Ajker Patrika

বালিশ মিষ্টিতে দিনবদল

শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪৮
বালিশ মিষ্টিতে দিনবদল

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা মেলে বাহারি সব মিষ্টি। নামে, স্বাদে, আকারে এরা অনন্য। এমনই একটি মিষ্টি গোপালগঞ্জের রণজিতের বালিশ মিষ্টি। ওজন ১ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত। দেখতে অনেকটা বালিশের মতো। এলাকায় এসব মিষ্টি বালিশ ও ময়রার নাম যোগ করে রণজিতের বালিশ মিষ্টি হিসেবে পরিচিত। আর এই মিষ্টির স্বাদ নিতে এবং তৈরি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন নানা বয়সের মানুষ।

দুপুর গড়ালেই রণজিতের মিষ্টির দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ দোকানে বসে খাচ্ছেন, আবার কেউ পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাশপুর ইউনিয়নের ভেড়ার বাজার গ্রামের মিষ্টির কারিগর রণজিৎ কুমার সরকার। যার মিষ্টি এখন গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলায় পরিচিতি পেয়েছে। জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ভেড়ার বাজার। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মধুমতি নদীর পাশে গড়ে ওঠা এ বাজার নদীবন্দর হিসেবেই বেশি পরিচিত।

এই বাজারেই ৮০ বছর আগে মিষ্টির দোকান নিয়ে বসতেন রণজিৎ সরকারের বাবা উপেন্দ্র নাথ সরকার (উপেন ময়রা)। উপেন ময়রা মারা গেলে তাঁর ছেলে রণজিৎ কুমার সরকার ১৬ বছর বয়সে দোকানের দায়িত্ব নেন। তখন থেকেই তিনি মিষ্টি তৈরি করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি ১ কেজি থেকে ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁর তৈরি বলিশ মিষ্টির কথা শুনে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিড় করেন ক্রেতারা। এমনকি এ মিষ্টি তৈরি দেখতেও ভিড় করেন অনেকে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাসমত কাজী বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে রণজিৎ এই গ্রামে মিষ্টি তৈরি করছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে মিষ্টি তৈরি করেন। তাঁর তৈরি মিষ্টি অনেক সুস্বাদু। তিনি আগে এত বড় মিষ্টি তৈরি করেননি। কিছুদিন হলো তিনি ১, ২, ৫ ও ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি তৈরি করছেন।

রণজিতের মিষ্টি কিনতে আসা জেলা শহরের বটতলা এলাকার মো. আনিসুর রহমান বলেন, রণজিৎ সরকারের মিষ্টির কথা শুনে দেখতে এসেছেন। সেই সঙ্গে পরিবারের জন্য তিন কেজির একটা মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছেন।

ত্রিনাথ মজুমদার বলেন, তাঁর ভাই কুয়েত থাকেন। কিছুদিন আগে তাঁর জন্য রণজিৎ সরকারের তৈরি বালিশ মিষ্টি পাঠিয়েছিলেন। তিনি আবার তাঁর বন্ধুদের জন্য মিষ্টি পাঠাতে বলেছেন। মিষ্টি খেতে আসা শিশু আইরিন ফাতেমা ও তাফসিয়া ইসলাম মুন বলে, এত বড় মিষ্টি সে আগে দেখেনি। এই মিষ্টি খেতে অনেক ভালো। তাদের খুব ভালো লেগেছে।

উলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য ফারজানা ইয়াছমিন বলেন, বাড়ির জন্য প্রায়ই এই দোকান থেকে মিষ্টি কেনেন। এত বড় মিষ্টি তিনি আগে দেখেননি। এ মিষ্টি অনেক সুস্বাদু। ছেলে-মেয়েরা এই মিষ্টি খুব পছন্দ করে।

কারিগর রণজিৎ সরকার বলেন, হঠাৎ করেই তাঁর তৈরি বালিশ মিষ্টির কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বাঁশ ও টিন দিয়ে দোকানঘরটি ঠিক করা হয়। এ মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করেন না। ১ কেজি থেকে ৯ কেজি ওজনের মিষ্টি ৩০০ টাকা কেজি আর ১০ কেজি বা বেশি ওজনের মিষ্টি ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।

জেলা ছাড়া ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, নড়াইল, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেকে এসে মিষ্টি কিনতে আসেন ক্রেতারা। এমনকি তাঁর তৈরি মিষ্টি বিদেশে থাকা স্বজনদের জন্য পাঠান অনেকে। তবে ১০ কেজি বা বেশি ওজনের মিষ্টি নিতে হলে আগে থেকে জানাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এর আগে তিনি এক মণ ওজনের মিষ্টিও বানিয়েছেন। তবে প্রয়োজনীয় কড়াই ও চুলা না থাকায় তিনি এখন আর এত বড় মিষ্টি বানাচ্ছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত