Ajker Patrika

সংকট আরও ঘনীভূত

হাসান মামুন
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯: ৫৬
সংকট আরও ঘনীভূত

ভালো হতো কখনোই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হলে। সেটা তো আর হয়নি। হয়নি বলেই একটা পর্যায়ে এসে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এমনকি সংবিধানের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোকে।

একটা ঐতিহাসিক সমঝোতার আওতায় সেটি ঘটানো হয়। পরে আবারও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বানচাল হচ্ছে দেখে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং তার চাপে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয় খোদ সংবিধানে। এভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটা নির্ভরযোগ্য বন্দোবস্ত আমরা পাই। 

এর আওতায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরও ঘটে ২০০১ সালে। তবে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার পুনরায় নির্বাচনের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাটি নিজেদের পক্ষে ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাতে আবারও দানা বেঁধে ওঠে আন্দোলন এবং এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমরা আবার ফিরে আসি নির্বাচিত সরকারের আমলে।

এই প্রেক্ষাপটেই নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে এটিকে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাঁরা এ সংস্কারে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা অবশ্য ভাবতেই পারেননি—সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইচ্ছায় ব্যবস্থাটি বাতিল হয়ে যাবে। ভালো হতো এটি একেবারে বাতিল না হয়ে সংস্কারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হয়ে জাতিকে সেবা জুগিয়ে যেতে পারলে। 

তা হয়নি বলেই আবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নামের নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা গিয়ে পড়েছি। এর ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিগত দুটি নির্বাচনের একটিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ প্রেক্ষাপটেই সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা, সেই মাঠের বিরোধী দলের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন বর্জন করলেও পরেরটিতে তারা অংশ নিয়েছিল এবং ‘ঠকেছিল’ বলে মনে করে।

বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তো তাদের রয়েছে আর রয়েছে বলেই দ্বিতীয়বার এর ভেতর দিয়ে যেতে চাইছে না। তারা বলছে, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থাটি বাতিল করা হয়েছিল মেয়াদের পর মেয়াদ দেশ পরিচালনা করা বিএনপিকে একটি স্থায়ী বিরোধী দলে পরিণত করে প্রান্তিক বানানোর জন্যই। তাই তারা চাইছে আগেকার মতো একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনে যেতে। এমন একটি দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে তারা অবশ্য আজও সফল হতে পারেনি। এর আগে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেও সফল হয়নি তারা।

এখন অবশ্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই আছে এবং বলছে, এ ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা দাবি আদায় করবে। লক্ষ করার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তার মিত্র প্রভাবশালী দেশগুলোও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এর আগের দুটি নির্বাচনে তেমন আগ্রহ না দেখালেও তারা কিন্তু অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনটিতে অতুলনীয় আগ্রহ দেখাচ্ছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশের জন্য নিয়েছে ভিসা নীতি এবং তাতে বলা হচ্ছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া’য় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে।

এর বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে এলিট ফোর্স র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বলতে গেলে তখন থেকেই সরকারের ওপর আনুষ্ঠানিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাস তিনেক আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আবার জানানো হলো, তারা ভিসা নীতির প্রয়োগও শুরু করেছে। 
সরকারের এমন একটা প্রত্যাশা বোধ হয় ছিল যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে এটা প্রয়োগ করা হবে না। বাস্তবে সেটাই ঘটেছে দেখে এখন মনে করা হচ্ছে, ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনের ‘তথ্য-উপাত্ত’ কাজে লাগিয়েই হয়তো নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে দেশটি।

এ ক্ষেত্রে অনেকটা নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমকে এর আওতায় আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে এটা পরিষ্কার, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকায় সন্দিহান। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) একই ধারায় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বললে ভুল হবে না। তাদের একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী দল দীর্ঘদিন এখানে অবস্থান করে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফিরে গিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। তহবিলের সংকট হয়তো কিছুটা রয়েছে; তবে আসল সংকট দেখা দিয়েছে আস্থায়। বাংলাদেশে পর্যবেক্ষণ করার মতো কোনো নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে তারা মনে করতে পারছে না।

এরই মধ্যে ইইউ পার্লামেন্ট থেকে আমাদের মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্র বিষয়ে যে বিবৃতি এসেছে এবং এর সঙ্গে যেভাবে বাংলাদেশের জিএসপি-সুবিধা অব্যাহত রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা বাড়তি দুশ্চিন্তার বিষয়। ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের’ পরও আমাদের ওই বাজারে জিএসপি পাওয়ার কথা। এ অধ্যায় শেষে জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাব কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। ইইউ আমাদের মূল রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক পণ্যের প্রধান বাজার এবং সেখানে আমরা অবশ্যই বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে চাই না।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের নতুন জিএসপি-সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ারও প্রস্তাব রেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে এখন অন্যদের মতো ১৫ শতাংশের বেশি কর-শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। এটা কিছুটা কমিয়ে আনা গেলেও ওই বাজারে রপ্তানি আমরা বাড়াতে পারব।
সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো বড় আমদানিকারক দেশে আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়ার খবর মিলছে।

এটা আরও উদ্বেগজনক এ জন্য যে, আমরা এই মুহূর্তে ফরেন রিজার্ভের সংকটে আছি। এ অবস্থায় আমদানি কঠিন হয়ে মূল্যস্ফীতি সামলানোর জায়গাটাও খুব জটিল হয়ে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দিয়ে এটি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জও বটে। এ অবস্থায় আবার ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু হয়ে যাওয়ায় সেটা কেবল নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের মধ্যে নয়, এমনকি ব্যবসায়ী মহলে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেবে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একাংশ তো এরই মধ্যে অতি উৎসাহী হয়ে বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে সমর্থন ঘোষণা করে স্লোগান দিয়েছিল। তাঁদের অনেককে আবার সরকারের মদদপুষ্ট ‘অলিগার্ক’ বলে মনে করা হয়। এমন প্রচারও আছে, ক্ষমতাসীন দলের নামে কিছুসংখ্যক আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের একটি চক্র দেশ চালাচ্ছে এবং এটিই তীব্র হয়ে ওঠা রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক সংকটের মূল কারণ।

এ অবস্থায় এমনটিও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ইস্যুতে কিছু শীর্ষ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ‘ম্যাগনেটস্কি অ্যাক্টের’ আওতায় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে সে দেশে অর্থসম্পদ জব্দের ঘটনা কিন্তু রয়েছে। ভিসা নীতি প্রয়োগের পাশাপাশি নির্বাচন ও দুর্নীতিকে ইস্যু করে সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটলে তা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় বিব্রতকর হবে। বিএনপির একশ্রেণির নেতাও এর আওতায় পড়তে পারেন না, তা নয়।

তবে মূল কোপটি পড়বে সরকার ও তার মিত্রদের ওপর। ভিসা নীতি ও সম্পদ জব্দের ঝুঁকি ব্যাপক মানুষের ভাবনার বিষয় না হলেও এটি ক্ষমতাধরদের জন্য আতঙ্কের বটে। এমন পদক্ষেপ গৃহীত হলে সেটা কেবল যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ না থেকে তার মিত্র দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়ারও শঙ্কা রয়েছে। আর এ দেশগুলোই তো আমাদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ও উন্নয়ন-সহযোগী।

এদের কাছ থেকে দ্রুত সরে গিয়ে অন্য বলয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে স্বস্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে থাকা কিন্তু কঠিন। সত্যি বলতে, এ ধরনের প্রয়াস লক্ষ করেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মহল মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে ইস্যু করে সরকারের ওপর নজিরবিহীন চাপ সৃষ্টি করছে বলে কিছু বিদগ্ধজনের ধারণা। দুনিয়ার অনেক দেশে অতীত ও বর্তমানে পশ্চিমাদের ভূমিকা ভিন্ন হলেও বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকা আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাকার হয়ে তাদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে বৈকি। সরকারের ওপর পশ্চিমাদের চাপকে স্বভাবতই স্বাগত জানাচ্ছে তারা। সরকারের মধ্যেও কি কৌশলে চাপ মোকাবিলা কিংবা তা এড়ানোর চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না? এখন পরিস্থিতি যা-ই হোক, বিরোধীদের দাবি ও পশ্চিমা প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকার অনিচ্ছুক।

সরকার সম্ভবত মনে করছে, সেটা তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনে পরাজয়ের পথ প্রশস্ত করবে। এ অবস্থায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে বাইরে রেখে অন্যদের নিয়ে একটি ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের দিকেই তারা এগোচ্ছে। কিন্তু এর ভেতর দিয়ে দীর্ঘদিন সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া ঘিরে উদ্ভূত সংকটের অবসান ঘটবে না। সে ক্ষেত্রে মনে হয় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন অব্যাহত রাখবে পশ্চিমারা। বিরোধী দলও তাদের কাজ করে যাবে। এ অবস্থায় সংকটগ্রস্ত হয়ে ওঠা অর্থনীতিতেও পড়তে থাকবে এর নেতিবাচক প্রভাব।

হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত