Ajker Patrika

চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও ইংরেজিতে

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ০৭
Thumbnail image

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের অহংকার। এ ভাষার জন্য সূর্যসন্তানেরা রক্ত দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চলে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাংলায় না দিয়ে ইংরেজিতেই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় সংস্থাটি।

বিআরটিএর দেওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সে দেখা যায়, কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই ইংরেজিতে লেখা। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্সে গ্রাহকের নাম, জন্মতারিখ, রক্তের গ্রুপ, পিতা বা স্বামীর নাম, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর তারিখ ও মেয়াদ, কোথা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করা হয়েছে, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা গ্রাহকের ঠিকানাসহ সবকিছুই ইংরেজিতে লেখা থাকে। ফলে এতে থাকা তথ্যগুলো পড়তে পারেন না স্বল্পশিক্ষিত অনেক চালক।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট কার চালান মোহাম্মদ ইসমাইল আলী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভাবের কারণে পড়াশোনা খুব একটা করা হয়নি। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি। পরিবারের হাল ধরতে গাড়ি চালানো শিখেছি। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক অনেক আগের। প্রথম দিকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড দেওয়া হতো, সেটি বাংলায় লেখা থাকত। পরবর্তীকালে আমি ২০১৫ সালের দিকে যখন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করি, তখন থেকেই ইংরেজিতে লেখা দেখেছি। বাংলা পড়তে পারলেও ইংরেজি সেভাবে পারি না। আমার মতো বেশির ভাগ গাড়ির চালক কম শিক্ষিত। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইংরেজিতে দিলে অনেক চালকের জন্য অসুবিধার কারণ হয়। তাই বাংলায় দেওয়াই ভালো।’

রাজধানীর প্রজাপতি পরিবহনের বাসচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স ইংরেজিতে দেওয়া হয় এমন নয়। অনেক জায়গায় ইংরেজিতে লেখা থাকে, যা আমরা বুঝি না। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির মামলা দেন।

সেই মামলার কাগজও ইংরেজিতে লেখা থাকে। অনেক চালক শিক্ষিত না হওয়ায় বোঝে না ইংরেজিতে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাই শুধু লাইসেন্স নয়, সর্বক্ষেত্রেই বাংলায় করলে চালকদের জন্য সুবিধা হয়।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিআরটিএকে অনেক আগে থেকেই আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্স বাংলায় দেওয়ার জন্য বলে আসছি। কিন্তু তারা এখনো সেটি সংশোধন করেনি। আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য ইংরেজিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতেই পারে। কিন্তু আমাদের শ্রমিকেরা তো কম শিক্ষিত, তারা যেন বুঝতে পারে কী লেখা আছে, এর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাংলাতে দেওয়া জরুরি। ইংরেজি লেখার ফলে শ্রমিকেরা কিছুই বুঝে না। সব শ্রমিকদের দাবি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, তাহলে কেন ইংলিশে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিবে।’

গত বছরের ২২ আগস্ট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাংলায় দেওয়ার জন্য। চালকদেরও দাবি বাংলায় দেওয়ার জন্য। তাহলে কেন ইংরেজিতে দিতে হবে।

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইংরেজি থেকে বাংলা করতে সময় লাগবে। যেহেতু পুরোটাই সফটওয়ারের মাধ্যমে হয়। ফলে সফটওয়্যার ডেভেলপ করে তারপরে বাংলায় দেওয়া শুরু হতে পারে। তা ছাড়া কার্ডের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। এটা সহজ কাজ নয়, তাই সময় লাগবে বাংলায় কার্ড দিতে। এটা এক দিনের মধ্যেই পরিবর্তন করার বিষয় নয়। আর যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখনো সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পারেননি। ফলে ইংরেজিতে দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত