Ajker Patrika

মানুষ কি রাজপথে শক্তির মহড়া দেখতে চায়

মোনায়েম সরকার
মানুষ কি রাজপথে শক্তির মহড়া দেখতে চায়

বাজারে খবরের চেয়ে গুজব বেশি। রাজনৈতিক নেতাদের মুখে সমঝোতা নয়, সংঘাতের সুর। গণমাধ্যমে যেসব খবর ছাপা হয়, তাতে মানুষের আস্থা কম। মানুষ নানা কানকথা শুনছে আর উদ্বিগ্ন হয়ে একজন আরেকজনের কাছে জানতে চাইছে, কী হতে চলেছে দেশে? নির্বাচন কি ঠিক সময়ে হবে? নাকি রাজপথেই ফয়সালা? বিএনপির সভা-সমাবেশে উপস্থিতি বাড়ছে, কিন্তু সেটা এমন নয়, যা দেখে সরকারের ভীত হওয়ার অবস্থা হয়েছে।

বিএনপি হুমকি দিচ্ছে সরকার পতনের। সরকারও পাল্টা হুমকি দিয়ে মাঠ দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে। ১৮ অক্টোবর বিএনপির একটি ডেডলাইন ছিল। ওই দিন ঢাকায় একটি বড় শোডাউন করে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে দলটি। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পূজার ছুটি পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকারকে। বলা হয়েছে, পতন না হওয়া পর্যন্ত থেমে থাকবে না কর্মসূচি। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাল্টা বলা হয়েছে, বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেওয়া হবে না। অবরোধের ডাক দিলে তাদের পাল্টা অবরোধ করা হবে। বিএনপির দাবি মেনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না, শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী—এটাই বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের শেষ বার্তা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। এই সময়ে দেশ নির্বাচনী আবহে মেতে ওঠার কথা থাকলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটের প্রস্তুতি নিলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল ও দেশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও সেদিকে নেতাদের আগ্রহ কম। সংলাপের বিষয়টি একেবারে নাকচ করা না হলেও যেভাবে কথা বলা হচ্ছে, তাতে মনে হয় ওটায় কাজ হবে না।

বিএনপির নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানার ঘোষণা এলেই কেবল সংলাপে বসবেন তাঁরা। আর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো সংলাপ হবে না। এই অবস্থায় রাজপথে শক্তির মহড়া দেখাতে ফের মুখোমুখি দুই দল। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি বলছে, দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পরই তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে। বিএনপি বলছে, এখন থেকে তাদের আন্দোলন হবে মূলত রাজধানী ঢাকামুখী। তবে বিএনপির এই মরণকামড়ের ভয়ে শঙ্কিত নয় ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপিকে চাপে রাখতে কৌশলী আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে রাজপথে রয়েছে। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও প্রস্তুত আছে বলা হচ্ছে। বিএনপি অবরোধ বা অন্য কোনো ধরনের সহিংস কর্মসূচির ঘোষণা দিলে প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্ষমতাসীনেরা।

সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে বিএনপি নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো আলটিমেটাম দিয়ে লাভ হবে না। সংবিধান থেকে একচুলও সরবে না সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের চিন্তা করছে বিএনপি। তাদের এই স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নাশকতার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বিএনপি-জামায়াতসহ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলো বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে। অতীতের মতো বড় ধরনের সহিংসতা বা তাণ্ডব চালাতে পারে। নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না করতে পারে, সে জন্য সারা দেশে নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। পূজার সময়টা নিয়ে বিএনপিও দুর্ভাবনায় নেই, তা নয়। কোনো অঘটন ঘটিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতলব যাতে কোনো পক্ষ হাসিল করতে না পারে, সেদিকে বিএনপির নেতারা সতর্ক আছেন বলা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাজপথে থাকতে হবে। তফসিল ঘোষণা করা হলে দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হবে এবং বিএনপির আন্দোলন মাঠে মারা যাবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী ১০০ দিন দেশটাকে পাহারা দিতে হবে। বিএনপি ভেবেছে ঢাকা শহরে কয়েকটা মানববন্ধন করে, নয়াপল্টনে ২০-৩০ হাজার মানুষ জড়ো করে কিংবা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে, আগুন ধরিয়ে এই সরকারকে হটিয়ে দেবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগের এই নেতা মনে করেন। ২০১৩-১৪ সালেও অনেক চেষ্টা করেছিল। বহু গাড়ি ও মানুষ পুড়িয়েছিল; তবু শেখ হাসিনাকে হটাতে পারেনি। এবারও পারবে না।

অন্যদিকে, ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বুধবারের সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে শেষবারের মতো আলটিমেটাম দিয়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবারের সমাবেশে সারা দেশ থেকে লোক আনা হয়নি বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঢাকার বাইরে থেকে যে বিএনপির বহু কর্মী ঢাকায় এসেছেন, তা বিভিন্নভাবেই জানা যাচ্ছে। তবে বিএনপিও যে সরকারের ‘হামলা-মামলা’র বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে না তা নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, পূজার পর চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই সরকার পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করে এমন আবহ সৃষ্টি করবে, যাতে মাঠের নেতারা ভীত হয়ে পড়েন। এ জন্যই আন্দোলনের কর্মসূচিও তারা রয়েসয়ে দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঠেকানোই তাদের টার্গেট। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী পদযাত্রা, ঘেরাও, অবস্থান ও অবরোধ, এমনকি পরিস্থিতি বুঝে হরতালের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিও দলটি নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

বিএনপির নেতাদের উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য ৭ থেকে ১০ দিনের একটি লাগাতার কর্মসূচি দেবে দলটি। নেতারা মনে করছেন, ‘এবার হয় এসপার না হয় ওসপার হবে।’

তাঁদের এই আস্থার কারণ আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অতি আগ্রহ। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভূমিকায় বিএনপি যে যারপরনাই সন্তুষ্ট, সেটা দলের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যেই বলেছেন। একজন তো তাঁকে ‘অবতার’ বলেও উল্লেখ করেছেন। আমেরিকা যে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি খুব সহানুভূতিসম্পন্ন নয়, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার বলেছেন। বিএনপি এই বিষয়টিই ‘ক্যাশ’ করতে চাইছে। তবে বিএনপির সামনে এখনো বড় অন্তরায় হয়ে আছে প্রতিবেশী ভারতের মনোভাব। ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি আর দৃঢ়ভাবে নেই বলে কোনো কোনো মহল প্রচার করলেও এই ধারণার পক্ষে শক্ত কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক ও ভারতবিরোধী সরকার ক্ষমতায় আসুক, সেটা ভারত যে চায় না, তা বোঝার জন্য খুব তথ্য-তত্ত্বের সন্ধান করা নিষ্প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত যে সুবিধা পেয়েছে, তা তারা ভুলবে বলে মনে হয় না। আবার ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতকে হোস্টাইল করে আমেরিকা একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, এমনটাও অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকই মনে করেন না।

আমেরিকা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া আর কিছু চায় বলে এখনো মনে হয় না। আর আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাই বলছে। ফলে নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আমেরিকার বড় দ্বন্দ্ব না হওয়ারই কথা। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে আমেরিকা খুব কনসার্ন বলেও মনে হয় না। সব মিলিয়ে এটা মনে হয় না যে নির্বাচন ছাড়াই মাঠের শক্তি পরীক্ষায় রাজনৈতিক সংকটের ফয়সালা হয়ে যাবে।

তবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ‘নির্বাচন আদৌ হবে কি না, এখনই বলতে পারব না’ বলে মন্তব্য করে অনেকের মনেই সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তিনি কাজটি ভালো করেননি। দেশে নির্বাচন না হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।

বিএনপির দেওয়া ডেডলাইন নিয়ে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। বিএনপি এর আগে বহু সময় বেঁধে দিয়েছে। সরকারের পতন না হলে আর ঘরে ফিরে যাবে না বলেছে। সরকারের পতন হয়নি। তাই বলে কি বিএনপির কেউ ঘরের বাইরে আছেন? আমাদের দেশের রাজনীতি হয়ে পড়েছে বুলিসর্বস্ব। তাই কারও মুখের কথায় বিশ্বাস রেখে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থা বাস্তবে নেই। ২৮ অক্টোবর কিংবা ৩ নভেম্বর আসবে এবং যাবে। এই দুই দিনে রাজনীতির পটপরিবর্তনের মতো কিছু ঘটবে বলে মনে করার কারণ এখনই নেই। এর আগে ১০ ডিসেম্বর এসেছে, চলেও গেছে, ১৮ অক্টোবর নিয়েও তো কত কথা ছিল। কিছু কি হলো?

নির্বাচন এলে আমাদের দেশে এমনিতেই অনেক কথা হয়। বিষয়টি যেহেতু ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই বেশি কথা হওয়াই তো স্বাভাবিক। ক্ষমতা ছাড়া আমাদের রাজনীতিকেরা আর কিছু কি চান?

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক;  মহাসচিব, বিএফডিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত