Ajker Patrika

আইভীর জেতা না-জেতা

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫৭
আইভীর জেতা না-জেতা

নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা যে জমে উঠেছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দৈনিক পত্রিকাগুলো খুবই গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন নির্বাচনের খবর ছাপছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ১৮ বছর ধরে এই অফিস সামলাচ্ছেন তিনি। পৌরসভার মেয়র ছিলেন, এরপর তা সিটি করপোরেশন হলো। আইভী হয়ে উঠলেন নগরের ত্রাণকর্তা।এবার নতুন করে আবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

গোটা দেশে নির্বাচনের হাল-হকিকত ইতিমধ্যেই জানা হয়ে গেছে জনগণের। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা যখন আশাতীত ভালো ফল করতে লাগলেন, তখনই বোঝা যাচ্ছিল, ক্ষমতা দলকে গিলে খাচ্ছে। বহু জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। সরকারে থাকায় আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী না হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বহু জায়গা আছে, যেখানে দল যাঁদের ওপর নির্ভর করতে চাইছে, জনগণ তাঁদের ওপর আস্থা রাখছেন না। তাই তাঁদের খারিজ করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে দিচ্ছেন ভোট। এটা কোনো ক্ষমতাসীন দলের জন্য সুখবর নয়। বিরোধী দল যেখানে দৌড়ের ওপর আছে, সেখানে নিজের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কিন্তু দলের প্রতি জনগণের অনাস্থার প্রমাণ হতে পারে, সেই সঙ্গে এ প্রশ্নটাও আসতে পারে যে দল কেন ভুল লোককে মনোনয়ন দিচ্ছে?

তার চেয়ে বড় কথা, বহু জায়গায় প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে বলে নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের খুব একটা আগ্রহ আছে বলেও মনে হয় না। গণতন্ত্রে ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’-এর যে প্রচলিত ধারণা, তার ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। কখনো কখনো মনে হচ্ছে, নির্বাচনে জনগণ ভোট না দিলেও চলে, তাতে নির্বাচনের কিছু আসে-যায় না।

দুই. সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জে খুবই জনপ্রিয়। তবে একই অফিসে ১৮ বছর কাটানো একজন মানুষের বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে অনেক অভিযোগ উঠতে পারে। মানুষ চাইতে পারে পরিবর্তন। ভাবতে পারে, নতুন কেউ মেয়র অফিসে এলে নতুন উৎসাহে অনেক কাজ করতে পারবেন। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র হয়েছেন আইভী, সেই প্রতিশ্রুতির কোনো কোনোটি তিনি রক্ষা করতে না পারলে তা থেকে জন্ম নিতে পারে ক্ষোভ আর তাতেই পতন ঘটতে পারে আইভীর।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জের হালচাল যাঁরা জানেন, তাঁরা এ কথাও জানেন, দল ও দলের বাইরে বাঘা বাঘা সব নেতার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন আইভী এবং নির্দ্বিধায় বলা যায়, সেসব যুদ্ধ থেকে তিনি বেরিয়ে এসেছেন বিজয়ীর বেশে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য আইভী আন্তরিক নন—এ কথা আইভীর সবচেয়ে বড় সমালোচকও বলবেন না।

তিন. একটা অনুমান করা যাক। সেলিনা হায়াৎ আইভী কোন কোন কারণে পরাজিত 
হতে পারেন?

ক. জনগণ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলে।
খ. তাঁর দল তাঁর পক্ষে না দাঁড়ালে।
গ. তাঁর দল তাঁকে হারানোর জন্য অন্য কোনো প্রার্থীর সঙ্গে যোগসাজশ করলে।

এর বাইরেও নিশ্চয় আরও কারণ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা এ কারণগুলো নিয়েই কথা বলব।জনগণ কোন কারণে আইভীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে? যদি মনে করে, এই ১৮ বছরে আইভী জনগণকে প্রতারণা করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পালন করেননি।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির দিকে তাকালে বোঝা যায়, এ ধরনের অপবাদে আইভীকে জড়ানো যাবে না; বরং শামীম ওসমানের মতো ডাকসাইটে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াই করে যিনি টিকে আছেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ হাস্যকর শোনাবে। সে রকম কোনো ঘটনা ঘটলে শামীম ওসমান নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলতেন না। সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে টক শোগুলোয় শামীম ওসমানের যে শরীরী ভাষার প্রকাশ দেখা গেছে অতীতে, তাতে নিঃসন্দেহে বোঝা যায়, বাগ্‌যুদ্ধে জয়ের জন্য হলেও তিনি আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলতেন। কিন্তু সে অভিযোগ তুলতে হলে বাস্তবে সে রকম কোনো ঘটনা থাকতে হবে। সেটা নেই বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

যে প্রতিশ্রুতিগুলো পালন করা হয়নি বলে আইভীর দিকে আঙুল তোলা যায়, তার একটি হচ্ছে পানি সরবরাহ। একটি বড় পানি শোধনাগার গড়ার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেটা পাওয়া গেলে বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি মিটবে বলে মনে করেন বর্তমান মেয়র। বোঝাই যাচ্ছে, এই বিষয়টি মেয়রের হাতে নেই। মেয়র অফিসের পক্ষ থেকে যা যা করার কথা, সেগুলো করা হয়েছে। অপেক্ষা করতে হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর।

রাজপথ হকারমুক্ত না হওয়ার দায়টা কি মেয়রকে দেওয়া যাবে? আইভীর কথা শুনুন। তিনি যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সমস্যার সমাধান চান, সে তো বারবার বলেছেন এবং করেও দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মৌন থাকে কারা? কেন হকারমুক্ত হয় 
না ফুটপাত?

চার. এ প্রশ্নের উত্তর অন্যভাবে দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার আগে ঢাকা মহানগরীর ফার্মগেট এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ দখল করে হকাররা বসে যেত। মাঝে মাঝে কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা খেলা হলে ফুটপাত ও রাজপথের পাশ থেকে তাদের বিতাড়িত করে রাস্তার শোভাবর্ধন করা হতো। আমজনতা ভাবত, এবার তাহলে নিরাপদে কোনো সংকট ছাড়াই হাঁটাহাঁটি করা যাবে। কিন্তু কদিন পরেই সাড়ম্বরে ফিরে আসত হকাররা।

এই তো গত শুক্রবার সে পথ দিয়ে আসার সময় মনে হলো, আরে! এই রাস্তা এত প্রশস্ত হলো কী করে? খেয়াল করে দেখলাম, মেট্রোর কাজ এখানে শেষ হওয়ায় রাস্তাটা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়েছে। কোনো দিন এতটা রাস্তা যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়নি।কিছুদিন পর এই রাস্তা আর ফুটপাত দখল করে হকাররা বসে যাবে কি না, সেটা নিতান্তই অনুমানের ব্যাপার। তবে হকাররা কার কাছ থেকে শক্তি পায়, কাদের বশীভূত রাখে, কিসের বিনিময়ে বশীভূত রাখে, কেন স্থানীয় নেতারা এবং পুলিশ প্রশাসন এদিকটায় চোখ বন্ধ করে রাখে, সে প্রশ্নগুলো সহজ এবং উত্তরও তো জানা।নারায়ণগঞ্জে ফুটপাত দখল নিয়ে আইভী নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারা ফুটপাত দখলদারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে, পুলিশ কেন নীরব থাকে, তা নিয়েও আক্ষেপ করেছেন আইভী। তাতে বোঝা যায়, মেয়র হলেই ক্ষমতার প্রয়োগ করা যায় না। আরও কিছু ব্যাপার থাকে, যেগুলো নগরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই মাফিয়া চক্রের ব্যাপারে আইভী প্রকাশ্যে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।

পাঁচ. নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত নাকি বিভক্তি আরও বেশি, সে প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায়, দলের মধ্যেই রয়েছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আইভী পরাজিত হলে এই প্রতিপক্ষের নেতাদের মুখে হাসি ফুটে উঠতে পারে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করার মতো পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগে বিরাজমান। তাই আইভীর মূল লড়াইটা কিন্তু তাঁর বাড়ির ভেতরে। বিএনপি নেতা, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার আইভীর জন্য তখনই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারবেন, যখন আইভীর নিজের দলের মধ্যে দেখা দেবে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

বলে রাখা ভালো, আমাদের রাজনীতি যখন টাকার খেলায় পরিণত হতে শুরু করেছিল, সংসদে যখন সত্যিকার রাজনীতিবিদ, সুবক্তা, আইনজীবীর সংখ্যা কমে গিয়ে আদর্শহীন পয়সাওয়ালাদের দাপট দেখা যেতে শুরু করেছিল, মনোনয়ন-বাণিজ্য যখন গ্রাস করছিল রাজনীতিকে, সে সময় থেকেই রাজনীতি নিয়ে জনগণ বা আমজনতার স্বপ্ন ক্রমেই বিলীয়মান। জনগণ এখন বোঝে, দলমত-নির্বিশেষে সবখানেই আদর্শের জায়গা দখল করে নিয়েছে অর্থ। শুধু কি রাজনীতিতে? ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, শিল্প, সাংবাদিকতা, চিকিৎসা—সর্বত্রই টাকা হয়ে উঠেছে ঈশ্বর। এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্থানীয় রাজনীতিতে বল প্রয়োগ না করে শুধু কাজের মাধ্যমে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানটির নড়বড়ে অবস্থায় হতাশ মানুষও কিন্তু চোখ রাখছে নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিকে। এখানে যে ‘খেলা’টি হবে, তার চিত্রনাট্য কোথায় লেখা হচ্ছে, কীভাবে লেখা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে খেলাটি কতটা জমবে। এই চিত্রনাট্যে জনগণের ভূমিকা মুখ্য হয়ে উঠতে পারে, অন্য নির্বাচনগুলোয় কখনো কখনো যার ঘাটতি থাকে।

ছয়. বাজার অর্থনীতি আর করপোরেট যুগে জীবনের মূল্যবোধগুলোয় যে যান্ত্রিকতা এসেছে, তাতে ‘মানুষ মানুষের জন্যে’ কথাটির সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক আর তেমনভাবে থাকছে না। রাজনীতিতে আদর্শের চেয়ে অর্থকড়ি অনেক বেশি প্রাধান্য পেতে শুরু করায় লোভী মন কি সততার মূল্যায়ন করবে, নাকি স্বার্থের মূল্যায়ন করবে, সেটা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকতাবোধে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তো মনভূমি কর্ষণের দরকার আছে। সেটা যদি না হয়, তাহলে কি শুধু ফাঁকা বুলি আর লোকদেখানো স্তুতিতে দেশের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসে?

তারপরও কেউ কেউ মানুষের কল্যাণের প্রতি একনিষ্ঠ থাকে। সেটাই হয়ে যায় তাদের জীবনের অংশ। তখন ক্ষমতা আর ক্ষমতার বাইরে বলে আলাদা কিছু থাকে না।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরও জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটা প্রগাঢ় থাকতে পারে কি না, তার জবাব দিতে পারে নারায়ণগঞ্জ। এটা হয়ে উঠতে পারে সত্যিকারের রাজনীতির এক অ্যাসিড টেস্ট। 

জাহীদ রেজা নূর: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

একাত্তরে ধর্ষণ–গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: বিএনপি নেতা আলাল

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

একাত্তরে ধর্ষণ–গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: বিএনপি নেতা আলাল

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

একাত্তরে ধর্ষণ–গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: বিএনপি নেতা আলাল

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

একাত্তরে ধর্ষণ–গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: বিএনপি নেতা আলাল

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

একাত্তরে ধর্ষণ–গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: বিএনপি নেতা আলাল

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত