Ajker Patrika

দুই গার্ডারের পর ঠিকাদার উধাও

সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া ও উজ্জ্বল কুমার সরকার, হোসেনপুর
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৩৫
দুই গার্ডারের পর ঠিকাদার উধাও

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলাকে সংযোগ করেছে ‘কাওনা সেতু’। সেতুটি নতুন করে নির্মাণ শুরু হয় আট মাস আগে। কিন্তু দুই পাশে দুটি গার্ডার নির্মাণের পর গত আট মাস ধরে উধাও রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ আটকে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, কোটি টাকার বিল বকেয়া ছিল। তাই টাকার অভাবে কাজ বন্ধ ছিল। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, কাজ বন্ধ থাকার কারণ জানাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের ১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার এইচ এল-৪৬৪, পুনাম পেলস, এইচটিবিএল সার্চের (জেবেকা) সঙ্গে চুক্তি হলেও সাব-ঠিকাদার হিসেবে কিশোরগঞ্জের এস আলম চুক্তিবদ্ধ হন। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৩০ মে। প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দে সেতুটির নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু দুই পাশে দুটি গার্ডার নির্মাণের পর উধাও হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত আট মাস ধরে কাজ ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও হওয়ায়, নদের ওপর অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে সাময়িকভাবে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটি পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙালিয়া ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা কাওনায় নরসুন্দা নদের ওপর অবস্থিত। সেতুর এক পাড়ে পাকুন্দিয়া অন্য পাড়ে হোসেনপুর উপজেলা। নদের দুই পাড়ে দুটি গার্ডার নির্মাণ করা আছে। নদের দক্ষিণ পাশে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই বাঁধের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশাসহ যান চলাচল করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর উপজেলা ছাড়াও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক মানুষ প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। তাই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি অনেক পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি।

অটোরিকশাচালক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই দুর্ভোগ নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, তার ওপর দিয়ে অটোরিকশা আসা-যাওয়া করার সময় প্রায়ই উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই যাত্রীদের এক পাড়ে নামিয়ে ওই পাড়ে যাওয়ার পর ফের ওঠানো হচ্ছে।

বিল্লাল হোসেন পাপ্পু নামের এক পথচারী বলেন, প্রায়ই এ সড়ক দিয়ে তাঁকে আসা-যাওয়া করতে হয়। এই সেতুর নির্মাণকাজ আটকে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে রাস্তায় বালু আর বর্ষা মৌসুমে কাদা হয়ে থাকে। এতে অনেক কষ্টে যান চলাচল করলেও প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।

আজহারুল হক তরুণ নামের একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘হোসেনপুর উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করি। প্রতিদিন এই সড়কে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এই সেতুর নির্মাণকাজ আটকে থাকায় পারাপার করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলমের মালিক মো. শফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোটি টাকার বিল আটকা রয়েছে। টাকার অভাবেই কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এক কোটি ১০ লাখ টাকার একটি বিল সম্প্রতি পেয়েছি। শিগগিরই কাজ শুরু করব।’

জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল বাকি বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি জানতাম না। এত দিন কাজ বন্ধ থাকার কারণ জানাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে ১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় চুক্তি বাতিল করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত