Ajker Patrika

বিলুপ্তির মুখে তাঁতশিল্প

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ০৩
Thumbnail image

তাঁতপল্লিতে চলছে খটখট শব্দ। তাঁতির টানা হাত আর পায়ের ছন্দে নানা রঙের সুতোয় তৈরি হচ্ছে কাপড়। বংশপরম্পরায় এভাবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের কেশুরবাড়ি এলাকার তাঁতপল্লিতে চলে আসছিল কাপড় বোনার কাজ। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাস, কাঁচামাল এবং উপকরণের দাম বাড়ায় বিলুপ্তির মুখে পড়েছে তাঁতশিল্প। এতে অনেকেই পেশা বদল করছেন। আবার যাঁরা এখনো জড়িত, তাঁরা কষ্টে দিন পার করছেন।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার কেশুরবাড়ি এলাকার তাঁতপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, একসময় এই তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভর করে এখানকার কারিগরদের সংসার ভালোই চলত, কিন্তু এখন আর চলে না। গ্রামের অনেক পরিবার এখনো বাপ-দাদা আমলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। অনেকে আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও এখন শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে দু-তিনটি করে তাঁত রয়েছে। এর কোনোটা চাকাওয়ালা, আবার কোনোটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি।

তাঁতকারিগর মহেন দাস ও অখিল চন্দ্র রায় বলেন, অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে তাঁতের পেশা ধরে রেখেছেন তাঁরা। এখন তাঁতের কাপড়ের বাজারের যে অবস্থা, তাতে ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে বেচাকেনা করে আমাদের দাম দেন। এভাবে কত দিন লোকসান দেবেন ব্যবসায়ীরা? ঠিকমতো বেচাকেনা না থাকলে আমাদের পণ্য তাঁরা কীভাবে নেবেন। আর এসব বিক্রি করতে না পারলে আমাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তাঁরা জানান, বগুড়া থেকে গত বছর ৪০ কেজি সুতা ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় কিনলেও এবার সেই সুতার দাম ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।

তাঁতকারিগর অনামিকা দাস বলেন, ‘আমার যখন বিয়ে হয় আমার শ্বশুর কম্বল তৈরির কাজ করতেন। আগে আমি কম্বল তৈরির কাজ জানতাম না। আমার শ্বশুরের কাছে দেখে আমি শিখেছি। এখন আমার বয়স প্রায় ৫৫ বছর, এখনো আমি এই কম্বল তৈরির কাজ করি।’

ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সুতাসহ উপকরণের মূল্য নির্ধারণ করে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিলে এ শিল্প সচল করা সম্ভব হবে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি সুতাসহ উৎপাদনের উপকরণের দাম নির্ধারণ করে আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতার করুক।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো তাঁতি আমাদের কাছে ঋণ সহযোগিতার আবেদন করলে আমরা তাঁর প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাই শেষে সরকারিভাবে সুবিধা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত