Ajker Patrika

নড়বড়ে সংগঠন নিয়ে আন্দোলনের হাঁকডাক

রেজা করিম, ঢাকা
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৩৫
নড়বড়ে সংগঠন নিয়ে আন্দোলনের হাঁকডাক

দেড় দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর না করেই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার কথা বলছে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় দলটির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। গঠিত হয় কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা বলা থাকলেও গত ছয় বছরে আর কোনো কাউন্সিল হয়নি। দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম ১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচটি পদসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক পদ শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর।

জানা গেছে, ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৬টিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এসব আহ্বায়ক কমিটির বেশির ভাগই এখনো সম্মেলন করতে পারেনি। অন্য ২৬টি জেলা কমিটির অধিকাংশই চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে।

দলের দুই সহযোগী সংগঠনের মধ্যে শ্রমিক দলের দুই বছর মেয়াদি সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়েছিল আট বছর আগে, ২০১৪ সালে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর গঠিত ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির মেয়াদও ফুরিয়েছে গত বছর।

একটি বাদে দলের নয় অঙ্গসংগঠনের কোনোটিরই নিয়মিত কেন্দ্রীয় কমিটি নেই। যুবদলের দুই বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছে পাঁচ বছর আগে, ২০১৭ সালে। স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের প্রতিটির দুই বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছে ছয় বছর আগে, ২০১৬ সালে। মুক্তিযোদ্ধা দলের দুই বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছে আট বছর আগে, ২০১৪ সালে। মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল ও তাঁতি দলের প্রতিটির দুই বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছিল ২০১৯ সালে।

আংশিক হলেও নিয়মিত কমিটি দিয়ে চলছে কৃষক দল। আর সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস চলছে ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। কবে জাসাসের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে, কেউ জানেন না।

মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটির বেশির ভাগ নেতাই খুব একটা সক্রিয় নন বলে বিএনপির মাঝারি সারির নেতারা জানান।

সংগঠনগুলোতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের অপেক্ষাও দীর্ঘ হচ্ছে। দীর্ঘ দিন থেকে দলের হাইকমান্ডের কাছে এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসলেও প্রতিকার পাননি তারা। সংগঠন নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের হতাশার প্রভাব পড়ছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে।

নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকারকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি, খুলনার প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বহিষ্কার, বরিশাল নগরীর নতুন কমিটি থেকে মজিবুর রহমান সরোয়ারকে বাদ দেওয়া, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে দল থেকে অব্যাহতি, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দফায় দফায় কারণ দর্শানো এবং সাবেক মন্ত্রী এহসানুল হক মিলনসহ পরীক্ষিত অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে অব্যাহতি, পদাবনতি, বহিষ্কার এবং চাপে রাখার কৌশল এরই মধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ওদিকে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্দী এবং পরবর্তীতে সাজা হওয়ার পর থেকেই দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কার্যত রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। অসুস্থতাজনিত কারণে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে কারামুক্তির পর নিজ বাসায় অবস্থান করলেও প্রকাশ্য রাজনীতিতে তিনি নেই। বিএনপির নিয়ন্ত্রণ লন্ডনে বসবাসরত তাঁর ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে।

রাজনীতির মাঠে যারা আছেন তাঁদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর কথা বলছেন নিয়মিত। এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলছেন, ‘রমজানের আগে বা পরে এ কথা বলতে পারব না, আন্দোলন যেকোনো সময় আমরা শুরু করব।’

দলের মাঝারি সারির নেতারা বলছেন, নিয়মিত কিছু কর্মসূচি পালিত হলেও তা মূলত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতেই সীমিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দেশব্যাপী কিছু কর্মসূচি পালিত হলেও তাতে তেমন জনসম্পৃক্ততা ছিল না। তুলনামূলকভাবে তরুণেরাই অংশ নিচ্ছেন এগুলোয়। মূলত সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতার জন্য দলের কার্যক্রম বর্তমানে ইফতার, সভা-সেমিনার ও বিবৃতির মধ্যেই সীমিত হয়ে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের রেকর্ড বিএনপির নেই। নব্বইয়ে যা হয়েছে, সেটা তাদের একক চেষ্টা ফল ছিল না। আবার এখনকার বিএনপির অবস্থাও আগের মতো নেই। এই অবস্থায় তারা কতটুকু কি করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

সরকার পতন আন্দোলনের পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আন্দোলন নিয়েও আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই।’ কবে নাগাদ সেরকম কিছু হবে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

তবে সংগঠন মেরামতের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘যে সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয়নি, সেগুলোকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যে কমিটিগুলো আংশিক আছে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়েছে।’ সাংগঠনিক দুর্দশা নিয়ে কীভাবে বিএনপি আন্দোলনে যাবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংগঠন-সংগ্রাম পাশাপাশি চলে। কোনো কালেই সংগঠন শতভাগ ঠিক করে আন্দোলন হয় নাই। আবার আন্দোলন চলাকালে সংগঠন হয় নাই, এমনটাও না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত