মোনায়েম সরকার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা, আবার কেউ যেন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে, সেদিকে নজর রেখে ভারসাম্যমূলক শব্দ চয়ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কি না, বলা মুশকিল। তিনি মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসা একজন নেতা। তিনি সারা জীবন লড়েছেন বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে। পরাধীন বাঙালি জাতিকে তিনিই দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। শুধু স্বপ্নই দেখাননি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বিশ্বসভায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন অসংখ্য ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু যে ভাষণ দিয়ে তিনি নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। মাত্র আঠারো মিনিটের জ্বালাময়ী ভাষণ শুধু সেদিনের মুক্তিপাগল মানুষকেই মুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করেনি, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহসহ সবাই স্বীকার করেছেন যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল তাঁদের কাছে গ্রিন সিগন্যাল। ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একাত্তরের প্রেরণা ছিল না, পরবর্তী সময়ে নতুন প্রজন্মকেও দারুণভাবে নাড়া দেয়।
এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। প্রয়াত জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলের ছেলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিল যে সে তার বাবাকে (মইনউদ্দিন খান বাদল) বলেছিল, ‘বাবা, তোমরা কি এই লোকটার বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন দল জাসদ করেছিলে? আই হেট টু টক টু ইউ ফাদার’—এ কথার সত্যতা জানার জন্য আমি বাদলের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঘটনাটা সত্য। প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের লেখায়ও এ ঘটনাটি পড়েছিলাম।
আরেকটি ঘটনাও ঠিক একই রকমের। আমাদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে আনান নামের এক কিশোর মাঝে মাঝে আসে। সে ভালোবেসে আমাকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকে। একদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে সে তার মাকে বলে, ‘মা, জানো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমার রক্ত গরম হয়ে যায়; আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।’ যে ভাষণের সংগ্রামী বাণী নাবালক শিশুকেও আলোড়িত করে, সেই ভাষণ পরাধীন মানুষকে শিকল ভাঙার শক্তি জোগাবে—এটাই তো স্বাভাবিক।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন বলেই তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। কয়দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কথা মনে ছিল বলে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দূর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যাঁরা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি যে নির্দেশ দেওয়ার বৈধ অধিকার পেয়েছেন, হয়তো সেটা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না।’
বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’
রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখ লাখ মানুষ তখন কিছুটা যেন চঞ্চল। কারণ সবার আগ্রহ তো বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার। দলের মধ্যেও তরুণদের চাপ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা যেন বঙ্গবন্ধু ওই সমাবেশ থেকেই দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কী পরিণতি হতে পারে। সেনাবাহিনী তৈরি ছিল তোপ দাগার জন্য। বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন যে তিনি যদি মানুষের মনের ভাষা প্রকাশ না করেন তাহলে তাঁরা হতাশ হবেন। তিনি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। শাসকগোষ্ঠীর চোখে ধুলো দিয়ে জনতার উদ্দীপনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভাষণের একেবারে শেষে এসে শোনালেন সেই মহাকাব্যিক বাণী ‘যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে-শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ উচ্ছ্বসিত জনতা পেয়ে গেল স্বাধীনতার ঘোষণা।
জ্যাকব এফ ফিল্ড ২০১৩ সালে গ্রেট ব্রিটেন থেকে একটি বই প্রকাশ করেন ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’ নামে। এ বইটির উপশিরোনাম হলো ‘দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’। এই বইয়ে জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের ৪১টি ভাষণ সংকলিত করে ইংরেজিতে প্রকাশ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ অব্দ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বনেতাদের ঐতিহাসিক ভাষণগুলো এতে স্থান পেয়েছে। বইটির নামকরণ করা হয়েছে ১৯৪০ সালে প্রদত্ত উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত ভাষণের শিরোনাম অবলম্বনে। এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি প্রায় ৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো ভাষণ এতগুলো ভাষায় অনূদিত হয়েছে কি না, এই মুহূর্তে তা আমার জানা নেই। পৃথিবীর এতগুলো ভাষায় যে ভাষণ অনূদিত হতে পারে, সেই ভাষণের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়।
৭ মার্চের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রত্যাশার কথা যুক্তি ও আবেগ দিয়ে তুলে ধরেছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ভাষণে ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে এমন প্রাঞ্জল ও আবেগময় ভাষায় পৃথিবীর আর কোনো নেতা তুলে ধরতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই। আমরা আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ বক্তৃতা বলি আর মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিমের’ কথাই বলি, পৃথিবীর কোনো নেতার ভাষণই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো এত আলোড়ন আর স্বাধীনতার স্বপ্ন তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এমন ইতিহাসসমৃদ্ধ কাব্যিক ভাষণ রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দেওয়াই সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে আর কোনো বাঙালির ভাষণ বিশ্ববাসীর এত মনোযোগ আকর্ষণ করেনি।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা, আবার কেউ যেন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে, সেদিকে নজর রেখে ভারসাম্যমূলক শব্দ চয়ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কি না, বলা মুশকিল। তিনি মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসা একজন নেতা। তিনি সারা জীবন লড়েছেন বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে। পরাধীন বাঙালি জাতিকে তিনিই দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। শুধু স্বপ্নই দেখাননি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বিশ্বসভায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন অসংখ্য ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু যে ভাষণ দিয়ে তিনি নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। মাত্র আঠারো মিনিটের জ্বালাময়ী ভাষণ শুধু সেদিনের মুক্তিপাগল মানুষকেই মুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করেনি, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহসহ সবাই স্বীকার করেছেন যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল তাঁদের কাছে গ্রিন সিগন্যাল। ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একাত্তরের প্রেরণা ছিল না, পরবর্তী সময়ে নতুন প্রজন্মকেও দারুণভাবে নাড়া দেয়।
এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। প্রয়াত জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলের ছেলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিল যে সে তার বাবাকে (মইনউদ্দিন খান বাদল) বলেছিল, ‘বাবা, তোমরা কি এই লোকটার বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন দল জাসদ করেছিলে? আই হেট টু টক টু ইউ ফাদার’—এ কথার সত্যতা জানার জন্য আমি বাদলের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঘটনাটা সত্য। প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের লেখায়ও এ ঘটনাটি পড়েছিলাম।
আরেকটি ঘটনাও ঠিক একই রকমের। আমাদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে আনান নামের এক কিশোর মাঝে মাঝে আসে। সে ভালোবেসে আমাকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকে। একদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে সে তার মাকে বলে, ‘মা, জানো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমার রক্ত গরম হয়ে যায়; আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।’ যে ভাষণের সংগ্রামী বাণী নাবালক শিশুকেও আলোড়িত করে, সেই ভাষণ পরাধীন মানুষকে শিকল ভাঙার শক্তি জোগাবে—এটাই তো স্বাভাবিক।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন বলেই তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। কয়দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কথা মনে ছিল বলে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দূর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যাঁরা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি যে নির্দেশ দেওয়ার বৈধ অধিকার পেয়েছেন, হয়তো সেটা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না।’
বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’
রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখ লাখ মানুষ তখন কিছুটা যেন চঞ্চল। কারণ সবার আগ্রহ তো বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার। দলের মধ্যেও তরুণদের চাপ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা যেন বঙ্গবন্ধু ওই সমাবেশ থেকেই দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কী পরিণতি হতে পারে। সেনাবাহিনী তৈরি ছিল তোপ দাগার জন্য। বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন যে তিনি যদি মানুষের মনের ভাষা প্রকাশ না করেন তাহলে তাঁরা হতাশ হবেন। তিনি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। শাসকগোষ্ঠীর চোখে ধুলো দিয়ে জনতার উদ্দীপনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভাষণের একেবারে শেষে এসে শোনালেন সেই মহাকাব্যিক বাণী ‘যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে-শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ উচ্ছ্বসিত জনতা পেয়ে গেল স্বাধীনতার ঘোষণা।
জ্যাকব এফ ফিল্ড ২০১৩ সালে গ্রেট ব্রিটেন থেকে একটি বই প্রকাশ করেন ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’ নামে। এ বইটির উপশিরোনাম হলো ‘দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’। এই বইয়ে জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের ৪১টি ভাষণ সংকলিত করে ইংরেজিতে প্রকাশ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ অব্দ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বনেতাদের ঐতিহাসিক ভাষণগুলো এতে স্থান পেয়েছে। বইটির নামকরণ করা হয়েছে ১৯৪০ সালে প্রদত্ত উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত ভাষণের শিরোনাম অবলম্বনে। এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি প্রায় ৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো ভাষণ এতগুলো ভাষায় অনূদিত হয়েছে কি না, এই মুহূর্তে তা আমার জানা নেই। পৃথিবীর এতগুলো ভাষায় যে ভাষণ অনূদিত হতে পারে, সেই ভাষণের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়।
৭ মার্চের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রত্যাশার কথা যুক্তি ও আবেগ দিয়ে তুলে ধরেছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ভাষণে ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে এমন প্রাঞ্জল ও আবেগময় ভাষায় পৃথিবীর আর কোনো নেতা তুলে ধরতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই। আমরা আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ বক্তৃতা বলি আর মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিমের’ কথাই বলি, পৃথিবীর কোনো নেতার ভাষণই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো এত আলোড়ন আর স্বাধীনতার স্বপ্ন তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এমন ইতিহাসসমৃদ্ধ কাব্যিক ভাষণ রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দেওয়াই সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে আর কোনো বাঙালির ভাষণ বিশ্ববাসীর এত মনোযোগ আকর্ষণ করেনি।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
মোনায়েম সরকার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা, আবার কেউ যেন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে, সেদিকে নজর রেখে ভারসাম্যমূলক শব্দ চয়ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কি না, বলা মুশকিল। তিনি মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসা একজন নেতা। তিনি সারা জীবন লড়েছেন বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে। পরাধীন বাঙালি জাতিকে তিনিই দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। শুধু স্বপ্নই দেখাননি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বিশ্বসভায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন অসংখ্য ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু যে ভাষণ দিয়ে তিনি নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। মাত্র আঠারো মিনিটের জ্বালাময়ী ভাষণ শুধু সেদিনের মুক্তিপাগল মানুষকেই মুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করেনি, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহসহ সবাই স্বীকার করেছেন যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল তাঁদের কাছে গ্রিন সিগন্যাল। ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একাত্তরের প্রেরণা ছিল না, পরবর্তী সময়ে নতুন প্রজন্মকেও দারুণভাবে নাড়া দেয়।
এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। প্রয়াত জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলের ছেলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিল যে সে তার বাবাকে (মইনউদ্দিন খান বাদল) বলেছিল, ‘বাবা, তোমরা কি এই লোকটার বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন দল জাসদ করেছিলে? আই হেট টু টক টু ইউ ফাদার’—এ কথার সত্যতা জানার জন্য আমি বাদলের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঘটনাটা সত্য। প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের লেখায়ও এ ঘটনাটি পড়েছিলাম।
আরেকটি ঘটনাও ঠিক একই রকমের। আমাদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে আনান নামের এক কিশোর মাঝে মাঝে আসে। সে ভালোবেসে আমাকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকে। একদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে সে তার মাকে বলে, ‘মা, জানো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমার রক্ত গরম হয়ে যায়; আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।’ যে ভাষণের সংগ্রামী বাণী নাবালক শিশুকেও আলোড়িত করে, সেই ভাষণ পরাধীন মানুষকে শিকল ভাঙার শক্তি জোগাবে—এটাই তো স্বাভাবিক।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন বলেই তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। কয়দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কথা মনে ছিল বলে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দূর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যাঁরা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি যে নির্দেশ দেওয়ার বৈধ অধিকার পেয়েছেন, হয়তো সেটা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না।’
বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’
রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখ লাখ মানুষ তখন কিছুটা যেন চঞ্চল। কারণ সবার আগ্রহ তো বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার। দলের মধ্যেও তরুণদের চাপ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা যেন বঙ্গবন্ধু ওই সমাবেশ থেকেই দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কী পরিণতি হতে পারে। সেনাবাহিনী তৈরি ছিল তোপ দাগার জন্য। বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন যে তিনি যদি মানুষের মনের ভাষা প্রকাশ না করেন তাহলে তাঁরা হতাশ হবেন। তিনি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। শাসকগোষ্ঠীর চোখে ধুলো দিয়ে জনতার উদ্দীপনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভাষণের একেবারে শেষে এসে শোনালেন সেই মহাকাব্যিক বাণী ‘যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে-শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ উচ্ছ্বসিত জনতা পেয়ে গেল স্বাধীনতার ঘোষণা।
জ্যাকব এফ ফিল্ড ২০১৩ সালে গ্রেট ব্রিটেন থেকে একটি বই প্রকাশ করেন ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’ নামে। এ বইটির উপশিরোনাম হলো ‘দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’। এই বইয়ে জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের ৪১টি ভাষণ সংকলিত করে ইংরেজিতে প্রকাশ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ অব্দ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বনেতাদের ঐতিহাসিক ভাষণগুলো এতে স্থান পেয়েছে। বইটির নামকরণ করা হয়েছে ১৯৪০ সালে প্রদত্ত উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত ভাষণের শিরোনাম অবলম্বনে। এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি প্রায় ৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো ভাষণ এতগুলো ভাষায় অনূদিত হয়েছে কি না, এই মুহূর্তে তা আমার জানা নেই। পৃথিবীর এতগুলো ভাষায় যে ভাষণ অনূদিত হতে পারে, সেই ভাষণের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়।
৭ মার্চের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রত্যাশার কথা যুক্তি ও আবেগ দিয়ে তুলে ধরেছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ভাষণে ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে এমন প্রাঞ্জল ও আবেগময় ভাষায় পৃথিবীর আর কোনো নেতা তুলে ধরতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই। আমরা আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ বক্তৃতা বলি আর মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিমের’ কথাই বলি, পৃথিবীর কোনো নেতার ভাষণই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো এত আলোড়ন আর স্বাধীনতার স্বপ্ন তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এমন ইতিহাসসমৃদ্ধ কাব্যিক ভাষণ রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দেওয়াই সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে আর কোনো বাঙালির ভাষণ বিশ্ববাসীর এত মনোযোগ আকর্ষণ করেনি।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা, আবার কেউ যেন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে, সেদিকে নজর রেখে ভারসাম্যমূলক শব্দ চয়ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কি না, বলা মুশকিল। তিনি মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসা একজন নেতা। তিনি সারা জীবন লড়েছেন বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে। পরাধীন বাঙালি জাতিকে তিনিই দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। শুধু স্বপ্নই দেখাননি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বিশ্বসভায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন অসংখ্য ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু যে ভাষণ দিয়ে তিনি নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। মাত্র আঠারো মিনিটের জ্বালাময়ী ভাষণ শুধু সেদিনের মুক্তিপাগল মানুষকেই মুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করেনি, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহসহ সবাই স্বীকার করেছেন যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল তাঁদের কাছে গ্রিন সিগন্যাল। ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একাত্তরের প্রেরণা ছিল না, পরবর্তী সময়ে নতুন প্রজন্মকেও দারুণভাবে নাড়া দেয়।
এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। প্রয়াত জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলের ছেলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিল যে সে তার বাবাকে (মইনউদ্দিন খান বাদল) বলেছিল, ‘বাবা, তোমরা কি এই লোকটার বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন দল জাসদ করেছিলে? আই হেট টু টক টু ইউ ফাদার’—এ কথার সত্যতা জানার জন্য আমি বাদলের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঘটনাটা সত্য। প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের লেখায়ও এ ঘটনাটি পড়েছিলাম।
আরেকটি ঘটনাও ঠিক একই রকমের। আমাদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে আনান নামের এক কিশোর মাঝে মাঝে আসে। সে ভালোবেসে আমাকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকে। একদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে সে তার মাকে বলে, ‘মা, জানো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমার রক্ত গরম হয়ে যায়; আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।’ যে ভাষণের সংগ্রামী বাণী নাবালক শিশুকেও আলোড়িত করে, সেই ভাষণ পরাধীন মানুষকে শিকল ভাঙার শক্তি জোগাবে—এটাই তো স্বাভাবিক।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন বলেই তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। কয়দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কথা মনে ছিল বলে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দূর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যাঁরা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি যে নির্দেশ দেওয়ার বৈধ অধিকার পেয়েছেন, হয়তো সেটা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না।’
বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’
রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখ লাখ মানুষ তখন কিছুটা যেন চঞ্চল। কারণ সবার আগ্রহ তো বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার। দলের মধ্যেও তরুণদের চাপ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা যেন বঙ্গবন্ধু ওই সমাবেশ থেকেই দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কী পরিণতি হতে পারে। সেনাবাহিনী তৈরি ছিল তোপ দাগার জন্য। বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন যে তিনি যদি মানুষের মনের ভাষা প্রকাশ না করেন তাহলে তাঁরা হতাশ হবেন। তিনি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। শাসকগোষ্ঠীর চোখে ধুলো দিয়ে জনতার উদ্দীপনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভাষণের একেবারে শেষে এসে শোনালেন সেই মহাকাব্যিক বাণী ‘যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে-শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ উচ্ছ্বসিত জনতা পেয়ে গেল স্বাধীনতার ঘোষণা।
জ্যাকব এফ ফিল্ড ২০১৩ সালে গ্রেট ব্রিটেন থেকে একটি বই প্রকাশ করেন ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’ নামে। এ বইটির উপশিরোনাম হলো ‘দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’। এই বইয়ে জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের ৪১টি ভাষণ সংকলিত করে ইংরেজিতে প্রকাশ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ অব্দ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বনেতাদের ঐতিহাসিক ভাষণগুলো এতে স্থান পেয়েছে। বইটির নামকরণ করা হয়েছে ১৯৪০ সালে প্রদত্ত উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত ভাষণের শিরোনাম অবলম্বনে। এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি প্রায় ৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো ভাষণ এতগুলো ভাষায় অনূদিত হয়েছে কি না, এই মুহূর্তে তা আমার জানা নেই। পৃথিবীর এতগুলো ভাষায় যে ভাষণ অনূদিত হতে পারে, সেই ভাষণের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়।
৭ মার্চের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রত্যাশার কথা যুক্তি ও আবেগ দিয়ে তুলে ধরেছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ভাষণে ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে এমন প্রাঞ্জল ও আবেগময় ভাষায় পৃথিবীর আর কোনো নেতা তুলে ধরতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই। আমরা আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ বক্তৃতা বলি আর মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিমের’ কথাই বলি, পৃথিবীর কোনো নেতার ভাষণই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো এত আলোড়ন আর স্বাধীনতার স্বপ্ন তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এমন ইতিহাসসমৃদ্ধ কাব্যিক ভাষণ রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দেওয়াই সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে আর কোনো বাঙালির ভাষণ বিশ্ববাসীর এত মনোযোগ আকর্ষণ করেনি।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা,
০৭ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা,
০৭ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা,
০৭ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভাষণ যেমন ছিল উদ্দীপনামূলক, তেমনি ছিল দিকনির্দেশনামূলকও। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে ওই ভাষণ দিতে হয়েছিল। ভাষণে একদিকে ছিল জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার মন্ত্রণা,
০৭ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫