Ajker Patrika

ভালো নেই জহির বয়াতি

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৭: ২৭
ভালো নেই জহির বয়াতি

গান গেয়ে দর্শকদের একসময় মাতিয়েছেন মানিকগঞ্জের ঘিওরের জহির উদ্দিন। গেয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারেও। সেই জহির এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। অসুস্থ এ লোকগানের শিল্পী থাকেন ঝুপড়িঘরে, যে ঘরের অবস্থা খুবই করুণ। তবে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করা অসুস্থ এ শিল্পীর খোঁজ রাখেন না কেউ।

উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুরান গ্রামে বাড়ি জহির উদ্দিনের। ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করা জহির ছোট থেকেই গান বাজনা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতেন। সেই থেকেই লোকমুখে নামের শেষে বয়াতি হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁর গানে থাকত সচেতনতামূলক বাণী। সারিন্দা বাজিয়ে লোকসংগীত গাইতেন বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির কয়েকটি অনুষ্ঠানেও।

তবে গান-বাজনায় যথেষ্ট পারিশ্রমিক না পেয়ে শুরু করেন রাজমিস্ত্রির কাজ। এ কাজ করে বিয়ে দিয়েছেন পাঁচ মেয়েকে। তাঁদের পারিবারিক অবস্থাও সচ্ছল নয়। এদিকে, চার বছর আগে স্ট্রোক করেন জহির বয়াতি। সেই থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্তে ভুগছেন তিনি। এখন বাধ্য হয়ে জহির বয়াতির স্ত্রী হালিমা বেগমকে কাজ করতে হয় অন্যের বাড়িতে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে জহির উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরের এক কোনায় পাটিতে শুয়ে আছেন তিনি। দেখেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেন। শরীরের একাংশ অবশ।

জহির বয়াতির স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে সামান্য টাকা পান, তাই দিয়ে চলে তাঁদের দুজনের খাবার-ওষুধ। এই বয়সেও অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেতে হয়, আল্লাহ এমন ভাগ্য যেন কাউরে না দেয়। আমার স্বামী যখন ভালো ছিল, তখন কত মানুষের উপকার করতেন। আর আজ আমরা বড় একা হয়ে গেছি।’

জহির বয়াতি সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁর চোখের কোণে দেখা যায় অশ্রু। হাতের ইশারায় তাঁর স্ত্রীকে ঘর থেকে সারিন্দা আনার জন্য বলেন। সারিন্দা কাঁধে নিয়ে এক হাতে চেষ্টা করেন সুর তুলতে। টেনে টেনে বলেন, ‘কী হালে আছি। আল্লায় জানে আর আমি জানি। এক সময় অনেকের আপন ছিলাম। আজ আমি সবার পর।’ এরপর সারিন্দা কপালে ঠেকিয়ে আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। জহির বয়াতিকে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া তাঁর ঘরটি বাসযোগ্য করার চেষ্টা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...