Ajker Patrika

কর বেড়েছে সেবা বাড়েনি

এম মেহেদী হাসিন, রংপুর
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪৬
কর বেড়েছে সেবা বাড়েনি

রংপুর পৌরসভা ২০১২ সালের ২৬ জুন সিটি করপোরেশনে রূপ পায়। সদর উপজেলার ১০টি এবং কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার একটি করে ইউনিয়ন এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে ৫০ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটারের পৌরসভা সিটিতে রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়ায় ২০৫ বর্গকিলোমিটারে। ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৩টি। কিন্তু ১০ বছরেও বাড়েনি সেবার মান।

রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) বর্ধিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মূল সড়ক বাদে অধিকাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। এসব সড়ক বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা। তবে, বহু গুণে বেড়েছে ভূমিকর, যা নাগরিকদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু সিটির নিয়মে আবাদি জমিকে আবাসিক জমি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ বেড়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পৌরসভায় বাসাবাড়ির ১ শতাংশ ভূমিকর ছিল ৭ টাকা। ইউনিয়নে এ কর ছিল ৫ টাকা। বর্তমানে বাসাবাড়ির কর শতাংশপ্রতি ৫০ টাকা করা হয়েছে। আর কৃষিজমির বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে হলে শতাংশপ্রতি কর দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল মাত্র ২২ টাকা।এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্ধিত এলাকায় সিটির সাপ্লাইয়ের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। আগের মতোই নলকূপ ও পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন তাঁরা। এ ছাড়া সড়কবাতি না থাকায় অধিকাংশ সড়ক অন্ধকারে থাকে।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রাকিবুল ইসলাম জানান, আগে তাঁরা হাতের নাগালে পেতেন ইউনিয়ন পরিষদের সব সেবা। কিন্তু সিটি করপোরেশন হওয়ায় সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখন নগর ভবনে সেবা নিতে গেলে সারা দিন কেটে যায়। সেবাপ্রাপ্তির ব্যয়ও বেড়ে যায়। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্ধিত সিটির অর্ধেকের বেশি এলাকার মানুষ আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পেতেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখন এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৮-১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের মোট রাস্তা ১ হাজার ৪২৭ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা মাত্র ৩৮২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। আরসিসি রাস্তা ২৩ কিলোমিটার আর বাকি রাস্তা কাঁচা। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২৭৮ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং করা হয়েছে। ২৩ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা হয়েছে এবং ১৩৪ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। এ সময়ে ১৩১ কিলোমিটার রাস্তার পাশে নতুন নালা তৈরি হয়েছে। আর নগরীর ৬০ কিলোমিটার রাস্তা সড়কবাতির আওতায় এসেছে।

৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সালাম বলেন, ‘আগেই হামরা ভালো আছিনো। সিটি হয়া খালি খরচ বাড়ছে। হামার লাভের লাভ কিছু হয় নাই। বাইস্যার (বর্ষা) সময় সড়কোত পানি হয়, কাদো (কাদা) হয়।’ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদ ইসলাম বলেন, ‘সিটি হওয়ার পর অনেক সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, তা পাচ্ছি না। তবে জমি বিক্রিতে কর এত বেড়েছে, যা কাম্য নয়। আগে সিটির সুবিধা দেন, পরে কর বাড়ান।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যে স্বাদ, সেই স্বাদ বর্ধিত এলাকার মানুষজন পাচ্ছেন না। এ জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।’রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্ধিত এলাকাগুলোয় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় সড়কবাতি দেওয়া হয়েছে। কাঁচা সড়ক পাকা করা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণসহ অন্য কাজও করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত