শাইখ সিরাজ

বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে। কৃষক তথা মেহনতি মানুষই শাসন-শোষণের প্রচলিত বৃত্তগুলো ভেঙেছেন। মানুষের জন্য নতুন নতুন পথ তৈরি করেছেন। জীবনকাঠামো এগিয়ে নিয়েছেন।
ইতিহাসের একটু পেছন ফিরে তাকালেই দেখা যায়, সুবিধাভোগী উচ্চবিত্ত শ্রেণি প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো দিন আন্দোলনে নামেননি; বরং তাঁরা আপস করেছেন। আর সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন রচনা করেছেন একেবারে তৃণমূল জনগোষ্ঠী। তেভাগা কিংবা নীল চাষবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এই বাংলার সব বিদ্রোহ-আন্দোলনের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠী; 
বিশেষ করে কৃষক। কৃষকের স্বপ্নসাধের পথ ধরেই রচিত হয়েছে সমাজ বিনির্মাণের রূপরেখা। শোষকের বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছে একেকটি আন্দোলন।
সেখানে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন তৃণমূলের সাধারণ মানুষ—কৃষক। ব্রিটিশবিরোধী সিপাহি আন্দোলনে অধিকাংশ সুবিধাভোগী জমিদারই ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। সুবিধাভোগীরা সংগ্রাম করে না, করে বঞ্চিতরা। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নসাধও রচিত হয়েছে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, উপেক্ষার পটভূমি সামনে নিয়ে। আমি ২০০৭ সালে গিয়েছিলাম দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে।
সেখানে তালপুকুর নামে একটি জায়গা তেভাগা আন্দোলনের রণাঙ্গন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই যুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে শরৎচন্দ্র মণ্ডল, বীরেন মণ্ডলের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁরা এখন আর বেঁচে নেই। সেদিন তাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন, তা কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন গোটা বাংলার কৃষকের মুক্তি। নির্যাতিত-নিপীড়িত বহু বছরে পুঞ্জীভূত দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই তাঁরা সেদিন নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং মোট রপ্তানি আয়ের বড় অংশটি আসত পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত পাট থেকে।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক ছিল না। বছরের পর বছর আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। এ বৈষম্যমোচনের পথ হিসেবেই আসে স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন। এর চূড়ান্ত রূপরেখা হিসেবে আসে ঐতিহাসিক ছয় দফা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষকের বঞ্চনা বিশ্লেষণ করে ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পর পাকিস্তানি শাসকদের টনক নড়ে যায়। যার পরতে পরতে ছিল কৃষকের বঞ্চনামুক্তির দাবি-দাওয়া। তাঁদের আশা-প্রত্যাশার কথা। পরে ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১১ দফা প্রণয়ন করে, সেখানে আরও বেশ কিছু দাবি সংযোজিত হয়। এই ১১ দফায় পূর্ণতা পায় এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবিগুলো। আমরা দেখি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা শুরু হয়। পরে বাষট্টি সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। অতঃপর আটষট্টি সালের ডিসেম্বর থেকে উনসত্তর সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্ররা যে এক সুসংবদ্ধ ও সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা ইতিহাসে বিরল, যা তাঁরা ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি পেশ করে এর সূচনা করেছিলেন। সে সময়ের ছাত্রনেতারা তখন আন্দোলনের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গ্রামে চলে যেতেন।
কৃষকের চাহিদা নিরূপণ করতেন। দেশের সংকটগুলো বিশ্লেষণ করতেন। দেশের সামগ্রিক চিত্র হৃদয়ে আঁকার জন্য তাঁদের বারবার গ্রামের কৃষিজীবী মেহনতি মানুষের সান্নিধ্য, তাঁদের ভাষা, তাঁদের জীবনীশক্তিকে গ্রহণ করতে হয়েছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ, সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, একাত্তরে ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীসহ অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। তাঁরা বলেছেন, একাত্তরের পটভূমি রচনার পেছনে বাংলার কৃষি ও কৃষকের নিবিড় এক প্রভাব রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে কৃষকের সেই ভূমিকাকে সবচেয়ে বেশি সামনে এনেছেন। এর পথ ধরেই আসে একাত্তরের মার্চ। সাতই মার্চের ভাষণে ঝাঁপিয়ে পড়া সমবেত লাখো মানুষের প্রায় সবাই ছিলেন কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটিও ছিল কৃষক। আহ্বানও ছিল এই সাধারণ মেহনতি মানুষের উদ্দেশেই। এ ভাষণ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমর মহাকাব্য। ইউনেসকো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ ভাষণ ছিল একটি জাতির দিকনির্দেশনা ও আত্মপরিচয়ের প্রধান ক্ষেত্র। এটিই ছিল স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলমন্ত্র। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁরাই অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা পাকিস্তানিদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁদের শোষণমুক্তির যুদ্ধ। স্বাধীন ভূমিতে ফসল ফলানোর চূড়ান্ত তাগিদ। পরাধীনতার গ্লানি ঘোচাতে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ছাড়া আর তাঁদের সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধে গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকের ভূমিকা প্রশ্নাতীত একটি বিষয়। তাঁদের বীরত্বগাথা ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। সুদীর্ঘ বঞ্চনার পথ পেরিয়ে এসে তাঁরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছেন। সবাই ভেবেছেন জীবনের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ পেলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হবে নিরাপদ এক আবাস ক্ষেত্র। তাই যে হাতে তাঁরা লাঙল ঠেলেছেন, ধান কেটেছেন, নৌকার দাঁড় টেনেছেন, জীবিকার জন্য প্রাণান্ত শ্রম দিয়েছেন, সেই হাত তাঁদের উদ্যত হয়েছিল শত্রুর মোকাবিলায়।
মুক্তিসংগ্রাম ধারণার মধ্যে দুটি উপাদান আছে। একটি হলো জাতীয় মুক্তি এবং অন্যটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, শ্রেণিগত শোষণমুক্তি।আর এই মুক্তির মন্ত্রক ছিল আমাদের কৃষক সমাজ। আমরা দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনের স্মৃতিক্ষেত্রে গিয়েছি। কুষ্টিয়ার দুর্বাচারা বংশীতলার এখনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জবানিতে পাই মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার কথা। তাঁরা অকপটে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁদের শতভাগই ছিলেন গ্রামের মানুষ, তাঁদের মধ্যে ৯৮ ভাগই কৃষক। ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও বলেন একই কথা। তখন কৃষকের ঘরের সন্তান টগবগে তরুণেরা কেবলই প্রবেশ করবেন সংসারজীবনে। কেউ যাবেন চাকরিতে। সবকিছু ফেলে তাঁরা আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার সংগ্রামে। নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বন্দরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়েছিলাম অনেক দিন আগে। তাঁরাও শুনিয়েছেন একই চেতনার সুর।
সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি গ্রাম। ১৬টি জেলা সদরের বাইরেই ছিল বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি। গ্রামের ঘরবাড়ি, কয়েকটি চায়ের দোকান, দু-একটি আড়ত আর তরিতরকারি ও মুদিদোকানের বাইরে ছিল মেঠোপথ, কৃষিজমি, জলাভূমি, গাছের ছায়া।সেখানে শহুরে অট্টালিকা আর নাগরিক আভিজাত্যের স্থান ছিল না। কৃষক ছিলেন সবকিছুর মূলে। তাঁরাই ছিলেন ঐতিহ্যের বাহক।
এখনো যুদ্ধদিনের সবচেয়ে গভীর স্মৃতিচিহ্ন, কষ্ট, যন্ত্রণা, স্বজন হারানোর বেদনা গ্রামের সাধারণ কৃষকই বেশি বহন করে চলেছেন। আবার তাঁরাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করছেন। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে তাঁরা ঠিকই তাঁদের শপথ ধরে রেখেছেন। একচুলও সরে যাননি একাত্তরের সেই চেতনা থেকে। আমাদের জীবনধারার সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে। বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা। কিন্তু তা বাস্তবায়নের পথ কতটা কৃষি ও কৃষককে কেন্দ্র করে, প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিজয়ের এ মাসে আমরা আবারও মেহনতি মানুষের কথাই ভাবতে চাই। ভাবতে চাই গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা। যাঁরা ছাড়া আমাদের আত্মপরিচয় থাকে না। একাত্তরের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের আপামর কৃষিজীবী মানুষের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই

বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে। কৃষক তথা মেহনতি মানুষই শাসন-শোষণের প্রচলিত বৃত্তগুলো ভেঙেছেন। মানুষের জন্য নতুন নতুন পথ তৈরি করেছেন। জীবনকাঠামো এগিয়ে নিয়েছেন।
ইতিহাসের একটু পেছন ফিরে তাকালেই দেখা যায়, সুবিধাভোগী উচ্চবিত্ত শ্রেণি প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো দিন আন্দোলনে নামেননি; বরং তাঁরা আপস করেছেন। আর সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন রচনা করেছেন একেবারে তৃণমূল জনগোষ্ঠী। তেভাগা কিংবা নীল চাষবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এই বাংলার সব বিদ্রোহ-আন্দোলনের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠী; 
বিশেষ করে কৃষক। কৃষকের স্বপ্নসাধের পথ ধরেই রচিত হয়েছে সমাজ বিনির্মাণের রূপরেখা। শোষকের বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছে একেকটি আন্দোলন।
সেখানে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন তৃণমূলের সাধারণ মানুষ—কৃষক। ব্রিটিশবিরোধী সিপাহি আন্দোলনে অধিকাংশ সুবিধাভোগী জমিদারই ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। সুবিধাভোগীরা সংগ্রাম করে না, করে বঞ্চিতরা। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নসাধও রচিত হয়েছে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, উপেক্ষার পটভূমি সামনে নিয়ে। আমি ২০০৭ সালে গিয়েছিলাম দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে।
সেখানে তালপুকুর নামে একটি জায়গা তেভাগা আন্দোলনের রণাঙ্গন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই যুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে শরৎচন্দ্র মণ্ডল, বীরেন মণ্ডলের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁরা এখন আর বেঁচে নেই। সেদিন তাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন, তা কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন গোটা বাংলার কৃষকের মুক্তি। নির্যাতিত-নিপীড়িত বহু বছরে পুঞ্জীভূত দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই তাঁরা সেদিন নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং মোট রপ্তানি আয়ের বড় অংশটি আসত পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত পাট থেকে।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক ছিল না। বছরের পর বছর আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। এ বৈষম্যমোচনের পথ হিসেবেই আসে স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন। এর চূড়ান্ত রূপরেখা হিসেবে আসে ঐতিহাসিক ছয় দফা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষকের বঞ্চনা বিশ্লেষণ করে ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পর পাকিস্তানি শাসকদের টনক নড়ে যায়। যার পরতে পরতে ছিল কৃষকের বঞ্চনামুক্তির দাবি-দাওয়া। তাঁদের আশা-প্রত্যাশার কথা। পরে ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১১ দফা প্রণয়ন করে, সেখানে আরও বেশ কিছু দাবি সংযোজিত হয়। এই ১১ দফায় পূর্ণতা পায় এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবিগুলো। আমরা দেখি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা শুরু হয়। পরে বাষট্টি সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। অতঃপর আটষট্টি সালের ডিসেম্বর থেকে উনসত্তর সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্ররা যে এক সুসংবদ্ধ ও সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা ইতিহাসে বিরল, যা তাঁরা ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি পেশ করে এর সূচনা করেছিলেন। সে সময়ের ছাত্রনেতারা তখন আন্দোলনের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গ্রামে চলে যেতেন।
কৃষকের চাহিদা নিরূপণ করতেন। দেশের সংকটগুলো বিশ্লেষণ করতেন। দেশের সামগ্রিক চিত্র হৃদয়ে আঁকার জন্য তাঁদের বারবার গ্রামের কৃষিজীবী মেহনতি মানুষের সান্নিধ্য, তাঁদের ভাষা, তাঁদের জীবনীশক্তিকে গ্রহণ করতে হয়েছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ, সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, একাত্তরে ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীসহ অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। তাঁরা বলেছেন, একাত্তরের পটভূমি রচনার পেছনে বাংলার কৃষি ও কৃষকের নিবিড় এক প্রভাব রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে কৃষকের সেই ভূমিকাকে সবচেয়ে বেশি সামনে এনেছেন। এর পথ ধরেই আসে একাত্তরের মার্চ। সাতই মার্চের ভাষণে ঝাঁপিয়ে পড়া সমবেত লাখো মানুষের প্রায় সবাই ছিলেন কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটিও ছিল কৃষক। আহ্বানও ছিল এই সাধারণ মেহনতি মানুষের উদ্দেশেই। এ ভাষণ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমর মহাকাব্য। ইউনেসকো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ ভাষণ ছিল একটি জাতির দিকনির্দেশনা ও আত্মপরিচয়ের প্রধান ক্ষেত্র। এটিই ছিল স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলমন্ত্র। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁরাই অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা পাকিস্তানিদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁদের শোষণমুক্তির যুদ্ধ। স্বাধীন ভূমিতে ফসল ফলানোর চূড়ান্ত তাগিদ। পরাধীনতার গ্লানি ঘোচাতে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ছাড়া আর তাঁদের সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধে গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকের ভূমিকা প্রশ্নাতীত একটি বিষয়। তাঁদের বীরত্বগাথা ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। সুদীর্ঘ বঞ্চনার পথ পেরিয়ে এসে তাঁরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছেন। সবাই ভেবেছেন জীবনের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ পেলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হবে নিরাপদ এক আবাস ক্ষেত্র। তাই যে হাতে তাঁরা লাঙল ঠেলেছেন, ধান কেটেছেন, নৌকার দাঁড় টেনেছেন, জীবিকার জন্য প্রাণান্ত শ্রম দিয়েছেন, সেই হাত তাঁদের উদ্যত হয়েছিল শত্রুর মোকাবিলায়।
মুক্তিসংগ্রাম ধারণার মধ্যে দুটি উপাদান আছে। একটি হলো জাতীয় মুক্তি এবং অন্যটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, শ্রেণিগত শোষণমুক্তি।আর এই মুক্তির মন্ত্রক ছিল আমাদের কৃষক সমাজ। আমরা দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনের স্মৃতিক্ষেত্রে গিয়েছি। কুষ্টিয়ার দুর্বাচারা বংশীতলার এখনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জবানিতে পাই মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার কথা। তাঁরা অকপটে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁদের শতভাগই ছিলেন গ্রামের মানুষ, তাঁদের মধ্যে ৯৮ ভাগই কৃষক। ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও বলেন একই কথা। তখন কৃষকের ঘরের সন্তান টগবগে তরুণেরা কেবলই প্রবেশ করবেন সংসারজীবনে। কেউ যাবেন চাকরিতে। সবকিছু ফেলে তাঁরা আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার সংগ্রামে। নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বন্দরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়েছিলাম অনেক দিন আগে। তাঁরাও শুনিয়েছেন একই চেতনার সুর।
সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি গ্রাম। ১৬টি জেলা সদরের বাইরেই ছিল বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি। গ্রামের ঘরবাড়ি, কয়েকটি চায়ের দোকান, দু-একটি আড়ত আর তরিতরকারি ও মুদিদোকানের বাইরে ছিল মেঠোপথ, কৃষিজমি, জলাভূমি, গাছের ছায়া।সেখানে শহুরে অট্টালিকা আর নাগরিক আভিজাত্যের স্থান ছিল না। কৃষক ছিলেন সবকিছুর মূলে। তাঁরাই ছিলেন ঐতিহ্যের বাহক।
এখনো যুদ্ধদিনের সবচেয়ে গভীর স্মৃতিচিহ্ন, কষ্ট, যন্ত্রণা, স্বজন হারানোর বেদনা গ্রামের সাধারণ কৃষকই বেশি বহন করে চলেছেন। আবার তাঁরাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করছেন। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে তাঁরা ঠিকই তাঁদের শপথ ধরে রেখেছেন। একচুলও সরে যাননি একাত্তরের সেই চেতনা থেকে। আমাদের জীবনধারার সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে। বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা। কিন্তু তা বাস্তবায়নের পথ কতটা কৃষি ও কৃষককে কেন্দ্র করে, প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিজয়ের এ মাসে আমরা আবারও মেহনতি মানুষের কথাই ভাবতে চাই। ভাবতে চাই গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা। যাঁরা ছাড়া আমাদের আত্মপরিচয় থাকে না। একাত্তরের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের আপামর কৃষিজীবী মানুষের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই

শাইখ সিরাজ

বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে। কৃষক তথা মেহনতি মানুষই শাসন-শোষণের প্রচলিত বৃত্তগুলো ভেঙেছেন। মানুষের জন্য নতুন নতুন পথ তৈরি করেছেন। জীবনকাঠামো এগিয়ে নিয়েছেন।
ইতিহাসের একটু পেছন ফিরে তাকালেই দেখা যায়, সুবিধাভোগী উচ্চবিত্ত শ্রেণি প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো দিন আন্দোলনে নামেননি; বরং তাঁরা আপস করেছেন। আর সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন রচনা করেছেন একেবারে তৃণমূল জনগোষ্ঠী। তেভাগা কিংবা নীল চাষবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এই বাংলার সব বিদ্রোহ-আন্দোলনের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠী; 
বিশেষ করে কৃষক। কৃষকের স্বপ্নসাধের পথ ধরেই রচিত হয়েছে সমাজ বিনির্মাণের রূপরেখা। শোষকের বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছে একেকটি আন্দোলন।
সেখানে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন তৃণমূলের সাধারণ মানুষ—কৃষক। ব্রিটিশবিরোধী সিপাহি আন্দোলনে অধিকাংশ সুবিধাভোগী জমিদারই ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। সুবিধাভোগীরা সংগ্রাম করে না, করে বঞ্চিতরা। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নসাধও রচিত হয়েছে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, উপেক্ষার পটভূমি সামনে নিয়ে। আমি ২০০৭ সালে গিয়েছিলাম দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে।
সেখানে তালপুকুর নামে একটি জায়গা তেভাগা আন্দোলনের রণাঙ্গন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই যুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে শরৎচন্দ্র মণ্ডল, বীরেন মণ্ডলের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁরা এখন আর বেঁচে নেই। সেদিন তাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন, তা কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন গোটা বাংলার কৃষকের মুক্তি। নির্যাতিত-নিপীড়িত বহু বছরে পুঞ্জীভূত দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই তাঁরা সেদিন নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং মোট রপ্তানি আয়ের বড় অংশটি আসত পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত পাট থেকে।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক ছিল না। বছরের পর বছর আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। এ বৈষম্যমোচনের পথ হিসেবেই আসে স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন। এর চূড়ান্ত রূপরেখা হিসেবে আসে ঐতিহাসিক ছয় দফা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষকের বঞ্চনা বিশ্লেষণ করে ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পর পাকিস্তানি শাসকদের টনক নড়ে যায়। যার পরতে পরতে ছিল কৃষকের বঞ্চনামুক্তির দাবি-দাওয়া। তাঁদের আশা-প্রত্যাশার কথা। পরে ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১১ দফা প্রণয়ন করে, সেখানে আরও বেশ কিছু দাবি সংযোজিত হয়। এই ১১ দফায় পূর্ণতা পায় এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবিগুলো। আমরা দেখি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা শুরু হয়। পরে বাষট্টি সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। অতঃপর আটষট্টি সালের ডিসেম্বর থেকে উনসত্তর সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্ররা যে এক সুসংবদ্ধ ও সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা ইতিহাসে বিরল, যা তাঁরা ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি পেশ করে এর সূচনা করেছিলেন। সে সময়ের ছাত্রনেতারা তখন আন্দোলনের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গ্রামে চলে যেতেন।
কৃষকের চাহিদা নিরূপণ করতেন। দেশের সংকটগুলো বিশ্লেষণ করতেন। দেশের সামগ্রিক চিত্র হৃদয়ে আঁকার জন্য তাঁদের বারবার গ্রামের কৃষিজীবী মেহনতি মানুষের সান্নিধ্য, তাঁদের ভাষা, তাঁদের জীবনীশক্তিকে গ্রহণ করতে হয়েছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ, সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, একাত্তরে ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীসহ অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। তাঁরা বলেছেন, একাত্তরের পটভূমি রচনার পেছনে বাংলার কৃষি ও কৃষকের নিবিড় এক প্রভাব রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে কৃষকের সেই ভূমিকাকে সবচেয়ে বেশি সামনে এনেছেন। এর পথ ধরেই আসে একাত্তরের মার্চ। সাতই মার্চের ভাষণে ঝাঁপিয়ে পড়া সমবেত লাখো মানুষের প্রায় সবাই ছিলেন কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটিও ছিল কৃষক। আহ্বানও ছিল এই সাধারণ মেহনতি মানুষের উদ্দেশেই। এ ভাষণ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমর মহাকাব্য। ইউনেসকো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ ভাষণ ছিল একটি জাতির দিকনির্দেশনা ও আত্মপরিচয়ের প্রধান ক্ষেত্র। এটিই ছিল স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলমন্ত্র। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁরাই অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা পাকিস্তানিদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁদের শোষণমুক্তির যুদ্ধ। স্বাধীন ভূমিতে ফসল ফলানোর চূড়ান্ত তাগিদ। পরাধীনতার গ্লানি ঘোচাতে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ছাড়া আর তাঁদের সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধে গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকের ভূমিকা প্রশ্নাতীত একটি বিষয়। তাঁদের বীরত্বগাথা ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। সুদীর্ঘ বঞ্চনার পথ পেরিয়ে এসে তাঁরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছেন। সবাই ভেবেছেন জীবনের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ পেলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হবে নিরাপদ এক আবাস ক্ষেত্র। তাই যে হাতে তাঁরা লাঙল ঠেলেছেন, ধান কেটেছেন, নৌকার দাঁড় টেনেছেন, জীবিকার জন্য প্রাণান্ত শ্রম দিয়েছেন, সেই হাত তাঁদের উদ্যত হয়েছিল শত্রুর মোকাবিলায়।
মুক্তিসংগ্রাম ধারণার মধ্যে দুটি উপাদান আছে। একটি হলো জাতীয় মুক্তি এবং অন্যটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, শ্রেণিগত শোষণমুক্তি।আর এই মুক্তির মন্ত্রক ছিল আমাদের কৃষক সমাজ। আমরা দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনের স্মৃতিক্ষেত্রে গিয়েছি। কুষ্টিয়ার দুর্বাচারা বংশীতলার এখনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জবানিতে পাই মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার কথা। তাঁরা অকপটে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁদের শতভাগই ছিলেন গ্রামের মানুষ, তাঁদের মধ্যে ৯৮ ভাগই কৃষক। ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও বলেন একই কথা। তখন কৃষকের ঘরের সন্তান টগবগে তরুণেরা কেবলই প্রবেশ করবেন সংসারজীবনে। কেউ যাবেন চাকরিতে। সবকিছু ফেলে তাঁরা আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার সংগ্রামে। নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বন্দরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়েছিলাম অনেক দিন আগে। তাঁরাও শুনিয়েছেন একই চেতনার সুর।
সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি গ্রাম। ১৬টি জেলা সদরের বাইরেই ছিল বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি। গ্রামের ঘরবাড়ি, কয়েকটি চায়ের দোকান, দু-একটি আড়ত আর তরিতরকারি ও মুদিদোকানের বাইরে ছিল মেঠোপথ, কৃষিজমি, জলাভূমি, গাছের ছায়া।সেখানে শহুরে অট্টালিকা আর নাগরিক আভিজাত্যের স্থান ছিল না। কৃষক ছিলেন সবকিছুর মূলে। তাঁরাই ছিলেন ঐতিহ্যের বাহক।
এখনো যুদ্ধদিনের সবচেয়ে গভীর স্মৃতিচিহ্ন, কষ্ট, যন্ত্রণা, স্বজন হারানোর বেদনা গ্রামের সাধারণ কৃষকই বেশি বহন করে চলেছেন। আবার তাঁরাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করছেন। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে তাঁরা ঠিকই তাঁদের শপথ ধরে রেখেছেন। একচুলও সরে যাননি একাত্তরের সেই চেতনা থেকে। আমাদের জীবনধারার সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে। বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা। কিন্তু তা বাস্তবায়নের পথ কতটা কৃষি ও কৃষককে কেন্দ্র করে, প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিজয়ের এ মাসে আমরা আবারও মেহনতি মানুষের কথাই ভাবতে চাই। ভাবতে চাই গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা। যাঁরা ছাড়া আমাদের আত্মপরিচয় থাকে না। একাত্তরের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের আপামর কৃষিজীবী মানুষের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই

বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে। কৃষক তথা মেহনতি মানুষই শাসন-শোষণের প্রচলিত বৃত্তগুলো ভেঙেছেন। মানুষের জন্য নতুন নতুন পথ তৈরি করেছেন। জীবনকাঠামো এগিয়ে নিয়েছেন।
ইতিহাসের একটু পেছন ফিরে তাকালেই দেখা যায়, সুবিধাভোগী উচ্চবিত্ত শ্রেণি প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো দিন আন্দোলনে নামেননি; বরং তাঁরা আপস করেছেন। আর সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন রচনা করেছেন একেবারে তৃণমূল জনগোষ্ঠী। তেভাগা কিংবা নীল চাষবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এই বাংলার সব বিদ্রোহ-আন্দোলনের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠী; 
বিশেষ করে কৃষক। কৃষকের স্বপ্নসাধের পথ ধরেই রচিত হয়েছে সমাজ বিনির্মাণের রূপরেখা। শোষকের বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছে একেকটি আন্দোলন।
সেখানে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন তৃণমূলের সাধারণ মানুষ—কৃষক। ব্রিটিশবিরোধী সিপাহি আন্দোলনে অধিকাংশ সুবিধাভোগী জমিদারই ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। সুবিধাভোগীরা সংগ্রাম করে না, করে বঞ্চিতরা। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নসাধও রচিত হয়েছে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, উপেক্ষার পটভূমি সামনে নিয়ে। আমি ২০০৭ সালে গিয়েছিলাম দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে।
সেখানে তালপুকুর নামে একটি জায়গা তেভাগা আন্দোলনের রণাঙ্গন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই যুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে শরৎচন্দ্র মণ্ডল, বীরেন মণ্ডলের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁরা এখন আর বেঁচে নেই। সেদিন তাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন, তা কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন গোটা বাংলার কৃষকের মুক্তি। নির্যাতিত-নিপীড়িত বহু বছরে পুঞ্জীভূত দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই তাঁরা সেদিন নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং মোট রপ্তানি আয়ের বড় অংশটি আসত পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত পাট থেকে।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক ছিল না। বছরের পর বছর আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। এ বৈষম্যমোচনের পথ হিসেবেই আসে স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন। এর চূড়ান্ত রূপরেখা হিসেবে আসে ঐতিহাসিক ছয় দফা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষকের বঞ্চনা বিশ্লেষণ করে ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পর পাকিস্তানি শাসকদের টনক নড়ে যায়। যার পরতে পরতে ছিল কৃষকের বঞ্চনামুক্তির দাবি-দাওয়া। তাঁদের আশা-প্রত্যাশার কথা। পরে ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ১১ দফা প্রণয়ন করে, সেখানে আরও বেশ কিছু দাবি সংযোজিত হয়। এই ১১ দফায় পূর্ণতা পায় এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবিগুলো। আমরা দেখি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা শুরু হয়। পরে বাষট্টি সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। অতঃপর আটষট্টি সালের ডিসেম্বর থেকে উনসত্তর সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্ররা যে এক সুসংবদ্ধ ও সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা ইতিহাসে বিরল, যা তাঁরা ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি পেশ করে এর সূচনা করেছিলেন। সে সময়ের ছাত্রনেতারা তখন আন্দোলনের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গ্রামে চলে যেতেন।
কৃষকের চাহিদা নিরূপণ করতেন। দেশের সংকটগুলো বিশ্লেষণ করতেন। দেশের সামগ্রিক চিত্র হৃদয়ে আঁকার জন্য তাঁদের বারবার গ্রামের কৃষিজীবী মেহনতি মানুষের সান্নিধ্য, তাঁদের ভাষা, তাঁদের জীবনীশক্তিকে গ্রহণ করতে হয়েছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ, সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, একাত্তরে ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীসহ অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। তাঁরা বলেছেন, একাত্তরের পটভূমি রচনার পেছনে বাংলার কৃষি ও কৃষকের নিবিড় এক প্রভাব রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে কৃষকের সেই ভূমিকাকে সবচেয়ে বেশি সামনে এনেছেন। এর পথ ধরেই আসে একাত্তরের মার্চ। সাতই মার্চের ভাষণে ঝাঁপিয়ে পড়া সমবেত লাখো মানুষের প্রায় সবাই ছিলেন কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটিও ছিল কৃষক। আহ্বানও ছিল এই সাধারণ মেহনতি মানুষের উদ্দেশেই। এ ভাষণ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমর মহাকাব্য। ইউনেসকো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ ভাষণ ছিল একটি জাতির দিকনির্দেশনা ও আত্মপরিচয়ের প্রধান ক্ষেত্র। এটিই ছিল স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলমন্ত্র। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁরাই অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা পাকিস্তানিদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁদের শোষণমুক্তির যুদ্ধ। স্বাধীন ভূমিতে ফসল ফলানোর চূড়ান্ত তাগিদ। পরাধীনতার গ্লানি ঘোচাতে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ছাড়া আর তাঁদের সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধে গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকের ভূমিকা প্রশ্নাতীত একটি বিষয়। তাঁদের বীরত্বগাথা ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। সুদীর্ঘ বঞ্চনার পথ পেরিয়ে এসে তাঁরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছেন। সবাই ভেবেছেন জীবনের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ পেলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হবে নিরাপদ এক আবাস ক্ষেত্র। তাই যে হাতে তাঁরা লাঙল ঠেলেছেন, ধান কেটেছেন, নৌকার দাঁড় টেনেছেন, জীবিকার জন্য প্রাণান্ত শ্রম দিয়েছেন, সেই হাত তাঁদের উদ্যত হয়েছিল শত্রুর মোকাবিলায়।
মুক্তিসংগ্রাম ধারণার মধ্যে দুটি উপাদান আছে। একটি হলো জাতীয় মুক্তি এবং অন্যটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, শ্রেণিগত শোষণমুক্তি।আর এই মুক্তির মন্ত্রক ছিল আমাদের কৃষক সমাজ। আমরা দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনের স্মৃতিক্ষেত্রে গিয়েছি। কুষ্টিয়ার দুর্বাচারা বংশীতলার এখনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জবানিতে পাই মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার কথা। তাঁরা অকপটে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁদের শতভাগই ছিলেন গ্রামের মানুষ, তাঁদের মধ্যে ৯৮ ভাগই কৃষক। ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও বলেন একই কথা। তখন কৃষকের ঘরের সন্তান টগবগে তরুণেরা কেবলই প্রবেশ করবেন সংসারজীবনে। কেউ যাবেন চাকরিতে। সবকিছু ফেলে তাঁরা আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার সংগ্রামে। নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বন্দরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়েছিলাম অনেক দিন আগে। তাঁরাও শুনিয়েছেন একই চেতনার সুর।
সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি গ্রাম। ১৬টি জেলা সদরের বাইরেই ছিল বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি। গ্রামের ঘরবাড়ি, কয়েকটি চায়ের দোকান, দু-একটি আড়ত আর তরিতরকারি ও মুদিদোকানের বাইরে ছিল মেঠোপথ, কৃষিজমি, জলাভূমি, গাছের ছায়া।সেখানে শহুরে অট্টালিকা আর নাগরিক আভিজাত্যের স্থান ছিল না। কৃষক ছিলেন সবকিছুর মূলে। তাঁরাই ছিলেন ঐতিহ্যের বাহক।
এখনো যুদ্ধদিনের সবচেয়ে গভীর স্মৃতিচিহ্ন, কষ্ট, যন্ত্রণা, স্বজন হারানোর বেদনা গ্রামের সাধারণ কৃষকই বেশি বহন করে চলেছেন। আবার তাঁরাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করছেন। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে তাঁরা ঠিকই তাঁদের শপথ ধরে রেখেছেন। একচুলও সরে যাননি একাত্তরের সেই চেতনা থেকে। আমাদের জীবনধারার সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে। বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা। কিন্তু তা বাস্তবায়নের পথ কতটা কৃষি ও কৃষককে কেন্দ্র করে, প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিজয়ের এ মাসে আমরা আবারও মেহনতি মানুষের কথাই ভাবতে চাই। ভাবতে চাই গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা। যাঁরা ছাড়া আমাদের আত্মপরিচয় থাকে না। একাত্তরের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের আপামর কৃষিজীবী মানুষের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর উত্থিত এই বদ্বীপে মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের সূচনা হয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। এখানে জীবনের সব অনুষঙ্গই রচিত হয়েছে কৃষকের চিন্তা, শক্তি, প্রয়াস ও উদ্যোগ ঘিরে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫