজোর সুর, হাওয়ায় নারকেলের নাড়ু, পাঁচফোড়ন আর সেই পুজো পুজো ঘ্রাণটা!
মানুষ কতটা বোকা হলে এমন ফুলদের পোড়াতে যায়? শহরজুড়ে হাওয়াই মিঠাই আকাশ, সেই আকাশের নিচে উৎসব আর ইতিহাসের গায়ে আজকাল পোড়া দাগ। সেই দাগ ফুলের গায়েও বসাতে চাচ্ছে কেউ।
আকাশজুড়ে তুলোর মতো মেঘের দল ছটফট করে বেড়াচ্ছে। এত মেঘ, এত বৃষ্টি, তবু অদ্ভুত-বিদঘুটে হিংসের আগুনে কেমন করে বাতাস লাগছে? মেঘের শক্তিতেও তবে টান পড়ল কি? মনের ভেতরের সরষেদানা মনটা রবীন্দ্রনাথ আউড়ে যায়, ‘ভয় নেই ভাই, মানবকে মহান বলে যেন’। তাই তো জেনে এসেছি। আজও তাই জানি, বিশ্বাস করি।
আমাদের প্রতিটা মানুষের মনের মাঝে ‘কাশফুল’ চিরকালের আলো হয়ে বেঁচে থাকুক। শরৎকাল এলেই দলবেঁধে সবাই কাশফুলের কাছে ছুটে যাক...ঠিক যেমন করে ‘দুর্গা’ আর ‘অপু’ হাত ধরাধরি করে ছুটে গিয়েছিল।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫