চিররঞ্জন সরকার

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব্যাকুল হয়। প্রাত্যহিকতার কারাগার থেকে একটু বাইরে বের হওয়ার ফুসরত মেলে।
ঈদের ছুটি আমাদের জীবনে সেই সুযোগ করে দেয়। ঈদে ঘরে ফেরার ব্যাপারটি সামনে ফটিকের কথা মনে পড়ে। সেই ফটিক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ‘বালকদিগের সর্দার’ ফটিক চক্রবর্তী। যে ফটিক বিলাপরত মায়ের কান্নার জবাবে বলেছিল, ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক মায়ের কাছে যেতে চাইলে মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে বলেছিলেন, পূজায় স্কুল ছুটি হলে বাড়ি যাওয়া যাবে।
আর আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন কখন ঈদের ছুটি শুরু হবে। আমাদের দেশে দুই ঈদের ছুটিতে কোটি কোটি ‘ফটিক’ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন, তাঁরা তো মায়ের কাছেই ফেরেন। ফেরেন বোনের কাছে, ভাইয়ের কাছে, বন্ধুর কাছে। স্বামী ফিরে যান বউয়ের কাছে। বাবা যান আদরের সন্তানের কাছে। মাটির কাছেও ফেরেন।
এই ফেরাটা আমাদের অভ্যাস। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে কাজ করে। এর জন্য যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পোহাতে হয় বেহাল সড়কে পথে পথে চরম ভোগান্তিও। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বাস-ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটে। এতসব দুর্ভোগ উপেক্ষা করে মানুষ ঈদ-উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে।
বসে, দাঁড়িয়ে, প্রয়োজন হলে হেঁটে আপনজনের কাছে পৌঁছাতেই হবে। উৎসবে যাঁরা রাজধানী থেকে গ্রামে ফিরতে চান, তাঁদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত টিকিট মেলে না। ফিরতেও একই বিড়ম্বনা। সঙ্গে যোগ হয় বাস খাদে পড়া, নানা দুর্ঘটনা অথবা ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা।
এবার অবশ্য মানুষজনকে তুলনামূলক অনেক কম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মানুষজন পর্যায়ক্রমে ঢাকা ছাড়ায় এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৩ এপ্রিলের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ছুটির বাঁশি’ বাজামাত্রই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এবার তুলনামূলকভাবে লম্বা ছুটি কাটানোর সুযোগ এসেছে। ঈদের সরকারি ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, সরকারি ছুটি পাঁচ দিন নিশ্চিত। পবিত্র শবে কদরের পর যদি কেউ দুই দিন ছুটি নিতে পারেন, তাহলে তিনি টানা ১০ দিন বাড়িতে কাটাতে পারবেন। কারণ, শবে কদরের আগের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
ঈদের ছুটিতে আমরা অনেক আনন্দ করতে চাই। ভালো খেয়ে-পরে পরিবারের সবাই মিলে একত্রে কাটাতে চাই। তাই তো ঈদ-উৎসব ঘিরে আমাদের কত পরিকল্পনা। কত স্বপ্ন, অপেক্ষা। যদিও অনেকের জীবনে উৎসব-অনুষ্ঠান সীমাহীন বিড়ম্বনা, টাকার শ্রাদ্ধ, অতৃপ্তি আর অবসাদ ছাড়া নগদ তেমন কিছুই দিতে পারে না। কোনো কোনো মধ্যবিত্তের কাছে উৎসব-অনুষ্ঠান এক আপদ ও আতঙ্কের নাম। এর অবশ্য অনেক কারণ আছে।
উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে হলে আরও অনেক কিছু যোগ করতে হয়। সবার আগে আসে টাকার প্রশ্ন। উৎসবে সবাই চায় একটু ভালো পরতে, ভালো খেতে। কিন্তু সীমাবদ্ধ আয়ের মধ্যবিত্তকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে গিয়ে ভীষণ রকম সমস্যায় পড়তে হয়। সন্তানেরা যে যেমনটি চায়, তেমনটি বাজেট স্বল্পতার কারণে দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও কথা থেকে যায়। নিজের মা-বাবা, ভাইবোনকে সন্তুষ্ট করা গেল তো শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নাখোশ করতে হয়। আবার শ্বশুরপক্ষীয় আত্মীয়দের মন জোগাতে গেলে অন্যরা বেজার হয়।
খাওয়া-পরার ব্যাপারটা কোনো রকমে সামাল দেওয়া গেলেও বেড়ানোর ব্যাপারটা এখন কিছুতেই ম্যানেজ করা যায় না। এখন মধ্যবিত্তরা ভ্রমণপিপাসু হয়ে উঠেছে। উৎসবে-অনুষ্ঠানে শুধু জামা-কাপড়-জুতা আর খাবারদাবারেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়াটাও অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই এখন ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এখানেও সমস্যা—কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন। এ ব্যাপারে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের মতের মিল হয় খুব সামান্য ক্ষেত্রেই।
অনেক পরিবারে আবার সন্তানেরা মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যেতে চায় না। বন্ধুবান্ধবরা মিলে নিজেদের মতো করে ঘুরতে চায়। মা-বাবা সায় না দিলে রীতিমতো বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি আসে। এই বিগড়ানো সন্তানদের বশে রাখাটাই তখন অভিভাবকদের প্রধান দায় হয়ে পড়ে!
দীর্ঘ ছুটি পেয়ে গেলে অনেকে তাই বিপন্ন হয়ে পড়েন। কী করবেন, কোথায় যাবেন, সন্তানদের কীভাবে ম্যানেজ করবেন, আত্মীয়স্বজনদেরই বা কীভাবে বুঝ দেবেন, বাড়তি টাকার জোগাড় কীভাবে হবে—এসব নিয়ে অতিরিক্ত ‘টেনশন’ সৃষ্টি হয়।
এমনিতে উৎসবের মৌসুম মানে শুধু আনন্দ নয়, অবসাদেরও। মনোচিকিৎসকেরাও তা-ই বলেন। উন্নত বিশ্বে টানা ছুটির সময়ে তাঁদের চেম্বারে অবসাদে ভোগা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ে। আমাদের দেশেও দিন দিন এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই অবসাদের একটা নামও আছে—‘হলিডে ব্লুজ’। ছুটির মধ্যেই গেঁথে থাকে সেই অবসাদের শিকড়। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ার বা অন্য ছুটির সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।
কেন যায়? কারণ, আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন, যাঁরা হই-হুল্লোড়, ভিড়ভাট্টা একটু এড়িয়ে যেতে চান। তাঁরা প্রাত্যহিক ব্যস্ততার মধ্যে একধরনের খাপ খাইয়ে নেন। কিন্তু সেই মানুষগুলোর কাছে বাড়তি ছুটি মানেই তাঁদের বুক দুরদুর।
টিভির পর্দায়, পাড়ার আলোচনায়, অফিসের গল্পে, খবরের কাগজের পাতায় তখন শুধু কত অসামান্যভাবে ছুটি কাটানো যায় তার হাজারো ফিরিস্তি। কী খাওয়া বা কেনা যায়, কোথায় সবান্ধব যাওয়া যায়, আনন্দে কত পেগ ডুব দেওয়া যায় তার বিশদ বিবরণ। সেই একাকী মানুষগুলো ছুটি কাটানোর কোনো জুতসই পরিকল্পনা করে উঠতে পারেন না, ফলে প্রায় কুঁকড়ে কানচাপা দিয়ে বসে থাকার উপক্রম হয়। ছুটিই তাঁদের ঘাড় ধরে আরও একবার বুঝিয়ে দেয় যে সুস্থ সামাজিক কাঠামোর চলতি সংজ্ঞায় তাঁরা একা, অস্বাভাবিক, বেমানান বা অপাঙ্ক্তেয়। নিজের মনের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্রমেই বিষাদের গহনে চলে যেতে থাকেন তাঁরা।
মনোবিদেরা বলেন, ‘হলিডে ব্লুজের’ অন্যতম কারণ হলো, যেভাবে ছুটি কাটাতে চাইছি, যতটা আনন্দ করতে চাইছি, সেটা পারছি না। যদি আনন্দের অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়, তাহলে সেটা পূরণ না হওয়াই স্বাভাবিক। তাতেই সমস্যা বাড়ে। ছুটি এলেই তাকে ‘সর্বকালের সেরা’ বানানোর প্রবণতা থাকে অনেকের। শেষমেশ তা পূরণ হয় না, আশাভঙ্গে অবসাদ আসে। প্রথমত, সব আনন্দের টার্গেট পূর্ণ হলো না বলে অশান্তি। দ্বিতীয়ত, ছুটি শেষ হয়ে আবার গতানুগতিক কাজের রুটিন শুরু হয়ে গেল বলে নিরাশা।
এ ক্ষেত্রে ছুটির ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করাটা সবচেয়ে আগে দরকার। সেই সঙ্গে, এই ছুটিটাকেই আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে প্রমাণ করতে হবে এমন চিন্তা ভেঙে বেরোতে হবে। উৎসবের মৌসুম ঘুরে ঘুরে প্রতিবার আসে। যথেষ্ট আনন্দ এবার না হলে অন্যবার হবে। একমাত্র উৎসবের সময়েই যাবতীয় আনন্দ লুটে নিতে হবে—এমন দিব্যিও তো নেই। বছরের অন্য সময়েও তা করা যায়। অন্য সবার মতো ছুটি উদ্যাপন করতে পারছেন না বলে নিজেকে অত্যন্ত বঞ্চিত মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু লোকদেখানো উপায়ে নয়, নিজের মতো করেও ছুটি উদ্যাপন করা যায়, তাতেও আনন্দ হয়, আর সেটা মনকে বোঝানোর দায়িত্ব নিজেরই।
ছুটি তাই সবার জন্য সমান আনন্দ-উৎসবের বার্তা বয়ে আনে না, অনেকের কাছে ছুটি মানে বিভীষিকা, ছুটি এলে তাঁদের মনপ্রাণ ছটফট করতে থাকে, কত তাড়াতাড়ি আবার রুটিনবদ্ধ হওয়া যায়!
শুধু সম্ভাবনা নয়, মানুষের জীবনটা তো একই সঙ্গে অনন্ত সমস্যার সমাহারও বটে। অনেকে কয়েকটা দিন ছুটির জন্য হা-পিত্যেশ করেন। আবার অনেকে লাগাতার কয়েক দিনের ছুটি পেলে বড় ধরনের ফ্যাসাদে পড়ে যান! মানুষের বিচিত্র জীবনের বিচিত্র সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ কীভাবে মিলবে—তা হয়তো কেউই জানেন না!
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব্যাকুল হয়। প্রাত্যহিকতার কারাগার থেকে একটু বাইরে বের হওয়ার ফুসরত মেলে।
ঈদের ছুটি আমাদের জীবনে সেই সুযোগ করে দেয়। ঈদে ঘরে ফেরার ব্যাপারটি সামনে ফটিকের কথা মনে পড়ে। সেই ফটিক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ‘বালকদিগের সর্দার’ ফটিক চক্রবর্তী। যে ফটিক বিলাপরত মায়ের কান্নার জবাবে বলেছিল, ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক মায়ের কাছে যেতে চাইলে মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে বলেছিলেন, পূজায় স্কুল ছুটি হলে বাড়ি যাওয়া যাবে।
আর আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন কখন ঈদের ছুটি শুরু হবে। আমাদের দেশে দুই ঈদের ছুটিতে কোটি কোটি ‘ফটিক’ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন, তাঁরা তো মায়ের কাছেই ফেরেন। ফেরেন বোনের কাছে, ভাইয়ের কাছে, বন্ধুর কাছে। স্বামী ফিরে যান বউয়ের কাছে। বাবা যান আদরের সন্তানের কাছে। মাটির কাছেও ফেরেন।
এই ফেরাটা আমাদের অভ্যাস। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে কাজ করে। এর জন্য যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পোহাতে হয় বেহাল সড়কে পথে পথে চরম ভোগান্তিও। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বাস-ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটে। এতসব দুর্ভোগ উপেক্ষা করে মানুষ ঈদ-উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে।
বসে, দাঁড়িয়ে, প্রয়োজন হলে হেঁটে আপনজনের কাছে পৌঁছাতেই হবে। উৎসবে যাঁরা রাজধানী থেকে গ্রামে ফিরতে চান, তাঁদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত টিকিট মেলে না। ফিরতেও একই বিড়ম্বনা। সঙ্গে যোগ হয় বাস খাদে পড়া, নানা দুর্ঘটনা অথবা ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা।
এবার অবশ্য মানুষজনকে তুলনামূলক অনেক কম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মানুষজন পর্যায়ক্রমে ঢাকা ছাড়ায় এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৩ এপ্রিলের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ছুটির বাঁশি’ বাজামাত্রই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এবার তুলনামূলকভাবে লম্বা ছুটি কাটানোর সুযোগ এসেছে। ঈদের সরকারি ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, সরকারি ছুটি পাঁচ দিন নিশ্চিত। পবিত্র শবে কদরের পর যদি কেউ দুই দিন ছুটি নিতে পারেন, তাহলে তিনি টানা ১০ দিন বাড়িতে কাটাতে পারবেন। কারণ, শবে কদরের আগের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
ঈদের ছুটিতে আমরা অনেক আনন্দ করতে চাই। ভালো খেয়ে-পরে পরিবারের সবাই মিলে একত্রে কাটাতে চাই। তাই তো ঈদ-উৎসব ঘিরে আমাদের কত পরিকল্পনা। কত স্বপ্ন, অপেক্ষা। যদিও অনেকের জীবনে উৎসব-অনুষ্ঠান সীমাহীন বিড়ম্বনা, টাকার শ্রাদ্ধ, অতৃপ্তি আর অবসাদ ছাড়া নগদ তেমন কিছুই দিতে পারে না। কোনো কোনো মধ্যবিত্তের কাছে উৎসব-অনুষ্ঠান এক আপদ ও আতঙ্কের নাম। এর অবশ্য অনেক কারণ আছে।
উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে হলে আরও অনেক কিছু যোগ করতে হয়। সবার আগে আসে টাকার প্রশ্ন। উৎসবে সবাই চায় একটু ভালো পরতে, ভালো খেতে। কিন্তু সীমাবদ্ধ আয়ের মধ্যবিত্তকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে গিয়ে ভীষণ রকম সমস্যায় পড়তে হয়। সন্তানেরা যে যেমনটি চায়, তেমনটি বাজেট স্বল্পতার কারণে দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও কথা থেকে যায়। নিজের মা-বাবা, ভাইবোনকে সন্তুষ্ট করা গেল তো শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নাখোশ করতে হয়। আবার শ্বশুরপক্ষীয় আত্মীয়দের মন জোগাতে গেলে অন্যরা বেজার হয়।
খাওয়া-পরার ব্যাপারটা কোনো রকমে সামাল দেওয়া গেলেও বেড়ানোর ব্যাপারটা এখন কিছুতেই ম্যানেজ করা যায় না। এখন মধ্যবিত্তরা ভ্রমণপিপাসু হয়ে উঠেছে। উৎসবে-অনুষ্ঠানে শুধু জামা-কাপড়-জুতা আর খাবারদাবারেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়াটাও অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই এখন ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এখানেও সমস্যা—কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন। এ ব্যাপারে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের মতের মিল হয় খুব সামান্য ক্ষেত্রেই।
অনেক পরিবারে আবার সন্তানেরা মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যেতে চায় না। বন্ধুবান্ধবরা মিলে নিজেদের মতো করে ঘুরতে চায়। মা-বাবা সায় না দিলে রীতিমতো বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি আসে। এই বিগড়ানো সন্তানদের বশে রাখাটাই তখন অভিভাবকদের প্রধান দায় হয়ে পড়ে!
দীর্ঘ ছুটি পেয়ে গেলে অনেকে তাই বিপন্ন হয়ে পড়েন। কী করবেন, কোথায় যাবেন, সন্তানদের কীভাবে ম্যানেজ করবেন, আত্মীয়স্বজনদেরই বা কীভাবে বুঝ দেবেন, বাড়তি টাকার জোগাড় কীভাবে হবে—এসব নিয়ে অতিরিক্ত ‘টেনশন’ সৃষ্টি হয়।
এমনিতে উৎসবের মৌসুম মানে শুধু আনন্দ নয়, অবসাদেরও। মনোচিকিৎসকেরাও তা-ই বলেন। উন্নত বিশ্বে টানা ছুটির সময়ে তাঁদের চেম্বারে অবসাদে ভোগা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ে। আমাদের দেশেও দিন দিন এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই অবসাদের একটা নামও আছে—‘হলিডে ব্লুজ’। ছুটির মধ্যেই গেঁথে থাকে সেই অবসাদের শিকড়। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ার বা অন্য ছুটির সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।
কেন যায়? কারণ, আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন, যাঁরা হই-হুল্লোড়, ভিড়ভাট্টা একটু এড়িয়ে যেতে চান। তাঁরা প্রাত্যহিক ব্যস্ততার মধ্যে একধরনের খাপ খাইয়ে নেন। কিন্তু সেই মানুষগুলোর কাছে বাড়তি ছুটি মানেই তাঁদের বুক দুরদুর।
টিভির পর্দায়, পাড়ার আলোচনায়, অফিসের গল্পে, খবরের কাগজের পাতায় তখন শুধু কত অসামান্যভাবে ছুটি কাটানো যায় তার হাজারো ফিরিস্তি। কী খাওয়া বা কেনা যায়, কোথায় সবান্ধব যাওয়া যায়, আনন্দে কত পেগ ডুব দেওয়া যায় তার বিশদ বিবরণ। সেই একাকী মানুষগুলো ছুটি কাটানোর কোনো জুতসই পরিকল্পনা করে উঠতে পারেন না, ফলে প্রায় কুঁকড়ে কানচাপা দিয়ে বসে থাকার উপক্রম হয়। ছুটিই তাঁদের ঘাড় ধরে আরও একবার বুঝিয়ে দেয় যে সুস্থ সামাজিক কাঠামোর চলতি সংজ্ঞায় তাঁরা একা, অস্বাভাবিক, বেমানান বা অপাঙ্ক্তেয়। নিজের মনের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্রমেই বিষাদের গহনে চলে যেতে থাকেন তাঁরা।
মনোবিদেরা বলেন, ‘হলিডে ব্লুজের’ অন্যতম কারণ হলো, যেভাবে ছুটি কাটাতে চাইছি, যতটা আনন্দ করতে চাইছি, সেটা পারছি না। যদি আনন্দের অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়, তাহলে সেটা পূরণ না হওয়াই স্বাভাবিক। তাতেই সমস্যা বাড়ে। ছুটি এলেই তাকে ‘সর্বকালের সেরা’ বানানোর প্রবণতা থাকে অনেকের। শেষমেশ তা পূরণ হয় না, আশাভঙ্গে অবসাদ আসে। প্রথমত, সব আনন্দের টার্গেট পূর্ণ হলো না বলে অশান্তি। দ্বিতীয়ত, ছুটি শেষ হয়ে আবার গতানুগতিক কাজের রুটিন শুরু হয়ে গেল বলে নিরাশা।
এ ক্ষেত্রে ছুটির ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করাটা সবচেয়ে আগে দরকার। সেই সঙ্গে, এই ছুটিটাকেই আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে প্রমাণ করতে হবে এমন চিন্তা ভেঙে বেরোতে হবে। উৎসবের মৌসুম ঘুরে ঘুরে প্রতিবার আসে। যথেষ্ট আনন্দ এবার না হলে অন্যবার হবে। একমাত্র উৎসবের সময়েই যাবতীয় আনন্দ লুটে নিতে হবে—এমন দিব্যিও তো নেই। বছরের অন্য সময়েও তা করা যায়। অন্য সবার মতো ছুটি উদ্যাপন করতে পারছেন না বলে নিজেকে অত্যন্ত বঞ্চিত মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু লোকদেখানো উপায়ে নয়, নিজের মতো করেও ছুটি উদ্যাপন করা যায়, তাতেও আনন্দ হয়, আর সেটা মনকে বোঝানোর দায়িত্ব নিজেরই।
ছুটি তাই সবার জন্য সমান আনন্দ-উৎসবের বার্তা বয়ে আনে না, অনেকের কাছে ছুটি মানে বিভীষিকা, ছুটি এলে তাঁদের মনপ্রাণ ছটফট করতে থাকে, কত তাড়াতাড়ি আবার রুটিনবদ্ধ হওয়া যায়!
শুধু সম্ভাবনা নয়, মানুষের জীবনটা তো একই সঙ্গে অনন্ত সমস্যার সমাহারও বটে। অনেকে কয়েকটা দিন ছুটির জন্য হা-পিত্যেশ করেন। আবার অনেকে লাগাতার কয়েক দিনের ছুটি পেলে বড় ধরনের ফ্যাসাদে পড়ে যান! মানুষের বিচিত্র জীবনের বিচিত্র সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ কীভাবে মিলবে—তা হয়তো কেউই জানেন না!
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব্যাকুল হয়। প্রাত্যহিকতার কারাগার থেকে একটু বাইরে বের হওয়ার ফুসরত মেলে।
ঈদের ছুটি আমাদের জীবনে সেই সুযোগ করে দেয়। ঈদে ঘরে ফেরার ব্যাপারটি সামনে ফটিকের কথা মনে পড়ে। সেই ফটিক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ‘বালকদিগের সর্দার’ ফটিক চক্রবর্তী। যে ফটিক বিলাপরত মায়ের কান্নার জবাবে বলেছিল, ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক মায়ের কাছে যেতে চাইলে মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে বলেছিলেন, পূজায় স্কুল ছুটি হলে বাড়ি যাওয়া যাবে।
আর আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন কখন ঈদের ছুটি শুরু হবে। আমাদের দেশে দুই ঈদের ছুটিতে কোটি কোটি ‘ফটিক’ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন, তাঁরা তো মায়ের কাছেই ফেরেন। ফেরেন বোনের কাছে, ভাইয়ের কাছে, বন্ধুর কাছে। স্বামী ফিরে যান বউয়ের কাছে। বাবা যান আদরের সন্তানের কাছে। মাটির কাছেও ফেরেন।
এই ফেরাটা আমাদের অভ্যাস। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে কাজ করে। এর জন্য যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পোহাতে হয় বেহাল সড়কে পথে পথে চরম ভোগান্তিও। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বাস-ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটে। এতসব দুর্ভোগ উপেক্ষা করে মানুষ ঈদ-উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে।
বসে, দাঁড়িয়ে, প্রয়োজন হলে হেঁটে আপনজনের কাছে পৌঁছাতেই হবে। উৎসবে যাঁরা রাজধানী থেকে গ্রামে ফিরতে চান, তাঁদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত টিকিট মেলে না। ফিরতেও একই বিড়ম্বনা। সঙ্গে যোগ হয় বাস খাদে পড়া, নানা দুর্ঘটনা অথবা ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা।
এবার অবশ্য মানুষজনকে তুলনামূলক অনেক কম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মানুষজন পর্যায়ক্রমে ঢাকা ছাড়ায় এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৩ এপ্রিলের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ছুটির বাঁশি’ বাজামাত্রই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এবার তুলনামূলকভাবে লম্বা ছুটি কাটানোর সুযোগ এসেছে। ঈদের সরকারি ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, সরকারি ছুটি পাঁচ দিন নিশ্চিত। পবিত্র শবে কদরের পর যদি কেউ দুই দিন ছুটি নিতে পারেন, তাহলে তিনি টানা ১০ দিন বাড়িতে কাটাতে পারবেন। কারণ, শবে কদরের আগের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
ঈদের ছুটিতে আমরা অনেক আনন্দ করতে চাই। ভালো খেয়ে-পরে পরিবারের সবাই মিলে একত্রে কাটাতে চাই। তাই তো ঈদ-উৎসব ঘিরে আমাদের কত পরিকল্পনা। কত স্বপ্ন, অপেক্ষা। যদিও অনেকের জীবনে উৎসব-অনুষ্ঠান সীমাহীন বিড়ম্বনা, টাকার শ্রাদ্ধ, অতৃপ্তি আর অবসাদ ছাড়া নগদ তেমন কিছুই দিতে পারে না। কোনো কোনো মধ্যবিত্তের কাছে উৎসব-অনুষ্ঠান এক আপদ ও আতঙ্কের নাম। এর অবশ্য অনেক কারণ আছে।
উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে হলে আরও অনেক কিছু যোগ করতে হয়। সবার আগে আসে টাকার প্রশ্ন। উৎসবে সবাই চায় একটু ভালো পরতে, ভালো খেতে। কিন্তু সীমাবদ্ধ আয়ের মধ্যবিত্তকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে গিয়ে ভীষণ রকম সমস্যায় পড়তে হয়। সন্তানেরা যে যেমনটি চায়, তেমনটি বাজেট স্বল্পতার কারণে দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও কথা থেকে যায়। নিজের মা-বাবা, ভাইবোনকে সন্তুষ্ট করা গেল তো শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নাখোশ করতে হয়। আবার শ্বশুরপক্ষীয় আত্মীয়দের মন জোগাতে গেলে অন্যরা বেজার হয়।
খাওয়া-পরার ব্যাপারটা কোনো রকমে সামাল দেওয়া গেলেও বেড়ানোর ব্যাপারটা এখন কিছুতেই ম্যানেজ করা যায় না। এখন মধ্যবিত্তরা ভ্রমণপিপাসু হয়ে উঠেছে। উৎসবে-অনুষ্ঠানে শুধু জামা-কাপড়-জুতা আর খাবারদাবারেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়াটাও অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই এখন ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এখানেও সমস্যা—কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন। এ ব্যাপারে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের মতের মিল হয় খুব সামান্য ক্ষেত্রেই।
অনেক পরিবারে আবার সন্তানেরা মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যেতে চায় না। বন্ধুবান্ধবরা মিলে নিজেদের মতো করে ঘুরতে চায়। মা-বাবা সায় না দিলে রীতিমতো বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি আসে। এই বিগড়ানো সন্তানদের বশে রাখাটাই তখন অভিভাবকদের প্রধান দায় হয়ে পড়ে!
দীর্ঘ ছুটি পেয়ে গেলে অনেকে তাই বিপন্ন হয়ে পড়েন। কী করবেন, কোথায় যাবেন, সন্তানদের কীভাবে ম্যানেজ করবেন, আত্মীয়স্বজনদেরই বা কীভাবে বুঝ দেবেন, বাড়তি টাকার জোগাড় কীভাবে হবে—এসব নিয়ে অতিরিক্ত ‘টেনশন’ সৃষ্টি হয়।
এমনিতে উৎসবের মৌসুম মানে শুধু আনন্দ নয়, অবসাদেরও। মনোচিকিৎসকেরাও তা-ই বলেন। উন্নত বিশ্বে টানা ছুটির সময়ে তাঁদের চেম্বারে অবসাদে ভোগা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ে। আমাদের দেশেও দিন দিন এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই অবসাদের একটা নামও আছে—‘হলিডে ব্লুজ’। ছুটির মধ্যেই গেঁথে থাকে সেই অবসাদের শিকড়। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ার বা অন্য ছুটির সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।
কেন যায়? কারণ, আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন, যাঁরা হই-হুল্লোড়, ভিড়ভাট্টা একটু এড়িয়ে যেতে চান। তাঁরা প্রাত্যহিক ব্যস্ততার মধ্যে একধরনের খাপ খাইয়ে নেন। কিন্তু সেই মানুষগুলোর কাছে বাড়তি ছুটি মানেই তাঁদের বুক দুরদুর।
টিভির পর্দায়, পাড়ার আলোচনায়, অফিসের গল্পে, খবরের কাগজের পাতায় তখন শুধু কত অসামান্যভাবে ছুটি কাটানো যায় তার হাজারো ফিরিস্তি। কী খাওয়া বা কেনা যায়, কোথায় সবান্ধব যাওয়া যায়, আনন্দে কত পেগ ডুব দেওয়া যায় তার বিশদ বিবরণ। সেই একাকী মানুষগুলো ছুটি কাটানোর কোনো জুতসই পরিকল্পনা করে উঠতে পারেন না, ফলে প্রায় কুঁকড়ে কানচাপা দিয়ে বসে থাকার উপক্রম হয়। ছুটিই তাঁদের ঘাড় ধরে আরও একবার বুঝিয়ে দেয় যে সুস্থ সামাজিক কাঠামোর চলতি সংজ্ঞায় তাঁরা একা, অস্বাভাবিক, বেমানান বা অপাঙ্ক্তেয়। নিজের মনের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্রমেই বিষাদের গহনে চলে যেতে থাকেন তাঁরা।
মনোবিদেরা বলেন, ‘হলিডে ব্লুজের’ অন্যতম কারণ হলো, যেভাবে ছুটি কাটাতে চাইছি, যতটা আনন্দ করতে চাইছি, সেটা পারছি না। যদি আনন্দের অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়, তাহলে সেটা পূরণ না হওয়াই স্বাভাবিক। তাতেই সমস্যা বাড়ে। ছুটি এলেই তাকে ‘সর্বকালের সেরা’ বানানোর প্রবণতা থাকে অনেকের। শেষমেশ তা পূরণ হয় না, আশাভঙ্গে অবসাদ আসে। প্রথমত, সব আনন্দের টার্গেট পূর্ণ হলো না বলে অশান্তি। দ্বিতীয়ত, ছুটি শেষ হয়ে আবার গতানুগতিক কাজের রুটিন শুরু হয়ে গেল বলে নিরাশা।
এ ক্ষেত্রে ছুটির ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করাটা সবচেয়ে আগে দরকার। সেই সঙ্গে, এই ছুটিটাকেই আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে প্রমাণ করতে হবে এমন চিন্তা ভেঙে বেরোতে হবে। উৎসবের মৌসুম ঘুরে ঘুরে প্রতিবার আসে। যথেষ্ট আনন্দ এবার না হলে অন্যবার হবে। একমাত্র উৎসবের সময়েই যাবতীয় আনন্দ লুটে নিতে হবে—এমন দিব্যিও তো নেই। বছরের অন্য সময়েও তা করা যায়। অন্য সবার মতো ছুটি উদ্যাপন করতে পারছেন না বলে নিজেকে অত্যন্ত বঞ্চিত মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু লোকদেখানো উপায়ে নয়, নিজের মতো করেও ছুটি উদ্যাপন করা যায়, তাতেও আনন্দ হয়, আর সেটা মনকে বোঝানোর দায়িত্ব নিজেরই।
ছুটি তাই সবার জন্য সমান আনন্দ-উৎসবের বার্তা বয়ে আনে না, অনেকের কাছে ছুটি মানে বিভীষিকা, ছুটি এলে তাঁদের মনপ্রাণ ছটফট করতে থাকে, কত তাড়াতাড়ি আবার রুটিনবদ্ধ হওয়া যায়!
শুধু সম্ভাবনা নয়, মানুষের জীবনটা তো একই সঙ্গে অনন্ত সমস্যার সমাহারও বটে। অনেকে কয়েকটা দিন ছুটির জন্য হা-পিত্যেশ করেন। আবার অনেকে লাগাতার কয়েক দিনের ছুটি পেলে বড় ধরনের ফ্যাসাদে পড়ে যান! মানুষের বিচিত্র জীবনের বিচিত্র সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ কীভাবে মিলবে—তা হয়তো কেউই জানেন না!
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব্যাকুল হয়। প্রাত্যহিকতার কারাগার থেকে একটু বাইরে বের হওয়ার ফুসরত মেলে।
ঈদের ছুটি আমাদের জীবনে সেই সুযোগ করে দেয়। ঈদে ঘরে ফেরার ব্যাপারটি সামনে ফটিকের কথা মনে পড়ে। সেই ফটিক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ‘বালকদিগের সর্দার’ ফটিক চক্রবর্তী। যে ফটিক বিলাপরত মায়ের কান্নার জবাবে বলেছিল, ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।’ ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক মায়ের কাছে যেতে চাইলে মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে বলেছিলেন, পূজায় স্কুল ছুটি হলে বাড়ি যাওয়া যাবে।
আর আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন কখন ঈদের ছুটি শুরু হবে। আমাদের দেশে দুই ঈদের ছুটিতে কোটি কোটি ‘ফটিক’ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন, তাঁরা তো মায়ের কাছেই ফেরেন। ফেরেন বোনের কাছে, ভাইয়ের কাছে, বন্ধুর কাছে। স্বামী ফিরে যান বউয়ের কাছে। বাবা যান আদরের সন্তানের কাছে। মাটির কাছেও ফেরেন।
এই ফেরাটা আমাদের অভ্যাস। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে কাজ করে। এর জন্য যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পোহাতে হয় বেহাল সড়কে পথে পথে চরম ভোগান্তিও। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বাস-ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটে। এতসব দুর্ভোগ উপেক্ষা করে মানুষ ঈদ-উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে।
বসে, দাঁড়িয়ে, প্রয়োজন হলে হেঁটে আপনজনের কাছে পৌঁছাতেই হবে। উৎসবে যাঁরা রাজধানী থেকে গ্রামে ফিরতে চান, তাঁদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত টিকিট মেলে না। ফিরতেও একই বিড়ম্বনা। সঙ্গে যোগ হয় বাস খাদে পড়া, নানা দুর্ঘটনা অথবা ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা।
এবার অবশ্য মানুষজনকে তুলনামূলক অনেক কম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মানুষজন পর্যায়ক্রমে ঢাকা ছাড়ায় এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৩ এপ্রিলের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ছুটির বাঁশি’ বাজামাত্রই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এবার তুলনামূলকভাবে লম্বা ছুটি কাটানোর সুযোগ এসেছে। ঈদের সরকারি ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, সরকারি ছুটি পাঁচ দিন নিশ্চিত। পবিত্র শবে কদরের পর যদি কেউ দুই দিন ছুটি নিতে পারেন, তাহলে তিনি টানা ১০ দিন বাড়িতে কাটাতে পারবেন। কারণ, শবে কদরের আগের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
ঈদের ছুটিতে আমরা অনেক আনন্দ করতে চাই। ভালো খেয়ে-পরে পরিবারের সবাই মিলে একত্রে কাটাতে চাই। তাই তো ঈদ-উৎসব ঘিরে আমাদের কত পরিকল্পনা। কত স্বপ্ন, অপেক্ষা। যদিও অনেকের জীবনে উৎসব-অনুষ্ঠান সীমাহীন বিড়ম্বনা, টাকার শ্রাদ্ধ, অতৃপ্তি আর অবসাদ ছাড়া নগদ তেমন কিছুই দিতে পারে না। কোনো কোনো মধ্যবিত্তের কাছে উৎসব-অনুষ্ঠান এক আপদ ও আতঙ্কের নাম। এর অবশ্য অনেক কারণ আছে।
উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে হলে আরও অনেক কিছু যোগ করতে হয়। সবার আগে আসে টাকার প্রশ্ন। উৎসবে সবাই চায় একটু ভালো পরতে, ভালো খেতে। কিন্তু সীমাবদ্ধ আয়ের মধ্যবিত্তকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে গিয়ে ভীষণ রকম সমস্যায় পড়তে হয়। সন্তানেরা যে যেমনটি চায়, তেমনটি বাজেট স্বল্পতার কারণে দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও কথা থেকে যায়। নিজের মা-বাবা, ভাইবোনকে সন্তুষ্ট করা গেল তো শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নাখোশ করতে হয়। আবার শ্বশুরপক্ষীয় আত্মীয়দের মন জোগাতে গেলে অন্যরা বেজার হয়।
খাওয়া-পরার ব্যাপারটা কোনো রকমে সামাল দেওয়া গেলেও বেড়ানোর ব্যাপারটা এখন কিছুতেই ম্যানেজ করা যায় না। এখন মধ্যবিত্তরা ভ্রমণপিপাসু হয়ে উঠেছে। উৎসবে-অনুষ্ঠানে শুধু জামা-কাপড়-জুতা আর খাবারদাবারেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়াটাও অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই এখন ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এখানেও সমস্যা—কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন। এ ব্যাপারে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের মতের মিল হয় খুব সামান্য ক্ষেত্রেই।
অনেক পরিবারে আবার সন্তানেরা মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যেতে চায় না। বন্ধুবান্ধবরা মিলে নিজেদের মতো করে ঘুরতে চায়। মা-বাবা সায় না দিলে রীতিমতো বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি আসে। এই বিগড়ানো সন্তানদের বশে রাখাটাই তখন অভিভাবকদের প্রধান দায় হয়ে পড়ে!
দীর্ঘ ছুটি পেয়ে গেলে অনেকে তাই বিপন্ন হয়ে পড়েন। কী করবেন, কোথায় যাবেন, সন্তানদের কীভাবে ম্যানেজ করবেন, আত্মীয়স্বজনদেরই বা কীভাবে বুঝ দেবেন, বাড়তি টাকার জোগাড় কীভাবে হবে—এসব নিয়ে অতিরিক্ত ‘টেনশন’ সৃষ্টি হয়।
এমনিতে উৎসবের মৌসুম মানে শুধু আনন্দ নয়, অবসাদেরও। মনোচিকিৎসকেরাও তা-ই বলেন। উন্নত বিশ্বে টানা ছুটির সময়ে তাঁদের চেম্বারে অবসাদে ভোগা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ে। আমাদের দেশেও দিন দিন এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই অবসাদের একটা নামও আছে—‘হলিডে ব্লুজ’। ছুটির মধ্যেই গেঁথে থাকে সেই অবসাদের শিকড়। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ার বা অন্য ছুটির সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।
কেন যায়? কারণ, আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন, যাঁরা হই-হুল্লোড়, ভিড়ভাট্টা একটু এড়িয়ে যেতে চান। তাঁরা প্রাত্যহিক ব্যস্ততার মধ্যে একধরনের খাপ খাইয়ে নেন। কিন্তু সেই মানুষগুলোর কাছে বাড়তি ছুটি মানেই তাঁদের বুক দুরদুর।
টিভির পর্দায়, পাড়ার আলোচনায়, অফিসের গল্পে, খবরের কাগজের পাতায় তখন শুধু কত অসামান্যভাবে ছুটি কাটানো যায় তার হাজারো ফিরিস্তি। কী খাওয়া বা কেনা যায়, কোথায় সবান্ধব যাওয়া যায়, আনন্দে কত পেগ ডুব দেওয়া যায় তার বিশদ বিবরণ। সেই একাকী মানুষগুলো ছুটি কাটানোর কোনো জুতসই পরিকল্পনা করে উঠতে পারেন না, ফলে প্রায় কুঁকড়ে কানচাপা দিয়ে বসে থাকার উপক্রম হয়। ছুটিই তাঁদের ঘাড় ধরে আরও একবার বুঝিয়ে দেয় যে সুস্থ সামাজিক কাঠামোর চলতি সংজ্ঞায় তাঁরা একা, অস্বাভাবিক, বেমানান বা অপাঙ্ক্তেয়। নিজের মনের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্রমেই বিষাদের গহনে চলে যেতে থাকেন তাঁরা।
মনোবিদেরা বলেন, ‘হলিডে ব্লুজের’ অন্যতম কারণ হলো, যেভাবে ছুটি কাটাতে চাইছি, যতটা আনন্দ করতে চাইছি, সেটা পারছি না। যদি আনন্দের অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়, তাহলে সেটা পূরণ না হওয়াই স্বাভাবিক। তাতেই সমস্যা বাড়ে। ছুটি এলেই তাকে ‘সর্বকালের সেরা’ বানানোর প্রবণতা থাকে অনেকের। শেষমেশ তা পূরণ হয় না, আশাভঙ্গে অবসাদ আসে। প্রথমত, সব আনন্দের টার্গেট পূর্ণ হলো না বলে অশান্তি। দ্বিতীয়ত, ছুটি শেষ হয়ে আবার গতানুগতিক কাজের রুটিন শুরু হয়ে গেল বলে নিরাশা।
এ ক্ষেত্রে ছুটির ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করাটা সবচেয়ে আগে দরকার। সেই সঙ্গে, এই ছুটিটাকেই আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে প্রমাণ করতে হবে এমন চিন্তা ভেঙে বেরোতে হবে। উৎসবের মৌসুম ঘুরে ঘুরে প্রতিবার আসে। যথেষ্ট আনন্দ এবার না হলে অন্যবার হবে। একমাত্র উৎসবের সময়েই যাবতীয় আনন্দ লুটে নিতে হবে—এমন দিব্যিও তো নেই। বছরের অন্য সময়েও তা করা যায়। অন্য সবার মতো ছুটি উদ্যাপন করতে পারছেন না বলে নিজেকে অত্যন্ত বঞ্চিত মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু লোকদেখানো উপায়ে নয়, নিজের মতো করেও ছুটি উদ্যাপন করা যায়, তাতেও আনন্দ হয়, আর সেটা মনকে বোঝানোর দায়িত্ব নিজেরই।
ছুটি তাই সবার জন্য সমান আনন্দ-উৎসবের বার্তা বয়ে আনে না, অনেকের কাছে ছুটি মানে বিভীষিকা, ছুটি এলে তাঁদের মনপ্রাণ ছটফট করতে থাকে, কত তাড়াতাড়ি আবার রুটিনবদ্ধ হওয়া যায়!
শুধু সম্ভাবনা নয়, মানুষের জীবনটা তো একই সঙ্গে অনন্ত সমস্যার সমাহারও বটে। অনেকে কয়েকটা দিন ছুটির জন্য হা-পিত্যেশ করেন। আবার অনেকে লাগাতার কয়েক দিনের ছুটি পেলে বড় ধরনের ফ্যাসাদে পড়ে যান! মানুষের বিচিত্র জীবনের বিচিত্র সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ কীভাবে মিলবে—তা হয়তো কেউই জানেন না!
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব
০৯ এপ্রিল ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব
০৯ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব
০৯ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক মানুষের জীবন নানা ব্যস্ততায় মোড়ানো। প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে সারাক্ষণ নানা কাজে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একঘেয়েমি আর ক্লান্তি আসে খুব সহজেই। আসে অবসাদ। তখন মানুষের শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণ একটু অবকাশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। কর্মময় জীবনকে ছুটি দিয়ে মন খোঁজে একটু নিভৃত শান্তি। তাই ছুটির জন্য আমাদের মন ব
০৯ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫